মাসুমা রহমান নাবিলা

মাসুমা রহমান নাবিলা একজন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি উপস্থাপিকা, মডেল এবং অভিনেত্রী। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৮ এপ্রিল ১৯৮৫ সালে জেদ্দা, সৌদি আরবে। তার ক্যারিয়ারের শুরু হয় ২০০৬ সালে, এবং ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশে খ্যাতিমান একজন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

নাবিলার অভিনয় জীবনের অন্যতম মাইলফলক হলো “আয়নাবাজি” সিনেমা, যেটি ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এ সিনেমায় নাবিলা চঞ্চল চৌধুরী ও পার্থ বড়য়ার সাথে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাকে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর সম্মান এনে দেয়। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে তিনি একজন প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

প্রাথমিক জীবন

মাসুমা রহমান নাবিলা ১৯৮৫ সালের ৮ এপ্রিল সৌদি আরবের জেদ্দায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক জীবন থেকেই নাবিলা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তিনি শিক্ষার গুরুত্ব ভালোভাবেই বুঝতেন। এতদ্বারা তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনেও মনোযোগী ছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষা

নাবিলা তার প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, জেদ্দায় পূরণ করেন। প্রাথমিক জীবন থেকে শিক্ষার প্রতি তার দারুণ আগ্রহ ছিল। পরে ঢাকায় ফিরে আসার পর, তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

নাবিলা এর শিক্ষাগত যোগ্যতা আরও বিস্তৃত হয় যখন তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ক্যারিয়ারের ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক হয়।

ক্যারিয়ারের শুরু

মাসুমা রহমান নাবিলা উপস্থাপনা ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৬ সালে। প্রথমে তিনি বিটিভির জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘ক্লাসের বাইরে’ এবং ‘জানার আছে বলার আছে’ উপস্থাপনা করে নজর কারেন।

আরও পড়ুনঃ  রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা

টিভি উপস্থাপনা

তার উজ্জ্বল উপস্থাপনার জন্য তিনি তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। নাবিলা বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি ২০ প্রভৃতি টেলিভিশন অনুষ্ঠান গুলোতে বৃহৎ ভাবে অবদান রেখেছেন। এছাড়া, তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন যা তার উপস্থাপনা ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক। তার ধৈর্য্য ও দক্ষতার কারণে নাবিলা বহুমুখী প্রতিভার একজন রত্ন হয়েছে।

মডেলিং জীবনে পদার্পণ

মাসুমা রহমান নাবিলা তার মডেলিং ক্যারিয়ারের শুরুটা করেন ২০০৬ সালে, যখন তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় একটি সার্প ব্লেডের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন। তার চমৎকার প্রয়োজনীয়তা ও দক্ষতার জন্য, তিনি অতি দ্রুতই আরও বড় ব্র্যান্ডগুলির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান।

প্রথম কাজ

নাবিলার প্রথম উল্লেখযোগ্য মডেলিং কাজ ছিল সার্প ব্লেডের জন্য একটি বিজ্ঞাপন, যা ছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায়। এই বিজ্ঞাপনটি তাকে অনেক জনপ্রিয়তা এনে দেয় এবং বাংলাদেশের মডেলিং জগতে নিজের শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলালিংক, রবি, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, এবং ডাবর ভাটিকা হেয়ার অয়েলের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন, যা তার মডেলিং ক্যারিয়ারকে আরও শাণিত করে।

ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর

তার দক্ষতার পরিচায়ক হিসেবে, মাসুমা রহমান নাবিলা ভাটিকা ন্যাচারালস ইউরোপের জন্য একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত হন। এই পদবীটি তাকে আরো বেশি সুপরিচিত করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মডেলিং ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করে।

তার মডেলিং ক্যারিয়ারের সফলতার পেছনে তার কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা ও নান্দনিকতা বড় ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার ক্যারিয়ারকে আরও জনপ্রিয় ও সম্মানজনক করে তুলেছে।

Masuma Rahman Nabila-এর জনপ্রিয় কার্যক্রম

মাসুমা রহমান নাবিলা তার বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে বিনোদন জগতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন সফল অভিনেত্রীই নন, বরং প্রশংসিত উপস্থাপিকা এবং মডেলও বটে। তার ক্যারিয়ারের প্রতিটি ধাপে পেশাদারিত্ব এবং কঠোর পরিশ্রমের ছাপ রয়েছে, যা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।

আরও পড়ুনঃ  অপি করিম

টিভি অনুষ্ঠান ও শো

নাবিলা নিয়মিতভাবে টিভি অনুষ্ঠান এবং শো-তে অংশগ্রহণ করেন যা সারা বাংলাদেশে দর্শকপ্রিয়। তার উপস্থাপনায় যেমন ‘এক্সট্রা ইনিংস’, ‘স্টার ডান্স’, এবং ‘মিউজিক টুগেদার’ উল্লেখযোগ্য। এই শোগুলির মধ্যে তিনি নিজের স্বতঃস্ফূর্ততা এবং আকর্ষণীয়তার পরিচয় দিয়েছেন।

  • এক্সট্রা ইনিংস
  • স্টার ডান্স
  • মিউজিক টুগেদার

এই টিভি অনুষ্ঠান নাবিলার ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে এবং তাকে সমগ্র দেশে পরিচিত করে তুলেছে।

বাণিজ্যিক কাজ

“প্যারাশুট অ্যাডভান্সড হেয়ার ওয়েল” এবং এশিয়ান টিভির বেশ কিছু বিজ্ঞাপন এবং প্রোমোতে কাজ করে নাবিলা তার বাণিজ্যিক কাজ-এও নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। এই উন্নতি শুধুমাত্র তার প্রতিভার প্রমাণই নয়, বরং তার উপর ভক্তদের আস্থা এবং ভালোবাসারও প্রতিফলন।

  • প্যারাশুট অ্যাডভান্সড হেয়ার ওয়েল
  • এশিয়ান টিভি

নিয়মিত আপডেট এবং সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে নাবিলা তার বাণিজ্যিক কাজ-কে আরও উন্নত এবং সসম্পূর্ণ করে তুলছেন।

অভিনয় জীবন

মাসুমা রহমান নাবিলা একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। তার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৬ সালে, তবে তিনি বড় পর্দায় আসেন ২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই ভূমিকায় তিনি অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেন।

আয়নাবাজি

মাসুমা রহমান নাবিলার অভিনয় ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র মুক্তির পর নাবিলা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা ও কৃতিত্ব তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের এক প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মাসুমা রহমান নাবিলা তার অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে শুরু থেকেই বিশেষ যত্নশীল। তিনি সবসময়ই মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন এবং প্রতিটি কাজেই তার সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। তার অভিনয়ের প্রতিটি ধাপেই তিনি দর্শকের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

অভিনয় জীবনে তিনি বিশ্বাস করেন কাজের মানের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত এবং তাই সবসময়ই তিনি ভালো গল্প ও চরিত্র বেছে নেন। তার অভিনয় ক্যারিয়ার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের জন্য।

আরও পড়ুনঃ  জহির রায়হান

ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ

মাসুমা রহমান নাবিলার অভিনয় জীবনে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রেও। তাঁর অভিনয় দক্ষতা তাঁকে এনে দিয়েছে একাধিক প্রশংসা ও ভক্তদের ভালোবাসা।

তুফান ও অন্যান্য চলচ্চিত্�

মাসুমা রহমান নাবিলা অভিনীত ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালে মুক্তি পায় এবং ঢালিউডে এক নতুন দিক উন্মোচন করে। এই চলচ্চিত্রটির বাজেট ছিল প্রায় ৳১.৭ কোটি (২০২৩ সালে ৳২.৬ কোটি বা US$২২০,০০০)। মুক্তির পর, চলচ্চিত্রটি ৳৫.১৩ কোটি (২০২৩ সালে ৳৮.০ কোটি বা US$৬৭০,০০০) আয় করতে সমর্থ হয়।

‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি মুক্তির প্রথম ১০ দিনে ৯১টি শো করে রেকর্ড গড়েছিল, যা সে সময়ের কোন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি। এছাড়া, এই চলচ্চিত্রটি ৯৮.৮৯% দর্শক উপস্থিতির রেকর্ডও অর্জন করে। শুধু তাই নয়, ‘আয়নাবাজি’ ২০১৬ এর highest-grossing চলচ্চিত্র হিসেবে অভিহিত হয় এবং সেই সময়ের সর্বোচ্চ আয়ের ২২তম চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম।

এই চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালে Dubai International Film Festival এ Best Film Award জিতেছিল। এছাড়া, ৪১তম Bangladesh National Film Awards এ ১১টি নমিনেশন এর মধ্যে ৭টি পুরস্কার জিতে, Best Director এবং Best Actor in a Leading Role এর মত সম্মানজনক পুরস্কারগুলোও পায়।

নাবিলা তাঁদের বিশেষ কৃতিত্ব দিয়ে ‘তুফান’ ছাড়াও অন্যান্য চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজে তাঁর দক্ষতা ও প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড আরও অনেক নতুন ও আশাবাদী প্রজেক্টের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করা যায়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button