ভাল ঘুমের উপায় জানুন | স্বাস্থ্যকর ঘুম

স্বাস্থ্যকর ঘুম আমাদের সবার একান্ত কাম্য। একটি ভাল ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি কার্যকরী ও সুস্থ থাকতে পারি। আজকের এই আলোচনায় আমরা জানতে চেষ্টা করব কিভাবে ভাল ঘুমের উপায় অনুসরণ করে একটি স্বাস্থ্যবান ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

সূধীর কুমার, অ্যাপোলো হাসপাতালের মতে, প্রতি রাতে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এছাড়া, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ ব্যবহারেও দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। দৈনিক ঘুম রুটিন বজায় রেখে এবং সঠিক সময়ে শুয়ে পড়ার মাধ্যমে আমরা এইসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারি।

Contents show

স্বাস্থ্যকর ঘুমের গুরুত্ব

স্বাস্থ্যকর ঘুমের প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিসীম। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না তারা কম বাঁচেন এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হন।

শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

স্বাস্থ্যকর ঘুম শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এতে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমানোর ফলে অ্যালঝাইমার, ক্যান্সার, হৃদ্‌রোগ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর ফলে শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। এর পাশাপাশি, ঘুমের প্রভাব সরাসরি আমাদের ইমিউন সিস্টেম এবং শারীরিক কার্যক্ষমতার উপর পড়ে।

মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে স্বাস্থ্যকর ঘুমের প্রভাব বিশাল। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং অনুভূতিশীল বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়।

পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এতে মানসিক ধারণাশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর ঘুমের ভূমিকা অপরিসীম। ঘুমের প্রভাব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে অপরিহার্য।

স্লিপ হাইজিনের গুরুত্ব

একটি ভাল ঘুমের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনকে আরও কার্যকর এবং স্বাস্থ্যকর করা যায়। স্লিপ হাইজিন ঠিকমত বজায় রাখা দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ এবং ঘুমের স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য খুবই জরুরি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী অসুখ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্ক

বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে স্লিপ হাইজিনের উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। উন্নত ঘুমের স্বাস্থ্য মানুষকে আরও চঞ্চল, সতর্ক এবং আনন্দময় রাখে। এর ফলে কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুনঃ  ঘাড়ের ব্যথা কমানোর উপায় - সহজ টিপস

বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগের নিয়ন্ত্রণ

স্লিপ হাইজিন বজায় রাখার মাধ্যমে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যেমন, ভালো ঘুমের ব্যবস্থা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় এবং ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। যারা ঘুমের স্বাস্থ্য ঠিকমত মেনে চলেন, তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলি অনেকটা কম দেখা যায়। তাই আমাদের সকলেরই উচিত স্লিপ হাইজিনের গুরুত্ব অনুধাবন করা ও এর নিয়ম মেনে চলা।

একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস

আপনি যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং জাগেন, তাহলে আপনার শারীরিক ঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এই অভ্যাসটি ঘুমের মান উন্নত করতে সহায়তা করে এবং আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখে।

সঠিক রুটিন বজায় রাখা

একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন রাখলে শারীরিক ঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করে। আয়ুর্বেদে বলা হয়, পরিবারের সকলের সাথে মিল রেখে ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখা জরুরি। উপযুক্ত ঘুমের মাধ্যমে আপনি দৈনন্দিন ক্লান্তি দূর করতে পারেন এবং সুস্থ থাকতে পারেন।

শারীরিক ঘড়ির সাথে সঙ্গতি

নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি অনুসরণ করলে আপনার শারীরিক ঘড়ি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। এর ফলে আপনি গভীর ও শান্ত ঘুম পান যা আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো সহজ করে তোলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এতে আপনার মস্তিষ্কে দীর্ঘ সময়ের ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়, ঠিক যেমন অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে হয়।

তথ্য অনুসারে, পূর্ণবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন যা তাদের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। শিশুদের জন্য ৯-১৩ ঘণ্টা এবং নবজাতকদের জন্য ১২-১৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন

প্রতিদিনের টানটান কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে, একটি আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা খুব জরুরি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে প্রাকৃতিক আলোতে বেশি সময় কাটানো ঘুমের শরীরঘড়ি তৈরিতে সহায়ক হয়। সঠিক আলো নিয়ন্ত্রণ এবং আরামদায়ক বিছানা এই পরিবেশ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আলো এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ

ঘুমের পরিবেশ যেমন হতে হবে শান্ত, অন্ধকার এবং শীতল। প্রাকৃতিক আলো এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘুমের মান উন্নত করা সম্ভব। এই জন্য:

  • আলো নিয়ন্ত্রণ: ঘুমানোর ঘরটি অন্ধকার করার জন্য ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন এবং সন্ধ্যার পরে তীব্র আলো এড়িয়ে চলুন।
  • শীতল তাপমাত্রা: ঘরের তাপমাত্রা শীতল রাখা উত্তম, কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হয় এবং ঘুম গভীর করে।

আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ

আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যা ঘুমের পরিবেশকে আরামদায়ক করে তোলে।

  • আরামদায়ক বিছানা: একটি ভাল মানের ম্যাট্রেস শরীরকে সঠিক সাপোর্ট দেয় এবং পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • সঠিক বালিশ: একটি সঠিক মানের বালিশ ঘাড় এবং মাথার সঠিক সাপোর্ট প্রদান করে, যা গভীর ঘুমে সহায়ক হয়।

একটি আরামদায়ক বিছানা এবং সঠিক আলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা যায়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

ভালো ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে কিভাবে এবং কখন খাবেন তার উপর আপনার ঘুমের মান নির্ভর করে। এমনকি ঘুমের খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে বিশেষ কিছু খাবার এবং পানীয় ঠিকমত গ্রহন করতে হবে।

সঠিক খাওয়ার সময়

সঠিক সময়ে খাওয়া ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। রাতের খাবারকে খুব ভারী না করে, হজম সহজ হয় এমন কিছু খাওয়া উচিত। গবেষণা প্রমাণ করে যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি গ্রহণ করলে ঘুমের মান খারাপ হতে পারে। দিনে ৩০০-৫০০ ক্যালোরি কম গ্রহণ করা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং ঘুমের গুণমান উন্নতিতে সাহায্য করবে।

ক্যাফিন এবং এলকোহল থেকে দূরে থাকা

ক্যাফিন নিয়ন্ত্রণ এবং এলকোহল এড়ানো কার্যকরী ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ক্যাফিন গ্রহণ করলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে আপনার মধ্যে সজাগতা বজায় রাখে, যা ঘুমের খাদ্যাভ্যাসের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি অনেকে ক্যাফিন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এলকোহল গ্রহন করে থাকে, যা অল্প সময়ের জন্য শিথিল করতে পারে, কিন্তু পরের দিকে এটি ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই ভালো ঘুমের জন্য রাতে ক্যাফিন এবং এলকোহল থেকে দূরে থাকা উচিত।

আরও পড়ুনঃ  পিরিয়ড না হলে কি কি সমস্যা হয়?

রাতে শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ

উপযুক্ত ঘুম নিশ্চিত করতে রাতের শারীরিক কার্যকলাপ এবং রুটিন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু কারণে রাতে ব্যায়াম করা একান্তই কাম্য নয়। গবেষণা বলছে যে, সন্ধ্যা বা রাতে ভারী ব্যায়াম করলে শরীরের উত্তেজনা বেড়ে যায়, যা ঘুমের জন্য উপযোগী নয়।

তবে হালকা ধরণের রাতে শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটা বা স্ট্রেচিং, ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এতে করে শরীর খানিকটা রিল্যাক্সড হয় এবং সহজে ঘুম আসতে সহায়ক হয়।

  • রাতের শারীরিক কার্যকলাপ যখন কম মাত্রায় হয়, তখন এটি ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে।
  • ভারী মাত্রার রাতে ব্যায়াম শরীরের উত্তেজনা বাড়ায়, ফলে ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়।
  • হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং করার ফলে শরীর থেকে স্ট্রেস রিলিজ হয়, যা ভালো ঘুমের অনুকূল।

অন্যদিকে, দীর্ঘসময় ধরে ভারী ব্যায়াম করা বা অন্যান্য জোরালো কার্যকলাপ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, বিশেষ করে রাতের বেলা। এতে ঘুমের ধরন বিঘ্নিত হতে পারে এবং ঘুমের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষপর্যন্ত, রাতে শারীরিক কার্যকলাপ এবং ব্যায়ামের সঠিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঘুমের মান উন্নত করতে পারি, যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

How to Get Better Sleep

স্বাস্থ্যকর ঘুম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। একে উন্নত করার জন্য কিছু কার্যকরী কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে যা চমৎকার জীবন যাপনের কৌশল হিসেবে কাজ করে।

একটি রিল্যাক্সিং রুটিন তৈরী করা

ঘুমের আগে একটি রিল্যাক্সিং রুটিন তৈরী করা ভাল ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বই পড়া, হালকা যোগ ব্যায়াম, বা মৃদু সঙ্গীত শুনে মনকে প্রশান্ত রাখা যেতে পারে। রিল্যাক্সিং রুটিন সব সময় নির্দিষ্ট রেখে নিয়মিত অনুশীলন করলেই মস্তিষ্ক বুঝতে পারে, এটি ঘুমানোর সময়।

স্ক্রিন টাইম কমানো

ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্ধারিত সময় দূরে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রিন টাইম কমানো মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারে, কারণ মোবাইল এবং কম্পিউটার থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটনিন হরমোনের উৎপাদন কমায়, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই, ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমানো উচিৎ।

পেশাদার পরামর্শ নিন

ঘুমের সমস্যার সমাধানে পেশাদার পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের চিকিৎসা সমস্যায় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ও তাদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। ঘুমের অভাব থেকে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস এবং অ্যানজাইটি। পেশাদারী চিকিৎসকই আপনাকে সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারেন।

চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ

ঘুমের সমস্যায় ভুগলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা, যেমন ঘুম সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী এবং দৈনন্দিন ঘুমের প্যাটার্ন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আপনার সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন। সঠিক ঘুমের চিকিৎসা পেতে শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন

অনেক সময় ঘুমের সমস্যা এতটাই গুরুতর হতে পারে যে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নেওয়া প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা কোনও বিশেষ ওষুধ বা থেরাপি নির্ধারণ করতে পারেন যেমন, কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। সুস্থ থাকার জন্য পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ এবং তার যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।

গভীর রাতে গরম পানিতে গোসল

গভীর রাতে গরম পানিতে গোসল করাটা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় হতে পারে সুস্থ ঘুম নিশ্চিত করার জন্য। ঘুমের আগে গোসল করার মাধ্যমে আমাদের শরীরের পেশী শিথিল হয় এবং রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, যা ঘুমকে আরও সহজ করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের আগে গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহারের ফলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং সেটা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ  বেনাড্রিল কাজে লাগতে কত সময় নেয়?

গভীর রাতে গরম পানিতে গোসল করার সুফলগুলো নিম্নরূপ:

  • শরীরের পেশী শিথিল হওয়া এবং উত্তেজনা হ্রাস করা।
  • মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করা এবং উদ্বেগ কমানো।
  • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা যা ঘুমের গুণমান উন্নত করে।
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

এছাড়াও, গর্ভবতী নারীদের জন্য ঘুমের আগে গোসল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের সমস্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে উনাদের জন্য একটি রিল্যাক্সিং অবস্থা তৈরি করে। সমীক্ষা অনুসারে, গর্ভাবস্থায় ঘুমের অভাবে নারীরা বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করতে পারে। তাই, ঘুমের আগে একটি উষ্ণ বা কুসুম গরম পানিতে গোসল তাদের জন্য খুবই উপকারী।”

সমাপ্তি

এই নিবন্ধটি আপনাকে ভাল ঘুম পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেছে। স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, ইতিবাচক স্লিপ হাইজিন মেনে চলা এবং পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ করা কতটা জরুরি তা আমরা আলোচনা করেছি।

স্বাস্থ্যকর ঘুমের সারাংশ হিসাবে এটি বলা যায় যে, আপনার দৈনন্দিন রুটিন এবং শারীরিক কার্যকলাপের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে, একটি আরামদায়ক পরিবেশে নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চললে ভাল ঘুম পাওয়া সম্ভব। এটি আপনার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।

অতএব, যেহেতু ভাল ঘুম দৈনন্দিন জীবনের মান নিশ্চিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, তাই এই টিপসগুলি অভ্যাসে পরিণত করুন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর ঘুমের সারাংশ হলো আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবন যাপনে সহায়তা করা।

FAQ

ভাল ঘুমের জন্য কি ধরনের রুটিন পালন করা প্রয়োজন?

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর এবং জাগার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে, যাতে আপনার শারীরিক ঘড়ির সাথে সঙ্গতি থাকে। এই অভ্যাসে আপনি আরো গভীর এবং স্বাস্থ্যকর ঘুম পেতে পারেন।

ঘুমের জন্য একটি সঠিক পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

ঘুমের জন্য একটি শান্ত, অন্ধকার এবং শীতল ঘর আদর্শ। এছাড়াও, আরামদায়ক গদি এবং বালিশ থাকতে হবে যাতে ঘুমের মান উন্নত হয়।

কীভাবে ঘুমের খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর করে তোলা যায়?

সন্ধ্যায় খাদ্য যেন হজম হতে সহজ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্যাফিন এবং অ্যালকোহলের ব্যবহার এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো ঘুমের গুণমান নেগেটিভভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

স্লিপ হাইজিনের গুরুত্ব কী?

স্লিপ হাইজিনের উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব এবং এতে হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী অসুখ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।

ঘুমের মান উন্নত করার স্বাস্থ্যবান টিপস কী?

ঘুমের আগে একটি রিল্যাক্সিং রুটিন তৈরি করা এবং ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা জরুরি। ঘুমের আগে গরম পানিতে গোসল করা শরীরকে আরাম দেয় এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করে।

রাতে শারীরিক কার্যকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত?

রাতে ভারী শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়াম থেকে দূরে থাকা উচিত, কারণ এটি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ভাল ঘুম পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

যদি ঘুমের সমস্যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে পেশাদার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং তাদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।

কোন ধরনের আচরণ স্বাস্থ্যকর ঘুমের সাথে সম্পর্কিত?

একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, আরামদায়ক বিছানা এবং পরিবেশ তৈরি করা, স্লিপ হাইজিন উন্নতি করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button