রণবীর কাপুর

রণবীর কাপুর, যার জন্ম ১৯৮২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে, তিনি বলিউডের এক সুপ্রতিষ্ঠিত সুপারস্টার। তার পিতা, ঋষি কাপুর এবং পিতামহ রাজ কাপুরও চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি ছিলেন। ২০০৭ সালে তার অভিনয় যাত্রা শুরু হওয়ার পর, রণবীর অসংখ্য চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয় প্রদর্শন করেছেন এবং সাতটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ প্রায় সব বড় পুরস্কার জিতেছেন।

রণবীর কাপুর বায়োগ্রাফি অনুসারে, তিনি সাওয়ারিয়া (২০০৭), রকস্টার (২০১১), বরফি! (২০১২), ও সঞ্জু (২০১৮) চলচ্চিত্রগুলিতে স্মরণীয় অভিনয় করেছেন। বলিউড সুপারস্টার রূপে তার যাত্রা তার কঠিন পরিশ্রম এবং অভিনয় নৈপুণ্যের প্রতি নিখুঁত শ্রদ্ধার ফল। এর পাশাপাশি, তিনি মুম্বই সিটি এফসি ফুটবল দলের সহ-মালিক এবং ফোর্বস ইন্ডিয়া সেলিব্রিটি ১০০ তালিকায় ২০১২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে স্থান পেয়ে আসছেন।

প্রারম্ভিক জীবন

রণবীর কাপুরের জীবনে নানা রং এবং ঢং-এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, যার শুরু শিশুবেলা থেকে। বিখ্যাত কাপুর পরিবারে জন্মানো রণবীর ছোট বেলা থেকেই খ্যাতির ছোঁয়া দেখতে পান। তাঁর এই পথচলা শুরু হয়েছিল খুবই পরিচিত ও সফল পরিবারের ছায়ায়।

পরিবারিক পটভূমি

রণবীর কাপুর পারিবারিক পটভূমি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ছোটবেলা থেকেই অভিনয়জগতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার সব উপাদান তাঁর জীবনে বিদ্যমান ছিল। তাঁর বাবা ঋষি কাপুর এবং মা নীতু সিং, দুজনেই ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা। রণবীরের পরিবারিক পরিবেশ তাঁকে শিশু বেলা থেকেই অভিনয় করার অনুপ্রেরণা জোগায়। কাপুর পরিবারের সদস্যরা শিল্পের নানা শাখায় নিজেদের অসামান্য প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ  আয়ুষ্মান খুরানা

প্রাথমিক শিক্ষা

শিক্ষাজীবনেও রণবীর কাপুর এগিয়ে ছিলেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল বোম্বে স্কটিশ স্কুলে। সেখানে তিনি একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মুম্বইয়ের শিক্ষা রণবীরের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা তাঁকে শুধুমাত্র এক চমৎকার অভিনেতা হিসেবেই নয়, একজন দক্ষ ও জ্ঞানের পূর্ণব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে।

মুম্বইয়ের জীবন

মুম্বইয়ের জীবন রণবীর কাপুরের জীবনে ছিল গতিশীল এবং শিক্ষণীয়। এই মহানগরের শিক্ষা ও পরিবেশ তাঁকে তৈরি করেছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য। মুম্বইয়ের শিক্ষা এবং জীবনযাপনের কারণে রণবীর কাপুর বিভিন্নমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, যা তাঁর অভিনয় এবং ব্যক্তিগত জীবনে কাজ এসেছে। কাপুর পরিবারের ছেলেরূপে জীবনযাপন এবং শিক্ষাগ্রহণ তাঁকে শুধুমাত্র পারিবারিক ভাবে নয়, পেশাগত জীবনেও আলোকিত করেছে।

শিক্ষাগত জীবন ও অভিনয় শিক্ষা

রণবীর কাপুর তার অভিনয় দক্ষতা শাণিত করার জন্য নিউইয়র্কে গিয়ে চলচ্চিত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার কর্মজীবনে সফলতা পাওয়ার আগে তিনি দুটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা তার অভিনয় জীবনের মজবুত ভিত্তি তৈরি করেছে।

স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস

নিউইয়র্কের স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টসে রণবীর ফিল্ম মেকিং এর উপর পড়াশোনা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে তার চলচ্চিত্র শিক্ষা তাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সূক্ষ্মতা এবং শৈল্পিক দিক সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়।

লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার এবং ফিল্ম ইনস্টিটিউট

পরে রণবীর লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার এবং ফিল্ম ইনস্টিটিউটে মেথড অ্যাক্টিং এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গৃহীত করার মাধ্যমে তিনি তার অভিনয়শৈলীতে গভীরতা এবং বাস্তবিক অনুভূতি আনতে সক্ষম হন। নিউইয়র্কে শিক্ষা গ্রহণ তার ক্যারিয়ারের জন্য একটি মোড়ক তৈরি করে।

কর্মজীবনের শুরু

রণবীর কাপুর তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন বলিউডের অন্যতম নামী পরিচালক সানজয় লীলা ভানসালির সঙ্গে কাজ করে। তার এই প্রথম মঞ্চটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনা।

আরও পড়ুনঃ  হিরো আলম

ব্ল্যাক film এর সহকারী হিসেব

২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্ল্যাক ফিল্ম এর মধ্য দিয়ে রণবীর কাপুর তার প্রথম বলিউডে অভিষেক কাজ শুরু করেন, যেখানে তিনি পরিচালক সানজয় লীলা ভানসালির সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই ফিল্মটি তিনি সহকারী হিসেবে অভিজ্ঞতার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখেন।

সাওয়ারিয়া সাথে অভিষেক

এরপর ২০০৭ সালে তিনি সানজয় লীলা ভানসালির ‘সাওয়ারিয়া’ ছবির মাধ্যমে তার বলিউডে অভিষেক ঘটে। এই চলচ্চিত্রটি তাঁর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ ছিল, যা যৌথভাবে প্রযোজনা করা হয়েছিল। রণবীরের অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি বলিউডের নতুন প্রতিভা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে

রণবীর কাপুরের অভিনয় জীবনের শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ছিল যা বলিউডে তার অবস্থান পোক্ত করে।

ওয়েক আপ সিড ও আজব প্রেম কি গজব কাহানি

২০০৯ সালে মুক্তি পেল ওয়েক আপ সিড। এই সিনেমার মাধ্যমে রণবীর কাপুর একজন পরিণত অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই সিনেমাটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি, বরং এটি বলিউডের সেরা ছবি হিসেবে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। একই বছরে মুক্তি পায় আজব প্রেম কি গজব কাহানি, যা দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং একাধিক পুরস্কার অর্জন করে।

রাজনীতি ও রকস্টার

২০১০ সালে রাজনীতি সিনেমায় রণবীর কাপুরের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে। এই সিনেমায় তার চরিত্র প্রদর্শন করে রাজনীতির জটিলতায় তার দক্ষতা। পরের বছর, ২০১১ সালে, রকস্টার সিনেমায় তার অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। এই সিনেমাটি তাকে বলিউডের সেরা ছবির তালিকায় একটি স্থায়ী জায়গা করে দেয়। তার ক্যারিয়ারের এই ধাপগুলো প্রমাণ করে যে রণবীর কাপুর সত্যিই একজন বহুমুখী এবং প্রতিভাবান অভিনেতা।

Ranbir Kapoor এর উল্�

রণবীর কাপুর, বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা, বিগত বছরগুলোতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে গেছেন। তার কাজের মধ্যে যেমন বক্স অফিস হিট রয়েছে, তেমন রয়েছে নানা চর্চিত ব্যক্তিগত ঘটনা। শাকিব খান অভিনীত তুফান সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে, যা রণবীরের ক্যারিয়ারে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছে। তুফান ‌৳56 কোটি (US$4.7 মিলিয়ন) আয় করে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং এটি প্রায় বিশটি দেশে মুক্তি পেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সালমান খান

রণবীর কাপুরের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যখন জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন, তখন তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের রাজকীয় বিয়ে ও সেই বিয়েতে ডেভিড ও ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের উপস্থিতি ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

রণবীরের সাম্প্রতিক কাজের অন্যতম সাফল্য হলো “রেস ৩” ছবিটি, যেখানে সালমান খানের উপস্থিতি এবং ট্রেলারের রোমাঞ্চকর পরিবর্তন ছবিটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। রণবীর কাপুর তার কাজ, জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করছেন কোটি কোটি ভক্তকে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button