হাতের অবশ ভাব দূর করার উপায়

হাতে অবশ ভাব বা অসাড়তা কিছুটা বিরক্তিকর হলেও এটি একটি সাধারণ ঘটনা। এই অবশ ভাব সাধারণত স্নায়ু সংকোচন, রক্ত প্রবাহে বাধা কিংবা দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় থাকার ফলে হতে পারে। অনেক সময় হাতে এই অনুভূতি সাময়িক হলেও ঘনঘন হলে এটি স্বাস্থ্যের সমস্যার সংকেত হতে পারে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে কি করবেন তা জানার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করা দরকার।

আপনার হাতে যদি অবশ ভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ঘন ঘন দেখা দেয়, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে আপনার হাতে বা শরীরের কোনও অংশে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না। কিছু সাধারণ উপায়ে এই অবশ ভাব দূর করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে হাতের অবশ ভাব দূর করার উপায়, যাতে করে আপনি সহজেই কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আরাম পেতে পারেন।

Contents show

হাতে অবশ ভাবের কারণ

হাতে অবশ ভাবের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা একে অপরের থেকে ভিন্ন। নিচে প্রধানত তিনটি কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।

স্নায়ু সংকোচন

স্নায়ু সংকোচন হল এমন এক অবস্থা, যেখানে স্নায়ুতে ক্রমাগত চাপ পড়ে বা আঘাত লাগে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে একই কাজ করার ফলে বা চোট পাওয়ার কারণে হতে পারে।

স্ট্রোক

স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, যা হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অবশ ভাব আনতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে হাতের অবশ ভাব হতে পারে, যা সঙ্গে সাথে চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

কারপাল টানেল সিনড্রোম

কারপাল টানেল সিনড্রোম একটি স্নায়ু সমস্যা যেখানে হাতের মধ্যে থাকা মেডিয়ান নার্ভে চাপ পড়ে। এর ফলে হাতের আঙ্গুলে ব্যথা এবং অবশ ভাব দেখা দেয়। কাজ করার সময় দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থানে থাকাকালীন বা ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা হতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ এবং স্নায়ু সমস্যা সনাক্তকরণে দেরি না করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  বগলের ঘাম বন্ধ করার উপায় - সহজ টিপস

ঘন ঘন হাতের অবশ ভাব কেন হয়?

অনেকেই দীর্ঘসময় ধরে হাত অবশ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যার পিছনে বেশ কিছু কারন থাকতে পারে যা নিয়মিতভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ডিজিটাল ডিভাইসের উপর নির্ভরশীল হতে পারে। চলুন দেখে নিই এই সমস্যা কেন হয় এবং এর পিছনের কারণগুলো কী হতে পারে।

একটানা টাইপ করার কারণ

একটানা টাইপ করার ফলে হাতের নাড়াচাড়া এবং মুভমেন্টের উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এই ক্রমাগত চাপ হাতের নার্ভ এবং পেশী গুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার পরিণতিতে স্থায়ী অসাড়তা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় টাইপ করলে টেকনোলজির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের হাতের স্নায়ুতে সংকোচন এবং ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। এটি হাতের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনেও ব্যাঘাত ঘটায় এবং অবশ ভাব তৈরি করে।

মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহারের প্রভাব

মোবাইল এবং ল্যাপটপের অতিরিক্ত ব্যবহার ডিজিটাল ডিভাইসের প্রভাব হিসেবে আমাদের হাতের উপর গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল রাখলে বা ল্যাপটপে কাজ করলে হাতের নার্ভ সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যা মোটর নিউরোনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্থায়ী অসাড়তা তৈরি করতে পারে। এছাড়া টেকনোলজির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সাধারণত হাতের পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে হাতের নড়াচড়া কঠিন হতে পারে এবং অবশ ভাব দেখা দেয়।

হাতের অবশ ভাবের লক্ষণ

হাতের অবশ ভাবের কারণে হাতের অসাড়তা লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেটি হাতের কার্যক্ষমতা প্রচুরভাবে প্রভাবিত করে। সাধারণত, হাতে ঝিমঝিম ভাবের সাথে সাথে, ব্যথা এবং দুর্বলতা অনুভূত হওয়া এই সমস্যা নির্দেশ করে।

অনেক ক্ষেত্রেই, ঝিমঝিম অনুভূতি নিয়ে লোকেরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বাধ্য হয়, কারণ এটি দৈনন্দিন কাজকে বিঘ্নিত করে। এটি মূলত স্নায়ুঘটিত সমস্যার কারণে হয়, যা সময়মত হাতের অসাড়তা চিহ্নিত করা গেলে নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

প্রাথমিকভাবে, হাত ধরে রাখলে বা সংকুচিত হলে, অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে হাতের অনুভূতি কমে যায়। এই সমস্যা দীর্ঘ সময় অবধি অপরিবর্তিত থাকলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

ঘরোয়া উপায়ে হাতের অবশ ভাব দূর করার পদ্ধতি

হাতের অবশ ভাব দূর করার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে হাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। নিম্নে উল্লেখিত কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে হাতের অভ্যাস পরিবর্তন এবং যত্ন নেয়া যায়।

হিট থেরাপি

হিট থেরাপি হল এক ধরনের হোম থেরাপি যা হাতের রক্ত প্রবাহ উন্নতি করতে এবং অসাড়তা কমাতে সাহায্য করে। সহজেই উষ্ণ পানি বা উষ্ণ কমপ্রেস ব্যবহার করে এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন করা যায়। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট হাত হিট থেরাপিতে রাখার মাধ্যমে হাতের অনুভূতি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  রাতে চুলকানি পা সামালানোর উপায়

ম্যাসাজ থেরাপি

ম্যাসাজ থেরাপি নিয়মিত করার মাধ্যমে হাতের স্নায়ু এবং পেশীগুলির চাপ কমানো সম্ভব। আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী, হাতের ম্যাসাজ নিয়মিত করলে হাতের অবশ ভাব দূরীকরণে সাহায্য করে। নিজের হাত বা কারও সহায়তায় একটি মৃদু ম্যাসাজ ব্যবহার করে সহজেই হাতের ম্যাসাজ করা যেতে পারে।

  1. প্রথমে হাতের তালুকে মৃদু চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করা।
  2. অনেক সময় ব্যয় না করেও প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
  3. ক্যামোমিল তেল বা নারকেল তেল প্রয়োগের মাধ্যমে ম্যাসাজের কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।

বিভিন্ন ব্যায়াম

হাতের বিভিন্ন ব্যায়াম সাধারণত হাতের চলাচল এবং স্নায়ুর কার্যকরিতা উন্নত করে। সহজ কিছু হাতের ব্যায়াম যেমন হাত ঘোরানো এবং আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার মাধ্যমে হাতের স্থিতিশীলতা এবং সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

  • আঙ্গুলের স্ট্রেচ: হাতের আঙ্গুলগুলি যথাসময়ে স্ট্রেচ করা।
  • মুষ্টিবদ্ধ করা: মুষ্টিবদ্ধ করার প্র্যাকটিস করা, এতে পেশী নমনীয়তা বাড়ে।
  • বৃত্তাকারে হাত ঘোরানো: হাতের কবজি এবং উর্ধ্বাংশ বৃত্তাকারে ঘোরানো।

উচ্চারণিত এই পদ্ধতিগুলি প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করলে দ্রুত হাতের অবশ ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য নিয়মিততার প্রয়োজন।

ভিটামিন ও পুষ্টির গুরুত্ব

হাতে অবশ ভাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন ও পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের ফলে নানান শারীরিক সমস্যা থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়। ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলে আমাদের শরীরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু ও পেশীর কার্যকারিতায় এর প্রভাব বেশি পড়ে।

ভিটামিন বি ১২

ভিটামিন বি ১২ হাতের স্নায়ু এবং পেশীর সঠিক কার্যকরীতা নিশ্চিত করে। এই ভিটামিনের অভাবে হাতের অবশ ভাব দেখা দিতে পারে। প্রোটিনযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য যেমন- ডিম, মাছ, মাংস এবং ডেইরি পণ্যগুলিতে ভিটামিন বি ১২ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যারা ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান তাদের এই ভিটামিন গ্রহণে বেশি সচেতন থাকা উচিত, কারণ তাদের মাঝে এই ভিটামিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ম্যাগনেসিয়াম

ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যা শরীরের পেশীর সঠিক কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবশ্য ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে হাত ও পায়ের পেশীতে ক্রাম্পস বা অবশ ভাব দেখা দিতে পারে। ম্যাগনেসিয়ামের পূর্ণতার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, যেমন- বাদাম, সবুজ শাক, ব্রোকলি, এবং শুকনা ফলমূল খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে এই ধরনের খাদ্য রাখলে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া না গেলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক। স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং যথাযথ পুষ্টির মাধ্যমে হাতের অবশ ভাবের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে অবগত হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

আরও পড়ুনঃ  সংক্রামক রোগ কাকে বলে?

FAQ

স্নায়ু সংকোচন কি?

স্নায়ু সংকোচন স্নায়ুর উপর ক্রমাগত চাপ অথবা স্নায়ুর আঘাতের ফলে ঘটে, যা হাতে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অসাড়তা ও ঝিমঝিম অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

স্ট্রোকের কারণে কীভাবে হাতে অবশ ভাব হয়?

স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, যা হাতে বা শরীরের অন্যান্য অংশে অবশ ভাবের সৃষ্টি করে। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো মাথা ঘোরা, ভাষা সমস্যা এবং নড়াচড়া করতে অক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

কারপাল টানেল সিনড্রোম কী?

কারপাল টানেল সিনড্রোম হলে হাতের মেডিয়ান নার্ভে চাপ পড়ে, যা মূলত হাতের অবশ ভাব এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তিমূলক কার্যকলাপ, যেমন দীর্ঘ সময় ধরে টাইপ করা, করার ফলে ঘটে।

একটানা টাইপ করার পর হাত অবশ হলে কী করা উচিত?

একটানা টাইপ করার ফলে হাতের স্নায়ু এবং পেশীগুলিতে চাপ পড়ে, যা অবশ ভাব সৃষ্টি করতে পারে। এটি থেকে মুক্তি পেতে বার বার বিরতি নিন এবং সক্রিয় হাতের ব্যায়াম করুন।

মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহারের প্রভাবে কীভাবে হাত অবশ হতে পারে?

দীর্ঘ সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে হাতের নার্ভে চাপ পড়ে, যা স্থায়ী অসাড়তা বা ঝিমঝিম অনুভূতির কারণ হতে পারে।

হাতের অবশ ভাবের লক্ষণগুলো কি কি?

হাতের অবশ ভাবের লক্ষণগুলো হলো হাতে অনুভূতি কমে যাওয়া, অস্বাভাবিক ঝিমঝিম ভাব, ব্যথা বা হাতে কোনও কাজ করতে গেলে সমস্যা দেখা দেয়া।

হাতের অবশ ভাব দূর করতে হিট থেরাপির উপকারিতা কি?

হিট থেরাপি হাতের রক্ত প্রবাহ উন্নতি করতে পারে এবং অসাড়তা কমাতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুর কার্যকরীতা বাড়ানোর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে কাজ করে।

নিয়মিত ম্যাসাজ থেরাপি হাতে কতটা উপকারী?

নিয়মিত হাতের ম্যাসাজ হাতের স্নায়ু এবং পেশীগুলির চাপ কমায়, যা হাতের অবশ ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ও ব্যথা কমাতে সহায়ক।

বিভিন্ন ব্যায়াম কি ভাবে হাতের চলাচল এবং কার্যকরীতা উন্নত করে?

বিভিন্ন হাতের ব্যায়াম, যেমন হাত ঘোরানো এবং আঙ্গুল নাড়াচাড়া, হাতের স্নায়ুর কার্যকরীতা উন্নত করে এবং পেশীগুলির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।

ভিটামিন বি ১২ কি ভাবে হাতের অসাড়তা দূর করতে সাহায্য করে?

ভিটামিন বি ১২ স্নায়ু এবং পেশীগুলির সঠিক কার্যকরীতা নিশ্চিত করে। ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি হলে হাতের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা অবশ ভাবের কারণ হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়াম কিভাবে হাতের স্নায়ুর কার্যকরীতা বজায় রাখতে সাহায্য করে?

ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু এবং পেশীগুলির কার্যকরীতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি স্নায়ুর সংকেত সঞ্চরণ এবং নাইট্রোজেন ব্যালেন্স বজায় রাখে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button