ডোরেমন

ডোরেমন, প্রখ্যাত জাপানি রোবট বিড়াল চরিত্র, ফুজিকো এফ. ফুজিওর মাঙ্গা সিরিজের একটি দৃষ্টান্ত। প্রথমবারের মতো ১৯৬৯ সালে প্রদর্শিত হওয়ার পর, এটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সমানভাবে প্রিয় হয়ে উঠেছে। জাপানি অ্যানিমে এবং মাঙ্গার জগতে ডোরেমন একটি অসামান্য সাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এটি ৪৫ টি ট্যাঙ্কোবন ভলিয়ুমে সংগ্রহিত হয়েছে, যা ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়।

ডোরেমন মঙ্গা সিরিজটি ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, যা এটিকে সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় মাঙ্গা সিরিজে পরিণত করেছে। এটি তিনটি এনিমে টিভি সিরিজ, ৪০ টিরও বেশি অ্যানিমেটেড সিনেমা এবং অন্যান্য মিডিয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি গড়ে তুলেছে। ডোরেমনের মিশন হল নোবি নোবিতার জীবনের সমস্যাগুলো সমাধান করা।

ডোরেমনের ইতিহাস

ডোরেমন মাঙ্গা সিরিজটি প্রথম প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে, জাপানের ছয়টি ভিন্ন ম্যাগাজিনে। প্রাপ্তি ও প্রথম প্রকাশ থেকেই এটি প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে। ডোরেমনের সৃষ্টিকর্তা Fujiko Fujio, বাস্তব নাম Hiroshi Fujimoto এবং Motoo Abiko, যাদের যৌথ প্রচেষ্টায় রোবোটিক বিড়ালটির জন্ম হয়।

ডোরেমন মাঙ্গা সিরিজটি প্রকাশনা শুরু হওয়ার পর টেলিভিশন সিরিজ এবং অ্যানিমেটেড ফিল্মে রূপান্তরিত হয়। এটি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলে, Fujimoto এর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। ডোরেমন আনুমানিক ৪,০০০ রকমের গ্যাজেট নিয়ে মজা করায় এবং এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্যাজেট ছিল Bamboo-Copter এবং Anywhere Door।

ডোরেমন সিরিজে মোট ১৩৪৪টি গল্প ছিল এবং সেগুলি প্রকাশিত হয়েছিল “Shogakukan Tentomushi” নামক মাঙ্গা ব্যান্ডের অধীনে। এই সিরিজটি প্রদর্শিত সবগুলো পর্ব তোয়ামা সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল, যেখানে Fuji Fujio জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ডোরেমন এর গল্পের সমাপ্তি নিয়ে বহু বছর পর ১৯৮৭ সালে একটি জনপ্রিয় ফ্যান-ফিকশন লেখা হয়, যেখানে ডোরেমনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে তার সব স্মৃতি মুছে যায় এবং নোবিতাকে একটি গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় – সে কি ডোরেমনকে নতুন ব্যাটারি দেবে নাকি তাকে স্মৃতিহীন রেখে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করবে।

আরও পড়ুনঃ  শবনম বুবলি

এই মাঙ্গা সিরিজটি প্রাপ্তি ও প্রথম প্রকাশের পর থেকেই শিশু ও কিশোরদের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম এটি ইংরেজি ভাষায় নিতে চেয়েছিল, কিন্তু এপিসোড কখনো প্রচার করা হয়নি।

ডোরেমনের সৃষ্টি এবং ধারণা

ডোরেমন, যা একজন নিকৃষ্ট কাল্পনিক রোবট হিসেবে পরিচিত, তাকে প্রথম রচনা করেন বিখ্যাত মাঙ্গা শিল্পী ফুজিকো এফ. ফুজিও। তিনি ডোরেমনকে এমনভাবে নির্মাণ করেছেন যা যুগে যুগে শিশুরা পরম আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছে। ১৯৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডোরেমন প্রথম প্রকাশ পায়।

ডোরেমনের উদ্ভাবনের পেছনে যে কল্পনাশক্তি কাজ করেছে, তা সম্ভব হয়েছে ফুজিকো এফ. ফুজিওর অদম্য সৃজনশীলতার কারণে। ডোরেমনের চরিত্রটি একটি নীল রঙের রোবটিক বিড়াল, যা বানানো হয়েছিল মোতশুশিবা কোম্পানির মাধ্যমে। অত্যাধুনিক সময়ে, ২১১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, টোকিওতে এই রোবটিক বিড়ালটি তৈরি করা হয়।

ডোরেমন তার পকেটে প্রায় ২৫ ধরনের গ্যাজেট এবং যন্ত্রপাতি বহন করে। এই গ্যাজেটগুলি ডোরেমনকে অসাধারণ এবং বিশেষ করে তুলেছে। এটি জাপানের টিভি পর্দায় প্রথম প্রচারিত হয়েছিল এবং পরে প্রায় ২৫টি দেশে প্রচারিত হয়েছে।

এছাড়াও, ডোরেমনের উদ্ভাবনে অনেক ভিডিও গেম, শর্ট ফিল্ম এবং বিশেষ অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা এই কাল্পনিক রোবটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিভিন্ন স্পিন-অফ যেমন ডোরেমন প্লাস, দ্যা ডোরেমনস এবং ডোরা-বেজি, ইত্যাদি তাকে আরও জনপ্রিয় করেছে।

ডোরেমন মাঙ্গা সিরিজের মোট ১৩৪৫টি চরিত্র নিয়ে গঠিত এবং এটি ১৯৭৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সিজনের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রা ও বিভিন্ন উন্মাদনা মিলে ফুজিকো এফ. ফুজিও দ্বারা নির্মিত ডোরেমনের সৃষ্টি ও ধারণা এখন একটি কাল্পনিক ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।

নোবি নোবিতার সাথে ডোরেমনের সম্পর্ক

ডোরেমনের আগমন নোবি নোবিতার জীবনে একটি বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসে। ডোরেমন ২২শ শতাব্দী থেকে এসে নোবিতার জীবনের সমস্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহায়তা করে। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল নোবিতার জীবনকে সহজ এবং আনন্দময় করে তোলা।

আরও পড়ুনঃ  আরতুগ্রুল

নোবিতা বরাবরই ক্লাসে পিছিয়ে থাকা এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী ছিল। ডোরেমনের আগমন তাঁর জীবনে বন্ধুত্ব এবং সাহায্যের নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। নানা ধরণের রহস্যময় গ্যাজেট ডোরেমন ব্যবহার করে নোবিতাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতেন।

  • ডোরেমনের আগমন নোবিতার জীবনে আশার আলো হিসাবে দেখা দেয়।
  • ডোরেমন তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমর্থনমূলক ভূমিকায় অটল ছিলেন।
  • নোবিতা সবসময় ডোরেমনের সাহায্যের উপর নির্ভর করতেন।
  • ডোরেমন নোবিতার জীবনে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে পথপ্রদর্শক হন।
  1. ২১১২: ডোরেমন ডাক্তার ইয়ামা ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
  2. বয়স: ১২৯.৩ কেজি – ডোরেমনসহ কতজন ছাত্র তার সাথে বন্ধু হয় এবং এ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করে।
  3. ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ডোরেমনের মোট ৪৫টি ভল্যুম প্রকাশিত হয়।
  4. ২০০৫ সালে মোট ১,৭৮৭ এপিসোড তৈরী করা হয়।

ডোরেমনের আগমন এটা প্রমাণ করে যে নোবিতা বন্ধুত্ব, সহানুভূতি এবং সহায়তার মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতে পারে। ডোরেমনের মাধ্যমে নোবিতা তার জীবনের মান উন্নত করতে সক্ষম হয়।

Doraemon: একটি বিশ্লেষণ

ডোরেমন এনিমেশন সিরিজে প্রেম এবং বন্ধুত্বের মধুর দিকটি খুবই স্পষ্ট। “ডোরেমন: নোবিতা নো নানকাই দাইবোকেন” যা ৭ মার্চ ১৯৯৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল, সেটি এই বন্ধুত্বের এক অনন্য দিক তুলে ধরে। ডোরেমন তার বিভিন্ন গ্যাজেট দিয়ে সত্যিকারের বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে নোবিতা এবং তার বন্ধুদের রক্ষা করে।

প্রেম এবং বন্ধুত্বের মূ্ল্যবোধ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। ডোরেমনের চরিত্রে এখানেই একটি অনন্য দিক ফুটে ওঠে যা আমাদের সত্যিকারের মানবিক গুণাবলি এবং আদর্শ বন্ধু হিসেবে পরিচিত করে।

ষোড়শ শতাব্দীর এক বিপজ্জনক অভিযান ডোরেমন এবং তার বন্ধুদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সমুদ্রের দানব এবং বিভিন্ন বিপরের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। যখন ডোরাইমন সময়ের বিকৃতি অনুভব করে তখন তাদের দশম শতাব্দীতে নিয়ে যায়, তাদেরকে অজানার বিরুদ্ধে নেতাগিরি করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ  নাতাশা স্টানকোভিচ

তবে, সবসময় ডোরেমনের গ্যাজেটগুলো পাওয়া যায়নি, ফলে তাদেরকে নিজস্ব বুদ্ধি এবং সহানুভূতিতে ভর করে বিপন্ন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়েছিল। এই মনোভাব ডোরেমন এবং নোবিতার মধ্যে প্রেম এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো গভীরে নিয়ে গেছে।

ডোরেমনের গ্যাজেট ও যন্ত্রপাতি

ডোরেমনের অন্যতম আকর্ষণ হল তার ফোর্থ ডাইমেনশন্যাল পকেট, যা দিয়ে সে বিভিন্ন গ্যাজেট বা যন্ত্রপাতি গ্রহণ করে। এই বিশেষ পকেটটি তার পেটের মধ্যে অবস্থিত এবং এতে মজুদ করা পারে প্রায় ৪,০০০ বিভিন্ন গ্যাজেট। এগুলি সাধারণত ভবিষ্যতের ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে পাওয়া যায়। ছোট কয়েকটি উদাহরণ হল “ডোকোডেমো ডোর,” “বাম্বু কপ্টার,” “টাইম মেশিন,” “ফোন বুথ,” “এয়ার ক্যানন,” এবং “রিভার্স ক্লথ।”

প্রতি সপ্তাহে নোবি নোবিতার জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে ডোরেমন বিভিন্ন গ্যাজেট ব্যবহার করে তাকে সহায়তা করে। প্রতি মুহূর্তে ফোর্থ ডাইমেনশন্যাল পকেট থেকে বের করে শৈল্পিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে, যা তার সাথে নোবিতার সম্পর্ককে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

ডোরেমন তার পকেটের গ্যাজেট অযথা অন্য কাউকে ভাগ করে নিতে পছন্দ করে না। এটি কখনও কখনও অন্য চরিত্রদের সাথে তার স্মৃতি নিয়ে সংঘর্ষের কারণ হয়। তাছাড়া, সেই সংঘর্ষগুলোই দর্শকদের জন্য বেশি মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত নিয়ে আসে।

ডোরেমনের বিভিন্ন গ্যাজেট ও যন্ত্রপাতির বৈচিত্র্য শুধুমাত্র শিশুদের নয়, বরং প্রাপ্তবয়স্কদেরও মুগ্ধ করে। তারা বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক পরিস্থিতির নাম প্রকাশ করতে এবং কাজ করতে ডোরমনের ফোর্থ ডাইমেনশন্যাল পকেট থেকে বের করে সবকিছু সমাধান করতে দেখা যায়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button