পূবালী ব্যাংক পিএলসি
পূবালী ব্যাংক পিএলসি হল বাংলাদেশের একটি প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক যা ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যাংকটির সদর দপ্তর ঢাকার দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত। এটি প্রথমে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু হয়, কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেসরকারিকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূবালী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং বর্তমানে এটি একটি অত্যন্ত সুনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
পূবালী ব্যাংক তার বিস্তৃত আর্থিক পরিষেবাগুলির জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে আমানত অ্যাকাউন্ট, ঋণ, অগ্রিম এবং ট্রেড ফাইন্যান্স অন্তর্ভুক্ত। ২০০৯ সালে ব্যাংকটির রিজার্ভ ছিল প্রায় ৮৮.৮৯ বিলিয়ন টাকা, এবং ২০১৮ সালে এর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪১০.২২৬ বিলিয়ন টাকা। পূবালী ব্যাংক তার আংশিক ব্যাংক ও ইসলামিক উইন্ডো নিয়ে প্রায় ৫০৪টি শাখা এবং ২২৩টি ইসলামিক উইন্ডোর মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে থাকে।
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
পূবালী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি প্রধান বেসরকারিকৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যার সূচনা এবং বিবর্তনের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
পূবলী ব্যাংকের উত্স
পূবালী ব্যাংক মূলত ১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে প্রতিষ্ঠা করে। এটি একটি প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশের ব্যাংকের ইতিহাস এর মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে, সরকারিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক পূবালী ব্যাংকের রূপান্তরিত হয় এবং এর নামকরণ পুনরায় করা হয়।
বেসরকারিকরণ ও সরকারি করণ
১৯৮৩ সালে পূবালী ব্যাংক পুনরায় বেসরকারিকরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ব্যাংকের ইতিহাসে একটি বড় প্রেক্ষাপট তৈরি করে। বেসরকারিকরণ এর ফলে ব্যাংকটি তার সেবার মান বৃদ্ধি করে এবং আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার শাখা প্রতিষ্ঠা করে।
বর্তমানে, পূবালী ব্যাংক পিএলসি-এর মোট ৫০০টি শাখা এবং ১৫২টি উপশাখা রয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। তাদের সফল ব্যাংকের ইতিহাস এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ধারা ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত পরিসরে প্রসারিত হবে।
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিস্থিতি
পূবালী ব্যাংক পিএলসি দেশের অন্যতম প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই ব্যাংকের বর্তমান স্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এর ব্যাংক প্রশাসন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
পূবালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী। তাদের নেতৃত্বে ব্যাংকের প্রশাসন চালিত হচ্ছে, যা ব্যাংকের বর্তমান স্থিতিকে সুসংহত করেছে।
কর্মীসংখ্যা এবং শাখা
২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০৪ টি এবং উপশাখা ২২৩ টি-তে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ব্যাংকের প্রশাসন দক্ষ কর্মীবাহিনী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠানকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করছে।
Pubali Bank Plc
পূবালী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং এবং ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যা গ্রাহকদের চাহিদা মিটাতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান সরবরাহ করে থাকে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সেবা
বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পূবালী ব্যাংক অভিনব বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। বর্তমানে, পূবালী ব্যাংকের মোট শেয়ার হোল্ডিং মজুদ ৩১৯২৮.৫৩৫ মিলিয়ন টাকা। এই ধরনের বৃহৎ পরিমাণ মূলধন ব্যাংকটিকে স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য করতে সাহায্য করে। ব্যাংকটির ক্রেডিট রেটিং AAA, যা দীর্ঘমেয়াদী অধিকতর ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ নির্ধারণ করে। মোট ১১,৫৬৮.৩০ মিলিয়ন টাকা প্রয়োগকৃত মূলধন নিশ্চিত করে যে, পূবালী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আস্থার প্রতীক।
ইসলামী ব্যাংকিং সেবা
ইসলামী ব্যাংকিং এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে যেখানে শারিয়াহ্ নীতির উপর ভিত্তি করে ন্যায্য ও সুরক্ষিত সেবা প্রদান করা হয়। পূবালী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং সেবা এই সেগমেন্টে তাদের কার্যক্রম ও উদ্ভাবন বহুজাতিক ও স্থানীয় মুসলিম গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইসলামী ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পেশাদারী এবং দৈনন্দিন অার্থিক কার্যক্রম আরও সহজ এবং বাধাহীন করা হয়েছে।
পণ্য ও সেবা সমূহ
পূবালী ব্যাংক পিএলসি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই খাতে তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিষেবাগুলির মধ্যে রয়েছে যৌথ ব্যাংকিং এবং ঋণ ও বিনিয়োগ পরিচালনা।
যৌথ ব্যাংকিং
পূবালী ব্যাংক তাদের যৌথ ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। এই সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পিবিএল এটিএমকে ব্যবহার করে একাউন্ট থেকে দিনে সর্বাধিক ৫০,০০০ টাকা ক্যাশ উত্তোলনের সুবিধা।
- পিবিএল কার্ডধারীদের জন্য পিবিএল এটিএম থেকে সহজে ব্যালেন্স ট্রান্সফার সুবিধা।
- বিশ্বব্যাপী ৩.৫ মিলিয়ন এটিএম এর মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়ে আসার সুযোগ।
- মাস্টারকার্ডের ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে সম্পূরক কার্ড ও পার্টনার আউটলেটের বিনামূল্য অ্যাক্সেস।
ঋণ ও বিনিয়োগ
পূবালী ব্যাংক ঋণ সুবিধা এবং বিনিয়োগ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- ব্যক্তিগত ঋণ এবং এসএমই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের আর্থিক সহায়তা।
- বিনিয়োগ পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদের হার ছাড় এবং পিওএস লেনদেন ও ফান্ড ট্রান্সফার ক্ষেত্রে ৪৫ দিনের জন্য বিশেষ ছাড়।
- নিজেদের এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ইএমআই সুবিধা প্রদান।
- পিবিএল ব্যাংকের ভিসা গোল্ড ক্রেডিট কার্ডের বিশেষ সুবিধার মধ্যে একটি মিনি স্টেটমেন্ট এবং ২৪/৭ গ্রাহক সেবা সাপোর্ট।
এছাড়াও, পূবালী ব্যাংকের মাস্টারকার্ড ক্রেডিট কার্ডের দ্বৈত মুদ্রা সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবহারযোগ্যতা প্রদান করা হয়, যা গ্রাহকদের জন্য উন্নত বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে সহায়ক।
ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা
বর্তমান সময়ে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পরিষেবা হওয়ার কারণে পূবালী ব্যাংক পিএলসি তাদের গ্রাহকদের জন্য অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সুবিধাসমূহ প্রদান করছে। এই পরিষেবার মধ্যে রয়েছে পিআই ব্যাংকিং অ্যাপ, এটিএম পরিষেবা এবং মোবাইল ব্যাংকিং। এসব সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করেছে।
পিআই ব্যাংকিং অ্যাপ
পিআই ব্যাংকিং অ্যাপ হল একটি আধুনিক ব্যাংকিং অ্যাপ যা গ্রাহকদের তাদের অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে, বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে, তহবিল স্থানান্তর করতে এবং অন্যান্য আরো অনেক পরিষেবা গ্রহণ করতে সুবিধা দেয়। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবার সাথে সম্পৃক্ত এই অ্যাপটি গ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পূবালী ব্যাংকের গ্রাহকগণ এখন যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থান থেকে তাদের মোবাইলের মাধ্যমে এই অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে পারছেন।
এটিএম এবং মোবাইল ব্যাংকিং
পূবালী ব্যাংক পিএলসি এটিএম পরিষেবা এবং মোবাইল ব্যাংকিং উভয় সুবিধা প্রদান করে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবার আওতায়, ব্যাংকটি সারা দেশে বিস্তৃত একটি এটিএম নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে যা গ্রাহকদের তাদের নগদ উত্তোলন এবং অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে। মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে তারা, যার মাধ্যমে গ্রাহকগণ মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। এভাবে, পূবালী ব্যাংক পিএলসি তাদের সেবা গ্রাহকদের আরও সহজলভ্য ও সুরক্ষিত করে তুলেছে।