বিহার: এক অনন্য রাজ্যের প্রচার

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহার তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, গৌরবময় ইতিহাস, এবং পর্যটনের অপরিমেয় সম্ভাবনার জন্য সর্বত্র পরিচিত। বিহার সংস্কৃতি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মিলন ক্ষেত্র যা একে অনন্য করে তুলেছে। নৃত্য, সংগীত, ভাষা এবং সাহিত্য—সবক্ষেত্রেই বিহার তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে এবং ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

বিহারের অর্থনীতি এছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নীত হয়েছে, কৃষি, শিল্প, এবং পর্যটন খাতে বিস্তৃত উন্নয়ন হয়েছে। বিহারের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর অর্থনৈতিক প্রভাব জাতীয় পর্যায়েও লক্ষণীয়। এই সমস্ত কারণে, বিহার তার পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে।

Contents show

বিহারের ভূগোল এবং জলবায়ু

বিহারের ভূগোলে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়। বিহার ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত যার ভৌগোলিক অবস্থান ২৫.৪° উত্তর ৮৫.১° পূর্বে। এই রাজ্যটি তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ভূগোল এবং জলবায়ুর জন্য পরিচিত।

বিহারের অবস্থান

বিহার উত্তরে নেপাল, পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমে উত্তর প্রদেশ দ্বারা বেষ্টিত। বিহার ভূগোল তার অবস্থানের কারণে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে, যা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পরিচয় বিদ্যমান করেছে। এটি একটি সমৃদ্ধ সিসমিক অঞ্চল, যা প্রায়ই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

প্রধান নদীসমূহ

বিহারের প্রধান নদীগুলোর মাঝে বিখ্যাত গঙ্গা নদী বিহার রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিহার নদী গুলি রাজ্যের কৃষিকাজ এবং পর্যটনের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। গঙ্গা নদী বিহারের অগ্রগামী ভূমিকায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং ঐতিহাসিক বহু জনপদ স্থাপনে সাহায্য করেছে।

জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

বিহারের জলবায়ু মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীতকালীন হিসেবে বিভাজিত। গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৪০° সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়, বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুম শুরু হয় জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এবং বর্ষা-পরবর্তী মৌসুম থাকে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিহারের জনজীবন এবং কৃষিক্ষেত্রের জন্য অপরিহার্য।

বিহারের ইতিহাস

বিহারের ইতিহাস প্রাচীন সময় থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। এই রাজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস কেবলমাত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নয়, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও এর স্থানীয় এবং জাতীয় গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সিলেটের ইতিহাস

মহাবীর এবং পাল রাজবংশ

বিহার ইতিহাসে মহাবীর অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর এবং তার জন্ম বিহারের বৈশালী জেলায়। মহাবীরের শিক্ষা এবং আদর্শ বিহারের সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশাল অবদান রেখেছিল। পাল রাজবংশের সময়ে (৭৫০–১১৭৪ CE) বিহারের শিক্ষা ও ধর্মের মহান কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছিল। পাল রাজবংশের শাসনের অধীনে নালন্দা, বিক্রমশীলা এবং ওদান্তপুরী মহাবিদ্যালয়গুলির মতো শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে, যা পুরো বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে বিহারের ভূমিকা

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বিহারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চম্পারণ সত্যাগ্রহ উল্লেখযোগ্য। বিহারের মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯১৭ সালের চম্পারণ সত্যাগ্রহ গান্ধীজি নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সফল অহিংস আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, যিনি ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

বিহারের সংস্কৃতিগত ইতিহাস

বিহারের সংস্কৃতি প্রাচীন সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মহাবীর, পাল রাজবংশ ও অন্যান্য সম্রাটগণের শাসনকালে সাহিত্য, শিল্পকলা এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। বৈদিক সভ্যতার (১৫০০–৫০০ BCE) সময়কাল থেকে আধুনিক ব্রিটিশ শাসনামল (১৮৫৮–১৯৪৭) পর্যন্ত বিহার শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময় বিহার তার সাংস্কৃতিক উচ্চাচ্ছে পৌঁছেছিল।

বিহারের প্রধান শহরসমূহ

বিহার রাজ্যের বিভিন্ন শহর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মর্যাদায় ভরপুর। বিহারের শহরসমূহের গৌরবময় ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রত্যেকেরই নজরে আনে। শহরগুলির মধ্যে পটনা এবং নালন্দা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পটনা: রাজ্যের রাজধানী

পটনা বিহারের রাজধানী এবং এটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী, পটনার জনসংখ্যা ১৬,৮৩,২০০। এটি একটি প্রধান ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাচীন মগধ রাজ্যের অন্তর্গত পটনা একসময় মৌর্য সাম্রাজ্যের মগধ রাজধানী ছিল। বিহারের শহর পটনা বর্তমানেও শিক্ষা এবং ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভোপালের প্রাধান্য

ভোপাল শহরটি মূলত মধ্যপ্রদেশের রাজধানী, তবে এটি বিহারের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এবং অনেকাংশে বিহারের অর্থনীতি এবং কৃষ্টির ওপর প্রভাব ফেলছে। ভোপালের আধুনিক অবকাঠামো এবং শিল্পের বিকাশ বিহারের শহরসমূহকে উৎসাহিত করেছে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে।

নালন্দা: ইতিহাসের সাক্ষী

নালন্দা বিহারের ঐতিহাসিক শহর এবং এটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরিচিত। নালন্দার বিশ্ববিদ্যালয় একসময়ের দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ছিল, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে ছাত্ররা পড়াশোনা করতে আসতো। নালন্দার ইতিহাস বহু বিখ্যাত প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং পাঠ্যসামগ্রীর সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে নালন্দা বিহারের শহর এবং পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ।

বিহারের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য

বিহার রাজ্যের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য তার ভাষা, সাহিত্য, নৃত্য এবং সংগীতে প্রতিফলিত হয়। বিভিন্ন বিহারের উৎসব এবং অনুষ্ঠান এই ঐতিহ্যকে আরো রঙ্গিন ও সমৃদ্ধ করে তোলে। এই বিভাগে আমরা বিহার সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

ভাষা এবং সাহিত্য

বিহারের সাহিত্য ধারা মূলত মৈথিলি, ভোজপুরী, এবং মাগধী ভাষায় বিকশিত হয়েছে। শুভঙ্কর বই এবং ভাস্কর আচার্য্যের মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকগণ বিহারের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। নেপালী সাহিত্যের প্রভাবও বিহার সংস্কৃতিতে পরিলক্ষিত হয়। বিহারের সাহিত্যকর্ম প্রায়ই ঐতিহাসিক এবং সামাজিক বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়, যা রাষ্ট্রের মনোভঙ্গির প্রতিফলন।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ

নৃত্য এবং সংগীত

বিহারের সংস্কৃতি নাচ এবং গানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। বিহার নৃত্য সারেঙ্গি, ধোল এবং তবলাতে আকর্ষণীয় হয়। বিহারের বিখ্যাত লোকনৃত্যগুলির মধ্যে রয়েছে ভোজপুরি নাচ, ঝুমার এবং ছৌ। সংগীতের দিক থেকে, বিহারিত ভজন এবং কীর্তন প্রচলিত। হাস্যকৌতুক ধাঁচের গানগুলোও বিহারের কাছে প্রিয়।

উৎসব এবং অনুষ্ঠান

বিহারের উৎসব রাজ্যের সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ। ছত্‌পূজা, দুর্গা পূজা এবং সরস্বতী পূজা হল বিহারে জনপ্রিয় উৎসব। এই উপলক্ষে প্রচুর মানুষ মিলে বিহারীতে গান গায় এবং লোকনৃত্যে অংশ নেয়। এছাড়াও, হোলি এবং দীপাবলি উৎসবগুলি প্রচলিত বিহারি অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে। প্রতিটি উৎসবের ফলে বিহারীদের জীবন আরো রঙিন এবং সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

বিহারের অর্থনীতি

বিহার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি, শিল্প এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করে।

কৃষি এবং এর প্রভাব

বিহারের সমৃদ্ধ কৃষিখাত রাজ্যের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। ধান, গম এবং মাছ চাষ বিহার কৃষির প্রধান অঙ্গ। কাছাকাছি সময়ে, বিহারের কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে, যা অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক হয়েছে। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় 63% অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী (ওবিসি) এবং অতিপিছিয়ে পড়া শ্রেণী (ইবিসি) এর অন্তর্ভুক্ত, যা বিহার কৃষি অবকাঠামো এবং কৃষির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করেছে।

শিল্প এবং ব্যবসা

বিহার শিল্প ও ব্যাপারির একটি বৃহত্তম উঠতি কেন্দ্র। ঠাকুর, গঙ্গার প্রেক্ষিতে এটি যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। এসএএমএম শিল্পপতিদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বিহার শিল্পের উন্নয়ন রাজ্যের অর্থনীতিতে উচ্চতর অবদান রাখছে এবং বিহারের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

পর্যটন খাতের উন্নয়ন

বিহার পর্যটন খাত দেখতে নতুন অবদান রাখা শুরু করেছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে আগ্রহ অনেকটাই বাড়িয়েছে পর্যটকদের। পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিহারের পর্যটন খাত নতুন গতি পাইয়ে দিচ্ছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে। বিহার অর্থনীতি পর্যটন খাতের অবদান নিয়ে আরও সমৃদ্ধিশালী হচ্ছে এবং পর্যটন ক্ষেত্রের বিভিন্ন উদ্যোগ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহায়ক করছে।

বিহারের শিক্ষা ব্যবস্থা

বিহারের শিক্ষা প্রণালী ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ। যেমন বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের চাহিদা এবং গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের মান অর্জনে গণ শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বিহার। বর্তমান সময়ে বিহার শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বিহারে শিক্ষার অগ্রণী ভূমিকা রাখছে কিছু বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর পাশাপাশি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়, বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি এখানে উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে অনেকে দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে।

শিক্ষা সংস্কারের চ্যালেঞ্জ

বিহারের শিক্ষা সংস্কার বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোতে উন্নতি আনা, যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরী এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া বিহারের অনেক গ্রামীণ এলাকায় এখনো শিক্ষার অভাবে পিছিয়ে আছে, যা উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বৈশ্বিক পর্যায়ে বিহারের শিক্ষার মান

বিহারের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডগুলিকে গ্রহণ করা জরুরি। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষামান নিশ্চিত করতে হলে আমাদের উচিত বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার ব্যাপ্তি বাড়ানো। এভাবে বিহার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে আমরা বিশ্ব দরবারে বিহারের নাম উজ্জ্বল করতে পারব।

আরও পড়ুনঃ  জাহাঙ্গীরনগর

প্রাচীন ঐতিহ্যের নিরিখে বিহারের শিক্ষা সংস্কারে স্বপ্ন এবং সংকল্পকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

বিহারের পর্যটন কেন্দ্র

বিহার রাজ্যটি তার ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক। এখানকার বিভিন্ন স্থাপত্য এবং প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়ে আমরা আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিহারের কিছু প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাচীন ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে খ্যাত, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ধ্যান এবং শিক্ষার জন্য অন্যতম প্রধান স্থান ছিল। এখানে প্রায় ১০ হাজার ভিক্ষু ও ছাত্র তাদের শিক্ষা গ্রহণ করত। বর্তমানে এখানকার ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের প্রচুর আকর্ষণ করে। পাটনা থেকে প্রায় ৯৫ কিমি দূরে অবস্থিত নালন্দা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য।

বুদ্ধগয়া: ধর্মীয় ভ্রমণ

বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানগুলির মধ্যে বুদ্ধগয়া অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। গয়া জেলার এই স্থানটি সেই পবিত্র স্থান যেখানে ভগবান বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেন। বোধগয়াতে রয়েছে মহাবোধি মন্দির এবং বিশাল বোধি বৃক্ষ। পর্যটকদের জন্য এটি খুবই অর্থবহ এবং প্রার্থনার জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। পাটনা থেকে বোধগয়ার দূরত্ব প্রায় ১১৬ কিমি।

কিঙ্গল সেতু

রাজগীরে অবস্থিত কিঙ্গল সেতু তার স্থাপত্য এবং বিখ্যাত নির্মাণকৌশলের জন্য প্রসিদ্ধ। এই সেতুটির অপর দিকে রয়েছে বিশ্ব শান্তি স্তূপ, যা বিশ্বের ৭টি শান্তি প্যাগোডার মধ্যে অন্যতম। এই স্থাপনাটি সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে প্রাকৃতিক সুন্দর দৃশ্য এবং আধ্যাত্মিক শান্তির এক অপরূপ স্থান।

বিহারে পর্যটন কেন্দ্রগুলি দর্শকদের মনকে মোহিত করে। এখানে অক্টোব থেকে মার্চ মাসে ভ্রমণের সেরা সময় হিসেবে ধরা হয়। বিহারের এই বিস্ময়কর স্থানগুলি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে অপরিচিত এক জগতে নিয়ে যায়।

FAQ

বিহারের ভৌগোলিক অবস্থান কোথায়?

বিহারের ভৌগোলিক অবস্থান ২৫.৪° উত্তর ৮৫.১° পূর্বে। এই রাজ্যটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত, যা রাজ্যকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বিভক্ত করেছে।

বিহারের প্রধান নদীসমূহ কি কি?

বিহারের প্রধান নদী গঙ্গা, যা রাজ্যের মূল প্রবাহ হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও কোসি, গণ্ডক ও সোন নদী উল্লেখযোগ্য।

মহাবীর এবং পাল রাজবংশের সাথে বিহারের সম্পর্ক কি?

মহাবীরের জন্ম বিহারে হয়েছিল এবং পাল রাজবংশের সময়ে বুদ্ধ ধর্মের উদ্ভব হয়। বিহার এই কারণে একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব রাখে।

বিহারের ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে কি ভূমিকা ছিল?

বিহার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে চম্পারণের সত্যাগ্রহ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বে বিশেষ পরিচিত।

বিহারের প্রধান শহরসমূহ কি কি?

বিহারের প্রধান শহর পটনা, রাজ্য রাজধানী। এছাড়াও ভোপাল এবং নালন্দা উল্লেখযোগ্য শহর যাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে।

বিহারের সংস্কৃতি কেমন?

বিহারের সংস্কৃতি তার ভাষা, সাহিত্য, নৃত্য এবং সংগীতে প্রতিফলিত হয়। এখানের প্রধান উৎসবগুলি হল ছত্‌পূজা এবং দুর্গা পূজা।

বিহারের অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হয়?

বিহারের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি-নির্ভর, যেখানে ধান, গম এবং মাছ চাষ মুখ্য। শিল্প ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে।

বিহারের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ কি কি?

বিহারের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রাচীন শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত।

বিহারের পর্যটন কেন্দ্রগুলি কি কি?

বিহারের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বুদ্ধগয়া এবং কিঙ্গল সেতু।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button