উর্ফি জাবেদ
উর্ফি জাবেদ, যিনি এখন উরফি নামে পরিচিত, ১৫ই অক্টোবর ১৯৯৭ সালে লখনউ, উত্তরপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের হিসাবে তার বয়স ২৭ বছর। ২০১৬ সালে টেলিভিশন জগতে প্রথম পা রাখার পর থেকেই, তিনি তার সাহসী ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এবং বহুল চর্চিত ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিতি লাভ করেছেন।
আমিটি ইউনিভার্সিটি, নয়ডা থেকে গণমাধ্যম যোগাযোগে স্নাতক হওয়ার পরে, উর্ফি টিভি সিরিজ “বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া” দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার অভিনয় প্রতিভার পাশাপাশি, তিনি অপ্রচলিত পোশাক পরিধানের জন্যও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, যেমন একটি আবর্জনার ব্যাগ থেকে বানানো ড্রেস, ঘড়ি, হলুদ ফুল, চেইন এবং পিন দিয়ে তৈরি পোশাক।
উর্ফি জাবেদের প্রাথমিক জীবন
উর্ফি জাবেদ বায়োগ্রাফি শুরুতেই আমরা জানতে পারি, জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের লখনউ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সৃজনশীল কাজে মনোযোগী ছিলেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই শহরেই। উর্ফি জাবেদ বায়োগ্রাফি তে দেখা যায়, শিক্ষা জীবনের শুরুটা লখনউয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুল থেকে।
জন্ম এবং শিক্ষা
লখনউয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পর, উর্ফি অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগে ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি সর্বদাই মেধাবী ছিলেন এবং অভিনয় সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। উর্ফি জাবেদ বায়োগ্রাফি উদ্বোধন করে যে, তিনি শিক্ষা জীবনে প্রচুর পুরস্কারও অর্জন করেন। শৈশব থেকেই তাঁর অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ ছিল অপরিসীম।
পরিবার সম্পর্ক
উর্ফির বাবা ও মা তাঁকে সবসময়ই সমর্থন করেছেন। উর্ফি জাবেদ বায়োগ্রাফি তে উজ্জ্বলভাবে ধরা পড়েছে, পরিবারের এই সমর্থন তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শৈশব থেকে পারিবারিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা তাঁর জীবনের অভিপ্রায় গঠনে সহায়ক হয়েছে।
কর্মজীবনের শুরু
উর্ফি জাবেদ তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৬ সালে সনি টিভির ‘বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া’ ধারাবাহিকে অবনী চরিত্রে। এটি তাঁর অভিনয় শুরু হলেও, উর্ফি জানতে পারেননি কতটা কঠিন হবে এটা। এখান থেকেই উর্ফি জাবেদ ক্যারিয়ার গড়ার প্রথম পদক্ষেপ নেন।
তিনি দিল্লিতে আসার পর প্রথমে একটা কল সেন্টারে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানতে পারেন। অভিনয় শুরু করার আগে উর্ফি ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর দিকে ঝুঁকেছিলেন, যা তাঁকে প্রথমে মনোযোগ আকর্ষণ করতে সহায়তা করেছিল।
উর্ফি জাবেদ ক্যারিয়ার গড়ার সময় তিনি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, যেখানে তাঁর পারিবারিক সমস্যা অন্যতম ছিল। তাঁর পারিবারিক জীবন ছিল খুবই সংঘর্ষপূর্ণ, যেখানে বাবা কর্তৃক মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তা ছাড়াও, মাত্র ১১ বছর বয়সে উর্ফির ফটো একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাইটে পোস্ট করা হয়েছিল, যা তাঁর জীবনের বড় এক ধাক্কা ছিল।
অভিনয় শুরু করার পর উর্ফি তাঁর দুই বোন এবং পরিবারের অন্যান্যদের সাথে সংসার করে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছেন। অভিনয় শুরু হবার পর উর্ফি একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন গোটা দেশে।
উঁর বলার ধরন, ফ্যাশন সেন্স এবং অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে উর্ফি তাড়াতাড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এত বড় উত্থান এবং কোঠরের পরিক্রমা পাড়ি দিয়ে বর্তমানে উর্ফি জাবেদ ক্যারিয়ার তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।
বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া-তে উর্ফি জাবেদের অবদান
উর্ফি জাবেদ জনপ্রিয় টিভি শো “বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া” তে তার অভিনয়ের গুণাবলির মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। এতে তিনি অবনী পান্ত চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে উর্ফি তার প্রথম পরিচিতি পান এবং টিভি দুনিয়ায় তার শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন।
অভিনয়ের প্রসিদ্ধ চরিত্র
“বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া”-তে উর্ফি জাবেদ অবনী পান্ত চরিত্রটি দর্শকদের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে ওঠে। এই চরিত্রের মাধ্যমে তিনি তার অভিনয় দক্ষতা তুলে ধরেন এবং নানা ধরণের অনুভূতির প্রকাশ ঘটান। তার সহজাত অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রের সাথে শুভ মিল থাকা কারণে তীব্র জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। উর্ফি জাবেদ বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া টিভি শো-এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেন।
জনপ্রিয়তা অর্জন
“বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া”-তে উর্ফি জাবেদের অভিনয়ের পরই তিনি তীব্র জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার এই জনপ্রিয়তা তাকে বহুগুণ সম্ভাবনাময়ী করে তোলে এবং টিভি শো-এর অন্যান্য চরিত্রতেও অভিনয়ের সুযোগ এনে দেয়। এই শো-এর মাধ্যমে উর্ফি একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রীর হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং আরও অনেক টিভি শো-তে প্রধান চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন। উর্ফি জাবেদ বড় ভাইয়া কি দুলহানিয়া এবং অন্যান্য টিভি শো এর মাধ্যমে তার নিজের অন্যতম প্রিয় অভিনেত্রী হয়েছেন।
চন্দ্রনন্দিনী এবং মেরি দুর্গা তে অভিনয়
উর্ফি জাবেদ চন্দ্রনন্দিনী এবং মেরি দুর্গা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তার ভূমিকা ও প্রতিভা আরও প্রকাশ পেয়েছে এই শো-গুলিতে। উর্ফি জাবেদ চন্দ্রনন্দিনী এবং মেরি দুর্গা ধারাবাহিকে যে চমৎকার অভিনয় করেছেন, তা বাঙালি দর্শকদের মন জয় করেছে। তাই, তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে করা অভিনয় সম্বন্ধে আরও জানি।
চন্দ্রনন্দিনীতে চরিত্র
২০১৬ সালে, উর্ফি জাবেদ চন্দ্রনন্দিনী ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু করেন। এই ধারাবাহিকে তিনি ছায়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা তার প্রতিভা এবং অভিনয় দক্ষতাকে আরও পরিচিত করেছিল। তার এই চরিত্রটি দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয় এবং তাকে একটি প্রতিষ্ঠিত মুখ হিসেবে গড়ে তোলে।
মেরি দুর্গা তে পরিচিতি
পরবর্তীতে, উর্ফি জাবেদ মেরি দুর্গা ধারাবাহিকে আরতি চরিত্রে অভিনয় করেন। তার এই চরিত্রটি তার প্রতিভা এবং অভিনয় দক্ষতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। এই শো তে তার অভিনয় খুব প্রশংসিত হয়, যা তাকে আরেকটি বিশিষ্টতা প্রদান করে। উর্ফি জাবেদ চন্দ্রনন্দিনী এবং মেরি দুর্গা আটিয়েছিলেন, যা তাকে দর্শকদের প্রিয় হিসেবে গড়ে তোলে।
টিভি শোতে উর্ফি জাবেদের বিভিন্ন ভূমিকা
উর্ফি জাবেদ বিভিন্ন টিভি শোতে তার অভিনয় ভূমিকা নিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি বিভিন্ন শোতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন যা দর্শকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
বেপান্না
বেপান্না টিভি সিরিজে উর্ফি জাবেদ বেলা কপুরের চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনয় মানুষের মন জয় করেছে এবং সিরিজটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জিজি মা
জিজি মা টিভি সিরিজে উর্ফি পিয়ালী চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনয় এবং চরিত্রের গভীরতা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। উর্ফি জাবেদ বিভিন্ন টিভি শোতে তার অভিনয় ভূমিকা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দায়ান
দায়ান টিভি সিরিজে নন্দিনী চরিত্রে উর্ফি জাবেদের অভিনয় উল্লেখযোগ্য। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রে গভীরতা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
উर্ফি জাবেদের বোল্ড এবং সাহসী ফ্যাশন স্টেটমেন্ট
উরফি জাবেদের ফ্যাশন সম্পর্কে বলতে গেলে, তার অনন্য ও বোল্ড স্টাইল তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলে ধরেছে। বিশিষ্টতার সঙ্গে উর্ফি জাবেদ বিভিন্ন মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন, যা তাঁকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। শৈল্পিক মানের পোশাক পরা, ব্যতিক্রমী ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা এবং সাহসী ডিজাইন তাঁকে একটি ফ্যাশন আইকন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হয়েছে।
উরফি জাবেদ ফ্যাশনের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং অদ্ভুত বিষয় হল, তিনি তার পোশাক তৈরি করতেন অনন্য ম্যাটেরিয়াল যেমন পিন, চেইন, ফুল, ঘড়ি, এমনকি আবর্জনার ব্যাগ ব্যবহার করে। এই গুণাবলির জন্য, উরফি জাবেদ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের নজর কেড়েছেন। তার এই বোল্ড স্টাইলের জন্য তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে গুগলে সবচেয়ে বেশি খোঁজা এশিয়ান সেলিব্রিটির তালিকায় ছিলেন, যেখানে বলিউড তারকা যেমন জানভি কাপুর, সারা আলি খান, এবং দিশা পাটাণিকে পেছনে ফেলে দেন।
উরফি ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে চার মিলিয়ন ফলোয়ার অতিক্রম করেন এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা পাঁচ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। তবে তাঁর এই বিন্যাসপ্রসূত ভঙ্গি বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। একাধিকবার তার বিরোধিতাও হয়েছে, বিশেষ করে একটি ঘটনায় বিজেপি রাজনীতিবিদ তার বিরুদ্ধে মুম্বাইতে প্রকাশ্যে অশ্লীলতার অভিযোগ তোলেন, যা পরবর্তীতে মুম্বাই পুলিশ দ্বারা তদন্ত করা হয়েছিল। এছাড়াও, ২০২৩ সালে দুবাইয়ে প্ররোচনামূলক পোশাক পরার কারণে তিনি কিছু আইনি সমস্যার সম্মুখীন হন।
উরফি জাবেদের সাহসী ফ্যাশন স্টেটমেন্ট অন্যদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। উরফি জাবেদের ফ্যাশনের প্রতি এই সাহসী পদক্ষেপ, তাকে একটি স্বাধীনচেতা এবং সম্ভাবনাময় মডেলিং আইকন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।