আল-আকসা মসজিদ

আল-আকসা মসজিদ, ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত, জেরুসালেমের পুরনো শহরের হারাম আল-শরিফ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। আল-আকসা মসজিদ জেরুসালেমের ঐতিহাসিক মসজিদগুলির মধ্যে অন্যতম যা ৭ম-৮ম শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ৫,০০০ এরও বেশি উপাসকদের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মসজিদটি, এর প্রাচীন স্থাপত্য এবং ইসলামের সাথে এর ঐতিহাসিক সংযোগের কারণে মুসলিম বিশ্বে গভীর গুরুত্ববহ।

মসজিদটি বহুবার ধ্বংস এবং পুনর্নির্মাণের সাক্ষী হয়েছে, বিশেষত ৭৪৬ সালে ধ্বংসের পর ৭৫৮ সালে আব্বাসীয় খলিফা আল-মানসুর এবং পরবর্তীতে ৭৮০ সালে খলিফা আল-মাহদি দ্বারা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। আল-আকসা মসজিদ শুধুমাত্র একটি উপাসনালয় নয়, বরং এটি মুসলিমদের জন্য ভূমধ্যসাগরীয় প্রতীক এবং ইসলামিক পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত।

পরিচিতি ও অবস্থান

আল-আকসা মসজিদ জেরুসালেম মসজিদের একটি কেন্দ্রীয় ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। জেরুসালেমের পুরনো শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত, এই মসজিদটি প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আল আকসা অবস্থানের মধ্যে ১৫টি প্রবেশ গেট রয়েছে, এবং মসজিদের বাইরের প্রাচীর ১৩০,০০০ বর্গ মিটার এলাকা আবরোজিত করে।

জেরুসালেম মসজিদে আল-আকসা মসজিদের প্রথম প্রধান নির্মাণ ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হয়। মসজিদের পশ্চিম প্রাচীর প্রায় ৫০ মিটার লম্বা এবং প্রায় ২০ মিটার উঁচু। পশ্চিম প্রাচীরের এই ঘেরটি আল আকসা অবস্থানের সুরক্ষা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

জেরুসালেমের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে আল-আকসা মসজিদ শুধু ইসলামিক ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সুবিস্তৃত মসজিদের আল বুরাক প্রাচীর প্রায় ২০ মিটার লম্বা এবং ৫০ মিটার উঁচু। আল আকসা মসজিদ পরিসরে এই ধর্মীয় স্থাপনাটি একটি নির্দিষ্ট স্থাপত্যগত সংরক্ষণ হিসাবে গড়ে উঠেছে।

আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস ও অবস্থান নিয়ে বহু বিতর্ক ও বিশ্লেষণ হয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে, যুদ্ধে পরবর্তী সময়ে, ইসলামিক ওয়াকফ ট্রাস্ট দ্বারা আল-আকসা মসজিদে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়।

মোটমাটিভাবেই, জেরুসালেম মসজিদ এবং আল আকসা অবস্থান বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি অমূল্য ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সম্পদ।

ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

আল-আকসা মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। প্রথম নির্মাণ শুরু হয়েছিল ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের আমলে। আল আকসা ইতিহাস এর বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ঘটনা ও সংঘর্ষ পার করেছে। মসজিদটি বারবার পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছে ভূমিকম্প ও আক্রমণের কারণে।

নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ

৭০৫ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদের প্রথম বড় আকারের নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। পরে এটি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেলে পুনরায় নির্মাণ করতে হয়। মসজিদের পুনর্নির্মাণ কাজগুলি সুলতান সালাহউদ্দিন আয়ুবী, আব্বাসীয় খলিফা আল-মানসুর এবং ফাতেমিদ খলিফা আল-জাহিরীর সময়ে সম্পন্ন হয়। প্রতিটি পুনর্নির্মাণে আঞ্চলিক ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এর গঠনশৈলীতে প্রভাব ফেলেছে।

আরও পড়ুনঃ  খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

প্রাচীন মসজিদ

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আল আকসা মসজিদ, যা প্রথমে ~বাদশাহ সুলেমান~ বা সোলাইমানের আমলে তৈরি হয়েছিল। ৯৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১,০০৪ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্পন্ন হয়। মোট ৩০,০০০ শ্রমিক এতে কাজ করেছিলেন এবং তা সম্পূর্ণ হতে প্রায় সাত বছর সময় লেগেছিল।

মসজিদটি বহু বার বিধ্বস্ত হয়েছে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির শাসনকালে রেখেছে আল আকসা ইতিহাস এর বিভিন্ন অধ্যায়কে। যেমন, ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাবিলোনীয়রা এটি ধ্বংস করে দেয় এবং পরে পার্শিয়ান শাসক জেরুবাবেল এর তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মাণ করা হয় ৫১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা আবার এটি ধ্বংস করে। বর্তমানেও আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে স্থাপত্য ও সংঘর্ষের ইতিহাস পালিত হয়ে চলেছে।

স্থাপত্য ও কাঠামো

আল-আকসা মসজিদের স্থাপত্য একটি বিশেষ ধরণকে প্রতিফলিত করে, যেটি প্রাথমিক ইসলামিক স্থাপত্য এবং মামলুক প্রভাবিত। পুরো মসজিদটি প্রায় ৩,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং একসাথে প্রায় ৫,০০০ উপাসককে প্রার্থনার জন্য ধারণ করতে পারে।

মসজিদের গঠনশৈলীতে অনেক প্রকার পাথর, স্বর্ণ, সীসা এবং মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। স্থাপনাটি ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজসহ বহু সামগ্রীতে সমৃদ্ধ। মসজিদের বাইরের দেয়াল সহ অন্যান্য কাঠামোতে ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

এটি ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের সুক্ষ্ম নকশা এবং স্থাপত্যকলার মিলিত রূপ যেমন ছিল, তেমনি এটি ধর্মীয় ইতিহাসেও সম্পৃক্ত। আল-আকসা স্থাপত্য গঠনায় অসংখ্য মজবুত পাথরের স্তম্ভ এবং খিলান প্রিয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলি উসমানীয়, আব্বাসীয় এবং অন্যান্য অনেক শাসকের কালে পুনর্নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে।

এই মসজিদের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হলো দ্য ডোম অব দ্য রক, আল-বুরাক মসজিদ এবং আল-মারওয়ানি মসজিদ। প্রতিটি মসজিদের নিজস্ব ইতিহাস এবং উপাসনার পদ্ধতি রয়েছে, যা মসজিদের সামগ্রিক নির্মাণশৈলীর একটি অপরিহার্য অংশ। বিভিন্ন রাসূল এবং ফেরেশতাদের সাথে সম্পর্কিত এই সাইটের প্রতিটি অংশ আল-আকসা স্থাপত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বোঝাতে সাহায্য করে।

মসজিদের প্রবেশপথ এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামোগুলিও ইসলামিক স্থাপত্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে খিলান, মিনার, মেহরাব এবং অন্যান্য স্থাপত্য কৌশলগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আল-আকসা স্থাপত্য বিভিন্ন সময়ের স্পর্শ এবং মুসলিম সুলতানদের অবদানকে সম্মান করে, যেমন উমর (রাঃ) এবং সালাহউদ্দিন আয়ুবী দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ পুনর্নির্মাণ।

ধর্মীয় গুরুত্ব

আল-আকসা মসজিদ ইসলামের পৃথিবীর তিনটি পবিত্রতম মসজিদের একটি। এর গুরুত্ব সেই আদি কাল থেকেই ছিল, যা বিভিন্ন ভবনের পুনর্নির্মাণ ও ইতিহাসে প্রতিফলিত হয়েছে। এর ৩৫ একর (প্রায় ১৪ হেক্টর) এলাকাজুড়ে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা মসজিদ, মিনার এবং মিহরাবকে অন্তর্ভুক্ত করে। মুসলিমদের জন্য আল-আকসা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি প্রাচীন কালের মসজিদগুলোর মধ্যে একটি এবং মিরাজের ঘটনায় এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  চন্দ্রনাথ মন্দির

ইসলামে গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে আল-আকসা মসজিদ অতুলনীয় গুরুত্ব বহন করে। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মিরাজের রাতে এই মসজিদে এসে অন্যান্য নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। এছাড়াও, আল-আকসা মসজিদে প্রার্থনার বিশেষ সওয়াব নির্ধারিত হয়েছে, যা সাধারণ মসজিদে প্রার্থনার তুলনায় বহুগুণ বেশি সওয়াবযুক্ত।

মিরাজ সম্পর্কিত

মিরাজের ঘটনায় আল-আকসা মসজিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মদ (সা.) এখানে এসে সকল পূর্ববর্তী নবীদের সঙ্গে মিলন করেছিলেন এবং নামাজ আদায় করেছিলেন। তাই, মুসলমানদের কাছে আল-আকসা ধর্মীয় গুরুত্ব এবং মিরাজের ঘটনার অংশ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা বহন করে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস ও সংঘর্ষ

গত কয়েক বছর ধরে আল আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে উত্তেজনা বিভিন্ন ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি আহত হন।

  • পশ্চিম তীরে ১৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিন কিশোর নিহত হয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে।
  • গাজা নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস জেরুজালেমকে লক্ষ করে রকেট ছুঁড়েছিল এবং এরপর এগারো দিন ধরে যুদ্ধ চলেছিল।

আল আকসা সংঘর্ষ বিভিন্নবার ইসরায়েলি আরবরা সংযোগ রেখেছে এবং সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংঘর্ষের মধ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের জন্য অস্লো শান্তি চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও দ্বিধার বিষয় সামনে আসে।

আল-আকসা মসজিদে প্রার্থনা

আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনার স্থান। এখানে প্রার্থনা করা সারা বিশ্বের বিভিন্ন মসজিদে প্রার্থনার তুলনায় অনেক বেশি সওয়াবপূর্ণ। বলা হয় যে, আল-আকসা মসজিদে একবার প্রার্থনা করা ২৫০ বার অন্য মসজিদে প্রার্থনার সমান।

প্রায়োগিক তথ্য

আল-আকসা মসজিদ প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মুসল্লিকে ধারণ করতে সক্ষম। এখানে প্রার্থনার সময় প্রার্থনা পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থনার প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত যত্ন সহকারে সম্পন্ন করা হয়।

মুসল্লিরা এখানে তাঁদের দৈনিক এবং সাপ্তাহিক প্রার্থনা সম্পাদন করেন। প্রার্থনার সময় নির্ধারিত এবং এর জন্য বিশেষ স্থান ও শৃঙ্খলা রয়েছে। মসজিদে শান্তি ও স্নিগ্ধ পরিবেশ বজায় রাখা হয় যাতে প্রার্থনাকারীরা নিজেদের প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতে পারেন।

প্রবেশ গেট

আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করতে ১৫টি গেট রয়েছে, তবে বর্তমানে ১০টি গেট সক্রিয় রয়েছে এবং সেগুলি ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি প্রবেশ পথ বিশেষভাবে সুরক্ষিত এবং মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

  • আল-আসবাত গেট
  • আল-হিদা গেট
  • বাব আল-মাগরেবা
  • বাব আল-নিসা

প্রবেশ পথ দিয়ে মসজিদে প্রবেশের সময় সংক্ষিপ্ত যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এই প্রক্রিয়া মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসল্লিরা প্রার্থনা পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে কোনো প্রকার বিঘ্নের সম্মুখীন না হন, তা নিশ্চিত করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  কলাবাগান থানা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অন্তর্গত স্থাপনা

আল আকসা প্রাঙ্গণটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলির জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এটি ১৪৪,০০০ বর্গমিটার (১৫,৫০০০ বর্গফুট) জুড়ে সম্পূর্ণ বিস্তৃত এবং চতুর্দিকের প্রকৃতি দ্বারা ঘেরা। মসজিদের মূল আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তার ৩৭ মিটার (১২১ ফুট) উচ্চতা গম্বুজ, যা প্রাথমিক ইসলামি এবং মামলুক স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি।

চারটি মিনার, যার প্রতিটির উচ্চতা ৩৭ মিটার (১২১ ফুট), মসজিদের স্থাপনার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। মিনারগুলি থেকে দর্শন করলে পুরো প্রাঙ্গণটি এক ভিন্ন ব্যতিক্রমী দৃশ্য উপস্থাপন করে। আল মাছজিদ আল-আকসা, অন্য নাম বায়তুল মুকাদ্দাস, এছাড়াও এটি যেকোনো পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণ।

আল আকসা প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য শুধুমাত্র তার স্থাপত্য নিদর্শনেই সীমিত নয়, বরং প্রাঙ্গণের ঘন সবুজ গাছ, প্রশস্ত খোলা জায়গা এবং শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশও এই মহাসমারোহের সাথে মিশে এক অভাবনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই সম্মিলন আল আকসা মসজিদকে বিশেষ করে তুলেছে।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই বিশাল প্রাঙ্গণটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যেখানে ধর্মীয় সাধনা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য একীভূত হয়। আল আকসা প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা তাই পর্যটকদের মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

আল-আকসা মসজিদের গঠনশৈলী ও উপকরণ

আল-আকসা মসজিদ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা যা ইসলাম ধর্মের নিম্ননির্দিষ্ট উত্স এবং তার প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী নিয়ে পরিচিত। এই মসজিদের নির্মাণকাজের সূচনা প্রায় ৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে করেন হজরত সুলাইমান যা পরে ১০০৪ খ্রিস্টাব্দে পুনর্নির্মাণ করা হয়। হজরত সুলাইমান আল্লাহর নির্দেশনায় জিনদের সহায়তায় মসজিদের বিভিন্ন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।

মসজিদটি মোট ৩৫ একর এলাকায় বিস্তৃত এবং এর অভ্যন্তরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্থান রয়েছে। ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, মাসজিদ আল-হারামের ৪০ বছর পর মাসজিদ আল-আকসা নির্মিত হয়েছিল। হজরত সুলাইমানের সময়কাল, যা ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, মসজিদটির নির্মাণ ও সজ্জার জন্য জিনদের ব্যবহার করা হয়েছিল। এই মসজিদটি মুসলিম ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে খলিফা উমরের নেতৃত্বে মসজিদটির পরিচ্ছন্নতা ও একটি মৌলিক কাঠের মসজিদ স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে, ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খিলাফতের শাসনে আল-আকসা মসজিদের অবকাঠামো স্থাপিত হয়। উমাইয়া খিলাফত (৬৬১-৭৫০ খ্রিস্টাব্দ) ছিল প্রথম ইসলামিক খিলাফত যা বিস্তৃত ইসলামিক সাম্রাজ্যকে প্রসারিত করেছিল। এই নির্মাণকাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় চিহ্নিত করেছে।

আল-আকসা মসজিদ শুধুমাত্র তার প্রাচীন কাঠামো এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য নয়, বরং তার ধর্মীয় গুরুত্বের জন্যও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মসজিদের গঠনশৈলী এবং উপকরণে ইসলামের প্রাথমিক কালের ধারাবাহিকতা ফুটে উঠেছে, যা মুসলিম ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button