মোনালি ঠাকুর

মোনালি ঠাকুর হলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী এবং বলিউড গায়িকা, যিনি তার মনোমুগ্ধকর কণ্ঠ এবং অসাধারণ প্রতিভার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। কলকাতায় ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা মোনালি ঠাকুরের সঙ্গীতজীবন ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয় এবং আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। তিনি ২০১৪ সালে বলিউড চলচ্চিত্র “লুটেরা” তে “Sawaar Loon” গানের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সম্মানিত হন।

মোনালি ঠাকুরের জীবনীতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলো ২০১৫ সালে “Dum Laga Ke Haisha” চলচ্চিত্রের “Moh Moh Ke Dhaage” গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার লাভ। এই গুণী সঙ্গীতশিল্পী তার অভিনয় প্রতিভায় ও সমানভাবে সকলের মন জয় করেছেন। তার প্রথম অভিনয় চলচ্চিত্র “লক্ষ্মী” যা মানব পাচার এবং শিশু পতিতাবৃত্তির বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত হয়। মোনালি ঠাকুরের এই গল্পটি ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী এবং বলিউড গায়িকা হিসেবে এক অমূল্য রত্ন।

প্রাথমিক জীবন ও পরিবার

মোনালি ঠাকুর প্রাথমিক জীবনের একটি অন্যতম অংশ ছিল তার পরিবার ও কলকাতার সঙ্গীত ঐতিহ্য। মোনালি ঠাকুর একজন প্রকৃত প্রতিভা, যার শৈশব এই ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেয়ে সমৃদ্ধ হয়। কলকাতার মাটিতে বড় হওয়া এই কন্যা তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গীতকে সঙ্গী করে নিয়েছেন।

জন্ম ও শৈশব

মোনালি ঠাকুর ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর কলকাতার একটি সঙ্গীতপ্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ রাখতেন। তার পিতা শক্তি ঠাকুর একজন পেশাদার গায়ক ও অভিনেতা ছিলেন, যার থেকে তিনি সঙ্গীতের প্রথম পাঠ নেন। তার পরিবার সঙ্গীতের ঐতিহ্যের একটি নিখাদ প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই সঙ্গীতপূর্ণ পরিবেশই তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিল।

পরিবারের সঙ্গীত ঐতিহ্য

মোনালি ঠাকুরের পরিবার সঙ্গীতের ঐতিহ্য বজায় রেখে এসেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। ঠাকুর পরিবার বহু বছর আগে উত্তর প্রদেশ থেকে বাংলায় আগমন করেন এবং নিজেদের সঙ্গীত ও শিল্পকলার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। মোনালির বাবার পাশাপাশি তার দাদা, প্রপিতামহরাও সঙ্গীত ও শিল্পকলায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এই পরিবার সঙ্গীত ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আরও পড়ুনঃ  তানজিন তিশা

শিক্ষাজীবন

মোনালি ঠাকুরের শিক্ষাজীবন কলকাতার The Future Foundation School এবং St. Xavier’s College-এ অতিবাহিত হয়। তার শিক্ষা দ্রুততার সাথে সঙ্গীত প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত ছিল। শিক্ষাজীবনে তিনি নানা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তার প্রতিভার ঝাঁঝালো পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। মোনালি তার পড়ালেখার পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চায়ও মনোনিবেশ করেছিলেন, যা তাকে আজকের দিনে পৌঁছে দিয়েছে।

সংগীতে প্রথম পদক্ষেপ

বাংলা গানের জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন মনোমুগ্ধকর কণ্ঠের অধিকারী, মোনালি ঠাকুর।

প্রথম গান ও প্রাথমিক সাফল্য

মোনালি ঠাকুর প্রথম গান “চোই চোই চোই টিপি টিপি” গেয়ে সঙ্গীত জগতে পা রাখেন। এটি একটি বাংলা শিশু গান ছিল যা তৎকালীন সময়েই অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই গানের মাধ্যমে তিনি তার সঙ্গীত প্রতিভার প্রদর্শন করেন এবং শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেন। প্রাথমিক সাফল্য তাকে আরও নতুন গানের অফার ও সুযোগ এনে দেয়।

ইন্ডিয়ান আইডলে অংশগ্রহণ

মোনালির সঙ্গীত জীবনের একটি বড় মোড় আসে যখন তিনি ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ২ এ অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিযোগিতায় তার অসাধারণ পারফরম্যান্স সঙ্গীত জগতে তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। ইন্ডিয়ান আইডলে তার অংশগ্রহণ শুধু মাত্র জনপ্রিয়তারই নয়, বরং সঙ্গীতের প্রতি তার অনুরাগ ও প্রতিভার পরিচয়ও দেয়।

সাফল্যের যুগান্তর

ইন্ডিয়ান আইডলের পর, মোনালি ঠাকুরের সঙ্গীত সাফল্য আরও দৃঢ় হয়। তিনি বলিউডের প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত পরিচালকদের কাছ থেকে অন্যান্য বড় প্রজেক্টের জন্য প্রস্তাব পান, যা তার ক্যারিয়ারে নতুন গতি যোগ করে। মোনালি ঠাকুর প্রথম গান থেকে শুরু করে সঙ্গীত জগতে এক নতুন পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা পান, যা তার ভবিষ্যতের সাফল্যের ভিত রচনা করে।

Bollywood-এ সাফল্য

মোনালি ঠাকুর বলিউড-এর জগতে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের প্রতিভা প্রমাণ করেছিলেন। তার সুন্দর কণ্ঠস্বর এবং অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভার জন্য তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মোনালি বলিউডে তার সাফল্যের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মাধ্যমে, যা তাকে সঙ্গীতজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রথম বড় প্রজেক্ট

মোনালি ঠাকুর বলিউডে তার প্রথম প্রজেক্ট ছিল ফিল্ম ‘রেস’-এর জন্য “খোয়াব দেখে (সেক্সি লেডি)” এবং “জারা জারা টাচ মি” গান দুটি। এই গানগুলো তাকে সর্বত্র পরিচিতি এনে দেয়, এবং সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  তাসনিয়া ফারিণ

সাফল্যের ধাপে ধাপে

মোনালি’র সংগীত যাত্রায় আরও অনেক সফল মুহূর্ত ছিল। তার একাধিক জনপ্রিয় গান সঙ্গীতপ্রেমীদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। বলিউডে তার যাত্রা শুধুমাত্র গানে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার প্রতিভা প্রদর্শন করেছেন।

বিখ্যাত গান ও পুরস্কার

মোনালি ঠাকুর বলিউড-এ অনেক বিখ্যাত গানের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে, “মোহ মোহ কে ধাগে” এবং “সাওয়ার লুঁ” গানগুলির জন্য তিনি যথাক্রমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন। তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি তার প্রতিভার প্রমাণ এবং সঙ্গীতজগতে তার অবদানের স্বীকৃতি।

Monali Tagore

মোনালি ঠাকুর ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন, যেটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থিত। সঙ্গীতের জগতে মোনালি ঠাকুরের প্রবেশ ঘটে প্রায় ২০০০ সালে বাংলা ছবি ‘সাজনি আমার সোহাগ’ এর গান ‘সুন্দর কতো সুন্দর’ এর মাধ্যমে। এই গানে তাঁর সঙ্গে আরও গান গেয়েছিলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, গৌতম ঘোষ, এবং প্রতীক চৌধুরী।

মোনালি ঠাকুর ‘ইন্ডিয়ান আইডল 2’-এ অংশগ্রহণ করার পর নজরে আসেন এবং ৯ম স্থান অধিকার করেন। এরপরে, তিনি বলিউডের ‘রেস’ (২০০৮) ছবিতে দুটি হিট গান, ‘জারা জারা টাচ মি’ এবং ‘খোয়াব দেখেঁ (সেক্সি লেডি)’ রেকর্ড করেন, যা তাঁর সংগীত ক্যারিয়ারের যুগান্তর আনায়। প্রথম দিকের সংগ্রাম সত্ত্বেও, ‘জারা জারা টাচ মি’ গানটি ২০০৮ সালের প্রথমার্ধে ভারতের রেডিওতে চতুর্থ সর্বাধিক শোনা গান হয়ে ওঠে।

২০১৩ সালে ‘লুটেরা’ ছবির ‘সাওয়ার লুন’ গানটির জন্য সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়িকার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান মোনালি। ২০১৫ সালে ‘দম লাগা কে হাইশা’র ‘মোহ মোহ কে ধাগে’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান। তাঁকে সারা ইন্ডিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড (আইআইএফএ) এবং আপসারা পুরস্কার এর জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।

শুধু সংগীতে নয়, অভিনয় জীবনেও মোনালি সফল। ২০১৪ সালে ‘লক্ষ্মী’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন এবং দক্ষিণ এশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সঙ্গীত রিয়েলিটি শো’তে বিচারক হিসেবে তাঁর উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া।

মোনালির পরিবারের সঙ্গীত ঐতিহ্য ও শিক্ষা তাঁর সঙ্গীত জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। ঠাকুর পরিবার নিজেদের সঙ্গীত ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিভিন্নভাবে খ্যাতি লাভ করেছে। এই পরিবেশই মোনালি ঠাকুরের প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করেছে।

আরও পড়ুনঃ  নাফিসা কামাল

অভিনয় জীবন

মোনালি ঠাকুর শুধু অত্যন্ত প্রতিভাবান সংগীত শিল্পী নন, তিনি একজন সফল অভিনেত্রীও। তার অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি যেমন সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তেমনই প্রিয় দর্শকদের হৃদয়ও জিতে নিয়েছেন।

প্রথম অভিনয়

মোনালি ঠাকুর অভিনয় জীবনের শুরুটা করেছিলেন বাঙালি টেলিভিশন সিরিজ “আলোকিত ইন্দু” দিয়ে, যেখানে তিনি একটি শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই প্রথম পদক্ষেপের মাধ্যমেই তিনি তার অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হন।

বিখ্যাত চলচ্চিত্র

২০১৪ সালে, মোনালি ঠাকুর অভিনয় করেছিলেন বলিউড চলচ্চিত্র “লক্ষ্মী” তে, যা ছিল নাগতেশ কুকুনুর পরিচালিত। এই চলচ্চিত্রে তার প্রভাবশালী চরিত্র ও শক্তিশালী অভিনয়ের জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসা পান। এছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন “প্রেমামে” এবং “হোলি বাবা” চলচ্চিত্রে। তার বিখ্যাত চলচ্চিত্ররা তাকে অভিনেত্রী হিসেবে বেশি পরিচিত করেছে।

অভিনয়ে সাফল্য

মোনালি ঠাকুর অভিনয়ে সাফল্যের এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। “দম লাগা কে হাইশা” চলচ্চিত্রে তার অভিনয় সাফল্য এবং তার অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপনায় সমালোচকদের প্রশংসা পান। এর ফলে তিনি চলচ্চিত্র জগতে একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং তার মোনালি ঠাকুর অভিনয় ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হয়। অভিনয়ে তার এই সাফল্য তাকে আরও সম্মান এবং জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।

টেলিভিশন ও রিয়েলিটি শো

মোনালি ঠাকুর, শুধুমাত্র সংগীতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং টেলিভিশন ও রিয়েলিটি শোতেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মোনালি ঠাকুর রিয়েলিটি শো তে একজন বিচারক হিসেবে তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন এবং দর্শকদের মন জয় করেছেন তার বন্ধুত্বপূর্ণ ও পেশাদারী মনোভাব দিয়ে।

রিয়েলিটি শো তে বিচারক

মোনালি ঠাকুর প্রথমবারের মতো বিচারকের আসনে বসেন জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’-এ। এই প্রোগ্রামটি জি টিভিতে প্রচারিত হয় এবং মোনালির স্বাভাবিক, সহজ আচার-ব্যবহার ও সমালোচনা দর্শকদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার নির্দেশনায়, প্রতিযোগীরা সঠিক পথে পরিচালিত হয়েছে, যা এই শোকে আরও প্রাসঙ্গিক ও উপভোগ্য করেছে।

অন্যান্য টেলিভিশন প্রোগ্রাম

মোনালি ঠাকুর শুধুমাত্র রিয়েলিটি শো করোনা, বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামেও তার নিজস্বতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার সহজাত প্রতিভা এবং বিচক্ষণতা টিভি প্রোগ্রামগুলিতে নতুন মাত্রা এনেছে। মোনালি ঠাকুর রিয়েলিটি শো এবং অন্যান্য টিভি প্রোগ্রামে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করে, দর্শকদের মনোরঞ্জনের পাশাপাশি তাদের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণাও প্রদান করেছেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button