ফোনের হোয়াইট স্ক্রিন ঠিক করার সহজ উপায়

স্মার্টফোনের স্ক্রিন সমস্যা বর্তমান সময়ে একটি পরিচিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে হোয়াইট স্ক্রিন ফিক্স করতে গিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় 20% স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়, যা বেশিরভাগ সময়েই সফটওয়্যারজনিত হয়। ফলে, নতুন ফোন কেনার পরিবর্তে সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

অ্যানড্রয়েড এবং iPhone উভয় গ্রাহকদের জন্যই এই সমস্যাটি কম-বেশি ঘটতে পারে। জানা গেছে যে, স্মার্টফোন স্ক্রিন মেরামত খরচ গড়ে ২০০০-৩০০০ টাকা হয়ে থাকে, যা অনেকের জন্যই ব্যয়বহুল। তবে ভালো খবর হচ্ছে, প্রায় ৭০% ক্ষেত্রে ঘরে বসেই ফোনের হোয়াইট স্ক্রিন ঠিক করা সম্ভব।

স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে Samsung, Huawei, Xiaomi ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলোর ফোনে বেশিরভাগ হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যা দেখা যায়। তবে, আপনি কিছু সহজ পদক্ষেপ অবলম্বন করেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আর এজন্য প্রয়োজন সামান্য জ্ঞান আর ধৈর্য্য।

এবারের বিশদ আলোচনায় আমরা জানবো, কিভাবে ফোনের রিবুট, সেইফ মোডে ব্যবহার, ফ্যাক্টরি রিসেট, অ্যাপ অপসারণ এবং অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস ডিজঅ্যাবল করে আপনার ফোনের হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, DIY পদ্ধতিতে প্রায় ৮৫% ক্ষেত্রে সফল সমাধান পাওয়া যায়। অতএব, চলুন শুরু করি এবং সমস্যাটি সমাধানের জন্য বিস্তারিত জানি।

সাময়িক সমস্যা সমাধানে ফোন রিবুট করা

ফোনে আচমকা হোয়াইট স্ক্রিন দেখা দিলে, সবার প্রথমে রিবুট করা উচিত। এটি শুধু ফোনের মেমোরি রিফ্রেশ করে না, বরং কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের কারণে যদি সমস্যা হয়, সেটিও সাময়িক সমস্যা সমাধানের উপায় হিসাবে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ  সিম কার্ড কীভাবে খুলবেন - সহজ নির্দেশিকা

কেন রিবুট করা প্রয়োজন?

ফোন রিবুট করা মানে আসলে স্মার্টফোন রিস্টার্ট করা। এটি ফোনের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং নানা সাময়িক সমস্যা সমাধান করতে সহায়ক। রিবুট করার প্রয়োজন কারণ:

  1. মেমোরি রিফ্রেশ হয়, যা ফোনের স্পিড বৃদ্ধি করে।
  2. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ হয়, যা ফোনকে মুক্ত করে।
  3. হোয়াইট স্ক্রিনের মতো সমস্যাগুলি দূর হয়।

ফোন রিবুটের সহজ পদ্ধতি

ফোন রিবুট করাটা খুব সহজ। নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার স্মার্টফোন রিস্টার্ট করতে পারেন:

  1. প্রথমে ফোনের পাওয়ার বাটন কিছু সেকেন্ড চেপে ধরুন।
  2. পাওয়ার অফ বা রিস্টার্ট অপশন আসবে।
  3. রিস্টার্ট অপশন সিলেক্ট করুন।
  4. ফোনটি আবার চালু হবে এবং সাময়িক সমস্যা সমাধান হবে।

সেইফ মোড ব্যবহার করে তদন্ত

সেইফ মোড হলো এমন একটি বিশেষ মোড যেখানে কোনো থার্ড-পার্টি অ্যাপ কাজ করে না, যা ডিভাইসের সাধারণ কাজকে সমর্থন করে। ফলে, এটি সমস্যার মূল উৎস অনুসন্ধানে সাহায্য করে।

সেইফ মোড কী?

অ্যান্ড্রয়েড সেইফ মোড মূলত একটি নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে শুধুমাত্র মূল সিস্টেম অ্যাপস কার্যকর থাকে। এই সময় কোনও থার্ড-পার্টি অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হয় না, যা ডিভাইসের কার্যকারিতা আরও স্থিতিশীল করে।

সেইফ মোড কীভাবে অন করবেন?

  1. প্রথমে ফোনটি বন্ধ করুন।
  2. পাওয়ার বাটন ধরে রাখুন যতক্ষণ না ডিভাইসের লোগো দেখা যাচ্ছে।
  3. এখন পাওয়ার বাটন ছেড়ে দিয়ে ভলিউম ডাউন বাটন টিপে ধরে রাখুন।
  4. কিছুক্ষণ পর যদি ফোনটি স্বাভাবিক ভাবে অন হয়ে যায় এবং সেইফ মোড লেখাটি স্ক্রিনের নিচে দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন আপনি সফল।

সেইফ মোড চালু করার মাধ্যমে আপনি সহজেই থার্ড-পার্টি অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং সমস্যা সনাক্ত করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড সেইফ মোডে সমস্যা সনাক্ত করা গেলে, পরবর্তী ধাপে আপনি সেগুলো সহজেই ঠিক করতে পারবেন।

ফ্যাক্টরি রিসেট করে ফোন রিফ্রেশ করা

ফ্যাক্টরি রিসেট আপনার স্মার্টফোন রিফ্রেশ করার একটি শক্তিশালী পদ্ধতি, যা ফোনকে সেটিংসে প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং সমস্ত ডেটা মুছে ফেলে। এটি একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ, সাধারণত যখন অন্য কোনো সমাধান কাজ করছে না তখন এটি ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ  সামসাং ক্যারিয়ার লক চেক করার পদ্ধতি জানুন

ফ্যাক্টরি রিসেট কীভাবে করা হয়?

ফোন রিসেট করার জন্য, প্রথমে আপনার ফোনের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাক আপ করে নিন, কারণ এই প্রক্রিয়া আপনার সব ডেটা স্থায়ীভাবে মুছে ফেলবে। আপনার ফোনের সেটিংসে যান, তারপর “সিস্টেম” মেনুতে যান এবং “রিসেট অপশান” সিলেক্ট করুন। সেখানে ফ্যাক্টরি রিসেট অপশানটি পাবেন, সেটি সিলেক্ট করুন এবং নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

  • কাস্টমাইজড সেটিংস মুছে ফেলা হবে
  • ইনস্টল করা অ্যাপসগুলো সরানো হবে
  • ফোন উচ্চ কার্যক্ষমতায় ফিরে আসবে

যখন আপনার ফোন একটি সান্তি হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যা বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার সমস্যায় ভুগছে, তখন স্মার্টফোন ডেটা রিফ্রেশ করে ফোন পুনরায় সুস্থ করা একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। স্মার্টফোন ডেটা রিফ্রেশ ও ফ্যাক্টরি রিসেট প্রক্রিয়ায় আপনার ফোন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে। এটি নিশ্চিত করে যে, কোনও সূক্ষ্ম সেটিংস সমস্যার কারণে আপনার ফোনে সমস্যা হচ্ছে না।

অ্যাপ ও থার্ড-পার্টি সফটওয়্যার অপসারণ

অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন এবং থার্ড-পার্টি সফটওয়্যার অনেক সময় ফোনের কর্মক্ষমতাকে হ্রাস করতে পারে এবং হোয়াইট স্ক্রিন ইস্যুর মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। কার্যকরভাবেও মোবাইল অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে এগুলো পরিচালনা করা জরুরি। নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি সহজেই অ্যাপ অপসারণ করতে পারবেন এবং আপনার ফোনকে আবার কার্যকর করে তুলতে পারবেন।

অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ চিহ্নিত করা

প্রথমে, আপনাকে আপনার ফোনের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি চিহ্নিত করতে হবে। এই অ্যাপগুলি আপডেট ছাড়া ব্যবহৃত হচ্ছে না বা খুব কম ব্যবহৃত হয়েছে। আপনি যদি মোবাইল অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব অ্যাপ চিহ্নিত করতে পারে এবং আপনাকে অপসারণ সুপারিশ করবে।

অ্যাপ রিমুভ করার পদ্ধতি

একবার অপ্রয়োজনীয় আপগুলিকে চিহ্নিত করার পরে, তাদের সরানোর ধাপে যেতে হবে:

  1. সেটিংস মেনুতে যান এবং অ্যাপস & নোটিফিকেশনস নির্বাচন করুন।
  2. Fফি অ্যাপ লিস্ট থেকে যেকোনো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ নির্বাচন করুন।
  3. আনইনস্টল বোতামে চাপুন এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
আরও পড়ুনঃ  হটস্পট অন করার সহজ নিয়ম জেনে নিন

এই ধাপগুলি অনুসরণ করে কাজ সঠিকভাবে করলে আপনার ফোনের পারফর্মেন্স বেড়ে যাবে এবং অন্যান্য সমস্যা যেমন হোয়াইট স্ক্রিন ইস্যু থেকেও মুক্তি পাবেন। স্মার্ট মোবাইল অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া কার্যকর করার মাধ্যমে, থার্ড-পার্টি সফটওয়ার গুলি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস ডিজঅ্যাবল করা

অনেক সময় ফোনের ব্রাইটনেস সেটিংস সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস যা অটোমেটিকভাবে স্ক্রিনের আলো নিয়ন্ত্রণ করে। এই ফিচার ফোনের আলোর মাত্রা অনুযায়ী স্ক্রিনের ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু এটি ঠিকভাবে কাজ না করলে ফোনে হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস কী?

অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস একটি স্মার্টফোন ফিচার যা পরিবেশের আলোর মাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস সেট করে। উদাহরণস্বরূপ, বাইরে সূর্যের আলোতে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস বাড়ায় এবং অন্ধকার স্থানে ব্রাইটনেস কমায়। কিন্তু কথাটি হচ্ছে, এই ফিচারটি কখনো কখনো বাগের কারণে সঠিকভাবে কাজ না করায় ফোনে হোয়াইট স্ক্রিন দেখা দেয়।

ডিজঅ্যাবল করার ধাপ

ফোনের অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস ডিজঅ্যাবল করা মোটামুটি সহজ। তবে সঠিকভাবে করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে:

১. প্রথমে আপনার ফোনের ‘সেটিংস’ মেনু খুলুন।

২. এরপর ‘ডিসপ্লে’ বা ‘স্ক্রিন’ অপশনে যান।

৩. সেখানে ‘অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস’ অপশনটি খুঁজুন। এই অপশনটি অনেক সময় ‘অটো-ব্রাইটনেস’ নামেও উল্লেখিত হতে পারে।

৪. অ্যাডাপ্টিভ ব্রাইটনেস বা অটো-ব্রাইটনেস অপশনটি ডিজঅ্যাবল করুন।

এই কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করলেই আপনার ফোন ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে এবং হোয়াইট স্ক্রিন সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button