বঙ্গবন্ধু সেতু
বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপর অবস্থিত একটি মহামূল্যের অবকাঠামো, যা দেশের পূর্ব বিভাগ ও পশ্চিম বিভাগের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সেতু গত দুই দশকে দেশের পরিবহন খাতে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে।
এই সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়, যার একটি বড় অংশ অর্থাৎ ১৯৬ মিলিয়ন ডলার কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্ডাই ব্যয় করেছে এবং বাকী অর্থ বাংলাদেশ সরকার প্রদান করেছে। বঙ্গবন্ধু ব্রিজ নির্মাণ উপলক্ষে দেশ ও বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচিতি
বঙ্গবন্ধু সেতু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এটি যমুনা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে এবং সেতুর অবস্থান বাংলাদেশকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং এটি ৪৯টি স্প্যান ও ১২৬৩টি ডেক সেগমেন্ট দ্বারা গঠিত।
সেতুর নকশা ও নির্মাণের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে, সেতুটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং নদীর প্রবাহের গতিবিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে চার লেনের সড়ক এবং দুটি রেললাইন রয়েছে যা যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
এই সেতুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের কার্যক্রম সহজতর হয়েছে। সেতুর অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বাংলাদেশকে আরও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেতুটি যমুনা সেতু নামেও পরিচিত এবং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুবর্তমানে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার উল্লেখযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে অসংখ্য মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
যমুনা নদীতে সেতুর গুরুত্ব
বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সংযোগের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এই সেতুটি দ্বারা যমুনা নদীর উপর দিয়ে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখছে।
এই সেতু প্রতিদিন গড়পড়তা ৮৮টি ট্রেন চলাচলের সুযোগ প্রদান করে, যা দেশের অত্যাবশ্যক সেবা ও পণ্যের ত্বরিত পরিবহনে সহায়তা করছে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার, সেতুটি ব্রড-গেজ ট্রেন ১২০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং মিটার-গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে চলাচল করতে পারে। এসব পরিসংখাত্রাও প্রমাণ করে যে সেতু দেশের যাতায়াত ব্যবস্থাকে কিভাবে উন্নত করেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রকল্পে জাইকা সরবরাহ করেছে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা; সমগ্র নির্মাণ খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এই সেতুটি সম্পূর্ণ ইস্পাত দিয়ে নির্মিত, যা এর স্থায়ীত্ব ও মজবুতি নিশ্চিত করে। সেতুটি ১২১টি স্টিল বিম স্প্যান দ্বারা গঠিত, যা ৮০ থেকে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের।
বাংলাদেশের এই অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়া মানে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির পথকে সুগম করা। সড়ক ও রেলপথের উন্নয়নের দ্বারা এই সেতুটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্পের সময়সীমা সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য হিসাবে ধরা হয়েছে, যা বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সংযোগ আরও সুদৃঢ় করবে।
Bangabandhu Bridge এর ইতিহাস
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা বঙ্গবন্ধু সেতু, যা যমুনা সেতু নামেও পরিচিত, তার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৮৫ সালের ৪ জুলাই, যেদিন এর নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। সেতুটির প্রথম উদ্ভোদন সম্পন্ন হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক সংযোগকে আরও সক্ষম করে তোলে।
মূলত ১৯৪৯ সাল থেকেই এই সেতুর ধারণা প্রস্তাবিত হয় এবং অবশেষে ১৯৯৪ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ১৯৯৮ সালে সম্পন্ন হয়, যার প্রশস্ততা ১৮.৫ মিটার। সেতুটির স্থায়ী কাজের মধ্যে রয়েছে ৫০টি স্তম্ভ আর ৪৯টি স্প্যান।
নির্মাণ শুরুর সময় প্রথম উদ্ভোদন এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ শুধু বঙ্গবন্ধু সেতু নয়, পদ্মা সেতুসহ আরও বহু ইন্টারনাল প্রজেক্টেও কাজ করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন तरहের অবকাঠামো যেমন টোল রোড, টানেল, ফ্লাইওভার, উৎকৃষ্ট সড়ক, কালভার্ট, এবং সংযোগ সড়কের নির্মাণ প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর বিস্তৃত ইতিহাস শুধু তার নির্মাণ নয় বরং এর ব্যবস্থাপনা, যথাযথ ফান্ডিং, এবং জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি ও সরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে।
সেতুটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদন করেছে যাতে সঠিক ফান্ডিং এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়াও, প্রথম উদ্ভোদন এর পর পরিচালনা, অর্থনৈতিক বিষয় এবং প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং এর মধ্য দিয়ে সেতুসমূহের স্থায়িত্ব ও উন্নয়নকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সেতু নির্মাণের আর্থিক দিক
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের মোট ব্যয় প্রাথমিকভাবে ৬০৩.৭০ কোটি টাকা বা ৬৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসেবে নির্ধারিত হয়েছিল। তবে ২ বছরের সময়সীমা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য অবৈতনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যয় ও অর্থসংস্থান বৃদ্ধি পেয়ে ১৬,৭৮০.৯৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই প্রকল্পে হুন্দাই এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
- মূল সেতু নির্মাণ: ৯৮৬.৯৬ কোটি টাকা
- নদী ব্যবস্থাপনা: ১১০৭.৬০ কোটি টাকা
- পূর্ব জড়িত সড়ক: ১০৬.০৩ কোটি টাকা
- প্রযুক্তিগত সহায়তা: ৯৭.৮২ কোটি টাকা
- জমি অর্জন: ৭১.০০ কোটি টাকা
- চুক্তি ৭ ও ৮: ৩২.০০ কোটি টাকা
- পরিবেশগত খরচ: ২৪.০০ কোটি টাকা
- পুনর্বাসন: ১৬৩.২০ কোটি টাকা
অর্থসংস্থানের উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বিশ্ব ব্যাংক: ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
- এডিবি: ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
- জাপান: ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
- বাংলাদেশ: ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
বঙ্গবন্ধু সেতুর ব্যয় ও অর্থসংস্থান বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নদীর প্রবাহ ব্যবস্থাপনার জন্য, যা অতিরিক্ত খরচের কারণ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সেতুর নির্মাণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সাহায্য ও ভূমিকা রয়েছে।
সেতুর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের যমুনা নদী উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার যা একে দেশের অন্যতম দীর্ঘ সেতুতে পরিণত করেছে।
সেতুটির প্রস্থ বিস্তৃত, যা চার লেনের সমান, এবং এটি যানবাহনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে। প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এই সেতু প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যানবাহন ধারণ করতে সক্ষম।
এই সেতুর নির্মাণশৈলী অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। সেতুটির স্থাপত্যে মডার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এর সংমিশ্রণ রয়েছে, যার ফলে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও সুরক্ষিত।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ প্রকল্পে মসৃণ ও শক্তিশালী কংক্রিট এবং স্টিলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক ও মানবিক ক্ষতি প্রতিরোধে এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
ডিজাইন, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দিক থেকে, বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের স্থাপত্যাঙ্গনে একটি মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি শুধু একটি যোগাযোগ মাধ্যম নয়; বরং সভ্যতা এবং উন্নয়নের প্রতীক হিসেবেও কাজ করছে।
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা
বঙ্গবন্ধু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রথম দশকে চ্যালেঞ্জ সম্মুখীন হয়েছে। সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নতুন নতুন প্রযুক্তি ও মান-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমান সময়ে, সেতুর কাঠামো তদারকি করতে আধুনিক সরঞ্জাম এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এটি সেতুর ফাটল ও অন্যান্য ত্রুটি দ্রুত শনাক্ত ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে মেরামত করা হচ্ছে।
রক্ষণাবেক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সেতুর মাধ্যমে যানবাহনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করা। যাত্রী ও মালবাহী যানবাহনের বিশাল পরিমাণ এ সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে, এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় এ যানবাহনের বিভাগ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সেতু দিয়ে বছরে প্রায় 63 লক্ষ যানবাহন পারাপার হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে এবং 2025 সালের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় 28,305টি যানবাহন এবং 2030 সালের মধ্যে প্রায় 37,946টি যানবাহন পারাপারের লক্ষ্য রয়েছে।
ব্যপ্তিকালীন রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকি পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রকৌশলী এবং নির্মাণকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। সেতুর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় 210 জন চীনা কর্মী এবং 800 জন বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। এ সেতুর আর্থিক চাহিদা পূরণে চীনা সরকার 5,913.19 কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার 4,461.23 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
সেতুর টোল আদায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য একটি চীনা কোম্পানি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে। সেতুর প্রথম দশকে চ্যালেঞ্জ ছিল টোল আদায় ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং সেতুর সংরক্ষণে সংকট মোকাবিলা করা। ভবিষ্যতে সেতুর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত প্রযুক্তি এবং সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে।
টোল আদায় এবং পরিবহন সুবিধা
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় এবং পরিবহন সুবিধার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। টোল আদায়ের তথ্যাদি অনুযায়ী, সেতুতে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন পারাপার হয়, যা টোল আদায়ে উল্লিখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ১৩ মে সেতুতে ৫২,৭৫৩ যানবাহন পার হয়ে টোল আদায় হয়েছিল ২,৯৯,১৮,২৪০ টাকা। এছাড়াও, একদিনে সর্বাধিক টোল আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায় ২৪ বছরে, যেখানে ৫৫,৪৮৮টি যানবাহন পারাপার হয়ে ৩,৫৮,৪০,২০০ টাকা টোল আদায় হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন উৎসবের সময়, বিশেষত ঈদের সময়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে টোল আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। সরকারি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, আগত বছরগুলিতে চলাচলের খরচ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকারের লক্ষ্য হল রাসতায় খরচ কমিয়ে ৫৮.৭% আনা এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫৮.৪% এ নামিয়ে আনা।
সরকার বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাল, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অনুষঙ্গের খরচ বৃদ্ধির ফলে অপারেটিং খরচ ২০১৯-এর ৫৫.৬% থেকে ২০২৩ সালে ৬২.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নতুন টোল হার অনুযায়ী, গাড়ি এবং জীপের জন্য টোল ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, ছোট বাসের জন্য ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, বড় বাসের জন্য ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, ছোট ট্রাকের জন্য ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের জন্য ১১০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা, ৮-১১ টন ট্রাকের জন্য ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা এবং বড় ট্রাক ও ট্রেলারের জন্য টোল ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। টোল আদায়ের তথ্যাদি প্রদান করে, এই পরিবর্তনগুলি পরিবহন সুবিধার উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।
এই নীতি এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধনের লক্ষ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। টোল আদায়ের তথ্যাদি সঠিকভাবে নাগরিক এবং পরিবহন ব্যবস্থাপক উভয়কেই সঠিক পরিসংখ্যান প্রদান করবে, যা ফলপ্রসূ পরিকল্পনা এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অত্যন্ত কার্যকরী হবে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বঙ্গবন্ধু সেতুর ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন ও মেরামতের কাজের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পদ্মা সেতুর ভবিষ্যত পরিকল্পনার অন্তর্গত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যান স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ২২টি পিলার সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৩টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, ফলে ৫৮% কাজ এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬,৭৮০,৯৫০,৬০০ টাকা এবং এটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে এই ব্রিজের ডোহেল গেজা ডাবল ট্র্যাকে ট্রেনগুলো প্রতি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে, যার ফলে রোজ অন্তত ৮৮টি ট্রেন যাতায়াত করতে পারবে যমুনা নদীর উপর। এটি শুধু যাত্রী পরিবহনেই নয়, পণ্য সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এরপাশাপাশি প্রতিদিন ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচল করে, ঈদের সময় এই সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। দেশের সেতু উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, জাতীয় সার্ভিসগুলি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকরির শূন্যপদ সংখ্যা প্রায় ৪,৭৩,০০১ এবং এই শূন্যপদ পূরণের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু সেতুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গুলির মধ্যে আরোপিত টোল আদায় পদ্ধতি এবং যানজট নিরসনের পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সেতুর ওপর যান চলাচলকে আরও সহজ করবে।