টনসিল স্টোন আছে কিনা জানার উপায়

টনসিল স্টোন, যাকে টনসিলোলিথও বলা হয়, হলো টনসিলের গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র, ক্যালসিফাইড পদার্থ। গলায় এবং মুখের পিছনে দুই পক্ষের টনসিল, লিম্ফনোড হিসাবে কাজ করে যা বাতাস ও খাবারের মাধ্যমে আসা জীবাণুদের থেকে দেহকে রক্ষা করে। টনসিল স্টোন শনাক্তকরণ সাধারণত টনসিল স্টোন লক্ষণ এবং উপসর্গের মাধ্যমে করা যায়।

যদি আপনার টনসিল স্টোনের লক্ষণগুলো থাকে, তবে এখানে কিছু সাধারণ টনসিল স্টোন চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারেন যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

টনসিল স্টোন আছে কিনা জানতে হলে প্রথমে লক্ষণগুলো সঠিকভাবে চিনতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে খারাপ শ্বাস, গলার ব্যথা, এবং টনসিলের চারপাশে সাদা বা হলুদ চিহ্ন। টনসিল স্টোন প্রতিকার নিয়ে চিন্তা করছেন? বাসাতেই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন যা আপনার অবস্থা সহজ করতে পারে।

টনসিল স্টোন কি?

টনসিল স্টোন হলো টনসিলের ক্ষুদ্র ফাটলে গঠিত ক্যালসিফাইড ম্যাটেরিয়ালের সমষ্টি। এগুলি সাধারণত সাদা বা হলুদাভ হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে টনসিল স্টোন সমস্যা দেখা দিতে পারে; খাদ্যকণা, ব্যাক্টেরিয়া, মৃত কোশ ইত্যাদি জমা হওয়ার ফলে এই স্টোনগুলি তৈরি হয়।

টনসিল স্টোনের বর্ণনা

টনসিল স্টোন সাধারণত ছোট আকারের হয়, তবে কখনও কখনও বড় আকার ধারণ করতে পারে। টনসিল স্টোনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এগুলি খাদ্যকণা, ব্যাক্টেরিয়া, স্যালাইভা এবং মৃত কোশের মিশ্রণে গঠিত।

  • সাদা বা হলুদাভ বর্ণ
  • মোটা এবং শক্ত বস্তুর মত
  • টনসিলের ফাটলে জমাট বেঁধে থাকে

টনসিল স্টোনের ধরন

টনসিল স্টোনের ধরন বিভিন্ন হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ দুই ধরনের টনসিল স্টোন হলো:

  1. মাইক্রোস্টোন:  যখন টনসিল স্টোন খুব ছোট আকারের হয়, তা সচরাচর সমস্যা সৃষ্টি করে না।
  2. ম্যাক্রোস্টোন:  যখন টনসিল স্টোন বড় আকারের হয়, তা শ্বাসের দুর্গন্ধ এবং নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ  রেড ব্লাড সেল বেশি হলে কি হয়?

এইভাবে, টনসিল স্টোনের বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে এর আকার ও গঠনের উপাদানগুলোর ওপর। প্রতিটি ধরনের টনসিল স্টোন আলাদা সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শসহ ঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

টনসিল স্টোন কিভাবে গঠিত হয়?

টনসিল স্টোন বা টনসিললিথ হল ছোট পাথরের মতন গঠন যা টনসিলে গঠন হয়। সাধারণত টনসিলের ক্রিপ্টে জমে থাকা খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া, এবং মৃত ত্বকের কোশগুলো একত্রিত হয়ে ক্যালসিফিকেশনের মাধ্যমে এই গঠনগুলি পাথরের মতন শক্ত হয়ে তৈরি হয়।

টনসিলের ফাংশন

টনসিলের কাজ হল শরীরে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য প্যাথোজেনস বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে কাজ করা। বিশেষভাবে, টনসিল শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫-১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে টনসিলাইটিস সব থেকে বেশি দেখা যায় কারণ এই বয়সে তারা বেশি জীবাণুর সংস্পর্শে আসে।

ক্যালসিফিকেশন প্রক্রিয়া

টনসিল স্টোন গঠন সম্বন্ধে ক্যালসিফিকেশন প্রক্রিয়াটি মূল কারণ। টনসিল স্টোন গঠন তখনই হয় যখন টনসিলের ক্রিপ্টে জমে থাকা খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া, এবং মৃত ত্বকের কোশগুলির উপরে ক্যালসিয়াম, কার্বন এবং ফসফেট যুক্ত হয়ে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। এটা সাধারণত অতিরিক্ত মাড়ির টিস্যুতে বেশি চোখে পড়ে কারণ এই টিস্যুগুলো খাদ্যকণা আটকাতে পারে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ ও সঠিক ওরাল হাইজিন না মেনে চললে টনসিল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

টনসিল স্টোনের লক্ষণ

টনসিল স্টোন চিহ্ন চেনার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। প্রথমেই, আপনি গলা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এই ব্যথা প্রায়শই টনসিল অ্যারিয়াতে সীমাবদ্ধ থাকে।

আর একটি উল্লেখযোগ্য টনসিল স্টোন সমস্যা হল খাবার গিলতে কষ্ট। এই সমস্যাটি বেশ বিরক্তিকর হতে পারে, বিশেষ করে যখন খাবার বা পানীয় গ্রহণের সময় আপনি ব্যথা অনুভব করেন।

মুখের দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিসও টনসিল স্টোনের অন্যতম চিহ্ন। টনসিলের পাথর গলায় সাদা বা হলুদাভ পিণ্ডের আকারে দেখা দেয় যা দাঁতের অভ্যন্তরে ছোট, কঠিন জমাট বাঁধন করতে পারে। এই পিণ্ডগুলো মুখের ভেতর দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

  • গলা ব্যথা
  • খাবার গিলতে কষ্ট
  • গলার পিছনে সাদা বা হলুদাভ পিণ্ড
  • মুখের দুর্গন্ধ

যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলো অনুভব করেন, তবে এটি টনসিল স্টোন চিহ্ন হতে পারে। মনে রাখবেন, প্রায় ৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও টনসিল স্টোন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  নতুন চুল গজানোর উপায়

উপরোক্ত লক্ষণগুলো নিশ্চিত হলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। অন্যান্য জনপ্রিয় প্রতিকার যেমন লবণ জলের গার্গল, তুলো সোয়াব, অথবা স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন টনসিল স্টোন অপসারণের জন্য কার্যকর হতে পারে।

শ্বাসে দুর্গন্ধ এবং টনসিল স্টোন

শ্বাসে দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হলো টনসিল স্টোন, যা সাধারণভাবে টনসিললিথস নামে পরিচিত। টনসিল স্টোন দুর্গন্ধ সৃষ্টির মূল কারণ খাদ্যকণা এবং সতর্ক ব্যাকটেরিয়ার জমাট বাঁধা। ব্যাকটেরিয়া যখন এসব খাদ্যকণাকে ব্রেকডাউন করতে থাকে, তখন মুখে দুর্গন্ধজনক গ্যাস নির্গত হয়।

ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা

যখন খাদ্যকণা টনসিল ক্রিপ্টে জমা হয়, ব্যাকটেরিয়া এগুলোকে ভাঙ্গতে শুরু করে। সেই প্রক্রিয়ার ফলে ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা মূলত মুখের দুর্গন্ধের কারণ। গবেষণা বলছে, যারা দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিসে ভুগছেন, তাদের ৭৫% ক্ষেত্রে টনসিল স্টোনের সৃষ্টি হয়।

এমনকী যারা মুখের দুর্গন্ধে ভুগছেন, তাদের প্রায় ৭৫% ক্ষেত্রেই টনসিল স্টোন ছিল। বড় আকারের টনসিল স্টোনগুলি মুখে দুর্গন্ধ ছাড়াও, গলা ব্যথা, সাদা বা হলুদ বাম্প, গলায় অস্বস্তি এবং কানে ব্যথার মত উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, ভাল ডেন্টাল অভ্যাস যেমন নিয়মিত দাঁত মাজার মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধ এবং টনসিল স্টোন দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করা সম্ভব। টনসিল স্টোন নিরাময়ের জন্য এন্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টনসিল প্রত্যাহার করেছেন, তারা অন্যদের তুলনায় কোনো বেশি জীবাণু বা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন না।

How to Know if You Have Tonsil Stones

টনসিল স্টোন, যেগুলি ‘টনসিললোথস’ হিসেবেও পরিচিত, মূলত টনসিলের মধ্যে গঠিত কঠিন পদার্থের ছোট ছোট গোলক। এই স্টোনগুলি সাধারণত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এগুলি সাধারণত আকারে ছোট হয়, বড় টনসিল স্টোনের ঘটনা বিরল। টনসিল স্টোন এর লক্ষণগুলি সাধারণত শ্বাসে দুর্গন্ধ, কাশি, কান ব্যথা, গলা ব্যথা, মুখের ভিতরে খারাপ স্বাদ অনুভূতি এবং গিলতে অসুবিধা।

এগুলি ক্ষতিকারক নয় এবং সাধারণত কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। মোটামুটি সমস্ত টনসিল স্টোন আকারে ছোট, সাধারণত ৫ মিমি এর চেয়ে ছোট হয়। যাদের টনসিলের ক্রিপট (ভাঁজ) বড় থাকে, তারা টনসিল স্টোন তৈরির প্রবণতায় বেশি ভোগে, কারণ হার্ড স্টোনস হিসাবে মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম সেখানে আটকে যায়।

আরও পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি কি?

টনসিল স্টোন দূর করার জন্য ভালো মুখের যত্ন এবং স্বাস্থ্যবিধি, যেমন গরম লবণ পানিতে গারগল করা এবং দন্তব্রাশ ব্যবহার করে দাঁত পরিষ্কার করা, গ্রহণ করা যেতে পারে। কখনোই আঙ্গুল বা অন্য কোন তীক্ষ্ণ জিনিস দিয়ে টনসিল স্টোন সরাবার চেষ্টা করবেন না কারণ এতে টনসিল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যদি টনসিল স্টোন খুব বড় হয়ে যায় বা অসুবিধার সৃষ্টি করে, তবে একজন কানের, নাকের এবং গলার বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় টনসিল স্টোন তৈরির জন্য বেশি প্রবণ। The American Dental Association অনুসারে, অন্তত দুই মিনিট ধরে দিনে দুইবার ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা উচিত, যা ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানীয় পান করা এবং গরম লবণ পানিতে গারগল করা এই স্টোনগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যান্য কার্যকর উপায়।

FAQ

টনসিল স্টোনের লক্ষণ কি কি?

টনসিল স্টোনের সাধারণ লক্ষণ হল গলা ব্যথা, মুখের দুর্গন্ধ, খাবার গিলতে কষ্ট, গলার পিছনে সাদা বা হলুদাভ পিণ্ড দেখা।

টনসিল স্টোন কি?

টনসিল স্টোন হলো টনসিলের ক্ষুদ্র ফাটলে গঠিত ক্যালসিফাইড ম্যাটেরিয়ালের সমষ্টি, যা সাধারণত সাদা বা হলুদাভ হয়ে থাকে।

টনসিল স্টোন কিভাবে গঠিত হয়?

টনসিলের ক্রিপ্টে জমে থাকা খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া, এবং মৃত ত্বকের কোশগুলির লেগে ও ক্যালসিফিকেশনের মাধ্যমে টনসিল স্টোন তৈরি হয়।

টনসিলের কাজ কি?

টনসিল দুটি লিম্ফনোড যেগুলি মুখের পিছনে গলার উপর দিকে অবস্থিত। এরা বাতাস ও খাবারের মাধ্যমে আসা জীবাণুদের থেকে দেহকে রক্ষা করে।

টনসিল স্টোনের বর্ণনা দিন।

টনসিল স্টোন ক্ষুদ্র ক্যালসিফাইড পদার্থ, যা টনসিলের ফাটলে জমা হওয়া খাদ্যকণা, ব্যাক্টেরিয়া এবং মৃত কোশ থেকে গঠিত হয়।

শ্বাসে দুর্গন্ধের কারণ কি?

টনসিল স্টোনে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং খাদ্যকণা ব্রেকডাউনের ফলে শ্বাসে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, কারণ ব্যাকটেরিয়া মুখে দুর্গন্ধজনক গ্যাস নির্গমন করে।

মুখের দুর্গন্ধ কি টনসিল স্টোনের লক্ষণ হতে পারে?

হ্যাঁ, মুখের দুর্গন্ধ টনসিল স্টোনের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।

টনসিল স্টোনের সমস্যাগুলি কি?

টনসিল স্টোনের সমস্যাগুলির মধ্যে সাধারনত মুখের দুর্গন্ধ, গলা ব্যথা, এবং খাবার গিলতে কষ্ট সামিল রয়েছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button