অমিতাভ বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন জীবনী ভারতীয় সিনেমার অঙ্গনে এক অতি পরিচিত নাম। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর, আল্লাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ, উত্তরপ্রদেশ, ভারত)। বলিউডের শাহেনশাহ হিসেবে পরিচিত, বচ্চনের ক্যারিয়ার প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিস্তৃত এবং তিনি দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অসামান্য প্রতিভা এবং মেধার জন্য তিনি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন।
অভিনয়জীবনের পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সামাজিক অবদানও উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য হিসেবে সংসদের লোকসভার সদস্য ছিলেন এবং বহুবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, বচ্চন পেয়েছেন ছয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ষোলটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। তার অসামান্য জীবনের ব্যাপক বিশ্লেষণ থাকছে এই প্রবন্ধে।
প্রাথমিক জীবন এবং পরিবার
অমিতাভ বচ্চন, যিনি বিশ্বজুড়ে ‘বিগ বি’ নামে পরিচিত, তার শৈশবকালে প্রিয়াগ্রাজে কাটিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের এলাহাবাদে তার জন্ম হয়। ছোটবেলার এই সময় থেকেই তার জীবনের পটভূমি তাকে ভবিষ্যতে সফল অভিনেতার পথে নিয়ে যায়।
জন্ম এবং শৈশব
অমিতাভ বচ্চন শৈশব এলাহাবাদের প্রভাবক সময়। তার জন্মদিনে, পরিবারে উৎসবের আমেজ থাকতো এবং স্কুল জীবনে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। স্কুলে তার সময় কেটে যেত বিভিন্ন ধরণের শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।
পিতামাতার পরিচয়
অমিতাভ বচ্চনের পিতামাতা ছিলেন খুবই নামকরা ব্যক্তি। তার পিতা হরিবংশ রাই বচ্চন ছিলেন প্রখ্যাত হিন্দি কবি এবং তার মা তেজি বচ্চন ছিলেন সামাজিক কর্মী। এই গুণী পিতামাতার সন্তান হওয়ায় অমিতাভের পরিবারে এমন এক পরিবেশ ছিল যেখানে শ্রম ও সাহিত্যপ্রেম সমানভাবে সম্মানিত ছিল।
শিক্ষাজীবন
অমিতাভ বচ্চনের শিক্ষাজীবনের শুরু হয় এলাহাবাদে। পরে তিনি কোলকাতার শেরলউড স্কুলে ভর্তি হন এবং তারপরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরোরি মাল কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পড়াশোনা শেষ করেন। অমিতাভ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত এবং তা তার পরে জীবনে সাফল্যের মূলে অংশ নিয়েছে।
কর্মজীবনের শুরু
অমিতাভ বচ্চন, বলিউডের এক অমর অভিনেতা, তার অভিনয় জীবনের প্রথম ধাপ শুরু করেন ১৯৬৯ সালে। তিনি মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ চলচ্চিত্রে কণ্ঠস্বর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই চলচ্চিত্রটি সংলাপ প্রদানকারী হিসেবে তার চলচ্চিত্র জগতের প্রাথমিক অভিজ্ঞান হয়। এরপর, ১৯৭১ সালে ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রে রাজেশ খান্নার সঙ্গে তার বলিউড ডেবিউ ঘটে এবং তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
প্রথম চলচ্চিত্র
অমিতাভ বচ্চনের প্রথম অভিনীত বড় চলচ্চিত্র ছিল ১৯৬৯ সালের সুভাষ ঘোষ পরিচালিত ‘সাত হিন্দুস্তানি’। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করতে শুরু করেন এবং এখান থেকেই তার বলিউড ডেবিউ রূপে যাত্রা শুরু হয়। অমিতাভ বচ্চনের প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বলিউডে তার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পায়।
আগামী পর্বে তার উপস্থিতি
প্রথম কয়েকটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই অমিতাভ বচ্চন তার প্রতিভা প্রমাণ করেন। ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রে তার চরিত্র উপস্থাপনা তাকে প্রসংশার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এরপর থেকে বলিউডে তিনি একের পর এক সফল চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তার অভিনয় ক্ষমতা এবং প্রতিভা তাকে দ্রুত বলিউডের অন্যতম প্রধান অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিটি নতুন চলচ্চিত্রের সাথে, আমরা অমিতাভ বচ্চনের অভিনয়ের নতুন মাত্রা দেখতে পাই।
অমিতাভ বচ্চনের উত্থান
অমিতাভ বচ্চনের কর্মজীবন শুরুটা যদিও কঠিন ছিল, কিন্তু তাঁর মেধা ও অধ্যবসায়ে তিনি বলিউডে নিজের একটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেন। প্রথম দিকে তাঁর চলচ্চিত্রগুলি বক্স অফিসে বিশেষ সাফল্য লাভ করেনি। তবুও, তাঁর প্রথম সফল চলচ্চিত্র “জঞ্জির” ছিল একটি মাইলফলক।
প্রথম সফল চলচ্চিত্র
১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “জঞ্জির” চলচ্চিত্রটি অমিতাভ বচ্চনের জন্য অন্যতম অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। অমিতাভ বচ্চন হিট চলচ্চিত্র দের মধ্যে এটি অন্যতম, যেখানে তিনি বলিউড ক্ষুব্ধ যুবক হিসেবে পরিচিতি পান। ছবিটিতে তাঁর অভিনয় অত্যন্ত প্রশংসিত হয় এবং তিনি কাল্ট স্টার হয়ে ওঠেন।
“রাগী যুবক” রূপে প্রতিষ্ঠা
“জঞ্জির” চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর অমিতাভ বচ্চন বলিউড ক্ষুব্ধ যুবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এই পর্বে তাঁর ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ চরিত্রটি কোটি দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। এটি অমিতাভ বচ্চন হিট চলচ্চিত্র হিসেবেও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
বলিউডের শাহেনশা: বিখ্যাত চলচ্চিত্রসমূহ
অমিতাভ বচ্চনের ক্যারিয়ারে অনেক বলিউড ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র রয়েছে যা তাকে হিন্দি সিনেমার রাজা করে তুলেছে। তার অভিনয় দক্ষতা এবং করিশ্মাটিক উপস্থিতি তাকে উপাধি দিয়েছে বলিউডের শাহেনশা। এখানে তার কিছু অমিতাভ বচ্চন ক্লাসিক চলচ্চিত্র:
শোলে এবং দিওয়ার
১৯৭৫ সালের একে পর এক মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শোলে’ এবং ‘দিওয়ার’ চলচ্চিত্র দুটি অমিতাভ বচ্চনের ক্যারিয়ারকে পাল্টে দেয়। ‘শোলে’ এক বলিউড ব্লকবাস্টার হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পায়, যেখানে বচ্চনের ‘জয়’ চরিত্র আজও দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছে। ‘দিওয়ার’ চলচ্চিত্রে তার ডায়লগ “মেরে পাস মা হ্যায়” আজও বলিউডের অন্যতম বিখ্যাত ডায়লগ হয়ে আছে।
অমর আকবর এন্তনি
‘অমর আকবর এন্তনি’ (১৯৭৭) অমিতাভ বচ্চন ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এই কমেডি-ড্রামা চলচ্চিত্রে অমিতাভের ‘এন্তনি গঞ্জালভেস’ চরিত্র দর্শক মাতিয়ে যায়। তার ব্যতিক্রমী অভিনয় ও কৌতুকপূর্ণ মুখভঙ্গি তাকে একটি বিশেষ স্থানে বসায়।
কুলি এবং মর্দ
১৯৮৩ সালের ‘কুলি’ চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের সময় গুরুতর আহত হলেও, দর্শকের সমর্থন এবং ভালোবাসা অমিতাভকে পুনরায় আলোচনায় নিয়ে আসে। কুলির মুক্তির সময় তার সুস্থতা কামনায় দেশজুড়ে প্রার্থনা করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের ‘মর্দ’ সিনেমায় তার সাহসী এবং শক্তিশালী ইমেজ তাকে আরও একবার প্রিয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
Amitabh Bachchan: আন্তর্জাতিক সাফল্য
অমিতাভ বচ্চন শুধু বলিউডে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক ফিল্ম জগতে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তার দক্ষতা এবং অভিনয়ের গভীরতা আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতেও একইরকম প্রাসঙ্গিক প্রমাণ হয়েছে। তার এই সাফল্যের পথে প্রথম পদক্ষেপ ছিল হলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়।
প্রথম হলিউড চলচ্চিত্র
অমিতাভ বচ্চন তার প্রথম হলিউড চলচ্চিত্র ‘দ্যা গ্রেট গ্যাটসবি’তে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বাজ লুহরমান, যেখানে অমিতাভ অমিতাভ মেয়ার উলফশাইম নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনয় দক্ষতা এই আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে নতুন মাত্রা যোগ করে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অমিতাভ বচ্চন আন্তর্জাতিক ফিল্ম মহলে বিশেষ প্রশংসা পান। তার অসাধারণ অভিনয় এবং চরিত্রের প্রতি নিষ্ঠা তাকে আন্তর্জাতিক স্তরে সমাদৃত করে তোলে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং চলচ্চিত্র সম্মেলনে উপস্থিতি দিয়ে তার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি আরও প্রসারিত করেছেন। এমনকি হলিউডের অনেক নামকরা পরিচালক এবং প্রযোজকও তার সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।