জায়রা ওয়াসিম
জায়রা ওয়াসিম, একজন প্রাক্তন ভারতীয় অভিনেত্রী, সাড়া জাগানো অভিনয় দক্ষতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ২৩ অক্টোবর ২০০০-এ জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, বিভিন্ন হিন্দি সিনেমায় তার অভিনয় ক্ষমতা প্রকাশ করেছিলেন এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মত বহু সম্মান লাভ করেছেন।
তার প্রথম সিনেমা ‘দঙ্গল’ ২০১৬ সালে মুক্তি পায় এবং এটি বিশ্বব্যাপী ₹২,০০০ কোটি (প্রায় ২৭৮.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আয় করে। এছাড়া তার অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ২০১৭ সালে মুক্তি পায়, যা ₹৯০০ কোটি (প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) উপার্জন করে। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার কর্মজীবনের সময়, জায়রা ওয়াসিম বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় শিশু পুরস্কার পান এবং ‘দঙ্গল’ ও ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
জায়রা ওয়াসিমের শৈশব কেটেছে কাশ্মীরের শ্রীনগরের একটি মুসলিম পরিবারে। শ্রীনগরের নিবাসী জায়রার পিতা একজন ব্যাংকার এবং মা একজন শিক্ষিকা ছিলেন। এই সুন্দর উপত্যকায় বেড়ে ওঠার সময় জায়রা তার পরিবারের খুব কাছাকাছি ছিলেন, যা তার জীবনের মৌলিক মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক হয়েছে।
জায়রা সেন্ট পলস আন্তর্জাতিক একাডেমি থেকে তার বিদ্যালয় জীবন সম্পূর্ণ করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সময় তিনি প্রায় সবগুলো বিষয়েই উৎকৃষ্ট ফলাফল অর্জন করেন। একাডেমিক সাফল্য ছাড়াও, তার সামাজিক ও সৃষ্টিশীল কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ ছিল অনুকরণীয়।
জায়রা ওয়াসিমের শৈশব কেবল আকর্ষণীয় কাশ্মীরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তার শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও উদ্যম তাকে ছাত্রজীবনে প্রতিভার উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেন্ট পলস আন্তর্জাতিক একাডেমির গৌরবময় দিনগুলি তার পরবর্তী জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে যা তার অভিনয় জীবনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
চলচ্চিত্র জীবনের শুরু
জায়রা ওয়াসিমের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু হয়েছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সে, একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সফল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, যা তাকে অভিনয় জগতে স্থায়ী ক্ষতি চিহ্নিত করেছিল। তাঁর দক্ষতা এবং প্রচেষ্টা দ্রুতই সবার নজরে আসে এবং তিনি হয়ে ওঠেন সংবাদের কেন্দ্রবিন্দু।
‘দঙ্গল’র প্রভাব
জায়রা ওয়াসিমের অভিনয় জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দঙ্গল’ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই চলচ্চিত্রে তিনি আমির খানের কন্যা গীতা ফোগাটের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘দঙ্গল’ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল শুধুমাত্র একটি ক্রীড়াভিত্তিক সিনেমা, কিন্তু এটি পুরো বিশ্ব জুড়ে একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। এই চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ₹২,০০০ কোটির বেশি আয় করে, যা একাংশে জায়রার অভিনয়ের জন্যও সম্ভব হয়েছিল।
‘দঙ্গল’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় যোগ্যতা এবং পরিশ্রম তাকে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে এবং অর্জন করতে সাহায্য করে। এটি তাকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে তুলেছিল। তিনি শুধুমাত্র তার কাজের জন্যই প্রশংসিত হননি, আমির খানের সাথে কাজ করে তিনি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষাগ্রহণও করেছিলেন।
প্রথম পুরস্কার
‘দঙ্গল’ চলচ্চিত্রটি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হওয়ার পর, জায়রা ওয়াসিম ১৬ বছর বয়সে জাতীয় শিশু পুরস্কার লাভ করেন। এটি তার জীবন এবং কর্মজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
এই সাফল্য তাকে প্রচুর পরিচিতি এনে দেয় এবং ভক্তদের কাছ থেকে অপার ভালোবাসা পান। তার অভিনয় দক্ষতা, আন্তরিকতা, এবং কাজের প্রতিশ্রুতি তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই পুরস্কারটি তার অভিষেক এবং পরবর্তী জীবনে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দেয়।
সিক্রেট সুপারস্টার: সংগীত জগতে পদক্ষেপ
জায়রা ওয়াসিম অভিনীত ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ সিনেমাটি তাঁকে সংগীত জগতের একজন উচ্চাভিলাষী গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সিনেমাটি ভারতের সর্বাধিক আয় করা সিনেমাগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
‘সিক্রেট সুপারস্টার’র সাফল্য
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি আয় করার মাধ্যমে ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সিনেমায় জায়রা ওয়াসিমের গায়িকা চরিত্রের অভিনয় সমালোচকদের বৃহৎ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার দক্ষ অভিনয় এবং সংগীতের প্রতিভা সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র নয়, বরং এটি সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করেছে।
Zaira Wasim: ধর্মীয় বিশ্বাস ও অভিনয় জীবন
জায়রা ওয়াসিমের ধর্মীয় বিশ্বাস তার অভিনয় ক্যারিয়ারে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার বলিউড যাত্রা মাত্র পাঁচ বছর ধরে চলেছিল, কিন্তু এই সময়ে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। “দঙ্গল” এবং “সিক্রেট সুপারস্টার” ছবির মাধ্যমে তিনি দ্রুত সবার নজর কাড়েন। তবে, ২০১৯ সালের জুন মাসে জায়রা ঘোষণা করেন যে তিনি ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অভিনয় জগত থেকে অবসর নিচ্ছেন।
জায়রা প্রকাশ করেন যে অভিনয়ের সাথে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে সংঘর্ষ রয়েছে যা তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে। এত অল্প সময়ে এত বড়ো পর্যায়ে পৌঁছানোর পরও তিনি সুখ ও মানসিক শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জায়রা তার পরিবার ও পেশাগত জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু অবশেষে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তার এই সিদ্ধান্ত সমালোচকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যেমন, “দঙ্গল” এর পরিচালক নিতেশ তিওয়ারি এবং জম্মূ ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন প্রদান করেন। অপরদিকে, বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর কঠোর সমালোচনা করেন। প্রায়শই ইসলামের কুরানিক আয়াত উদ্ধৃত করে এবং তার বন্ধন বিশ্বাসকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, জায়রা তার কর্মজীবনের সমস্ত ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ধর্মের পথ বেছে নিলেন।
জায়রা ওয়াসিম নিজেই বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন যে মনের শান্তি ও আল্লাহর নির্দেশনা পাওয়া তার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। অভিনয়ের বাজারে তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কাজ করার সংগ্রাম তাকে অবশেষে একটি নতুন জীবনের পথে পরিচালিত করেছে, যেখানে তিনি তাঁর আত্মার সুখ এবং স্থিতি খুঁজে পাওয়ার আশা রাখেন।
শেষ চলচ্চিত্র: ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’
জায়রা ওয়াসিমের অভিনয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত এবং শেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’। এই চলচ্চিত্রে জায়রা ছাড়াও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং ফারহান আখতার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৮ সালের ৮ই আগস্ট মুম্বাইতে ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হয়, যা ২০১৮ সালের ১৭ই অক্টোবর লন্ডনে শেষ হয়।
‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ ছবির প্রযোজনা সম্পূর্ণ হয় ২০১৯ সালের ১১ই মার্চ। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে চলচ্চিত্রটি প্রথম প্রদর্শিত হয় এবং ১১ই অক্টোবর ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক মুক্তি পায়। শোনালি বোস পরিচালিত এবং RSVP, Roy Kapur Films, ও Purple Pebble Pictures প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রটি ব্যপক প্রশংসা অর্জন করে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং ফারহান আখতার চলচ্চিত্রের প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন, যদিও জায়রা ওয়াসিম এই প্রচারণায় অংশ নেননি। ২০১৯ সালের ১লা জুলাই, তার ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অভিনয় জীবন থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন জায়রা। এ ঘোষণাটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা এবং বিতর্ক সৃষ্টি করে। রোহিত সারাফ এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সামাজিক মাধ্যমে পোস্টগুলি দেখায় যে চলচ্চিত্রের প্রচারণা এবং প্রিমিয়ার কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ফারহান আখতার এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা জায়রার অবসর বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের আসামি প্রত্যাখ্যান করেন। জায়রার ম্যানেজার, তুহিন মিশ্র, কন্টেক্সট জানিয়েছিলেন যে এই সিদ্ধান্ত জায়রার ব্যক্তিগত ছিল এবং এটা অর্থ সংক্রান্ত কিছু নয়। প্রতিক্রিয়াশীল এবং সমালোচকদের মধ্যে বিতর্ক অব্যাহত থাকে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিতর্ক
জায়রা ওয়াসিমের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পরিধান তার ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তি জীবনে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, তিনি সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মে ঘোষণা করেন যে তিনি তার সমস্ত ছবি মুছে ফেলতে চান। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে।
ধর্মীয় পরিধান ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
হিজাব এবং অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এবং সমাজের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মতামত দেখা গেছে। জ়ায়রার সিদ্ধান্ত ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে এবং নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বহু আলোচনা এবং সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
অনেকেই জ়ায়রার এই পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছেন তার ব্যক্তিগত এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে, কেউ কেউ এটাকে তার অভিনয় জীবন থেকে অবসর নেওয়ার কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।
তবে, এই সিদ্ধান্তে তিনি সামাজিক মাধ্যমের ভক্তদের থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। ধর্মীয় পরিধানের বিষয়ে তার দৃঢ়তা অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছে, বিশেষ করে যারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় পোশাক পরিধানে প্রেরণা খুঁজছেন।
সামাজিক মিডিয়ায় পদক্ষেপ
জায়রা ওয়াসিম যখন অভিনয় জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, তখন তার ভক্তরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিল। তবে, তার নতুন জীবন নিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্তে সমর্থনের পাশাপাশি বেশ কিছু ভক্ত প্রতিক্রিয়াও দেখা গিয়েছিল। জায়রা ওয়াসিম সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকেন না বললে চলবে না।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
জায়রা ওয়াসিম সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হওয়ার পর তার ভক্তরা বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেকেই তার সাহস এবং স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। অনেকে আবার তাদের মনের কথা জানিয়েছে এবং তার ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা প্রেরণ করেছে।
- ভক্তদের একাংশ মনে করেছে, তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করা একটি সাহসী কাজ।
- অনেকে তার অভিনয় জীবনকে মিস করবেন বলে জানিয়েছেন।
- বেশ কিছু ভক্ত তার নতুন পথেসমর্থন জানাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সামগ্রিকভাবে, জায়রা ওয়াসিম সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা না থাকলেও, তার ভক্ত প্রতিক্রিয়াগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তার প্রতিভা ও সাহসিকতার প্রতি প্রশংসা প্রদান করে। এই প্রতিক্রিয়াগুলো তার নতুন জীবনযাত্রার প্রতি সক্ষমতা এবং শক্তি যোগাবে।
নিবেদিত জীবন
জায়রা ওয়াসিম তার বিনোদন জগতের জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ধর্মীয় নিবেদন এবং সমাজ সেবা নিয়ে যোগ দিয়েছেন। বিনোদন দুনিয়ায় প্রচুর সফলতা অর্জন করার পরেও, জায়রা তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলেন, যা তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পরবর্তী জীবনে, জায়রা ধর্মীয় নিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে, সমাজের কল্যাণে কাজ করা শুরু করেন। নানা সমাজ সেবা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তার এই নিবেদন তাঁর ভক্তদের মধ্যে অনুপ্রেরণা ছড়িয়েছে এবং সমাজে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
জায়রা ওয়াসিম মূলত তার ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অতুলনীয় নিষ্ঠা ও সমাজে ভালো কাজ করার প্রবণতা থেকেই এমন জীবনযাত্রার পথ বেছে নিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতি এবং বক্তৃতা তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী ও ভক্তদের মধ্যেও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য, জায়রার এই পরিবর্তনশীল জীবনের পথ তাকে বিভিন্ন সমাজ সেবা কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত করেছে, যা একদিকে যেমন তার ভক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে, অন্যদিকে সমাজেও এক নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছে।
বিনোদন দুনিয়া ছাড়ার পর
২০১৯ সালে জায়রা ওয়াসিম বিনোদন জগত ত্যাগ করেন। তিনি সিনেমা জগৎ ছাড়ার পর তার ধর্মীয় পরিচয় ও বিশ্বাসের সাথে মিল রেখে একটি নতুন জীবন শুরু করেন। জায়রা বলেছেন যে তার অভিনয় জীবন ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার কারণে এই পরিবর্তনটি এনেছেন।
অবশেষে, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, এবং সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাকে শুভকামনা জানিয়েছেন।
তাছাড়াও, ফারুকীর সহকারী হিসাবে ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন ও মাহফুজ আলম উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এই পরিবর্তনটি সমাজে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়েছে।
ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অনুরাগী জায়রা এখন সম্পূর্ণ নতুন পথ অনুসরণ করছেন। তার এ সিদ্ধান্ত সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্জন করেছে কিন্তু তার নতুন জীবনের প্রতি জায়রা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
জায়রা ওয়াসিমের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে কৌতূহল অনেকের। অভিনয় জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পরও, তিনি ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়ে তার জীবন পরিচালনা করতে চান।
অভিনয় জীবন ছেড়ে দেওয়ার পর, জায়রা ওয়াসিম ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে মনোনিবেশ করেছেন, যা তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার অন্যতম অংশ। তিনি সমাজ সেবার মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, যা তার ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
নিচে তার ভবিষ্যতের প্রধান পরিকল্পনাগুলি উল্লেখ করা হলো:
- ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান
- সমাজ সেবায় অংশগ্রহণ
- মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা
জায়রা ওয়াসিমের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে ধর্মীয় দিকটি অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যেখানে তিনি নিজেকে সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত করতে চান। তার এই উদ্যোগে সারা দেশের মানুষ অনুপ্রাণিত হবে বলে আশা করা যায়। জায়রা ওয়াসিমের ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল ও সফল হবে তখনই, যখন তিনি তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষম হবেন।
সমাপ্তি
জায়রা ওয়াসিমের অবসান সম্পর্কে ভাবতে গেলে, আমাদের তার সিনেমাজীবনের সাফল্যকে উপলব্ধি করা উচিত। জায়রা ওয়াসিম, মাত্র পাঁচ বছরের বলিউড ক্যারিয়ারে “দঙ্গল” এবং “সিক্রেট সুপারস্টার” এর মতো ছবিতে অভিনয় করে সারা দেশের মন জয় করেছেন। “সিক্রেট সুপারস্টার” চলচ্চিত্রে তার উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স তাকে ২০১৭ সালে ফিল্মফেয়ার সমালোচকদের দ্বারা সেরা সহায়ক অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতিয়েছে।
২০১৯ সালে, জায়রা “দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক” চলচ্চিত্রে তার শেষ কাজ সম্পন্ন করেন, যেখানে তিনি ফারহান আখতার এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাসের সাথে অভিনয় করেন। মাত্র ১৯ বছরে তিনি তার কর্মজীবন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এটি তার নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সংঘর্ষের কারণে। ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি ফেসবুকে তার অবসানের ঘোষণা দেন, যা বলিউড জগতে বিশাল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তার সিনেমাজীবনের পাঁচ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে, জায়রা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং “দঙ্গল” এর মতো সিনেমা বিশ্বব্যাপী ₹২,০০০ কোটির বেশি আয় করেছে। যদিও তার অবসান হতাশাজনক হতে পারে, তার সিদ্ধান্ত হচ্ছে তার নিজস্ব বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি অটল থাকার প্রমাণ। জায়রা ওয়াসিমের অবসান আমাদের সকলকে শেখায় যে কখনও কখনও নিজের স্ব-পরিচয় এবং স্থানীয় বিশ্বাসকে সেরা রেখে জীবনের পরিবর্তন এগিয়ে নিতে হয়।
জায়রা ওয়াসিমের এই অসাধারণ যাত্রা আমাদের সিনে জগতের প্রতি তার অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য শুভকামনা জানাই। তার প্রতিটি পদক্ষেপ এবং সাফল্য আমাদের মনে গেঁথে থাকবে।