সালমান খান
সালমান খান, পুরো নাম আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান, একজন প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। সালমান খান জীবনী অনুসারে, তিনি ১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন এবং খুব অল্প বয়সেই বলিউডে পা রাখেন। সালমান খান ১৯৮৮ সালে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং দ্রুতই বলিউড সুপারস্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলি যেমন দাবাং, বাজরঙ্গি ভাইজান এবং সুলতান সবই বক্স অফিসে তুমুল সাফল্য লাভ করে।
উপরন্তু, সালমান খান চলচ্চিত্র জগতে বিশাল অবদান রেখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। ২০০৭ সালে তার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান, Being Human, বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সক্রিয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, সালমান খান ২০১০ সাল থেকে জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো বিগ বস-এর সফল উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। সালমান খানের জীবন এবং ক্যারিয়ার প্রমাণ করে যে তিনি সত্যিই এক বহু প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব যিনি ভারতের এবং বিশ্বের চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
প্রথম জীবন এবং পরিবার
সালমান খান একটি নাম যা বলিউডে শক্তিশালীভাবে প্রসিদ্ধ। কিন্তু তার এই সাফল্যের শুরুর পথ নিয়ে অনেকেই অবগত নয়। সালমান জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ভারতের ইন্দোরে হয়। তার পিতা সেলিম খান বলিউডের বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার ছিলেন, যা তার জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
জন্ম ও শৈশব
সালমান খান শৈশব কাটিয়েছেন মুম্বাইয়ে, যা তার পরিবার এবং বলিউডের সাথে গভীর সংযোগ স্থাপন করে। প্রধানত, খান পরিবার নাট্যকর আর শিল্পীদের পরিবারের মধ্যে পড়ে। এই পরিবারের বলিউডের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল, যা সালমানের ভবিষ্যৎ পেশার নিয়ামক হিসেবে কার্যকর ছিল।
পরিবারিক পরিবেশ
সালমান খান শৈশব থেকেই পরিবারিক ভাবে সমৃদ্ধ ছিল। সেলিম খান এবং তার স্ত্রী সুশীলা চরাক (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে সুলেখা খান) তার পরিবারটিকে একজোট করে রেখেছিলেন। তাদের পরিবারের কুমারত্ব এবং একতা সালমান জন্ম থেকে অভিজ্ঞ ছিলো। খান পরিবার বলিউডে সম্মানিত হয় এবং সালমানের মা-বাবা তার উন্নতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন। এটি সালমানের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে একটি শক্ত ভিত্তি সরবরাহ করে।
কর্মজীবনের শুরু
সালমান খানের চলচ্চিত্র কর্মজীবনের শুরু হয় ১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। একাধিক গৌণ চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি তার একক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন।
প্রথম চলচ্চিত্র বিবি হো তো অ্যায়সি
১৯৮৮ সালে সালমান খান প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’-তে গৌণ ভূমিকায় অভিনয় করেন। যদিও এটি তার প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল, এই চরিত্রটি তাকে প্রধান তারকাতে পরিণত করেনি। কিন্তু এটি তার কর্মজীবনের শুরু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ম্যায়নে পিয়ার কিয়া ও প্রথম সাফল্য
১৯৮৯ সালে সালমান খান অভিনীত ‘ম্যায়নে পিয়ার কিয়া’ তার জীবনের প্রথম একক চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পায় এবং এটি বিশাল বক্স অফিস সাফল্য অর্জন করে। সালমান খান প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে এই ছবি ব্যবসাসফল হয়ে ওঠে এবং তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতে। ম্যায়নে পিয়ার কিয়া সিনেমার সাফল্যের পর, সালমান খান বলিউডে একটি মজবুত অবস্থান গড়ে তোলেন।
Salman Khan এর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
সালমান খান তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল “দাবাং”, “এক থা টাইগার”, এবং “সুলতান”।
দাবাং সিরিজ
“দাবাং” চলচ্চিত্রটি প্রথম মুক্তি পায় ২০১০ সালে। এটি একটি অ্যাকশন ও কমেডি ঘরানার সিনেমা, যেখানে সালমান খান চুলবুল পান্ডে নামের একটি সাহসী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। “দাবাং” সিনেমার বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণে এটি একটি বৃহৎ ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে উঠেছে। “দাবাং” এর সিক্যুয়াল “দাবাং ২” ও “দাবাং ৩” সমান সফল হয়েছে।
এক থা টাইগার ও টাইগার জিন্দা হ্যায়
“এক থা টাইগার” সিনেমাটি ২০১২ সালে মুক্তি পায় ও এটি একটি রোমাঞ্চক অ্যাকশন চলচ্চিত্র। সালমান খান এবং ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত এই সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। এর সিক্যুয়াল “টাইগার জিন্দা হ্যায়” ২০১৭ সালে মুক্তি পায় এবং এটি ও সমানভাবে সফল হয়। দাবাং ছবির মতোই, “এক থা টাইগার” সিরিজও দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।
সুলতান
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “সুলতান” চলচ্চিত্রে সালমান খান একজন পেশাদার কুস্তিগীরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। “সুলতান” চলচ্চিত্রটি দর্শকদের কাছে বিপুল সাড়া ফেলে এবং এটি বক্স অফিসেও ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। এখানে নায়ক সুলতানের চরিত্রে সালমানের অভিনয় ছিল চমকপ্রদ, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
দাবাং, এক থা টাইগার, সুলতানএই তিনটি চলচ্চিত্র সালমান খানের ক্যারিয়ারের মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সালমান খানের প্রোডাকশন হাউস
সালমান খান শুধুমাত্র একজন সফল অভিনেতাই নন, তিনি একজন সফল বলিউড প্রযোজক হিসেবেও নিজস্ব স্থান করে নিয়েছেন। তিনি তার প্রযোজনা সংস্থা সালমান খান ফিল্মস এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় প্রবেশ করেন। তার এই প্রযোজনা হাউসটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে এবং বর্তমানে এটি বলিউড চলচ্চিত্র জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।
সালমান খানের এই প্রযোজনা সংস্থা নতুন এবং প্রতিষ্ঠিত দু’ধরনের প্রতিভাদের একটি মজবুত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। সালমান খান ফিল্মস এর অধীনে, এখন পর্যন্ত বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ উভয় চলচিত্র প্রযোজনা করা হয়েছে। প্রযোজনা হাউসের অধীনে তৈরি প্রথম চলচ্চিত্র ছিল বাজরাঙ্গি ভাইজান, যা মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে এবং বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য অর্জন করে।
- মোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ১১৫
- ঘোষিত কিন্তু মুক্তি পাওয়া বা স্থগিত করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ১৭
- বর্তমানে প্রযোজিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ৩
- সম্পূর্ণ ও মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ৯৫
টেলিভিশন ক্যারিয়ার
সালমান খানের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের পাশাপাশি টেলিভিশনেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। তিনি ছোট পর্দাতেও বেশ জনপ্রিয় মুখ এবং বেশকিছু টিভি শোতে অংশ নিয়েছেন। তাঁর টেলিভিশন ক্যারিয়ার মূলত ‘বিগ বস’ শো এর মাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বিগ বস শো
বিগ বস হলো ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো। এটি মূলত “বিগ ব্রাদার” এর ভারতীয় সংস্করণ। সালমান খান ২০১০ সাল থেকে এই শো টি হোস্ট করে আসছে। তার শৈলীতে পরিচালনা করা এই শো প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে এবং টি.আর.পি লাভ করে শীর্ষস্থানে পৌঁছে যায়।
সালমান খানের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থাপনা, প্রতিযোগীদের সঙ্গে তার উৎসাহী মনোভাব এবং বিভিন্ন নিয়মের প্রয়োগ তাকে একটি প্রিয় হোস্টে পরিণত করেছে। তার এটি নিয়মিত হোস্ট করা সেই সঙ্গে শো এর বিতর্কিত ও আকর্ষণীয় বিষয়বস্থাগুলি দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন তোলে।
অন্য টেলিভিশন কার্যক্রম
বিগ বস ছাড়াও সালমান খান বিভিন্ন টিভি শো এর স্পেশাল এপিসোডে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন, যেমন ‘কৌন বানেগা ক্রোড়পতি’, ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’ এবং ‘ঝলক দিখলা যা’। এই শো গুলিতে তার উপস্থিতি প্রায়শই ভিউয়ারদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। টেলিভিশনে সালমান খানের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি তাকে স্টারডমের একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।