মহেশ বাবু
মহেশ বাবু জীবনী নিয়ে বলতে গেলে, তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় তেলুগু চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। মহেশ বাবু তেলুগু চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রীকরণে অসাধারণতা দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। তাঁর জন্ম ৯ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে মাদ্রাস, তামিলনাড়ু, ভারতে। মাত্র চার বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে, ‘নীডা’ চলচ্চিত্রে শিশু অভিনেতা হিসেবে তাঁর অভিনয় জীবনের সূচনা হয়।
মহেশ বাবু তার চলচ্চিত্র জীবনে অনেক সংবর্ধনা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। বিশেষত ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্লকবাস্টার ‘ওক্কাডু’ চলচ্চিত্র তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়, যা প্রায় ১০.৪ মিলিয়ন রুপি আয় করে। তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি ৯টি নন্দী পুরস্কার এবং ৫টি ফিল্মফেয়ার তেলুগু বেস্ট অভিনেতা পুরস্কার পেয়েছেন। মহেশ বাবু প্রকৃত অর্থে তেলুগু চলচ্চিত্রে একটি দৃষ্টান্তস্থান সৃষ্টি করেছেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
মহেশ বাবু, আসল নাম মহেশ ঘট্টমানেনি, ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট ভারতের তামিল নাড়ুর চেন্নাইতে জন্মগ্রহণ করেন। মহেশ বাবু শৈশব কাটান একটি চলচ্চিত্রমুখী পরিবেশে, যার প্রভাব তাঁর ভবিষ্যত জীবনে ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত হয়।
জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
মহেশ বাবুর পিতা কৃষ্ণা একজন প্রসিদ্ধ তেলুগু চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসাবে সুপরিচিত। তাঁর মা ইন্দিরা ঘরনি ছিলেন। এই পারিবারিক পটভূমি মহেশ বাবুর শৈশবকে গড়ে তোলে এবং তাঁর চলচ্চিত্র প্রাণিত পরিবেশেই তিনি বেড়ে ওঠেন। মহেশ বাবু পারিবারিক জীবনে তাঁর পিতা-মাতার সাথে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, যা তাঁর ভবিষ্যতের সফল ক্যারিয়ারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও বাল্যকাল
মহেশ বাবুর শিক্ষাজীবন চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজে শুরু হয়, যেখানে তিনি বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। মহেশ বাবু শিক্ষা জীবনে যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন এবং তিনি বাণিজ্যিক অধ্যয়নে দক্ষতা অর্জন করেন। মহেশ বাবু শৈশব থেকে শিক্ষা ও চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন, যা পরবর্তীতে তার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করে।
অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরু
মহেশ বাবু অভিনয় জগতে প্রথম পদক্ষেপ নেন খুবই অল্প বয়সে। তাঁর প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সফল একটি সিনেমা ক্যারিয়ারের মালিক হন।
শিশু অভিনেতা হিসেবে প্রথম পদক্ষেপ
মহেশ বাবু শিশু অভিনেতা হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু করেন ১৯৭৯ সালে ‘নীডা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সেই সময় তিনি মাত্র চার বছর বয়সী ছিলেন। মহেশ বাবু শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ করার সময় থেকেই প্রতিভার সাক্ষর রাখেন, যা পরে মহেশ বাবু সিনেমা ক্যারিয়ার এর ভিত্তি স্থাপন করে।
প্রথম প্রধান নায়ক চরিত্র
মহেশ বাবু প্রথম চলচ্চিত্র নায়ক হিসেবে ১৯৯৯ সালে ‘রাজাকুমারুডু’ তে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটি মহেশ বাবু সিনেমা ক্যারিয়ার এ একটি মাইলফলক তৈরি করে এবং তাকে তেলুগু সিনেমা জগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তেলুগু চলচ্চিত্রে সাফল্য
মহেশ বাবু সাফল্য তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্পে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্প যা ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলে মনে করা হয়, তাতে মহেশ বাবু অন্যতম শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এ পর্যন্ত চিরঞ্জীবি, পবন কল্যাণ, রাম চরণ, সাই ধরম তেজ, আল্লু অর্জুন এবং প্রভাসের মতো অভিনেতারা নিজেদেরকে শক্তিশালী করে তুলেছেন।
ব্লকবাস্টার হিট ‘ওক্কাডু’
মহেশ বাবুর অগ্রগতিতে ‘ওক্কাডু’ (২০০৩) ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। এই মহেশ বাবু ব্লকবাস্টার সিনেমাটি তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে অন্যতম উচ্চ আয় সংগ্রহকারী চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ‘ওক্কাডু’ মুক্তির পর, মহেশ বাবু সাফল্য অর্জন করেন এবং নিজের জন্য একটি বৃহৎ ফ্যান বেস তৈরি করেন। মহেশ বাবুর এই সমৃদ্ধি তাকে তেলুগু সিনেমার প্রধান মুখ করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ ‘আতাডু’
‘আতাডু’ (২০০৫) মহেশ বাবুর আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেয়। এই মহেশ বাবু ব্লকবাস্টার সিনেমাটি শুধু ভারতেই নয়, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তি পেয়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। ‘আতাডু’ মহেশ বাবুকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয় এবং তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। এই চলচ্চিত্রের সাফল্য তাকে মহেশ বাবু আন্তর্জাতিক পরিচিতির একটি চিহ্নিত নাম করে তোলে।
Mahesh Babu-এর পেশাগত জীবনের উত্থান
মহেশ বাবু তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে তেলুগু চলচ্চিত্রজগতে তারকাখ্যাতি অর্জন করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি, তিনি তার প্রযোজনা দক্ষতায়ও প্রভাব ফেলেছেন এবং বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
সিনেমা প্রযোজনা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
মহেশ বাবু প্রযোজনা জগতে পা রাখেন ‘জি. মহেশ বাবু এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি সফল সিনেমা প্রযোজনা করেন ও মহেশ বাবু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত হন। তার প্রযোজনার অধীনে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলি বিভিন্ন পুরষ্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে, যা তাকে তেলুগু চলচ্চিত্র জগতে সম্মানিত করেছে।
স্বাস্থ্য ও মানবিক কার্যক্রম
মহেশ বাবু মানবিক কার্যক্রমে যথেষ্ট জড়িত। তিনি অবহেলিত শিশুদের জন্য বিনামূল্যে হৃৎপিণ্ডের জটিল অপারেশন নিশ্চিত করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও দাতব্য কাজে অবদান রেখে মহেশ বাবু মানবিক কার্যক্রমকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তার মানবিক কার্যক্রম শুধু দক্ষিণ ভারত নয়, সমস্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশংসিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন
দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের সুপারস্টার মহেশ বাবু ব্যক্তিগত জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছেন। মহেশ বাবু বিবাহিত জীবনে সুখী হলেও ২০২৩ সালে তিনি তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে হারানোর শোক সয়েছেন।
বিবাহ ও পরিবার জীবন
মহেশ বাবু ২০০৫ সালে বলিউড অভিনেত্রী নম্রতা শিরোদকরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মহেশ বাবু বিবাহ তার জীবনে একটি নিউক্লিয়ার পরিবার গঠনের দিকেও পথ দেখিয়েছে। তাদের বিবাহ থেকে দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, ছেলে গৌতম কৃষ্ণ এবং মেয়ে সিতারা।
সহধর্মিনী ও সন্তান
মহেশ বাবু সহধর্মিনী নম্রতা শিরোদকর বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী হলেও, নিজের পরিবার ও সন্তানের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। মহেশ বাবু সন্তান গৌতম এবং সিতারার ভালোমানের শিক্ষা ও বেড়ে উঠার জন্য সর্বদায় সচেষ্ট থাকেন। মহেশ বাবু তার সন্তানদের সাথে অনেক মধুর মুহূর্ত কাটান এবং তাদের বিকাশের প্রতি সবসময় নজর রাখেন।
প্রধান সিনেমা ও সফলতা
মহেশ বাবু-এর সিনেমাগুলি প্রায়শই বক্স অফিসে বিশাল সফলতা অর্জন করেছে। তার ক্যারিয়ারের অগ্রণী সিনেমাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ‘বিজনেসম্যান’।
বক্স অফিস সফল সিনেমা
‘বিজনেসম্যান’ সিনেমাটি তৈরির জন্য প্রায় ₹৪০০ মিলিয়ন অর্থ ব্যয় করা হয়। এই সিনেমাটি মুক্তির পরে প্রায় ₹৫৫০ মিলিয়ন আয় করে বিপুল সাফল্য অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি ১৩১ মিনিটের একটি আকর্ষণীয় গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল, যা দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছে।
‘বিজনেসম্যান’ সিনেমাটি বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 2nd South Indian International Movie Awards-এ সেরা গীতিকার, সেরা সঙ্গীত পরিচালক, সেরা পুরুষ ও মহিলা প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পী এবং 60th Filmfare Awards South-এ সেরা সঙ্গীত পরিচালক ও সেরা মহিলা প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পী। এছাড়াও, এই সিনেমাটি TSR-TV9 National Film Awards 2012 এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রী, সেরা সহমিত্রের ভূমিকাতে অভিনেতা এবং আরো অনেক বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে।
তেলু…
‘বিজনেসম্যান’ সিনেমার সাউন্ডট্র্যাকগুলি তেলুগু, তামিল এবং মালায়ালাম ভাষায় উপলব্ধ। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় গান হলো “আমচি মুম্বাই”, “সির ওস্তারা”, “পিলা চাও”, “চান্দামামা”, “ব্যাড বয়েজ”, এবং একটি থিম সং। মহেশ বাবু এবং কাজল আগরওয়ালের পাশাপাশি প্রাকাশ রাজ, নাসার, এবং সায়াজি শিন্দে এই সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এই সিনেমাটির জন্য শ্রুতি হাসান ও সামান্থা বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন, যেখানে শ্রুতি হাসান ৩টি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং সামান্থা সর্বাধিক অনুমোদন পেয়েছেন। কৃতিত্বের তালিকায় সবচেয়ে কমবয়সী হিসাবে ২২ বছর বয়সে শ্রিলেলা এবং সবচেয়ে বয়স্ক বিজয়ী হিসাবে ৩৩ বছর বয়সী কাজল আগরওয়ালের নাম উঠে এসেছে।