ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হল বাংলাদেশের প্রথম হাই-স্পিড উচ্চপথ, যা ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে দ্রুত ও সহজ যাতায়াতের সুবিধা প্রদান করবে। ঢাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প হিসেবে পরিচিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২২.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, যা ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

এই মহাসড়কটির মূল রাস্তা ১৯.৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং এতে ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। ঢাকা যাতায়াত সহজতর করার জন্য এই প্রকল্পটির মোট বিনিয়োগ ৮,৯৪০ কোটি টাকা। টোল রেটগুলি গাড়ির ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভেড়ার তারতম্যে ধার্য করা হয়েছে। সর্বোচ্চ গতি সীমা ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা, যেখানে র‍্যাম্পগুলির ক্ষেত্রে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।

Contents show

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: প্রথম ইলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের শুরুর কথা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশে প্রথম ইলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হিসেবে শুরু হয়েছে, যা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত। এই প্রকল্প উদ্বোধন ঢাকা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

এই প্রকল্পের পরিকল্পনা অনেক দিন আগে শুরু হলেও প্রথম প্রকৃত নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রাথমিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, ঢাকা উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে এটি এখন বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

প্রথম পর্যায়ে এক্সপ্রেসওয়ে দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১.৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর, এই অংশটি উদ্বোধন করা হয় এবং পরের দিন থেকে সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এটি ছিল প্রকল্পের একটি বড় পদক্ষেপ এবং প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে যান চলাচলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে, পুরো এক্সপ্রেসওয়ে এবং র‍্যাম্প মিলে মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের মোট ব্যায় দাঁড়িয়েছে৳১৩৮.৫৭ বিলিয়ন। ঢাকা উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবেই এই উদ্যোগটি পরিচালিত হচ্ছে যার মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির যৌথ অংশগ্রহণ রয়েছে। থাইল্যান্ড ভিত্তিক ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট (৫১%), চায়না শ্যান্ডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন গ্রুপ (৩৪%) এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (১৫%) এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে।

এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরের যাতায়াত সহজতর হবে এবং নগর পরিবহনে ব্যাপক সুবিধা আনবে।

প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ও র‍্যাম্পের সংখ্যা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি দেশটির অন্যতম বৃহৎ পরিকাঠামো প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত। যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে র‍্যাম্প তথ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়ে ও র‍্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য

প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিমি, যার মধ্যে প্রধান রাস্তার দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিমি এবং র‍্যাম্প সমূহের দৈর্ঘ্য ২৭ কিমি। এরমাধ্যমে যান চলাচল সহজ ও দ্রুততর করা সম্ভব হবে।

র‍্যাম্পের সংখ্যা ও স্থান

এই এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। যার মধ্যে ১৬টি র্যাম্প ইতিমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। কর্পোরেশন বাজার র্যাম্প ২০২৪ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি র‍্যাম্প নির্দিষ্ট স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ক্ষেত্রে স্থাপিত হয়েছে যাতে করে পথচারী ও যানবাহন উভয়ের জন্য সহজগম্যতা নিশ্চিত করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরা গণভবন

উদ্বোধন এবং যান চলাচলের সময় সূচী

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম অংশ কাওলা-ফার্মগেইট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঐতিহাসিক এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদ্বোধনের পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর, এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এটি উল্লেখযোগ্য যে কাওলা থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশটিতে ট্রাফিক সূচি অনুযায়ী যানজট মুক্ত ও দ্রুতগামী পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮০,০০০ যানবাহন এই ইলিভেটেড রোডওয়ের উপর দিয়ে চলাচল করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা ঢাকা শহরের দৈনন্দিন ট্রাফিক পরিস্থিতিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

যান চলাচলের সময় সূচি নির্ধারণের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিনি হেভি ভেহিকল এবং টোলবোর্ন রিক্যাভেরি নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং পরবর্তী সময়ের ব্যবস্থা সমূহ দিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কার্যক্রম সাফল্য পাবে।

  • সোম থেকে বৃহঃ: সকাল ৮ থেকে রাত ১০
  • শুক্র ও শনি: সকাল ৯ থেকে রাত ১১

এই সময়সূচী অনুসরণ করে ট্রাফিক সূচি নির্ধারণের ফলে যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল আরও সুনির্দিষ্ট এবং নির্ভুল ভাবে সম্পন্ন হবে।

Dhaka Elevated Expressway: রুট এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল রুটটি কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বিস্তৃত। যাত্রাপথ পুরোটাই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করে।

রুটের বিবরন

ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকাগুলিকে সহজেই একত্রিত করার জন্য এই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হয়েছে। কাওলা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রধান রুটটি উন্নত মানের অবকাঠামো প্রদান করে, যা যাত্রাপথকে দ্রুত ও নিরাপদ করে তোলে। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের ফলে কাওলা থেকে ফার্মগেট পৌঁছানো যাবে মাত্র ১০ মিনিটে, যা শহরের যানজট কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।

গুরুত্বপূর্ণ মোড়

এই এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাপথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড় রয়েছে, যা শহরের ব্যস্ত এলাকাকে সংযুক্ত করে। যেমন:

  • কুড়িল ফ্লাইওভার – যা মিরপুর ও উত্তরা এলাকার সাথে একীভূত করে।
  • বনানী ক্রসিং – বনানী ও গুলশান এরিয়া সন্নিহিত করতে সাহায্য করে।
  • মহাখালী মোড় – যা মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকার সংযোগ স্থাপন করে।
  • মালিবাগ রেল স্টেশন – মালিবাগ ও খিলগাঁও এলাকার যাত্রীদের যাত্রা সহজতর করে তোলে।

এসব গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সিগনালিং ব্যবস্থা রয়েছে যা যাত্রাপথকে আরও কার্যকর ও সুরক্ষিত করে তুলবে। মূল রুটের সাথে এসব মোড় যুক্ত হওয়ায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পরিষেবা উন্নত হবে।

নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি ও বিনিয়োগ

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মূল চুক্তি ১৯ জানুয়ারি, ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে সংশোধিত হয়েছিল। নির্ধারিত চুক্তি তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট বাজেট ছিল ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা আগের প্রাক্কলনের চেয়ে একটু বেশি।

নির্মাণ কাজ কয়েক বছর বিলম্বিত হওয়ার পর, অবশেষে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। একটি বহিঃস্থ কোম্পানি ২৫ বছর ধরে টোল সংগ্রহ করবে তাদের বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের জন্য। তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক নির্মাণ সংস্থা Ital Thai Development Public Company Limited-এর সাথে চুক্তি তথ্য সরবরাহ করেছে এই চুক্তির নির্ধারিত শর্তাবলী।

আরও পড়ুনঃ  টঙ্গী জংশন রেলওয়ে স্টেশন

প্রাথমিক চুক্তি ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পে বাংলাদেশের সরকার মোট খরচের ২৭ শতাংশ বহন করবে, এবং বাকি ৭৩ শতাংশ অর্থ Ital-Thai Company থেকে আসবে। অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জসমূহের কারণে, প্রকল্পের জন্য First Dhaka Elevated Expressway Company Limited গঠিত হয়েছে।

এছাড়া, প্রকল্পের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সার্বিকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বিনিয়োগকারীরা বিশাল অফার দিয়েছেন। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে চলমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রকল্পটি ঢাকা শহরের পরিবহন চিত্রকে আমূল পরিবর্তন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

টোল এবং যানবাহन যথোপযুক্ততা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ভ্রমণকারী সকল যানবাহনের জন্য টোল হার নির্ধারিত হয়েছে। এটি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত টোল তথ্য অনুসারে বিভিন্ন যানবাহনের জন্য ভিন্ন হার প্রযোজ্য হয়।

টোল হার

এই টোল হারগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে নানা ধরণের গাড়ির জন্য:

  • ছোট গাড়ির জন্য টোল: ৮০ টাকা
  • বিভিন্ন ধরণের বাসের জন্য টোল: ১৬০ টাকা
  • মাঝারি ট্রাকের জন্য টোল: ৩২০ টাকা
  • বড় ট্রাকের জন্য টোল: ৪০০ টাকা

এসব টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে ভ্রমণকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দ্রুত এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে পারেন এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণের খরচের জন্য সামগ্রিক রাজস্ব সংগ্রহে সহায়ক হয়।

যানবাহন নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কিছু নির্দিষ্ট যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিন চাকার যান, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল। এই নিষিদ্ধ যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ের উপর চালানো যাবে না যাতে যাত্রীদের নিরাপদ এবং আধুনিক গতির সুবিধা বজায় রাখা যায়।

নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এই নিষিদ্ধ সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে যাতে এক্সপ্রেসওয়ের উপর যাত্রী এবং চালকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন।

নতুন এই উদ্যোগগুলো নিশ্চিত করবে যে এক্সপ্রেসওয়ে নিরাপদ এবং সুষ্ঠুভাবে কার্যকর থাকবে, আর এটি শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকল্প উদ্দেশ্য পূরণ করে নগরবাসীর জন্য উন্নত পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ঢাকা শহরের প্রাত্যহিক যানজট সমস্যা সমাধান করা। এই প্রকল্পটি ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলিতে যানচলাচল সহজ এবং দ্রুতগামী করতে বিশেষভাবে পরিকল্পিত।

এই বিবেচনায় প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যগুলোঃ

  • যাত্রা সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং জনসাধারণকে ঢাকা ট্রাফিক কমানো এর মাধ্যমে প্রতিদিনের যাতায়াত আরো স্বস্তিদায়ক করা।
  • শহরবাসীর দৈনন্দিন যাত্রা ব্যয় হ্রাস করা, এটি নগরবাসীর আর্থিক সাশ্রয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
  • প্রবীণ, রোগী এবং জরুরী সেবাগুলিকে দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা প্রদান করা।

উল্লেখযোগ্য খরচ এবং যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে, ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে, এটি নগরবাসীর জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অগ্রগতি

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প অগ্রগতি লক্ষ্যে এ পর্যন্ত চমৎকারভাবে এগোচ্ছে। কাজের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা নিশ্চিত করছে যে সবকিছু সুসময়ে সম্পন্ন হবে।

প্রথম ধাপ অগ্রগতি

প্রথম ধাপের কাজ ইতোমধ্যে ৬৫% সম্পন্ন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো সময়মতো শেষ হয়েছে, যা প্রকল্প অগ্রগতির জন্য একটি বড় সফলতা। প্রধান রাস্তা এবং তার র‍্যাম্প এলাকার স্থাপনা প্রায় সর্বাংশে সম্পন্ন।

দ্বিতীয় ধাপ অগ্রগতি

দ্বিতীয় ধাপের কাজ বর্তমানে চলমান এবং বেশিরভাগ অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। কাজের অবস্থা বর্তমানে ৭৪.৮১% অগ্রগতির অবস্থানে রয়েছে। এ ধাপে মোঘবাজার থেকে কুঠুবখালী পর্যন্ত ১২.৪০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে?

তৃতীয় ধাপের প্রস্তুতিমূলক কাজ

তৃতীয় ধাপের প্রস্তুতিমূলক কাজ আগামী মাসে শুরু হবে। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং জনশক্তি সংস্থান করা হয়েছে। নির্মাণ কার্যক্রম পুনরায় আগস্ট মাসে শুরু হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রকল্প অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সমস্ত সংশ্লিষ্ট দল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি যথাযথ এবং মান নির্ণয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় যে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই ঢাকার অন্যতম বৃহত্তম প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে।

কার্যকরী সুবিধা এবং প্রত্যাশিত উপকারিতা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানজট কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচলের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে, যা নাগরিকদের দৈনন্দিন যাতায়াতকে অনেক সহজ করবে।

এই প্রকল্পের প্রধান সুবিধা হল যাত্রা সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে যাত্রীরা দ্রুত তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, যা সময়ের সঞ্চয় ঘটাবে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ প্রদান করবে।

এছাড়াও, পরিবহন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। বিশেষ করে পেট্রোল এবং ডিজেলের ব্যবহার কমবে, কারণ যানবাহনগুলি ধীরগতির এবং যানজটপূর্ণ রাস্তায় কম সময় ব্যয় করবে।

  • জনসাধারণের যাতায়াতের মান বৃদ্ধি: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি শুধুমাত্র গতি এবং সময় সঞ্চয়ে সহায়তা করবে না, বরং যাত্রাপথও আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
  • পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গোটা রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। এটি শুধু ঢাকা নয়, গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান এবং যাত্রীদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এসব সুবিধা এবং উপকারিতা বাস্তবে প্রতিফলিত হলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অমূল্য অবদান রাখবে।

সমাপ্তি

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে ঢাকার পরিবহনের চিত্র পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে। ১৯.৭৩ কিলোমিটার মূল দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৩১টি র‍্যাম্পসহ মোট ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কাজের প্রথম ধাপ, কাওলা থেকে বনানী, ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে, যা বনানী থেকে মগবাজার রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃতীয় ধাপের কাজ মগবাজার রেলওয়ে ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, কুতুবখালী পর্যন্ত চলছে।

ঢাকার যানজট নিরসনে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় আর রুট দিয়ে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত আরও সহজ ও দ্রুত হবে। প্রকল্প মূল্যায়ন অনুযায়ী, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক থেকে এই এক্সপ্রেসওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় এই প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে চলছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের অন্যান্য অবকাঠামোগত কৌশলগত প্রকল্পের সঙ্গে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযোগ স্থাপন করা হবে। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর হবে এবং শহরের যানজট আরও কমবে। এ ধরনের প্রকল্পগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি, জনগণের জীবনমান উন্নত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় উপকৃত হতে নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button