অ্যান্ড্রয়েডে কিভাবে ফেসটাইম করবেন – সহজ গাইড

একসময়ের শুধুমাত্র আইওএস ডিভাইসের জন্য উপলব্ধ হওয়া ফেসটাইম এখন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসটাইম এমন একটি ভিডিও কলিং অ্যাপ্লিকেশন যা আপনাকে সহজেই আপনার প্রিয়জনের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে দেয়। যদিও সরাসরি অ্যান্ড্রয়েডে ফেসটাইম ব্যবহার করা সম্ভব নয়, তবে চিন্তার কিছু নেই। আমরা এখানে এমন কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলির সাহায্যে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ভিডিও চ্যাট অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন।

এই গাইডে আমরা জানবো কিভাবে ফেসটাইমের বিকল্পগুলি ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েডে একই রকম অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এছাড়াও, আমরা বিভিন্ন ভিডিও কলিং অ্যাপ্লিকেশন যেমন গুগল ডুয়ো, জুম, এবং স্কাইপ সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করবো। ফেসটাইম কেন এত জনপ্রিয় এবং অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা কীভাবে এই সুবিধা পাবেন তার সম্পূর্ণ বিবরণ পাবেন এখানে।

এছাড়া, আপনার স্মার্টফোনে ফেসটাইম ব্যবহার করার জন্য কি কি প্রয়োজন এবং সেটআপ করার সহজ পদ্ধতি সম্পর্কেও জানবো। একবার এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করলে, আপনি সহজেই আপনার প্রিয়জনের সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন এবং স্মার্টফোন ভিডিও চ্যাটের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবেন।

ফেসটাইম কি?

ফেসটাইম পরিচিতি: ফেসটাইম অ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের ডিজিটাল ভিডিও কলিং প্ল্যাটফর্ম যা মূলত iOS এবং macOS ডিভাইসগুলি সাপোর্ট করে। এটি বিশেষভাবে ভিডিও কল ফিচারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের সহজভাবে একে অপরের সাথে সংযোগ করতে সহায়তা করে।

ফেসটাইম এর ইতিহাস

ফেসটাইম ২০১০ সালে অ্যাপল দ্বারা লঞ্চ করা হয়, প্রাথমিকভাবে এটি iPhone 4 এবং পরবর্তী মডেলগুলোতে উপলব্ধ ছিল। পরবর্তীতে এটি macOS, iPadOS এবং watchOS ডিভাইসগুলিতেও প্রসারিত করা হয়। অ্যাপল ফেসটাইম তার সূচনা থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোবাইল ভিডিও কলিংয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে। অ্যাপল নিয়মিতভাবে এর আপডেট এবং ফিচার উন্নত করেছে, যাতে এটি সময়ের সাথে আরও কার্যকারী এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব হয়।

আরও পড়ুনঃ  অ্যান্ড্রয়েডে মুছে ফেলা Google ইতিহাস ফিরিয়ে আনুন

ফেসটাইম এর সুবিধা

ফেসটাইম এর প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • উচ্চ মানের ভিডিও এবং অডিও কলিং যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত অনুভূতি দিতে সহায়তা করে।
  • সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস যা সব বয়সের মানুষ ব্যবহার করতে পারে।
  • এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখে।
  • গ্রুপ ভিডিও কলিং ফিচার যার ফলে একাধিক মানুষ একসাথে ভিডিও কলে যোগ দিতে পারে।
  • মোবাইল এবং ডেস্কটপ উভয় প্ল্যাটফর্মে সমান সহজে সাপোর্ট করে।

এই সমস্ত সুবিধা ভিডিও কল ফিচারগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এবং অ্যাপল ডিভাইসসমূহের মধ্যে ফেসটাইম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসটাইম বিকল্প

অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের জন্য ফেসটাইম বিকল্প খুঁজে পেতে, আমরা কিছু জনপ্রিয় ভিডিও কলিং অ্যাপস আলোচনা করব যেগুলি ফেসটাইমের মতো কার্যকারিতা অফার করে। এখানে গুগল ডুয়ো, জুম অ্যাপ, এবং স্কাইপ কলিং এর বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

গুগল ডুয়ো

গুগল ডুয়ো হলো একটি উচ্চমানের ভিডিও কলিং অ্যাপ যা সহজ ইন্টারফেস এবং বিশুদ্ধ ভিডিও কলিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প, যাতে আপনি সহজেই আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে সংযোগ করতে পারেন। এটি বিভিন্ন নেটওয়ার্ক কন্ডিশনেও ভিডিওর মান বজায় রাখতে সক্ষম।

জুম

জুম অ্যাপ প্রধানত কনফারেন্স কলে ব্যবহার হয়, তবে এটি ব্যক্তিগত ভিডিও চ্যাটের জন্যও অত্যন্ত কার্যকর। এতে রয়েছে স্ক্রিন শেয়ারিং, ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড, এবং রেকর্ডিং সুবিধা। আপনি যদি বাড়ি থেকে কাজ করেন অথবা একটি বড় গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করতে চান, তবে জুম অ্যাপ আপনার জন্য উপযুক্ত।

স্কাইপ

স্কাইপ কলিং দীর্ঘদিন ধরে ভিডিও কলিং সার্ভিসের একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। এটি চ্যাট, ফাইল শেয়ারিং, এবং গ্রুপ কলিং সহ বিভিন্ন ফিচার অফার করে। স্কাইপে আপনি একাধিক ডিভাইসে একই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার যোগাযোগকে আরও সহজ করে তোলে।

ফেসটাইম এন্ড্রয়েডে ব্যবহার করা যাচ্ছে কিনা

বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফেসটাইম সরাসরি সমর্থন করে না। তবে, আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে FaceTime আমন্ত্রণ লিঙ্ক পাওয়া গেলে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা সেই লিঙ্কের মাধ্যমে যোগ দিতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে প্রিন্ট করার সহজ উপায়

২০২১ সালে অ্যাপল ঘোষণা করে যে অ্যান্ড্রয়েড এবং PC ব্যবহারকারীরা ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে FaceTime কলে যোগ দিতে পারবেন। এর মানে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এখন অ্যাপল অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা পেতে পারেন, যদিও তারা সরাসরি কল শুরু করতে পারবেন না।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা FaceTime কলে যোগ দিতে সক্ষম হতে ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহার করতে পারবে না; তাদের সেল সার্ভিস থাকতে হবে। এজন্য আইওএস ১৫ বা পরবর্তী ভার্সন, ম্যাকওএস ১২ মনটেরে বা পরবর্তী ভার্সন এবং আইপ্যাডওএস ১৫ বা পরবর্তী ভার্সন ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েডে FaceTime করতে হবে।

অ্যাপলের এই পদক্ষেপটি অ্যান্ড্রয়েড ফেসটাইম এবং অন্যান্য অ্যাপল অ্যাপ এর অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এখনও অ্যান্ড্রয়েড ফেসটাইম এর বিকল্প যেমন Google Meet, Zoom, এবং Microsoft Teams ব্যবহার করে ভিডিও কলিং করতে পারেন যা ক্রস-প্ল্যাটফর্ম কমিউনিকেশনকে সহজতর করে তোলে।

How to Facetime on Android

যদিও ফেসটাইম সরাসরি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য অ্যাপ নয়, ২০২১ সালে অ্যাপল অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্যও ফেসটাইম-এর মাধ্যমে ভিডিও কলের সুবিধা এনেছে। আপনাকে শুধু একটি ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। এখানে আমরা দেখাবো কিভাবে অ্যান্ড্রয়েডে ফেসটাইম করবেন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ব্যবহারের সহজ পদ্ধতি

আপনি যখন ফেসটাইম ভিডিও কল সেটআপ করছেন, নিশ্চিত করুন আপনার সাথে ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারীরা একটি লিঙ্ক শেয়ার করবে যার মাধ্যমে আপনি সহজেই কলটিতে যোগ দিতে পারবেন।

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. আপনার পছন্দসই ব্রাউজার (গুগল ক্রোম বা মাইক্রোসফট এজ) ওপেন করুন।
  2. শেয়ার করা ফেসটাইম লিঙ্কে ক্লিক করুন।
  3. লিঙ্কে ক্লিক করার পর একটি ইনভাইট পেজে নিয়ে যাবে, যেখানে আপনার নাম প্রবেশ করাতে বলা হবে।
  4. প্রয়োজনীয় অনুমতিগুলো দিন যেমন ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনের অ্যাক্সেস।
  5. যখন প্রস্তুত, “Join” বোতামে ক্লিক করুন।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

ভিডিও কল সেটআপ করার জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন হবে তা হল:

  • একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ
  • গুগল ক্রোম বা মাইক্রোসফট এজের সর্বশেষ সংস্করণ
  • ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের ধারণক্ষমতা
  • একটি ফেসটাইম লিঙ্ক, যা অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারী সরবরাহ করবে

কিভাবে সেট আপ করবেন

সেটআপ প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং দ্রুত। আপনাকে যে পরামর্শগুলো দিতে হয় তা হচ্ছে আপনাকে কেবল লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার নাম ইনপুট করতে হবে এবং অনুমোদিত অ্যাক্সেস দিতে হবে। অ্যান্ড্রয়েডে ফেসটাইম করবেন সেই সুবিধা অর্জন করতে সবসময় প্রস্তুত থাকুন এবং বিস্তারিত ধাপে ধাপে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন। ফেসটাইম এ যোগ দেয়ার সাথে সাথে, আপনি মিউট/আনমিউট, ক্যামেরা অন/অফ, ফুলস্ক্রিন মোড এবং ক্যামেরা ভিউ সুইচ অপশনগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ  Android থেকে Gmail অ্যাকাউন্ট রিমুভ করার পদ্ধতি

গুগল ডুয়ো ইনস্টল এবং সেট আপ

গুগল ডুয়ো ইনস্টলেশন হলো একটি অত্যন্ত সহজ প্রক্রিয়া যা অল্প সময়েই করা সম্ভব। প্রথমে, আপনার Android ডিভাইসে Google Play Store অ্যাপটি খুলুন এবং সার্চ বারে টাইপ করুন ‘Google Duo’। ডাউনলোড বাটনে ট্যাপ করে এটি ইনস্টল করুন। ইনস্টলেশন সম্পূর্ণ হলে, অ্যাপটি খুলুন এবং আপনার ফোন নম্বর দ্বারা রেজিস্টার করুন। এখন, আপনার গুগল ডুয়ো অ্যাকাউন্ট প্রস্তুত।

গুগল ডুয়ো অ্যাপ ইনস্টল করার পরে, প্রথমেই ফিচার্স সেট আপের দিকে মনোযোগ দিন। অন্যান্য ভিডিও কল অ্যাপগুলোর মতোই, গুগল ডুয়োও উন্নত মানের ভিডিও কলিং সুবিধা প্রদান করে। এর হাই-কোয়ালিটি ভিডিও কলগুলির জন্য আপনার ডিভাইসের সিগন্যাল বার কমপক্ষে 3টি বার থাকা প্রয়োজন। কোন কারণে ভিডিও কল কাজ না করলে, মোবাইল ডেটা সংযোগ চেক করুন অথবা ডিভাইসের নেটওয়ার্ক সেটিংস সাফ করুন।

আপনার Google Duo অ্যাপটি সঠিকভাবে কাজ না করলে, অন্য কিছু পরীক্ষা করতে হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক সমস্যা এড়াতে মোবাইল সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করুন এবং রি-কানেক্ট করুন। যদি সমস্যা সমাধান না হয়, অ্যাপের ফ্যাক্টরি রিসেটের চেষ্টা করুন। আপনার ভিডিও কলিং সমস্যাগুলি যদি ত্রুটিপূর্ণ অ্যাপের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে এটি সমাধানে সাহায্য করবে।

ভিডিও কলিং অ্যাপে গুগল ডুয়ো অনেক সুবিধা নিয়ে আসে এবং আপনাকে উন্নত নিরাপত্তা প্রদান করে। এখনই ডাউনলোড করুন এবং বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে নির্বিঘ্নে ভিডিও কলের আনন্দ উপভোগ করুন।

গুগল ডুয়ো একটি জনপ্রিয় ভিডিও কল অ্যাপ যা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী এবং সহজেই ইনস্টল ও ব্যবহার করা যায়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button