কারিনা কাপুর

কারিনা কাপুর, বলিউডের এক প্রখ্যাত অভিনেত্রী, তার অভিনয় দক্ষতা ও বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনার জন্য পরিচিত।
১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করা কারিনা, তাদের কাপুর পরিবারের ফিল্মি ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

২০০০ সালে অভিনয় জগতে পা রাখা কারিনা কাপুর বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যেমন “জব উই মেট” এবং “থ্রি ইডিয়টস”। বলিউড অভিনেত্রী হিসেবে অর্জন করেছেন ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং ২০২৪ সালের সময়ের মধ্যে তাকে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। কারিনা কাপুর জীবনী সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবারই রয়েছে।

প্রারম্ভিক জীবন ও পরিবার

কারিনা কাপুর বলিউডের প্রসিদ্ধ কাপুর পরিবারের সদস্য। তার পিতা রণধীর কাপুর এবং মাতা ববিতা শিবদাসানি, দু’জনেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত। কারিনা তার পারিবারিক আবহের মধ্যে বেড়ে উঠেন এবং অভিনয় শিল্পে তার আগ্রহের সূচনা হয়।

জন্ম ও পরিবার

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেন কারিনা। তার মা-বাবা দু’জনেই বলিউড অভিনেতা হওয়ায়, জীবনের শুরুতেই তিনি ফিল্মি পরিবেশে বড় হন। কারিনা কাপুর পরিবার বলিউডের ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

শিক্ষা ও অধ্যয়ন

কারিনা কাপুর শিক্ষা প্রধানত মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে সম্পন্ন করেন। তিনি জামনাবাই নার্সি স্কুল এবং পরে মিঠিবাই কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর, কারিনা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন কোর্সেও অংশ নিয়েছিলেন। তার শিক্ষাজীবন তার ব্যক্তিত্ব ও অভিনয় ক্ষমতাকে আরও প্রখর করে তুলেছিল। কারিনা কাপুর শিক্ষা নিয়ে সবসময়ই আগ্রহী ছিলেন এবং এটি তার জীবনে শক্তিশালী ভিত্তি গঠনে সাহায্য করেছে।

অভিষেক ও প্রথম দিকের ক্যারিয়ার

কারিনা কাপুর তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০০ সালে, যখন তিনি প্রথম বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার সুপরিচিত ফিল্মোগ্রাফির শুরুটা বেশ চমকপ্রদ ছিলো।

আরও পড়ুনঃ  আলিয়া ভাট

প্রথম চলচ্চিত্র রিফিউজি

কারিনা কাপুর প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো ‘রিফিউজি’, যা মুক্তি পায় ২০০০ সালে। যেখানে তিনি অভিষেক বচ্চনের সাথে অভিনয় করেন। ‘রিফিউজি’ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র, যা কারিনা কাপুরকে তাত্ক্ষণিকভাবে পরিচিতি এবং শ্রোতাদের মধ্যে স্বীকৃতি এনে দেয়। এ চলচ্চিত্রটি তার ক্যারিয়ারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাকে বলিউডে স্থির রাখতে সাহায্য করে।

এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা ছিল অসাধারণ, যা প্রযোজকদের এবং সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। ‘রিফিউজি’ কারিনা কাপুর প্রথম চলচ্চিত্র হলেও, তা ছিল এক বিশাল উদ্যোগ এবং সাফল্য যা তাকে বলিউডের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মেলোড্রামাধর্মী ব্লকব্লাস্টার

‘রিফিউজি’-এর পর, কারিনা কাপুর খেলেছেন বিভিন্ন মেলোড্রামা চলচ্চিত্রে, যা তাদের ব্লকব্লাস্টার স্ট্যাটাস এনে দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, যা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক অনন্য উদাহরণ। এরপরে তিনি ‘মুঝসে দোস্তি কারোগি!’ এবং ‘যুবা’ তে অভিনয় করেন, যা তার জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়েছে।

এরপর, ২০০৪ সালে ‘চামেলী’ চলচ্চিত্রে কারিনা কাপুরের অভিনয় বোল্ড এবং চমৎকার ছিল, যা তাকে বলিউডে একটি সুনির্দিষ্ট স্থান অর্জনে সহায়ক হয়েছে।

ক্যারিয়ারের সাফল্য ও সমালোচনা

কারিনা কাপুরের ক্যারিয়ারের পথে অসাধারণ সাফল্য এবং সমালোচনার গল্প রয়েছে। চামেলি এবং দেব চলচ্চিত্রে তার অবদান অসাধারণ ছিল, যা বলিউডে তার অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।

চামেলি ও দেব

২০০৪ সালে চামেলি চলচ্চিত্রে একজন যৌনকর্মীর ভূমিকায় অভিনয় করে কারিনা কাপুর সমালোচকদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশংসা পান। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় ছিল অসাধারণ এবং এই ভূমিকায় তিনি তার অভিনয় দক্ষতার একটি নতুন দিক তুলে ধরেন। একই বছরে, দেব চলচ্চিত্রে তার অভূতপূর্ব অভিনয় প্রতিভা প্রদর্শন করে তিনি আবার সবার মন জয় করেন। এই চলচ্চিত্রটি তাকে সমালোচকের কাছ থেকে আরও সম্মান অর্জন করায় সহায়ক হয়।

ফিল্মফেয়ার পুরস্কার

কারিনা কাপুর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতা তার কর্মজীবনের সবচেয়ে প্রতিক্ষিত মুহূর্ত গুলোর মধ্যে একটি। দেব চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন, যা তার ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় সম্মান। এই সম্মান তার প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি দিয়েছিল। ভবিষ্যতে, ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে তিনি আরও ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে প্রস্তুত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  সানি লিওন

বিবাহ ও পারিবারিক জীবন

কারিনা কাপুরের ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই মিডিয়ার আলোচনায় থাকে। তার বিবাহ এবং পারিবারিক জীবনের নতুন অধ্যায়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তার স্বামী
সাইফ আলি খান এবং তাদের সন্তানরা। তাদের একসঙ্গে জীবনযাপন ও পরিবারের বিস্তারিত লক্ষ লক্ষ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

সাইফ আলি খান এর সঙ্গে বিবাহ

কারিনা কাপুর বিবাহ ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর, সাইফ আলি খানের সাথে সম্পন্ন হয়। এই বিবাহ বলিউডের অন্যতম মহান ইভেন্ট হিসেবে ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে আছে।
প্রেম থেকে বিবাহ পর্যন্ত তাদের যাত্রা নিয়ে অসংখ্য আলোচনার উত্থান হয়েছে। কারিনা কাপুর এবং সাইফ আলি খান বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী দম্পতিদের
মধ্যে অন্যতম।

সন্তানরা

এই দম্পতির প্রথম সন্তান তৈমুর আলি খান ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তৈমুর আলি খান বর্তমানে মিডিয়ার অন্যতম প্রিয় তারকা সন্তান।
তার প্রতিদিনকার কার্যকলাপ এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারবার ভাইরাল হয়। এছাড়াও, কারিনা ও সাইফ তাদের দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের অভিভাবক হয়েছেন,
যার জন্ম ২০২১ সালে হয়েছে। কারিনা কাপুর বিবাহ এবং মা হওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে একজন শক্তিশালী এবং প্রজ্ঞাবান নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

Kareena Kapoor এর ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত

কারিনা কাপুর চলচ্চিত্র জগতে তার কিংবদন্তী পরিণতিতে অবদান রেখেছে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তার ক্যারিয়ারের কিছু মুহূর্ত বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, যেমন “জব উই মেট” এবং “থ্রি ইডিয়টস” সিনেমাগুলি। এই দুটি চলচ্চিত্র তার দক্ষতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল এবং তাকে অনুরাগীদের মাঝে স্থায়ীভাবে জনপ্রিয় করেছিল।

জব উই মেট

২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া “জব উই মেট” চলচ্চিত্রটি কারিনা কাপুরের জন্য একটি বড়সড় মাইলফলক হয়ে উঠেছিল। এই চলচ্চিত্রে সে গীত চরিত্রে অভিনয় করেছিল। এই চলচ্চিত্রে তার প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স সমালোচক এবং দর্শক উভয়ের কাছ থেকেই প্রশংসা পেয়েছিল। এমনকি, এই চলচ্চিত্রের জন্য কারিনা কাপুর কয়েকটি পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  হেমা মালিনী

থ্রি ইডিয়টস

২০০৯ সালের “থ্রি ইডিয়টস” চলচ্চিত্রটি আরও একটি কারিনা কাপুর চলচ্চিত্র যা তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এই চলচ্চিত্রে রহিমা ব্যানার্জির চরিত্রে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। “থ্রি ইডিয়টস” দেশজুড়ে ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল এবং কারিনার অভিনয়ের দক্ষতা এবং পরিসরের প্রশংসা করেছিলেন সমালোচকেরা।

কর্মজীবনের ঘুরে দাঁড়ানো

বহু চড়াই-উতরাইয়ের মাঝেও কারিনা কাপুর তার ক্যারিয়ারে নতুন উদ্যমে ফিরেছিলেন এমন দুটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, যা দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিল। তার কর্মজীবনে একাধিক উল্লেখযোগ্য মুহূর্তের মধ্যে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ এবং ‘কি অ্যান্ড কা’ সিনেমাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উড়তা পাঞ্জাব

উড়তা পাঞ্জাব (২০১৬) এক সাহসী পদক্ষেপ ছিল যা কারিনা কাপুর অভিনীত চলচ্চিত্র হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন রেখে যায়। অভিষেক চৌবে পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের মূল থিম ছিল পাঞ্জাবের তরুণ সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির বৃদ্ধি। কারিনা কাপুর এখানে একজন চিকিৎসক প্রীত সাহানার ভূমিকায় অভিনয় করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল তরুণ সমাজকে মাদকের কবল থেকে মুক্তি দেওয়া। এই চলচ্চিত্রটি কারিনা কাপুরের অভিনয় দক্ষতার নতুন দিক উন্মোচিত করে এবং সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে।

কি অ্যান্ড কা

আর বাল্কি পরিচালিত এই সিনেমাটি তাত্ত্বিকভাবে ও সাধারণভাবে ভিন্নধর্মী ছিল। কারিনা কাপুর অভিনীত ফিল্ম কি অ্যান্ড কা (২০১৬) সামাজিক রীতিনীতির বাইরে গিয়ে সমানাধিকারের ধারণা প্রচার করে। কারিনা কাপুর এই সিনেমায় কিয়া নামক একটি উচ্চপদস্থ ক্যারিয়ারিস্ট নারীর ভূমিকায় ছিলেন, যেখানে তার স্বামী (অভিনয় করেছেন অর্জুন কাপুর) গৃহকর্তার ভূমিকায় থকেন। সাধারণ গৃহিণীদের প্রতিনিয়ত যে চাপের সম্মুখীন হতে হয়, এই চলচ্চিত্রটি তা সামাজিক পরিসরে তুলে ধরে, যা দর্শকদের মধ্যে একটি সজাগ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এই দুটি ভূমিকায় তার নমনীয় অভিনয় ও নতুন ধরনের চরিত্রের মাধ্যমে কারিনা কাপুর প্রমাণ করে দেন যে তিনি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। উড়তা পাঞ্জাব এবং কি অ্যান্ড কা সিনেমাগুলির মাধ্যমে কারিনা কাপুর তার সিনেম্যাটিক ভিশন ও দক্ষতার প্রতি দর্শক ও সমালোচকদের বিশ্বাস স্থাপন করতে সক্ষম হন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button