সাদা জিহ্বা দূর করার উপায় – ঘরোয়া টিপস

সাদা জিহ্বা একটি সাধারণ মৌখিক সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে, যেমন খারাপ মুখের পরিচ্ছন্নতা বা ধূমপান। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব কিভাবে সাদা জিহ্বা চিকিত্সা করা যায় সেই সাথে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার যা মুখ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

শিশুদের মুখের পরিচ্ছন্নতা তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরিষ্কার করায় শিশুদের জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া জমা হতে না পারা রোধ করে। নবজাতকদের জিহ্বা পরিষ্কার করার সময় উষ্ণ পানিতে ভেজানো কাপড় বা গজ কাপড় ব্যবহার করা যায়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া প্রতিকার হল বেকিং সোডা ব্যবহার করা। বেকিং সোডা দেহের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী। এছাড়াও, এটি প্রাকৃতিক ফেসিয়াল স্ক্রাব এবং বডি এক্সফোলিয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

সাদা জিহ্বার চিকিত্সা শুরু করার আগে একজন ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। শিশুদের প্রথমবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে। যথাযথ মুখের স্বাস্থ্য এবং নিয়মিত চেক-আপ তাদের সুস্থ এবং নিরাপদ মৌখিক অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

ধৈর্য ধরে নিয়মিত চেষ্টা কারার মাধ্যমেই শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী মৌখিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। ঘরোয়া প্রতিকার গুলি অনুসরণ করে সাদা জিহ্বা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং মুখ স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।

সাদা জিহ্বা কি?

সাদা জিহ্বা মানে হল জিহ্বার উপর সাদা ফিল্মের মতো একটি পুরু স্তর, যা কখনো কখনো প্যাচে প্যাচে বা একটি সুস্পষ্ট আবরণ হিসেবে প্রকাশ পায়। এটি মূলত জিহ্বার পৃষ্ঠগত ব্যাকটেরিয়া ও মৃত কোষের উপস্থিতির কারণে হয়।

বিভিন্ন স্বাস্থ্য শর্তও সাদা জিহ্বা লক্ষণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা প্রায়ই জিহ্বার উপর সাদা ফিল্মের সৃষ্টি করে। সংক্রমণ ও অসুখ যেমন ফিভারও সাদা জিহ্বার কারণ হতে পারে।

মুখের শুষ্কতা, যেমন জেরোস্টোমিয়া, একটি সাধারণ সমস্যা যা সাদা জিহ্বার কারণ হতে পারে। অন্যান্য স্বাস্থ্য শর্ত যেমন লিউকোপ্লাকিয়া, ওরাল লাইকেন প্লেনাস, ওরাল থ্রাশ এবং সিফিলিসও জিহ্বায় সাদা আবরণ সৃষ্টি করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  চিকেন পক্স কতদিন থাকে?

সাদা জিহ্বার কারণ

সাদা জিহ্বা মূলত একটি সমস্যার লক্ষণ। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে যা স্বাস্থ্যকর মুখের যত্ন না নেয়ার ফলেও ঘটতে পারে। চলুন দেখি এই সমস্যার কিছু সাধারণ কারণ সম্পর্কে।

ওরাল থ্রাশ

ওরাল থ্রাশ হল ক্যান্ডিডা ছত্রাকের একটি সংক্রমণ যা মুখ ও জিহ্বায় সাদা দাগ তৈরি করে। এটি সাধারণত মায়ের বয়স থেকে হতে পারে এবং আরও গুরুতর অবস্থায় পৌঁছানোর আগে তাৎক্ষণিক চিকিত্সা প্রয়োজন। ওরাল থ্রাশের জন্য নিয়মিত ওরাল হাইজিন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খারাপ ওরাল হাইজিন

যদি নিয়মিত ব্রাশ বা ফ্লস না করা হয়, তাহলে জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্য কণার জমা হতে পারে, যা থেকে সাদা জিহ্বা তৈরি হয়। খারাপ মুখের স্বাস্থ্য শুধু জিহ্বার রঙ পরিবর্তনই করে না, পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ির অন্যান্য সমস্যারও কারন হয়ে দাঁড়ায়।

ধূমপান এবং মদ্যপান

ধূমপানের প্রভাব এবং মদ্যপান জিহ্বার কোষগুলির মৃত্যু ঘটায় এবং সাদা আবরণ তৈরি করে, যা জিহ্বাকে সাদা দেখাতে পারে। ধূমপান করার ফলে মুখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটে, যা মুখের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

সাদা জিহ্বার লক্ষণ

সাদা জিহ্বা সাধারণত একটি বিরক্তিকর অবস্থা যা বেশ কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণে দেখা দিতে পারে। এটি যদি সঠিক সময়ে নিরাময় না করা হয় তবে প্রধানত খাদ্য গ্রহণে অসুবিধা এবং কথা বলার কষ্ট এর মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, জিহ্বার সাদা আবরণ দ্বারা প্রদাহ হতে জিহ্বার ব্যথা হতে পারে।

ব্যথা বা জ্বালা

সাদা জিহ্বায় প্রায়ই ব্যথা বা জ্বালার মতো লক্ষণ দেখা যায়। জিহ্বার ব্যথা বেশ কিছু কারণের জন্য হতে পারে, যেমন ওরাল থ্রাশ, İnফেকশন, বা ভিটামিন কিংবা মিনারেল এর অভাব। সাধারণত, এসব ব্যথা খাওয়ার সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।

খাদ্য গ্রহণে অসুবিধা

সাদা জিহ্বায় অনেক সময় খাদ্য গ্রহণে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যখন জিহ্বায় প্রদাহ থাকে, তখন খাবার গ্রহণ করা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় প্রয়োজন হতে পারে বিশেজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ, যা খেলাধুলার পরপরই চিকিৎসা হিসেবে প্রয়োজনীয় হতে পারে।

কথায় কষ্ট

কথায় কষ্ট সাদা জিহ্বার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। জিহ্বার সাদা আবরণ পরিণামে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা কথা বলার কষ্ট আনতে পারে। এই সমস্যার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসার পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো রোগ নিরাময়ে সহায়ক। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যাগুলি সহজেই দূর করা যায়।

আরও পড়ুনঃ  পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয়?

How to Get Rid of White Tongue

একটি সাদা জিহ্বা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক চিকিত্সার উপায় রয়েছে। প্রথমত, সঠিক ওরাল হাইজিন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে অন্তত দু’বার জিহ্বা স্ক্র্যাপার ব্যবহার করে জিহ্বা পরিষ্কার করুন। এই প্রক্রিয়াটি সাদা জিহ্বা দূর করার উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।

সাদা জিহ্বা দূর করার উপায় হিসেবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিত্সা পদ্ধতি রয়েছে যা আপনাকে সাদা জিহ্বা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে। নিচে কিছু ঘরোয়া টিপস উল্লেখ করা হলো:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানীয় জল পান করা উচিত। এটি জিহ্বা আর্দ্র রাখতে এবং মৃত কোষ সরিয়ে দিতে সহায়ক হতে পারে।
  • প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বেকিং সোডা এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে জিহ্বায় প্রয়োগ করুন। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে এবং সাদা পরত কমায়।
  • দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসে কাঁচা রসুন অন্তর্ভুক্ত করুন। রসুনে থাকা অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদানসমূহ ওরাল থ্রাশ নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
  • প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন। প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মুখের স্বাভাবিক ফ্লোরাকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়ক হয়, যা সাদা জিহ্বা নিরাময়ে কার্যকর।

সাদা জিহ্বা অনেক ক্ষেত্রেই সহজেই নিরাময়যোগ্য, তবে দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণ বা অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ। চিকিৎসা ছাড়া সাদা জিহ্বা গাম ডিসিজ এবং সম্ভাব্য ওরাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত ডেন্টিস্ট এর চেকআপ এর মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ওরাল থ্রাশ হলে এন্টি-ফাংগাল ওষুধ যেমন ফ্লুকোনাজোল বা নিসটাটিন ব্যবহৃত হয়, এবং সিফিলিস হলে পেনিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন।

প্রতিরোধের উপায়

সাদা জিহ্বা দূর করার জন্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত জল পান করা, সঠিক ওরাল হাইজিন বজায় রাখা, এবং ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা বিশেষভাবে উপকারী। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার সামগ্রিক ওরাল হেল্‌থ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাদা জিহ্বার সমস্যাও কমিয়ে আনতে পারবেন।

পর্যাপ্ত জল পান

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা শরীরের বজায় রাখার পাশাপাশি জিহ্বার স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার কারণে মুখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে তৈরী হয় সাদা স্তর। সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকলে, শরীর স্বাভাবিকভাবে মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং সঠিক ওরাল হেল্‌থ বজায় রাখতে সহায়ক হয়।

উপযুক্ত ওরাল হাইজিন বজায় রাখা

ওরাল হাইজিনের অভাবেও সাদা জিহ্বা হতে পারে। আপনার দাঁত এবং জিহ্বা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লস করা ওরাল হেল্‌থ বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এছাড়া, জিহ্বার জন্য আলাদা ব্রাশ অথবা স্ক্র্যাপার ব্যবহার করেও আপনি এই সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  কিডনি ফাংশন উন্নতির উপায় - স্বাস্থ্য টিপস

ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলা

ধূমপান এবং মদ্যপান প্রতিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ধূমপানে মুখের ভেতরে শুষ্কতা তৈরি হয় এবং মদ্যপান মুখের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ব্যালেন্স নষ্ট করে, যা সাদা জিহ্বার কারণ হতে পারে। এই অভ্যাসগুলি এড়িয়ে চললে আপনার ওরাল হেল্‌থ ভালো থাকবে এবং সাদা জিহ্বার ঝুঁকি কমবে।

FAQ

সাদা জিহ্বা কী?

সাদা জিহ্বা মানে হল জিহ্বার উপর সাদা ফিল্মের মতো একটি পুরু স্তর, যা কখনো কখনো প্যাচে প্যাচে বা একটি সুস্পষ্ট আবরণ হিসেবে প্রকাশ পায়। এটি মূলত জিহ্বার পৃষ্ঠগত ব্যাকটেরিয়া ও মৃত কোষের উপস্থিতির কারণে হয়।

সাদা জিহ্বার কারণ কী কী?

মূলত খারাপ মুখের স্বাস্থ্য, ওরাল থ্রাশ, ধূমপান এবং মদ্যপান সাদা জিহ্বার প্রধান কারণ। খারাপ ওরাল হাইজিনে জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্য কণার জমা হয় যা সাদা আবরণ তৈরি করে।

ওরাল থ্রাশ কি?

ওরাল থ্রাশ হল ক্যান্ডিডা ছত্রাকের একটি সংক্রমণ যা মুখ ও জিহ্বায় সাদা দাগ তৈরি করে। এটি মূলত খারাপ ওরাল হাইজিনের কারণে হয়।

খারাপ ওরাল হাইজিন কীভাবে সাদা জিহ্বা সৃষ্টি করে?

খারাপ ওরাল হাইজিন, যেমন নিয়মিত ব্রাশ না করা এবং ফ্লস না করা, জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্য কণার জমা ধরে। এতে করে জিহ্বায় সাদা স্তর জমা হয়।

ধূমপান এবং মদ্যপান কীভাবে জিহ্বার উপর প্রভাব ফেলে?

ধূমপান ও মদ্যপান জিহ্বার কোষগুলির মৃত্যু ঘটিয়ে সাদা আবরণ তৈরি করে, যা জিহ্বাকে সাদা দেখাতে পারে।

সাদা জিহ্বার লক্ষণ কী কী?

সাদা জিহ্বায় প্রায়ই ব্যথা বা জ্বালা হতে পারে, যা খাবার গ্রহণ করতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া, জিহ্বার সাদা আবরণ দ্বারা সৃষ্টি প্রদাহের ফলে কথা বলতেও কষ্ট হতে পারে।

সাদা জিহ্বা দূর করতে কী করা উচিত?

প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার, যেমন বেকিং সোডা, লবণ পানি দিয়ে কুলি করা, এবং আদা চা পান করা সাদা জিহ্বা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া পর্যাপ্ত জল পান এবং উপযুক্ত ওরাল হাইজিন বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

সাদা জিহ্বা প্রতিরোধে কী করা উচিত?

পর্যাপ্ত জল পান, নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করা এবং ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলা এই সমস্যা প্রতিরোধ করার মূল উপায়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button