বাংলাদেশি পাসপোর্ট – সম্পূর্ণ তথ্য ও নির্দেশিকা

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সবকিছু জানতে চান? এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। বাংলাদেশে প্রথম এমবেডেড বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট জারি হয় ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালে এবং প্রথম মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ১ এপ্রিল ২০১০ সালে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করে ২২ জানুয়ারি ২০২০ সালে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই আর্টিকেলটিতে, বাংলাদেশি পাসপোর্টের বিভিন্ন প্রকারভেদ, এর গুরুত্ব, আবেদন প্রক্রিয়া ও নবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশিকা প্রদান করা হবে। সাধারণ এমবেডেড বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট থেকে মেশিন রিডেবল ও ই-পাসপোর্ট পর্যন্ত সকল পাসপোর্টের তথ্য ও নির্দেশিকা পাবেন এখানে। পাসপোর্ট তৈরির খরচ, আবেদন ফরম পূরণ এবং হারানো পাসপোর্টের ব্যবস্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবেন এই নির্দেশিকায়।

Contents show

বাংলা পাসপোর্ট কি?

বাংলাদেশিরা যারা আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করতে চান, তাঁদের জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য ভ্রমণ দলিল। এটি শুধু ভ্রমণের অনুমতি দেয় না বরং নাগরিকত্বেরও প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। পাসপোর্ট একটি সরকার কর্তৃক জারি করা নথি যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলে।

পাসপোর্টের সংজ্ঞা

পাসপোর্ট সংজ্ঞা অনুসারে, এটি একধরনের বৈধ নথি যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে ব্যক্তির পরিচয় এবং নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। আধুনিক পাসপোর্টে অন্তর্ভুক্ত চিপের মাধ্যমে ভ্রমণকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ও বায়োমেট্রিক ডেটা সংরক্ষণ করা থাকে। পাসপোর্টের গুরুত্ব এ কারণে যে এটি ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলে।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের গুরুত্ব

পাসপোর্টের গুরুত্ব নিয়ে বলতে গেলে, এটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি না থাকলে আন্তর্জাতিক যাত্রা সম্ভব নয় এবং ভ্রমণকারীকে পরিচয় প্রমাণ করতে হবে অন্যান্য দেশে। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, যা আরও উন্নত নিরাপত্তা ও শনাক্তকরণের সুবিধা প্রদান করে।

ই-পাসপোর্টে থাকা মাইক্রোচিপের মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষা ও যাচাইকরণ সহজ হয়। এর ফলে যাত্রীরা দ্রুত ও সহজে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারেন। গ্লোবালি, ই-পাসপোর্টগুলো উচ্চ গ্রহণযোগ্য এবং উন্নত প্রযুক্তির দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের দ্রুত এবং নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

  • তথ্য নিরাপত্তা ও যাচাইকরণ – ই-পাসপোর্টের মাইক্রোচিপ ডাটার সুরক্ষায় সাহায্য করে।
  • বায়োমেট্রিক ডেটা সংরক্ষণ – ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিস স্ক্যান থাকে ই-পাসপোর্টে।
  • দ্রুত ইমিগ্রেশন সমাধান – ইমিগ্রেশন সময় কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

যখন পাসপোর্টের সংজ্ঞা ও পাসপোর্টের গুরুত্ব বোঝা যায়, তখন এটিকে শুধু একটি ভ্রমণ নথি নয়, বরং একটি নিরাপদ পরিচয় প্রমাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যায়।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরণের পাসপোর্ট পাওয়া যায়। প্রতিটির আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন আছে। সচী পাসপোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জন্য, কূটনৈতিক পাসপোর্ট বিশেষ কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের জন্য এবং সরকারি পাসপোর্ট সরকারি সফরের জন্য প্রদান করা হয়।

সচী (Ordinary) পাসপোর্ট

সচী পাসপোর্ট মূলত সাধারণ নাগরিকদের জন্য প্রদেয়। এই পাসপোর্টটির মেয়াদকাল সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর। সচী পাসপোর্টের রঙ সবুজ এবং এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট

কূটনৈতিক পাসপোর্ট মূলত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের জন্য বিতরণ করা হয়। এই পাসপোর্টটি দেশের সম্মান ও গোপনীয়তা রক্ষার্থে বিশেষ সামর্থ্য প্রদান করে এবং নির্দিষ্ট দেশগুলোতে ভিসা মুক্ত ভ্রমণ সুবিধা দেয়। কূটনৈতিক পাসপোর্টের রঙ লাল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা সর্বোচ্চ মানের।

সরকারি পাসপোর্ট

সরকারি পাসপোর্ট সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের প্রদান করা হয়। এটি মূলত ব্লু রঙের হয় এবং এটি ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য সরকারের অনুমতি বা সাধারণ আদেশ প্রয়োজন। সরকারি পাসপোর্ট তাদের দায়িত্বপালনের সময় সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ  কুয়াকাটা - বাংলাদেশের অনন্য সমুদ্র সৈকত

পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেশের নাগরিকদের পরিচয় এবং ভ্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা পুরণ করে, যেমন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় বৈধ প্রমাণপত্র এবং বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

আন্তর্জাতিক ভ্রমণে

পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য এক টুকরো কাগজপত্র। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রমাণই নয়, বরং বিদেশে অবস্থানের সময় একটি বাস্তব পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে যাত্রীরা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যজনকভাবে গন্তব্যস্থানে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে ই-চিপযুক্ত বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী এই উদ্যোগটি ভ্রমণ এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে আন্তর্জাতিক স্তরে অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ই-চিপযুক্ত পাসপোর্টে ব্যবহারকারীর আঙুলের ছাপ, আইরিশ স্ক্যান এবং রঙিন ছবি সংরক্ষিত থাকে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড পালন করে।

পরিচয়পত্র হিসেবে

পাসপোর্ট কেবল ভ্রমণের প্রমাণপত্রই নয়, দেশের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে প্রামাণিক পরিচয়পত্র হিসেবেও কাজ করে। বিভিন্ন সরকারি সেবা, ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট একটি বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের মাধ্যমে দেশের নাগরিকগণ একটি বৈশ্বিক পরিচয় লাভ করেন, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সহ নিরাপত্তা, ভিসা এবং ইমিগ্রেশনের মতো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার পাসপোর্ট যেমন সাধারন, কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টের মাধ্যমে এ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়।

সুতরাং, পাসপোর্টের গুরুত্ব কোনভাবেই উপেক্ষা করা যায় না; এটি বৈদেশিক ভ্রমণ এবং প্রভাবশালী পরিচয়পত্র হিসেবে প্রথম সারির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পরিচয়পত্র হিসাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট একটি নিরাপদ এবং প্রমাণিত মাধ্যম।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশি পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য এবং এর বেশ কিছু অত্যাধুনিক পাসপোর্ট ডিজাইন এবং ফিচারগুলো অন্যান্য পাসপোর্ট থেকে একে আলাদা করে। এর ফলে ভ্রমণকারী এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুমিকা পালন করা সম্ভব হয়েছে। পাসপোর্টের ডিজাইন এবং ফিচারগুলি বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

ডিজাইন ও ফিচার

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি কেবল বাহ্যিক দিক থেকেই নয়, বরং নিরাপত্তার দিক থেকেও উৎকৃষ্ট হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। ই-পাসপোর্টে একটি চিপ থাকে যেখানে পাসপোর্টধারীর সকল তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত থাকে।

  • পাসপোর্ট ডিজাইন লামিনেটেড পাতাও বিভিন্ন হোলোগ্রাফিক ফিচার যুক্ত যা নকল করা প্রায় অসম্ভব।
  • ই-পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক ফিচার যেমন আঙুলের ছাপ ও আইরিস স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  • তথ্য যাচাই ও সফরকারী তথ্য নিশ্চিত করার জন্য মাইক্রোচিপ আনবর্ড করেন।

এই সুবিধাগুলোর ফলে পাসপোর্টধারীরা তিনটি সুরক্ষা স্তর পায়। তাই, এটি ব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দ্রুত ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়। ই-পাসপোর্টের ডিজাইন এবং ফিচারের উন্নয়ন মূলত বাংলাদেশি পাসপোর্টের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা

বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করেছে। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সুবিধাজনক হয়েছে।

ই-পাসপোর্টসমূহ দেশে-বিদেশে অধিক নিরাপত্তা, গ্রহণযোগ্যতা, এবং ফিচারের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে, ভ্রমণকারী সহজে দেশান্তরে ভ্রমণ করতে পারেন, এবং যেকোনো ইমিগ্রেশন পয়েন্টে দ্রুত যাচাই এবং পাসপোর্ট চেক করতে পারেন।

এই বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সহজগম্যতা পেয়েছে এবং ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ডিজাইন এবং ফিচারের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতায় এই সংগ্রহসূচী বিশ্বব্যাপী রেয়েছে।

আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া কিছু ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সকল আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট আবেদন ফরম প্রদান করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। এছাড়াও আবেদনকালে নির্দিষ্ট নিয়ম ও নির্দেশিকা পালন করতে হয়।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গেলে নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়, যেমন:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • ফটোগ্রাফ
  • পরিচিতি প্রমাণ (যেমন পৌরসভা সার্টিফিকেট)
  • বিনামূল্যে যানবাহন বিল, চাকরিসূচক আপডেট

একটি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময়, পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণকরার পর এই পাসপোর্ট ডকুমেন্টস জমা দেওয়া আবশ্যক। যদি আগের পাসপোর্টের ডেটা তথ্যের সাথে মিলে যায়, তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই।

আবেদন ফরম পূরণ

পাসপোর্ট ফরম পূরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ই-পাসপোর্টের জন্য, অনলাইন ফরমটি পূরণ করতে হবে, যা বর্তমানে ১০০% আবেদনকারীর জন্য প্রযোজ্য। ফর্ম পূরণের সময় নিশ্চিত করতে হবে যে, সমস্ত তথ্য সঠিক এবং সম্পূর্ণ। আবেদন ফরমটি পূরণে কৃত্রিম ঠিকানার ব্যবহার করা যাবে না; সর্বদা প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে।

  • সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিস: এই সেবাটি শুধুমাত্র তাদের জন্য উপলব্ধ, যাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন বা আগের পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুনঃ  ব্রুনাই: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধ রাজ্য

আবেদন কিভাবে জমা দেবেন

আবেদন প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হলো আবেদন জমা দেওয়া।

  1. অনলাইন ফরম পূরণের পর, সেটি প্রিন্ট এবং পাসপোর্ট ডকুমেন্টস সংযুক্ত করুন।
  2. নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
  3. প্রত্যাশিত ফি জমা এবং রসিদ সংরক্ষণ করুন।
  4. পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হলে দ্রুততার সাথে তা সম্পন্ন করুন, বিশেষত যদি আপনার মেডিকেল বা শিক্ষা সংক্রান্ত কারণ থাকে তবে ঢাকার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস ডেস্ক’ এটিকে সহজতর করবে।

উল্লেখ্য, যদি আপনার আবেদন “SB Police Clearance”-এর জন্য অপেক্ষমাণ থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানার সাথে SB/DSB অফিসে যোগাযাগ করুন। এইভাবে সম্পূর্ণ আবেদন জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনিও একটি বৈধ পাসপোর্টের অধিকারী হবেন।

পাসপোর্ট ফি ও সময়সীমা

বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হয় এবং এটিকে অবশ্যই নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। প্রায়শই এই ফি অনলাইনে এ-চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। পাসপোর্ট প্রস্তুতির সময়কাল নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। সাধারণত, পাসপোর্ট প্রস্তুতি হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ ঠিক মতো পালন করাই পাসপোর্ট প্রস্তুতির সময়সীমা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ফি সংক্রান্ত তথ্য

পাসপোর্ট ফি সাধারণত নির্ধারিত ব্যাংকগুলিতে জমা দিতে হয়, যা নিম্নরুপ:

  • সোনালী ব্যাংক
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • ব্যাংক এশিয়া
  • ওয়ান ব্যাংক
  • ঢাকা ব্যাংক

অনলাইনে আবেদনকৃত ফরমের প্রিন্ট কপি, ফি জমা প্রদানের রসিদ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর, যে কোন ক্ষেত্রেই মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে।

পাসপোর্ট প্রস্তুতির সময়কাল

পাসপোর্ট প্রস্তুতির সময়কাল সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে। তবে, এটি অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করতে পারে। যেমন:

  • নির্ধারিত তথ্য ডাটাবেসে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া
  • আবেদনকারীর বয়স অনুযায়ী নথি পূর্ণতা
  • আবেদন জমা প্রক্রিয়ার নির্ভুলতা

পাসপোর্ট ছবি তোলার সময় সাদা শার্ট/পাঞ্জাবী অথবা হালকা রঙের জামা কাপড় পরিধান করা যাবে না। এছাড়া, সকল আবেদনকারীকে সঠিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে, যেমন ২০ বছরের নিম্নে বয়সীদের জন্য অনলাইন জন্ম সনদ এবং ২০ বছরের উর্ধ্বে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন।

হারানো পাসপোর্টের ব্যবস্থা

বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে প্রতি বছর আনুমানিক ৪০০ পাসপোর্ট হারায়, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এলাকায়। হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা আবশ্যক:

রিপোর্ট করণীয়

যদি হারানো পাসপোর্টের ঘটনা ঘটে, তাহলে প্রথমেই নিকটবর্তী থানায় জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করতে হবে। এ প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে সম্পন্ন করতে হবে যাতে পরবর্তী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যায়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসমূহ যাচাই এবং ফটোকপি প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, অনুপস্থিত নথিপত্রের জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন: হাইকমিশনে ইমিগ্রেশন পাসপোর্ট জমা দেওয়া।

নতুন পাসপোর্টের আবেদন

হারানো পাসপোর্ট পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি শুরু করতে নতুন পাসপোর্ট আবেদন করা জরুরি। প্রয়োজনীয় ফি এবং নথিপত্র সহ, নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত, জরুরি অবস্থায় পাসপোর্ট পেতে ২০০০ টাকা এবং অতিজরুরি না হলে ১০০০ টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়াও, প্রবাসীদের পাসপোর্ট হারানোর ক্ষেত্রে নিকটবর্তী বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা উচিত, যা নতুন পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।

একবার সমস্ত প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে একটি “ট্রাভেল পারমিট” জারি করা হয়, যা ব্যক্তি তার দেশে ফিরে আসতে সক্ষম করে এবং নতুন পাসপোর্টের জন্য পুনরায় আবেদন করতে পারে। জরুরি সময়ে তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব নতুন পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা গুরুত্বপূর্ণ।

নবায়ন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা যায়। পাসপোর্ট নবায়নের জন্য সঠিক ডকুমেন্টস এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।

নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

পাসপোর্ট নবায়নের জন্য নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস প্রয়োজন:

  • পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি
  • আবেদন ফরম পূরণ
  • সাধারন ডেলিভারির জন্য ৩৪৫০ টাকা আর জরুরী ডেলিভারির জন্য ৬৯০০ টাকা

সঠিক তথ্য প্রদান করে এবং প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করলে পাসপোর্ট নবায়ন কার্য সম্পন্ন হবে।

নবায়ন আবেদন কিভাবে করবেন

পাসপোর্ট নবায়নের পদ্ধতি নিচে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো:

  1. প্রথমে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করুন।
  2. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করুন।
  3. ফি প্রদান করুন। যেকোনো ৬ টি ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দেওয়া সম্ভব, যথা:
  • সোনালী ব্যাংক
  • ওয়ান ব্যাংক
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • ব্যাংক এশিয়া
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক
  • ঢাকা ব্যাংক
  • তথ্য যাচাই করে জমা দিন।
  • নবায়নের জন্য আপনার নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফি প্রদান এবং আবেদন জমা করুন।
  • নবায়নের পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং সঠিক ডকুমেন্টস প্রদান করে, আপনি সহজেই আপনার পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

    আরও পড়ুনঃ  মিরপুর - ঢাকার একটি জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা

    বাংলাদেশи পাসপোর্টের বৈদেশিক স্বীকৃতি

    বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক স্বীকৃতি এবং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট বহনকারীরা অনেক ক্ষেত্রে ভিসা মুক্ত দেশ ভ্রমণের সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ধরনের সুবিধা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে নির্দিষ্ট দেশগুলোর নিয়মাবলি এবং ভিসা অর্জন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

    ভিসা মুক্ত দেশসমূহ

    বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বর্তমানে প্রায় ৪১টি দেশে ভিসা মুক্তভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। এদেশগুলির মধ্যে মালদ্বীপ, নেপাল, এবং ভুটান প্রাথমিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভিসা মুক্ত দেশে ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করাও প্রয়োজনীয় হতে পারে, যা দেশভেদে পরিবর্তিত হয়। বৈদেশিক স্বীকৃতি পাওলার ফলে বাসিন্দারা এইসব দেশ ঘুরে বেড়ানোর সময় অধিক সুবিধা লাভ করেন।

    ভিসা অর্জনের তথ্য

    বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীর বৈদেশিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে ভিসা অর্জন সম্ভব হয়। এটি সাধারণত নির্ভর করে পাসপোর্ট ধরণ, ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর। অনেক দেশেই অনলাইন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সুবিধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা সহজেই ভিসা অর্জন করতে পারেন। ভিসা মুক্ত দেশ এবং ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য ভালভাবে অনুধাবন করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াটা ভ্রমণকে আরও নির্ঝঞ্ঝাট করে তুলবে।

    পাসপোর্ট ত্রুটির সংশোধন

    পাসপোর্টের তথ্যে ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা জরুরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ পরিপত্র অনুসারে, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্টের তথ্যে গড়মিল থাকলে তা সংশোধন করার উপায় নির্দেশিত হয়েছে। সংশোধনের জন্য সংশোধন ফরম এবং পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তনের অঙ্গিকারনামা স্বাক্ষর করে জমা দিতে হয়।

    পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জরুরি সংশোধনে ৭ কর্ম দিবসে এবং সাধারণভাবে ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়। সংশোধনের জন্য আবেদনকারীর নাম, পিতা-মাতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, এবং পেশা পরিবর্তনের মতো তথ্য প্রয়োজন হয়।

    পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ফি নির্ধারিত রয়েছে। ৫ বছরের মেয়াদীর ৪৮-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য স্বাভাবিক ফি ৪০২৫ টাকা, জরুরী ৬৩২৫ টাকা এবং খুব জরুরী ৮৬২৫ টাকা। ৬৪-পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ফি যথাক্রমে ৬৩২৫, ৮৬২৫ এবং ১২০৭৫ টাকা। ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের ফি আরও বেশি, সেগুলি নিয়মিত, জরুরি এবং খুব জরুরি ভিত্তিতে ৫৭৫০, ৮০৫০ এবং ১০৩৫০ টাকা হতে পারে।

    সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো হলো লিখিত ই-পাসপোর্ট সংশোধন ফরম, পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গিকারনামা, বর্তমান পাসপোর্টের কপি, ভোটার আইডি কার্ড বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ, বিবাহ সনদ, নাম পরিবর্তনের গেজেট নোটিফিকেশন, সাম্প্রতিক রঙ্গিন ছবি এবং বিবাহিত বা চাকুরিরবিশেষ ক্ষেত্রে বয়স সংশোধনের প্রমাণপত্র।

    FAQ

    বাংলাদেশি পাসপোর্ট কী?

    বাংলাদেশি পাসপোর্ট একটি ভ্রমণ দলিল যা আন্তর্জাতিক যাত্রায় পরিচয় এবং নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। এটি বাংলাদেশ সরকারের থেকে প্রদান করা হয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলে।

    বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রকারভেদ কী কী?

    বাংলাদেশি পাসপোর্ট তিনটি প্রধান ধরনের হয়: সচী (Ordinary) পাসপোর্ট, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, এবং সরকারি পাসপোর্ট। এগুলোর মধ্যে সচী পাসপোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জন্য, কূটনৈতিক পাসপোর্ট বিশেষ কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের জন্য, এবং সরকারি পাসপোর্ট সরকারি সফরে যাওয়া অফিসারদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

    পাসপোর্ট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

    পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য একটি কাগজপত্র এবং এটি বৈধ পরিচয়পত্র হিসাবেও গণ্য হয়। যেকোনো দেশে ভ্রমণের সময় এটি প্রামাণিক নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে।

    বাংলাদেশি পাসপোর্টের ডিজাইন এবং ফিচার কী কী?

    বাংলাদেশি পাসপোর্টে অত্যাধুনিক বায়োমেট্রিক ফিচার রয়েছে, যা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। এটির ডিজাইন নিরাপত্তা প্রত্যাশা মেটায় এবং অপারেশন সুবিধা প্রদান করে।

    পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?

    পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গেলে জন্ম নিবন্ধন, ফটোগ্রাফ এবং পরিচিতি প্রমাণ সহ নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

    পাসপোর্ট আবেদনের জন্য ফি কত?

    পাসপোর্ট আবেদনের জন্য নির্ধারিত একটি ফি প্রদান করতে হয়। এটি নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

    হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে করণীয় কী?

    পাসপোর্ট হারালে দ্রুত পুলিশ স্টেশনে জিডি করতে হবে এবং নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।

    পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কী কী ডকুমেন্টস দরকার?

    পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আগের পাসপোর্টের ফটোকপি, আবেদন ফরম পূরণ এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান আবশ্যক।

    বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছে?

    বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। কিছু দেশের ক্ষেত্রে ভিসা অর্জনে পাসপোর্টের বিশেষ স্বীকৃতি রয়েছে।

    পাসপোর্ট ত্রুটির সংশোধনের জন্য কী করতে হবে?

    পাসপোর্টে কোনো ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপডেট এবং সংশোধন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

    এ ধরনের আরো আর্টিকেল

    Back to top button