আমির খান
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রমুখ বলিউড অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক আমির খান। তার জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৪ মার্চ, মুম্বাইতে। বলিউডে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল বালক শিল্পী হিসেবে। পরবর্তীতে, তিনি বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে পরিচিত হন।
অভিনয়ে তার প্রথম দিকের সাফল্য এবং ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তিনি নন্দিত। আমির খানের জীবনী বিভিন্ন প্রাপ্ত মর্যাদাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতির এক অন্যতম গল্প। তার চলচ্চিত্র ‘লগান’ অস্কার মনোনয়ন পায় এবং ‘থ্রি ইডিয়েটস’, ‘পিকে’, ‘দঙ্গল’ প্রভৃতি সিনেমা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে তার অবদান অনস্বীকার্য।
আমির খানের প্রাথমিক জীবন ও পরিবার
আমির খানের শৈশব কেটেছে মুম্বাইতে, যা একদা বোম্বাই নামে পরিচিত ছিল। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র-সম্পর্কিত পরিবারে। তার পিতা তাহির হোসেন ছিলেন একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং তার মাতা জীনাত হোসেন।
জন্ম ও শৈশব
আমির খান ১৪ই মার্চ ১৯৬৫ সালে মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই আমির খানের শৈশব কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেটেছিল। নানা সঙ্কট আর চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে, কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
পরিবার ও বংশ
আমির খানের পরিবারের ইতিহাস খুবই সময়োপযোগী ও চলচ্চিত্রমুখী ছিল। তার পূর্বপুরুষেরাও চলচ্চিত্রকর্মে প্রচুর অবদান রেখেছেন। পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অভিনেতা এবং প্রযোজক। তার পিতা তাহির হোসেন একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং তার চাচা নাসির হোসেনও ছিলেন একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক।
শিক্ষা ও বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি
আমির খানের শিক্ষাগত জীবন শুরু হয় মুম্বাইয়ের J.B. Petit School এ, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি St. Anne’s High School এ যান এবং সেখানে নিজের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা তিনি Narsee Monjee College থেকে শেষ করেন। আমির খানের শিক্ষাগত জীবন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিগুলো তাঁকে বর্তমানের অবস্থানে পৌঁছাতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। শিক্ষিত পরিবেশ ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি নিজের পথ তৈরি করতে সক্ষম হন।
আমির খানের প্রাথমিক বলিউড জীবন
আমির খানের শুরুর দিনগুলি ছিলো চিত্তাকর্ষক এবং চ্যালেঞ্জে পূর্ণ। বলিউডে আগমন এর সময় তিনি ছিলেন একেবারে নতুন প্রতিভা। তার প্রথম অভিনয় ছিলো ‘যাদোন কি বারাত’ (১৯৭৩) ছবিতে শিশু শিল্পী হিসাবে। এটা ছিল সেই সময় যখন তাঁর অভিনয়ে মানুষের নজর কাড়তে শুরু করে।
শিশু শিল্পী হিসাবে কর্মজীবন
আশির দশকের প্রথম দিকে, আমির খান শিশু শিল্পী হিসেবে কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। ‘যাদোন কি বারাত’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন যেখানে তিনি এক অবিস্মরণীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিটি তার বলিউডে প্রবেশের দরজা খুলে দেয় এবং আমির খানের শুরুর দিনগুলি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
‘হোলি’ এবং ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ অভিনয়
১৯৮৪ সালে, ‘হোলি’ ছবিতে তিনি তরুণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ছিল তার প্রথম গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা। পরে, ১৯৮৮ সালে, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবিতে অভিনয় করে দারুণ সাড়া পান। এই ছবিতে তার অভিনয় এবং বিনোদনমূলক ক্ষমতা তাকে তৎকালীন দর্শকদের প্রিয় নায়ক করে তোলে এবং বলিউডে আগমন সম্পূর্ণ স্বীকৃতি পায়। এই ছবির জন্য আমির খান ১১,০০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন।
প্রথম বড় সাফল্য: ‘দিল’ এবং ‘রঙ্গিলা’
‘দিল’ (১৯৯০) এবং ‘রঙ্গিলা’ (১৯৯৫) ছবিতে আমির খানের প্রথম বড় সাফল্য আসে। এই দুটো চলচ্চিত্রই দর্শকদের মন জিতে নেয় এবং এর মাধ্যমে আমির খান তার অসামান্য প্রতিভার প্রমাণ দেন। ‘দিল’ ছবিতে তার অভিনয় ও সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি বলিউডে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেন। ‘রঙ্গিলা’ ছবিতে তার চরিত্রের অভিনয় এমনভাবে করেন যা তাকে প্রথম সারির একতারকা হিসাবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
Aamir Khan: বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট
আমির খান, যার পরিচয় বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট হিসাবে খুবই সুপরিচিত, তার অভিনয় জীবনে সেরা অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি মুম্বাইয়ের মহারাষ্ট্রে ১৪ মার্চ, ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৩ সালে শিশু শিল্পী হিসাবে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম প্রধান অভিনেতা হিসাবে বলিউডে পা রাখেন।
আমির খান বিভিন্ন সময়ে তার কাজ এবং দক্ষতার জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১০ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার পাওয়া আমির খান বলিউড স্টার হবার পাশাপাশি টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। সামগ্রিকভাবে তার কর্মজীবন বিভিন্ন কালজয়ী চলচ্চিত্র দ্বারা সমৃদ্ধ এবং সফল।
আমির খানের মিস্টার পারফেকশনিস্ট পরিচিতি শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রসিদ্ধ হয়েছে। তিনি ‘লগান’, ‘তারে জমিন পর’, ‘থ্রি ইডিয়েটস’, এবং ‘পিকে’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার অভিনীত ‘পিকে’ চলচ্চিত্রটি বলিউডের অন্যতম সর্বাধিক আয়কারী চলচ্চিত্র হিসাবে প্রায় ৭০০ কোটি আয় করেছিল।
বলিউড স্টার আমির খান শুধুমাত্র সেরা অভিনেতা নয়, তিনি তার সামাজিক কাজ ও টেলিভিশন শো ‘সত্যমেব জয়তে’র মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার উপর আলোকপাত করেছেন। তার অসাধারণ প্রতিভা এবং সমাজ সচেতনতামূলক কাজ তাকে সত্যিকার অর্থে বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট বানিয়েছে।
আমির খানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ
আমির খান তার অভিনয় জীবনকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। প্রতিটি ছবিই বক্স অফিস হিট হওয়ার পাশাপাশি, দর্শক এবং সমালোচকদের অভূতপূর্ব প্রশংসা অর্জন করেছে। নিচে আমির খানের সেই উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
‘লগান’
‘লগান’ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটি কেবল বক্স অফিস হিট হয়নি, বরং এটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্যও মনোনীত হয়েছিল। লগানের গল্প একটি ঔপনিবেশিক সময়কালের ছোট গ্রামের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমির খানের অসাধারণ অভিনয় তাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত করেছে।
‘দঙ্গল’
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দঙ্গল’ একটি বাস্তব জীবনের কাহিনী যা মহাবীর সিং ফোগাতের মেয়েদের কুস্তির প্রতি তাদের যাত্রা সম্পর্কিত। আমির খানের এই চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী এক বিশাল সাফল্য লাভ করেছে এবং শক্তিশালী কাহিনী এবং চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে বক্স অফিস হিট হয়েছে। দঙ্গল বিশ্বব্যাপী ₹২০৫০ কোটি আয় করে এখনও ভারতের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম।
‘থ্রি ইডিয়েটস’
‘থ্রি ইডিয়েটস’ একটি সামাজিকভাবে অভিযানমূলক চলচ্চিত্র যা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গভীর মন্তব্য করে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটি ছিল একটি বক্স অফিস হিট এবং ভারতের বেকারত্ব এবং শিক্ষাব্যবস্থার সংকট সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে। আমির খানের অসাধারণ অভিনয় এবং চলচ্চিত্রের জনক হতে পরিবেশনায় থ্রি ইডিয়েটস প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেছে।
আমির খানের পুরস্কার ও সম্মাননা
আমির খান, বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট, তার অসাধারণ অভিনয় এবং সামাজিক কাজের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তার জীবনের অন্যতম প্রধান অর্জনগুলির মধ্যে রয়েছে পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ, যা ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানের মধ্যে দুটি।
পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ
আমির খানের পুরস্কার তালিকার প্রথম সারিতেই রয়েছে পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ। ২০০৩ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এরপর ২০১০ সালে তিনি পদ্মভূষণ সম্মান পান, যা তার দীর্ঘ বলিউড জীবনের অন্যতম স্বীকৃতি।
ফিল্মফেয়ার এবং জাতীয় পুরস্কার
আমির খান ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও অনেকবার জিতেছেন। তার অসাধারণ অভিনয় এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি মোট নয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়াও, তার অভিনয় প্রতিভার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি চারটি জাতীয় ফিল্ম পুরস্কারও লাভ করেছেন।
তার এই পুরস্কার এবং সম্মাননা শুধু তার অভিনয় দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করছে না, বরং বলিউডে তার অদ্বিতীয় অবদানকেও স্মরণ করায়। আমির খানের পুরস্কার এবং সম্মাননা তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ, যা তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
আমির খান প্রোডাকশনস ও অন্যান্য কোম্পানি
আমির খান প্রোডাকশনস আমির খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যা তার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করেছে। এই প্রোডাকশন সংস্থা বলিউডের একাধিক সফল ছবি উপহার দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে।
আমির খান প্রোডাকশনস
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আমির খান প্রোডাকশনস এর প্রথম প্রজেক্ট ছিল ‘লাগান’। এটি শুধু বক্স অফিসেই নয়, সমালোচকদের মাঝেও বিপুল প্রশংসা অর্জন করে এবং অসংখ্য পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস-এ সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের মনোনয়ন অন্যতম। গত বছর কোম্পানির রাজস্ব ৩০% বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
আমিরের সর্বশেষ ছবি ‘লাল সিং চাড্ডা’ আমির খান প্রোডাকশনস এবং ভায়াকমের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে। ছবিটি অক্টোবরে শুটিং শুরু হবে এবং আমির খান পাতলা দেখার জন্য ২০ কেজি ওজন কমাবেন। বর্তমান প্রোডাকশন সংস্থায় ২০০ কর্মী কাজ করে যার ৭০%-ই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে জড়িত।
পানি ফাউন্ডেশন
আমির খান এবং তার স্ত্রী কিরণ রাও মিলে ২০১৬ সালে পানি ফাউন্ডেশনের সূচনা করেন। এই ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য মহারাষ্ট্রের খরা প্রবণ এলাকায় জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার সাধারণ উদ্যোগ বৃদ্ধি করা। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান ৮০০০ হেক্টর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
পানি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি মরসুমি জল সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অবদান রেখেছ। গত ছয় মাসে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ২ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে।
যেহেতু আমির খানের প্রোডাকশনসের বাজার শেয়ার ১৫%, এটি প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে আছে। সম্প্রতি কোম্পানির সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি প্রথম সপ্তাহান্তে $১০ মিলিয়ন আয় করেছে এবং এটি আমজনতার মাঝে ৯০% অনুমোদন রেটিং পেয়েছে। এই সাফল্যগুলো আমির খান প্রোডাকশনসকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছে।
আমির খানের সামাজিক কাজ ও টেলিভিশন উপস্থিতি
আমির খান কেবল বলিউডের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে রয়েছেন না, বরং তার সামাজিক কর্মকাণ্ড ও টেলিভিশন উপস্থিতির মাধ্যমেও তিনি সমাজে একটি বিশাল প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তার সামাজিক প্রভাবের অন্যতম প্রধান উদাহরণ হল তার টেলিভিশন শো ‘সত্যমেব জয়তে’। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি ভারতের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করেন এবং জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন।
‘সত্যমেব জয়তে’ শো
‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠানটি আমির খানের সামাজিক প্রভাবের একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। এই শো-তে প্রতিটি এপিসোডে বিভিন্ন সাম্প্রতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যার উপর আলোকপাত করা হয়, যেমন: নারী নিরাপত্তা, শিশু অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সমস্যা।
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি শুধু সমস্যাগুলো তুলে ধরেই থেমে থাকেননি, বরং সমস্যাগুলোর সমাধানের পথও নির্দেশ করেছেন। যেমন: লিঙ্গ সমতা সংক্রান্ত একটি এপিসোডে তিনি নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা ও চাকরির গুরুত্ব তুলে ধরেন। এটির মাধ্যমেই দেখা যায় আমির খানের সামাজিক প্রভাব কতোটা গভীর হতে পারে।
সামাজিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড
আমির খান শুধু টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি সমানভাবে সক্রিয়। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য তার অবদান অসাধারণ। বিভিন্ন স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি সমর্থন প্রদান করেছেন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন।
- পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা
- লিঙ্গ সমতা প্রচারে কাজ
- স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের প্রচেষ্টা
আমির খানের এই সমস্ত কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল একজন মেগাস্টার নন, বরং সত্যিকারের সমাজ সংস্কারকও বটে। তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্ক
আমির খানের ব্যক্তিগত জীবন বরাবরই জনসাধারণের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। বলিউডের খান্দানি পরিবেশে বেড়ে ওঠা আমিরের পারিবারিক জীবন ও বিবাহ নিয়ে সবসময়ই আলোচনা হয়েছে।
প্রথম বিবাহ: রীনা দত্ত
আমির খানের প্রথম বিবাহ হয়েছিল রীনা দত্তের সাথে ১৯৮৬ সালে। রীনা দত্ত লগান চলচ্চিত্রের প্রযোজক হিসেবে তার সাথে কাজ করেছিলেন। তাদের বিবাহ জীবনে দুটি সন্তান হয় – জুনায়েদ খান এবং ইরা খান। দীর্ঘ পনেরো বছরের বিবাহিত জীবন শেষে, ২০০২ সালে আমির খান ও রীনা দত্তের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। যদিও তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে, তারা এখনও ভালো বন্ধু হিসেবে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
দ্বিতীয় বিবাহ: কিরণ রাও
২০০৫ সালে, আমির খান বিয়ে করেন কিরণ রাওকে, যিনি লগান চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক ছিলেন। কিরণের সাথে আমির খানের পারিবারিক জীবন ছিল পনেরো বছর স্থায়ী। ২০২১ সালে, তারা বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়, যদিও তারা জানিয়েছেন যে তারা একে অপরের পরিবারের সাথে সবসময় যুক্ত থাকতে এবং তাদের সন্তান আজাদ রাও খানকে যৌথভাবে লালন-পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সন্তান ও পারিবারিক জীবন
আমির খানের সন্তানদের মধ্যে রয়েছে জুনায়েদ খান, ইরা খান এবং আজাদ রাও খান। তিনি তাঁর সন্তানেরদের সাথে সবসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। আমির খানের পারিবারিক জীবন সবসময়ই তাঁর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের অন্যতম প্রধান দিক হিসেবে থেকেছে।
আমির খানের বিশ্বব্যাপী প্রভাব ও জনপ্রিয়তা
আমির খানের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি আজ বিশেষ করে বলিউডের গণ্ডি পেরিয়ে বহু দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং বলিউডে অবদান ভারতবর্ষের জনগণকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সুনাম অর্জন করেছে। আমির খান শুধু ভারতেই নয়, চীনের মতো দেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে “বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুভি তারকা” বলে অভিহিত করেছে, দল ছাড়িয়ে তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রভাবশালী ব্যক্তি।
আমির খানের সিনেমাগুলি যেমন ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে, তেমনি প্রশংসাও কুড়িয়েছে। তাঁর চলচ্চিত্র ‘লগান’ একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য মনোনীত হয়ে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে। এছাড়াও, ‘থ্রি ইডিয়েটস’ এবং ‘দঙ্গল’ শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী তাক লাগানোর মতো সাফল্যে পৌঁছেছে। তার প্রখর নৈতিক চরিত্র এবং অভিনয়ের পারদর্শিতা, অভিনয়ে সূক্ষ্মতা, এবং বলিউডে তার অবিশ্বাস্য অবদান আমাদের কাছে অনুপ্রাণিত করে।
আমির খান বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মশ্রী (২০০৩) এবং পদ্মভূষণ (২০১০)। এছাড়াও তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং নয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।