যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভার

ঢাকা ফ্লাইওভারগুলির মধ্যে যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান এবং যাত্রাবাড়ীকে সংযুক্ত করেছে। ২০০৬ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ২০১৩ সালে সমাপ্ত এই ফ্লাইওভারটি, যার দৈর্ঘ্য ১১.৮ কিলোমিটার, শহরের যানজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এই ফ্লাইওভারটি গুলিস্তান ফ্লাইওভারে যানজট হ্রাস করে যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। এটি প্রধান সড়কগুলো যেমন ইনডিরা রোড, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বিজয় সরণি এবং অন্যান্য অনেক রাস্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। যাত্রাবাড়ী ঢাকা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে, এই ফ্লাইওভারটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

উড়ালপুলের সংক্ষেপিত বিবরণ

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ফ্লাইওভারটি বাংলাদেশের বৃহত্তম উড়ালপুল হিসেবে পরিচিত, যার মোট দৈর্ঘ্য ১১.৭ কিলোমিটার। এই প্রকল্পটি ১৯৯৮ সালে শুরু হয় এবং ২০১০ সালের ২২ জুন থেকে ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এই ফ্লাইওভারটি মূলত অবস্থান ও স্থানাঙ্ক সংক্রান্ত সুবিধার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, এবং এর নামকরণ করা হয়েছে প্রাক্তন মেয়র হানিফের নামানুসারে।

এটি ঢাকার পরিবহন সম্প্রসারণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রধান উপাদান হিসেবে ইস্পাত এবং কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্লাইওভারটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১.০৮ বিলিয়ন টাকা।

ফ্লাইওভারটিতে চার লেনের বিভাজিত গাড়ির পথ রয়েছে, এবং আটটি প্রবেশ এবং প্রস্থান র‍্যাম্প মজবুত কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। যানজট মুক্ত ও দ্রুত যাত্রায় জন্য সাতটি টোল প্লাজা এবং ৩১টি টোল লেনের সমন্বয়ে একটি আধুনিক টোল সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। একইসাথে, ২০০টিরও বেশি খুঁটি এবং এলইডি আলো সংযোজিত হয়েছে আলোকসজ্জার জন্য।

উল্লেখ্য, অবস্থান ও স্থানাঙ্ক সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে ফ্লাইওভারটি বর্তমানে ঢাকা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার ৩০টিরও বেশি জেলাকে সংযোগ দিয়েছে। ফ্লাইওভারটির তত্ত্বাবধানে এবং রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে ৩৫০ জনেরও বেশি সদস্য।

আইনুযায়ী, এই ফ্লাইওভারটিতে সেমি-স্বয়ংক্রিয় এবং সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় টোল সিস্টেম চালু আছে। ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য এখানে ইন্সিডেন্ট ম্যানেজমেন্ট, উড়ালপুল টহল, প্রাথমিক চিকিৎসা, গাড়ির সাহায্য, টো ক্রেন সুবিধা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উপলব্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি কে?

নির্মাণ ও ইতিহাস

যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালে এবং শেষ হয় ২০১৩ সালে। দশটি চমৎকার বছরজুড়ে এই ফ্লাইওভার নির্মাণের সময়যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ভূমিকা এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে ছিল বিরাট। তিনি এই উড়ালপুলটি উদ্বোধন করেন ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর।

এই নির্মাণের সময়কাল জুড়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত এটি সম্পন্ন হয়। ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য ১১.৮ কিলোমিটার, এর মধ্যে মূল ফ্লাইওভার ১০.৬ কিলোমিটার এবং সংযোগকারী সড়কগুলো ৬.২ কিলোমিটার দীর্ঘ।

এই ফ্লাইওভারের নির্মাণে মোট ১৩টি রাস্তাকে সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং ৬টি প্রবেশ পথ ও ৭টি বেরোনোর পথ রয়েছে। মূল ফ্লাইওভারে চারটি লেন রয়েছে এবং সংযোগ পথগুলোতে দুটি লেন। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি স্থায়ী, অস্থায়ী এবং ভাসমান জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে এটি নির্মিত হয়েছিল।

এই প্রজেক্টটি একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও উড়ালপুলে প্রবেশ কোনও টোল প্রদান করতে হয় না, বিভিন্ন যানবাহনের জন্য টোল রেট ভিন্ন ভিন্নভাবে নির্ধারিত হয়েছে। ট্রেলারদের জন্য ৩৪৫ টাকা, ট্রাক ও বাসের জন্য ২৬০ টাকা এবং মিনিবাসের জন্য ১৭৩ টাকা টোল ধার্য করা হয়েছে।

ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ১৭০০ জন নতুন মানুষ প্রবেশ করে, এদের মধ্যে प्रमुख একটি অংশ হলো জলবায়ু উদ্বাস্তু। ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ উপকূলীয় এলাকায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জীবনযাপন করে এবং প্রায় ৬ মিলিয়ন জলবায়ু উদ্বাস্তু বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিবন্ধন করে থাকে।

এই উড়ালপুলের ইতিহাস আমাদের রাজধানী শহরের যানজট সমস্যার সমাধানে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল।

Jatrabari-Gulistan Flyover এর প্রধান উদ্দেশ্য

Jatrabari-Gulistan Flyover নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার যানজট নিরসন করা। যানজট নিরসনের ফলে দৈনন্দিন জীবনে গতি এসেছে এবং মানুষের মূল্যবান সময়ের সাশ্রয় হয়েছে। খারাপ ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে যানজটের কারণে আগে যে সময় নষ্ট হত, তা এখন অনেক কমেছে।

ফ্লাইওভারের উদ্দেশ্য ছিল মূলত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রুট যা যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তানের মধ্য দিয়ে যায় তা যানজট মুক্ত করা। আগে বিশেষ করে অফিস সময়ে এই রুটে হতে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম হয়ে যেত, যা এখন অনেকটা কমে গেছে। নিয়মিত যানবাহনের সংখ্যা প্রসঙ্গে বলতে হয়, ২০০৯ সালে প্রতিদিন প্রায় ৭০,০০০ যানবাহন ফ্লাইওভার পার হত, এবং ২০১৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২০ যানবাহন প্রতি ঘন্টায়।

আরও পড়ুনঃ  ভিত্তি কাকে বলে?

এই ফ্লাইওভারটির মাধ্যমে ঢাকার পাবলিক এবং প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের উন্নতি হয়েছে, যার মাধ্যমে শুধু যানজট নিরসনই নয়, বরং এটি একটি যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকরী ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার দিকেও সহায়তা করেছে।

এছাড়াও, এই ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে নগরীর সামগ্রিক অবকাঠামোগত উন্নতিও হয়েছে। যানজট নিরসন এর জন্য গৃহীত নানা কার্যক্রমের মধ্যে ফ্লাইওভারটি অন্যতম ছিল। এটি নগরায়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রবেশ ও বেরোনোর পথ

যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথের বিবরণ ও ফ্লাইওভার প্রবেশ পথ নির্ধারণ করা হয়েছে এমনভাবে যাতে যান চলাচল অত্যন্ত মসৃণ হয়। ফ্লাইওভারের প্রধান প্রবেশ পথগুলোর মধ্যে নবাবপুর সড়ক, চাঁনখারপুল এবং বিজয় সরণি অন্যতম।

এই ফ্লাইওভারটিতে ৮টি ফ্লাইওভার প্রবেশ পথ ও বেরোনোর পথ রয়েছে, প্রধানতম প্রবেশ পথ নবাবপুর সড়ক এবং কুতুবখালি। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার দিয়ে দিনের যে কোন সময় সহজেই প্রবেশ ও বের হওয়া যায়, যেহেতু এখানে রয়েছে সাতটি টোল প্লাজা ও মোট ৩১টি টোল লেন। যানবাহনের প্রবেশ ও বেরোনোর সময়ে যানজট নিরসনের জন্য ফ্লাইওভার প্রায় ২০০টি পোল ও LED লাইটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আলোকিত থাকে।

ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথের বিবরণ অনুযায়ী, নির্মাণ ব্যবস্থার সময়গত সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রাখার চেষ্টা করা হয়েছে যা ফ্লাইওভারের ১১.৭ কিমি দৈর্ঘ্যে যানচলাচলের সুগম পরিস্থিতি বজায় রেখেছে। এর আধুনিক টোল সংগ্রহ পদ্ধতি আল্ট্রা-ফাস্ট টোল সংগ্রহের জন্য ক্যাশ, প্রিপেইড স্মার্ট কার্ড এবং নিরবিচ্ছিন্ন ই-ট্যাগ পেমেন্ট পদ্ধতির সুবিধা প্রদান করে।

ফ্লাইওভারের প্রবেশ পদ্ধতি ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দল দ্বারা ২৪/৭ পরিচালিত হয়, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিভিন্ন জরুরী সেবা পরিচালনা, মোবাইল যোগাযোগ, দুর্ঘটনা পূর্ণব্যবস্থাপনা, ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসমূহ। এতে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করা হয়।

যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভারের দৈনন্দিন প্রভাব

যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভারের দৈনন্দিন প্রভাব ব্যাপকভাবে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং অঞ্চলগত বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছে। এই ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১০.৬ কিলোমিটার এবং এতে ৪টি প্রধান লেন ও সংযোগকারী রাস্তাগুলিতে ২টি করে লেন রয়েছে, যা শহরের যানজটমুক্ত যাতায়াতের সমাধান আনতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ভৈরব রেলওয়ে সেতু

সম্পূর্ণ ফ্লাইওভারে প্রবেশ ও বেরোনোর জন্য মোট ১৩টি অনর‌্যাম্পে এবং অফর‌্যাম্পে ওঠানামা করা যায়। যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ফ্লাইওভারের ফলে যাত্রীরা দ্রুততার সাথে ভ্রমণ করতে পারছেন। উদাহরণস্বরূপ, নির্মাণ শুরুর পর থেকে যাত্রীরা যানজটে সময় হারাতে বাধ্য হচ্ছেন না, যা প্রতিদিনের যাতায়াতে সময় ও জ্বালানীর সাশ্রয় ঘটাচ্ছে।

এই ফ্লাইওভারের ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লাইওভারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যার ফলে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে দুর্ঘটনার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সবকিছুর প্রভাব সরাসরি যাত্রীদের অভিজ্ঞতায় প্রভাব ফেলছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।

বাস্তবের সমস্যাবলী ও যানজট

যাত্রাবাড়ী–গুলিস্তান ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১১.৭ কিলোমিটার এবং নির্মাণ ব্যয় ২১.০৮ বিলিয়ন টাকা। ২০১০ সালের ২২ জুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর সম্পন্ন হয়। যদিও এটি আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে, তবুও বিভিন্ন বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

যানজটের প্রধান এক সমস্যা হলো দাঁড়ান সিস্টেম। ৩১টি টোল লেন ও ৭টি টোল প্লাজা থাকলেও, প্রায়ই টোল সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। টোল প্রদান করতে গাড়িগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।

আরেকটি সমস্যা হলো গতি নিয়ন্ত্রণ। ৮টি প্রবেশ ও বেরোনোর র‌্যাম্প থাকলেও, সঠিক গতি নিয়ন্ত্রণের অভাব যানজট বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে পিক আওয়ারগুলিতে যানবাহনের উচ্চ ঘনত্বের কারণে যাত্রীদের যথাযথভাবে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।

পরিবহন ব্যবস্থায় আরো উন্নতি করতে, এমন সমস্যাগুলি নিরসন করা অত্যন্ত জরুরী। যাতায়াতের সময়সীমা কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, যাতে ফ্লাইওভার এর মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হতে পারে। বাস্তব সমস্যার সমাধানে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয় এবং জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button