বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত, যা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে পরিচিত। এই স্টেশনটি ২৩ শে জুন, ১৯৯৮ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং তার পর থেকে এটি ঢাকা বিভাগের অধীনস্থ বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন যেমন, একতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ইত্যাদি সার্ভিস দেয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে এই স্টেশনটি জাতীয় ও অঞ্চলীয় রুটে সংযোগ সরবরাহ করে; বিশেষ করে ঢাকা থেকে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সহ দেশের উত্তরের ও দক্ষিণের অঞ্চলগুলিকে যুক্ত করে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন থেকে শুরু হওয়া রেলপথের দৈর্ঘ্য সেতু পূর্ব থেকে জয়দেবপুর জংশন পর্যন্ত মোট ৯৪ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়েছে।

পরিচিতি

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে ঢাকা বিভাগের ভূয়াপুর উপজেলায় অবস্থিত। এই স্টেশনটি উন্নত রেলপথ সুবিধার জন্য বিখ্যাত এবং এটি উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে সংযুক্ত করতে নির্মিত হয়েছে।

অবস্থান

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্থান বাংলাদেশের ভূয়াপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রতিবেশী শহরগুলোতে সহজে প্রবেশের জন্য এই স্থানটি একটি সুপরিচিত কেন্দ্র।

প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণ

এই রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ১৯৯৮ সালে সমাপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে উন্নত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা। এটি নিকটবর্তী এলাকায় রেলপরিবহনের গতি বৃদ্ধি করেছে এবং জনগণের যাতায়াতকে আরও সহজ করেছে।

ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু সেতুর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের রেল পরিবহন ব্যবস্থা। এটি শুধু একটি সেতু নয়, বরং দেশের রেলপথ বিস্তার ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বৃহৎ উন্নয়নের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু সেতু প্রথম রেল যাত্রা এবং নতুন রেলপথ বিস্তারের কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  হাতিরঝিল

প্রথম যাত্রা

১৯৯৮ সালের ২৩ জুন তারিখে প্রথমবারের মতো ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে যমুনা নদী পার হয়। এই প্রথম যাত্রাটি ছিল দেশের রেলপথে একটি ইতিহাসের সূচনা। বঙ্গবন্ধু সেতু প্রথম রেল যাত্রা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে।

রেলপথ বিস্তার

২০০৩ সালে আরও রেলপথ বিস্তার করার লক্ষ্যে নতুন রেলপথ সেতু পূর্ব থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এই রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ আরও সুগম হয়ে ওঠে। রেলপথ বিস্তারকার্য দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অবস্থান এবং যোগাযোগ

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশনটি বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। এই স্টেশনটি বিভিন্ন নিকটস্থ শহরের সঙ্গে মেট্রোপলিটন এলাকাকে সংযুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

নিকটস্থ শহর

স্টেশনটি টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, করটিয়া, জামালপুর এবং ঈশ্বরদীর মতো নিকটবর্তী নানা শহরের সাথে সুসংহতভাবে সংযুক্ত। এই স্থাপনাগুলো জনসাধারণের দুরত্ব কমিয়ে এনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও যাত্রী পরিবহনকে সহজ এবং উন্নত করে তুলেছে।

পরিবহন ব্যবস্থা

পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে এই স্টেশনে বিভিন্ন পরিষেবা সংযুক্ত করা হয়েছে। বাস, অটোরিকশা এবং নিজস্ব যানবাহনের মাধ্যমে সহজেই স্টেশনে পৌঁছনো যায়। তাছাড়া, টাঙ্গাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নতির জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন স্টিল পাইপ পাইল ফাউন্ডেশন এবং স্লিপ-ফ্রি ট্র্যাকস, স্টেশনটির জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করেছে। দৈনিক ৪৪টি ট্রেন এই স্টেশনের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে, যা নিকটস্থ শহরের মধ্যে পরিপূর্ণ আন্তঃযোগাযোগ বজায় রাখে।

ট্রেনের তালিকা

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন থেকে নানা ধরণের ট্রেন চলাচল করে। নির্ধারিত ট্রেন তালিকা এবং লোকাল ট্রেনসমূহ উভয়ই এই স্টেশন থেকে সক্ষমতা দেখায়।

নির্ধারিত ট্রেনসমূহ

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন থেকে বিভিন্ন নির্ধারিত ট্রেন চলাচল করেঃ

  • একতা এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে দিনাজপুর
  • লালমনি এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে লালমনিরহাট
  • সিল্কসিটি এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে রাজশাহী
আরও পড়ুনঃ  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল স্থপতি কে?

এই নির্ধারিত ট্রেন তালিকা অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌছানো ট্রেনগুলি নিয়মিতভাবে চালিত হয়।

লোকাল ট্রেনসমূহ

বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রেন হবার কারণে লোকাল ট্রেন চলাচলও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লোকাল ট্রেনগুলো যেমন:

  • রাজশাহী-ঢাকা কমিউটার
  • সান্তাহার-ঢাকা লোকাল
  • পাবনা-ঢাকা লোকাল

এই সকল লোকাল ট্রেন প্রতিদিনের যাত্রায় স্থানীয় যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

ট্রেনের সময়সূচি

বাংলাদেশের রেলওয়ে সুবিধা ব্যবহারকারীদের জন্য ট্রেন সময়সূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন নানা ধরনের ট্রেন চলাচল করে, যেগুলোর সময়সূচি নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয়। এই সময়সূচিগুলি স্টেশনে প্রদর্শিত হয় এবং অনলাইনেও পাওয়া যায়।

রাজশাহী স্টেশন থেকে শুরু করে ঢাকায় পৌঁছায় এমন বিভিন্ন ইন্টারসিটি ট্রেন যেমন কাপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস এবং পদ্মা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে চলাচল করে। এই ট্রেনগুলো প্রায়ই সময়মতো ছেড়ে যায় এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বগুড়া স্টেশন থেকে করতোয়া এক্সপ্রেস এবং লালমনি এক্সপ্রেসের মতো আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালিত হয়, যা প্রতিদিনই সময়মতো ছেড়ে যায়।

চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে কাপোতাক্ষ এক্সপ্রেস এবং সুন্দরবন এক্সপ্রেসের মতো ইন্টারসিটি ট্রেনগুলি নির্দিষ্ট সময়ে পরিচালিত হয়। এগুলো ছাড়াও, দিনাজপুর স্টেশন থেকে একতা এক্সপ্রেস এবং দুরুতজন এক্সপ্রেস প্রতিদিন সময়মতো যাত্রা করে। গাইবান্ধা স্টেশন থেকে করতোয়া এক্সপ্রেস এবং লালমনি এক্সপ্রেসও প্রতিদিন চলাচল করে, যার সময়সূচি পর্যায়ক্রমিকভাবে আপডেট হয়।

খুলনা স্টেশন থেকে বিভিন্ন ইন্টারসিটি ট্রেন যেমন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং চিত্রা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। ঢাকার উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮:১৫ এ ছেড়ে যায় এবং দুপুর ৩:৫০ এ পৌঁছায়। অন্যদিকে, চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৭:৩০ এ ছেড়ে রাতে ৫:০০ এ খুলনায় পৌঁছায়।

এই সময়সূচিগুলি যাত্রীদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন রুটে যাতায়াত সহজতর করে তোলে। স্বাচ্ছন্দ্য ও সময়ানুবর্তিতার জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ট্রেন সময়সূচি অনুসরণ করলে অনায়াসে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button