নূহাশ পল্লী – বাংলাদেশের অপরূপ পর্যটন স্পট

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক স্পট এর মধ্যে অন্যতম নূহাশ পল্লী। এটি ঢাকার কাছেই গাজীপুরে অবস্থিত। নূহাশ পল্লী, বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্টি এবং স্মৃতির এক অপরূপ প্রতিফলন। গাজীপুর ভ্রমণে নূহাশ পল্লীর পর্যটন একটি অতি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া এই পল্লী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সৃজনশীলতার সংমিশ্রণে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

নূহাশ পল্লীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন বাগান, লেক এবং নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী পর্যটকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। স্থানীয় জনসংখ্যার জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি অনুভবের জন্য এই স্থানটি একটি আদর্শ জায়গা। গাজীপুর ভ্রমণ এর তালিকায় নূহাশ পল্লী ঘুরে দেখা একটি অপরিহার্য অভিজ্ঞতা। এটি শুধু বাংলাদেশের পর্যটন ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছেও একটি স্বপ্নের স্পট হিসেবে পরিচিত।

Contents show

নুহাশ পল্লী কী?

নুহাশ পল্লী বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত। এটি হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত, এই স্থানটি তার সাহিত্যে, নাটকে এবং সিনেমায় বিভিন্ন ভাবে এসেছে, যা প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। গাজীপুরের বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিত, এটি পর্যটকদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য। এখানে প্রবেশ ফি ১২ বছরের উর্ধ্বে সবার জন্য ২০০ টাকা, তবে ১২ বছরের নিচে শিশুদের এবং ড্রাইভারদের কোন ফি নেই।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ

প্রাকৃতিক স্থান হিসেবে নুহাশ পল্লী অত্যন্ত মনোরম। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, ফুল এবং সবুজ ঘাসে মোড়ানো ল্যান্ডস্কেপ দেখতে পারেন। পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা বিভিন্ন রকমের লেক এবং বাগান রয়েছে, যা নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে। এই বাগানবাড়ির পথচারণায় প্রাকৃতিক স্থান ও মনোরম পরিবেশের সমন্বয়ে ভ্রমণকারীরা উপভোগ করতে পারেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

আরও পড়ুনঃ  মিরপুর - ঢাকার একটি জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

নুহাশ পল্লীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে যা হুমায়ূন আহমেদ এর প্রভাবকে বহন করে। এখানে স্থাপত্য, শিল্পকলা এবং নানা রকম সাংস্কৃতিক উপাদান পর্যটকদের জন্য প্রদর্শিত হয়। তার সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই স্থানটিতে চিত্রিত হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণীয় প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

এর অবস্থান ও বাড়ির দৃশ্য

গাজীপুরের বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিত নুহাশ পল্লী গাজীপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য ‘বৃষ্টি বিলাস’ এবং ‘ভূত বিলাস’ বিশ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে। বনভোজনের সময় গ্রুপের জন্য আলাদা প্রবেশ ফির ব্যবস্থা আছে, যা নির্ধারিত সময়ে ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া, নুহাশ পল্লীর আশেপাশে আরো আকর্ষণীয় স্থান যেমন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবং বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রয়েছে যা ভ্রমণের আয়োজনে যোগ করে আরো রোমঞ্চ।

নুহাশ পল্লীর ইতিহাস

নুহাশ পল্লী বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি এই স্থানটি একটি সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক মিলনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে মানুষ বাংলার সাহিত্যিক ঐতিহ্যকে অনুভব করতে পারে।

প্রতিষ্ঠাতা এবং উদ্দেশ্য

হুমায়ূন আহমেদ, বাংলা সাহিত্যএর এক অবিস্মরণীয় নাম, ১৯৯৮ সালে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, এটি একটি শান্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্টি করতে যেখানে তিনি নিজের সাহিত্য কর্ম পরিচালনা করতে পারবেন। তিনি নুহাশ পল্লীর নামকরণ করেছিলেন তার কনিষ্ঠ পুত্র নুহাশের নাম অনুসারে। তাঁর মতামত অনুযায়ী, এই জায়গাটি শুধুমাত্র একটি বাড়ি নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

নুহাশ পল্লীর ইতিহাস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন সাহিত্য উৎসব এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে যা হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিতে গ্রহণ করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ নিজে এখানেই বেশ কয়েকটি বিখ্যাত নাটক এবং চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘আগুনের পরশমণি’ এবং ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। এখানে তিনি অনেকগুলি জনপ্রিয় বই লিখেছেন যা বাংলা সাহিত্যএ বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

স্থানীয় জনসংখ্যার জীবনযাত্রা

নুহাশ পল্লীর আশপাশে বাস করা স্থানীয় জনসংখ্যার জীবনযাত্রা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব এবং সংগ্রামের কারণে, এই এলাকা এখন একটি সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা এখানকার পর্বত, পুকুর এবং বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণেও অংশ নেন। এখানে বিভিন্ন কার্যকলাপ এবং উৎসব স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলেন।

আরও পড়ুনঃ  স্পেন: ইউরোপের সবচেয়ে মনোরম দেশ

নূহাশ পল্লীর দর্শনীয় স্থান

নূহাশ পল্লী, যা বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত, একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার সমৃদ্ধ স্থান। হুমায়ূন আহমেদ এর নিজ হাতে গড়ে তোলা এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসটি এখন পর্যটক আকর্ষণ এর একটি কেন্দ্রবিন্দু। চলুন জেনে নিই নূহাশ পল্লীর কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

মনোরম लेक ও বাগান

নূহাশ পল্লীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির মূল কেন্দ্রবিন্দু হল তার মনোমুগ্ধকর লেক এবং সবুজ বাগান। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ ও ফুল রয়েছে যা চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য স্থাপন করে। প্রকৃতিপ্রেমিরা এই স্থানে এসে শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পান এবং নির্জনতার প্রশান্তি উপভোগ করেন।

জাদুঘর ও শিল্পকला কেন্দ্র

নুহাশ পল্লীতে একটি ছোট জাদুঘর এবং শিল্পকলা কেন্দ্র রয়েছে যা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। এখানে হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন শিল্পকলা ও সাহিত্যকর্ম প্রদর্শিত হয়। এই কেন্দ্রটি শিল্পকলা প্রেমিদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে যেখানে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং আধুনিক শিল্পকলা একত্রিত হয়েছে।

পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ

নূহাশ পল্লীতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এখানকার সুইমিং পুল যা অনেককে আকৃষ্ট করে। তাছাড়া, প্রতি শীতে এখানকার পিকনিক স্পটগুলোতে এই সময়কালে প্রচুর মানুষ আসেন। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পিকনিক স্পটের ভাড়া ৬০,০০০ টাকা এবং নিয়মিত দিনগুলোতে এটি ৫০,০০০ টাকা। এছাড়াও নূহাশ পল্লীর পর্যটক আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে এখানকার রাজকুমার চেয়ারের মত স্থাপনা এবং শিশুপার্ক, যা পরিবারের সকল সদস্যকে আকর্ষণ করে।

বিভিন্ন গর্দিষ्ठি�্�

নূহাশ পল্লীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন আনন্দদায়ক কার্যকলাপের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সময় কাটানোর জন্য অনেক আকর্ষণীয় সুযোগ রয়েছে যা সকল বয়সের মানুষকে আকৃষ্ট করে।

নৌকা ভ্�মণ

নূহাশ পল্লীর উত্তর প্রান্তে ছিমছাম দিঘি বা ছোট লেকটি রয়েছে, যেখানে নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। নৌকা ভ্�মণ এর মাধ্যমে আপনি পল্লীর সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক শান্তি উপভোগ করতে পারবেন।

फ�্�গ্�া�ি

এছাড়াও, পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ফ�্�গ্�া�ি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। এই ফ�্�গ্�া� প্রোগ্রামগুলোতে জাদুর জন্য পরিচিত, যা শিশুদের বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে।

স�্�ান�্� �হাবারের स�্�ाদ

নূহাশ পল্লীতে একটি ছোট খাবারের দোকান রয়েছে যেখানে সহজ এবং সুস্বাদু ভর্তা-ভাত পাওয়া যায়। স্বাদ নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এই সিংহভাগ খাদ্য পরিবেশন করে সকল পর্যটকদের মন ছুঁয়ে যায়।

স�রा স�্� परिद� क�্� ज�্� Invite dinners and tourists to

নুহাশ পল্লী একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট, যা বাংলাদেশে থেকে আসা সকল ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিশেষ বনভূমি আর ঐতিহ্য এখানে সময় কাটানোর জন্য একটি অসাধারণ জায়গা।

আরও পড়ুনঃ  শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

মৌসুম ভিত্তিক আনন্দ

বছরের বিভিন্ন সময় এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় যেমন পহেলা বৈশাখে বৈশাখী মেলার আয়োজন। এছাড়াও বৃষ্টির মৌসুমে লীলাবতী লেকের শুভ্রতার সাথে ভুত বিলাস বাংলোতে রাত কাটানোর এক অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে। বসন্তের সময়ে ফুলের শোভা আর ফলের মৌসুমে ফলের গন্ধে মন ভরে ওঠে।

আকর্ষণীয় প্রেসেন্টেশন

নুহাশ পল্লীর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং ঔষধি গাছের এককম অনন্য ভান্ডার রয়েছে। ফল ও বনজ গাছের সাথে সাথে মুখরোচক কফিরও ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ফোক বিদ্যার প্রদর্শনীও এখানে অনুষ্ঠিত হয়, যা পর্যটকদের এক অন্য রকম আনন্দ দেয়।

উল্লেখযোগ্য স্থান

নুহাশ পল্লীতে পদ্ম পুকুর, ভাস্কর্য বাগান এবং জৈব সুইমিং পুলে সময় কাটানোর জন্য রয়েছে। এছাড়াও এখানে আছে বিভিন্ন দুুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ যা আপনার শরীর ও মনকে সুস্থ রাখবে। প্রতিদিন ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ দেখতে পাবেন।

FAQ

নুহাশ পল্লী কী?

নূহাশ পল্লী ঢাকার কাছে গাজীপুরে অবস্থিত একটি বাগানবাড়ি, যা বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্থানটি প্রাকৃতিক এবং ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্যের সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে।

নুহাশ পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা এবং উদ্দেশ্য কী?

নুহাশ পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ূন আহমেদ। এই স্থানটি তিনি কেবল তার নিজের জন্য নয়, বাঙালির সাহিত্যিক এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সম্ভার হিসেবে তৈরি করেছিলেন।

নুহাশ পল্লীর অবস্থান কোথায়?

নুহাশ পল্লী ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুরে অবস্থিত। এটি বেশ সহজেই পর্যটকদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল।

নূহাশ পল্লীর দর্শনীয় স্থানগুলো কী কী?

নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন মনোরম লেক ও বাগান, জাদুঘর ও শিল্পকলা কেন্দ্র, এবং পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। এগুলো সবই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে।

নূহাশ পল্লীতে কী কী কার্যক্রম বা অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়?

নূহাশ পল্লীতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় কার্যক্রম উপভোগ করা যায়, যেমন নৌকা ভ্রমণ, ফায়ার ক্যাম্প, এবং স্থানীয় ভোজনের স্বাদ। প্রতিটি অভিজ্ঞতাই এখানে বিশেষ এবং স্মরণীয়।

নূহাশ পল্লীতে কীভাবে সময় কাটানো যায়?

নূহাশ পল্লীতে আপনি প্রতি মাসে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। এছাড়া, আউটডোর পিকনিক, বারবিকিউ ডিনার, এবং ভূমি ভ্রমণের সুযোগও এখানে পাবেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button