ভৈরব রেলওয়ে সেতু

ভৈরব রেলওয়ে সেতু বাংলাদেশের রেলপথের একটি গর্বিত প্রতীক। এই সেতুটি মেঘনা নদীর উপর নির্মিত হওয়ায় এটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৯ সালে নির্মিত এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৯৮৪ মিটার, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম রেল সেতুগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫৬৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা, যার একটি অংশ ভারত সরকারের ঋণ সহায়তার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

বাংলাদেশের ‍উন্নতমানের রেলপথের জন্য ভৈরব রেলওয়ে সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করেছে, যা ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ১৯৩৭ সালে নির্মিত প্রথম সেতুটি ‘কিং জর্জ ষষ্ঠ সেতু’ নামে পরিচিত ছিল, যা পরবর্তীতে ‘শহীদ হাবিলদার আব্দুল হালিম রেল সেতু’ নামে পুনরায় নামকরণ করা হয়। এই দুটি সেতু মিলে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর পরিচিতি

ভৈরব রেলওয়ে সেতু কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যবর্তী স্থানে মেঘনা নদীর উপর অবস্থিত। এই সেতুটি ১৯৩৭ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং তা ভৈরব জংশন থেকে মেঘনা নদী পারাপারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সেতুটি মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথের সংযোগ বৃদ্ধি করেছে।

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর পাশেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু বা ভৈরব সড়ক সেতু অবস্থিত, যা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা প্রদান করে। নতুন ভৈরব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ পরিকল্পনার আওতায়, দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতু এবং তিতাস সেতু উদ্বোধণের জন্য আগামী ৯ই নভেম্বর নির্ধারিত আছে।

দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতুর নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট হবে। নতুন এই রেল সেতু, ভৈরব জংশনের সাথে মেঘনা নদী পারাপারের উন্নয়ন ঘটিয়ে যোগাযোগের সময় ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে নামিয়ে আনবে।

এছাড়াও, তিতাস সেতু নির্মাণের জন্য ১৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্বৈত রেললাইন সংযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। বহরে ডুয়েল-গেজ ও ব্রড-গেজ লাইন চালুর মাধ্যমে নতুন এই সেতুতে আরও দ্রুত এবং নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত হবে।

ভৈরব প্রথম রেল সেতুর ইতিহাস

ভৈরব প্রথম রেল সেতুর ইতিহাস সত্যিই সমৃদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ অর্থায়নে প্রথম সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

নামকরণ এবং উদ্ভোধন

১৯৩৭ সালে তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক সেতুটি উদ্বোধন করেন। সেতুটির নামকরণ করা হয় সাধারণ মানুষের উপর ভিত্তি করে, যেখানে নামকরণের পিছনে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

আরও পড়ুনঃ  সিটি সেন্টার

বঙ্গবন্ধুর উদারতা

মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নামানুসারে নামকরণ হওয়ার পরিবর্তে হাবিলদার আবদুল হালিমের নামে নাম রাখতে পরামর্শ দেন, যা তার উদারতার উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর এই অবদানের মাধ্যমে সেতুটির ইতিহাস আরও ঋদ্ধ হয়েছে। তাদের নামের সাথে ইতিহাস,‌ নামকরণ এবং উদ্ভোধন এই তিনটি বিষয়ই জড়িত, যা একটি সেতুর প্রতি মানুষের আবেগ এবং জাতীয় দায়িত্বকে প্রকাশ করে।

ভৈরব দ্বিতীয় রেল সেতুর নির্মাণ

ভৈরব দ্বিতীয় রেল সেতু বাংলাদেশের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই সেতুটির মাধ্যেমে ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের যোগাযোগ আরও সহজতর হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এই নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শুরু করে, এবং এর ব্যয় ছিল ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

নির্মাণ ব্যয় ও সময়কাল

নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৮ সালে কাজ শেষ হয়। এই সেতু নির্মাণের জন্য ধরা হয়েছিল ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৯৮৪ মিটার এবং প্রস্থ ৭ মিটার।

কারিগরি দিক

দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতুর কারিগরি বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত উন্নত এবং গতানুগতিক রেল সেতুর তুলনায় অনেক আধুনিক। সেতুটির কারিগরি উন্নয়নে নতুন আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হলে ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের মধ্যে রেলপথে যাতায়াতের সময় হ্রাস পাবে। সেতুটি চালু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে গাড়ির সংখ্যা বাড়বে এবং রানিং টাইম কমে যাবে। ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে মাত্র ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে।

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর ভৌগলিক অবস্থান

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৈরব পৌরসভার আয়তন ১৩.০৭ বর্গ কিমি, যেখানে প্রায় ১১৮৩০০ জন মানুষ বাস করে। ভৈরব রেলওয়ে সেতুটি ভৈরব ও আশুগঞ্জ উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে, যা মেঘনা নদী-র উপর অবস্থিত। সেতুর স্থানাঙ্ক ২৪°০২′৪২″ উত্তর ৯০°৫৯′৪১″ পূর্ব।

এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯০৫১ জন। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী, সেতুটি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব পৌর এলাকায় অবস্থিত। এটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান নগরবাসীর জন্য মূলত যোগাযোগ ও পরিবহন সহজতর করে তুলেছে।

ভৈরব পৌরসভার বিভিন্ন পরিকল্পিত কার্যক্রম যেমন সড়ক ও ড্রেন উন্নয়ন, ট্রাক টার্মিনাল ও সুপার মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে এলাকাটি ধীরে ধীরে আরও উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়াও, বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.০২% যা স্থানীয় অর্থনীতি এবং সেবার চাহিদা বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলছে।

এছাড়াও, ভৈরব রেলওয়ে সেতুর বাণিজ্যিক এবং ব্যবসায়িক গুরুত্ব রয়েছে কারণ এটি দুটি কৌশলগত এলাকাকে সংযুক্ত করে। এই সেতুর মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষের জন্য মেঘনা নদীর ওপারে থাকা এলাকাগুলোর সাথে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।

বর্তমান অবস্থান ও গুরুত্ব

ভৈরব রেলওয়ে সেতু আজকের দিনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। দুর্গম কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এই সেতু ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলাগুলির সাথে ভূ-সংযোগ স্থাপন করেছে, যা যাতায়াত অনেক সহজ করে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ  বিজয় সরণি মেট্রো স্টেশন

এই সেতু শুধুমাত্র ভূ-সংযোগ নয়, বরং রেলপথের সংযোগের মাধ্যমেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ভৈরব রেলওয়ে সেতুর মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এবং বহু পরিমাণে পণ্য পরিবহন করা হয়, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখছে।

বর্তমান গুরুত্ব বিবেচনায়, এই সেতুর সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও যাতায়াত ক্রমবর্ধমান হারে সহজ ও দ্রুত হয়েছে।

দুর্গম এলাকা থেকে রাজধানী এবং অন্যান্য প্রধান শহরের সাথে ভূ-সংযোগ স্থাপন করতে ভৈরব রেলওয়ে সেতু অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

যোগ্যতার পরিচয় বহনকারী সেতু

ভৈরব রেলওয়ে সেতু তার যোগ্যতা এবং উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু, এটি দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে।

প্রতিদিন হাজারো যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রেন এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক। এই রেলসেতু তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও এটি স্থায়ী ও নিরাপদ থেকেছে।

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর মাধ্যমে রেলগাড়ির যোগ্যতা এবং দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই রেলসেতু পরিচয় বহন করছে উচ্চমানের নির্মাণ ও টেকসইতায়। এটি শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, দেশের উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপানও বটে।

বাংলাদেশের দুই প্রধান জেলা ঢাকা এবং কুমিল্লার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ভৈরব রেলওয়ে সেতু উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে যানবাহন সময়মত গন্তব্যে পৌঁছেতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের অন্তর্গত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে সহায়তা করেছে।

Bhairab Railway Bridge: একটি ঐতিহাসিক প্রতীক

ভৈরব রেলওয়ে সেতু, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং নতুন যুগের যাত্রার সাক্ষী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরব রেলওয়ে সেতু পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বর হত্যাকান্ডের শিকার হয়। ১৩ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের জয়নাল আবেদীন বিস্ফোরক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে সেতুটি ধ্বংস করেন। মুক্তিযুদ্ধের এই ঘটনায় তিনজন পাক সেনা ও পাঁচজন রাজাকার নিহত হন।

এই আসাধারণ কৌশলের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধারা সেতুটির উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে সক্ষম হন। যদিও এ সময়ের মধ্যে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেন, কিন্তু তাদের অবদানের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় সম্ভব হয়।

নতুন যুগের সূচনা

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে, বাংলাদেশের পুনর্গঠন অনেক গুরুত্ব সহকারে শুরু হয়। ভৈরব রেলওয়ে সেতুর পুনর্নির্মাণ ছিল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের জাতির নতুন যুগের সূচনা নির্দেশ করে।

১৯৭২ সালে, আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ তাজউদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে সেতুটির পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি শুধুমাত্র ভৌত কাঠামোর পুনর্গঠনের প্রতীক নয়, বরং স্বাধীন বাংলাদেশের নবনির্মিত পরিচায়ক।

নতুন যুগের এই সূচনা, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের কাহিনী এবং ঐতিহাসিক প্রতীক হিসেবে ভৈরব রেলওয়ে সেতু আমাদের সকলের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ  কুড়িল উড়ালসেতু

ঘটনা ও দুর্ঘটনা

ভৈরব রেলওয়ে সেতু তার ইতিহাসে অনেক ঘটনা এবং দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এই ঘটনা ও দুর্ঘটনা বাংলাদেশের রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা এবং উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরপর আমরা বিস্তারিত জানবো ১৯৫০ সালের ঘটনা এবং ১৯৭১ সালের ঘটনা সম্পর্কে।

১৯৫০ সালের ঘটনা

১৯৫০ সালের ঘটনা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। ভারত বিভাজনের পার্শ্ববর্তী এই সময়ে, হিন্দু হত্যা কাণ্ড ঘটে। পূর্বপাকিস্তানের ভেতর দিয়ে চলমান ট্রেন একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়, যে কারণে জনসংখ্যা এবং পরিবহন ব্যবস্থা তীব্র ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই ঘটনার কারণে অনেক হিন্দু পথযাত্রী আক্রমণের শিকার হন এবং এটি ক্ষোভের সৃষ্টির কারণ হলো।

১৯৭১ সালের ঘটনা

১৯৭১ সালের ঘটনা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরব রেলওয়ে সেতু ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর ধ্বংসাত্মক আক্রমণের লক্ষ্য। সেতুর উপর সংঘটিত এই বিশেষ ঘটনা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস এবং চেষ্টাকে চিরস্মরণীয় করে রাখে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেতুর ধ্বংস হওয়া এবং তা পুনর্নির্মাণে যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

বর্তমানে, ভৈরব রেলওয়ে সেতু নারকীয় দূর্ঘটনা এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক সময়ে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের দুর্ঘটনা, যেখানে ১৭ জন প্রাণ হারান।

সমাপ্তি

ভৈরব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ নয়, এটি আজকের আধুনিক ও গতিশীল যোগাযোগের প্রতীক। ১৯৩৭ সালে আবু কাসেম ফজলুল হকের উদ্ভোধিত প্রথম সেতুটি এক সময়ে “কিং জর্জ VI ব্রিজ” নামে পরিচিত ছিল, যা পরে “শহীদ আব্দুল হালিম রেলওয়ে ব্রিজ” নামে পরিচিত হয়। ৯১৪ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি মিটার-গেজ রেলপথের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

দ্বিতীয় ভৈরব রেলওয়ে সেতু ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর উদ্বোধন হয়। ৯৮৪ মিটার দীর্ঘ ও ৭ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ হয়, যা নির্মাণে ভারতীয় ঋণ সহায়তা পায়। ইরকন-ফ্রিজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করে। দ্বিতীয় সেতুটি ডাবল লাইন চলাচলের উপযোগী এবং যোগাযোগের উন্নতি করছে, বিশেষ করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাতায়াতের সময় হ্রাস করতে সহায়ক হচ্ছে।

১৯৫০-এর ঘটনা থেকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ পর্যন্ত ভৈরব রেলওয়ে সেতু বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে। বর্তমানেও এটি বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে। ভূগোলিক স্থানের(24°02’42” উত্তর 90°59’41” পূর্ব) নিরিখে ভালুকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবেও ভৈরব রেলওয়ে সেতু অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে।

সেতুটির আধুনিকায়নের মাধ্যমে ভৌগলিক ও পরিবহণ সহজীকরণে ভৈরব রেলওয়ে সেতু দেশের উন্নয়ন যাত্রায় এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। এটি বাংলাদেশের রেল সংযোগ ব্যবস্থাকে আরো প্রতিযোগিতামূলক ও সক্ষম করে তুলছে। এই সমাপ্তি আমাদের ভবিষ্যতে একই রকমের উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়, যার সাহায্যে আমাদের দেশের অবকাঠামো এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button