বায়েজিদ লিংক রোড – ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক

বায়েজিদ লিংক রোড হলো ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যা ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই সড়কটি ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে যাতায়াতের সময় কমে গেছে এবং যানজট নিরসনে সহায়তা হয়েছে।

প্রকল্পটি অক্টোবর ২০১৩ সালে প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছিল, যার প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি টাকা। সময়ের সাথে খরচ বেড়ে প্রথমে ৩২০ কোটি এবং তারপর মান সমন্বয়ের জন্য ৩৫৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল। রাস্তা নির্মাণের সময় ১৬ টি পাহাড় কাটা হয়েছিল এবং মনসুন মৌসুমে ভূমিধস সৃষ্টির কারণে বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বায়েজিদ লিংক রোডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

চট্টগ্রাম বায়েজিদ রোড, যার দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার, ফৌজদারহাট থেকে শেরশাহ এলাকায় শেষ হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ১৯৯৭ সালে শুরু হয়, এবং ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছিল, যার ব্যয় ছিল ৳৩৩.৮১ কোটি টাকা। সড়ক উন্নয়নের এই প্রকল্পটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

স্থাপনা ও সাম্প্রতিক উন্নয়ন

বায়েজিদ লিংক রোডের সম্প্রতি বেশ কিছু উন্নয়নী কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। মূলত, এই সড়ক প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ৳২১০ কোটি, যা পরে বাড়িয়ে ৳৩২০ কোটি টাকা করা হয়েছিল। সড়ক নির্মাণের কাজ Spectra Engineers Limited কে ২০১৫ সালে অর্পণ করে। চট্টগ্রাম বায়েজিদ রোডে সাম্প্রতিক উন্নয়নের কারণে যানজট নিরসন এবং দ্রুতগতি পরিবহন ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে।

রাস্তার বহর

বায়েজিদ লিংক রোডে মোট ৬টি সেতু রয়েছে, যার মধ্যে একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ ও কিছু কালভার্ট অন্তর্ভুক্ত। জুন ২০২১ সালে সড়কে কয়েকটি ভূমিধস ঘটেছিল, যা এই সড়ক পর্যায়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয়। ইতোপূর্বে, ২০১৭ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর দ্বারা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু পর্যায়ে অভিযোগ এবং জরিমানা (৳১০ কোটি টাকা) করা হয়েছিল। এই সকল রাস্তার বহরের সংযোজন ও নবায়ন চট্টগ্রাম শহরের সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুনঃ  ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স - বাংলাদেশের অন্যতম এয়ারলাইন্স

ইতিহাস ও নির্মাণ প্রকল্প

বায়েজিদ সড়ক প্রকল্পটি চট্টগ্রামের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। ২০১৫ সালে এই সড়ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি শুরুতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, বিশেষ করে পাহাড় কাটা এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলি সমাধানের প্রয়োজন ছিল।

প্রকল্পের শুরু ও ধাপ

১৯৯৬ সালে বায়েজিদ সড়ক প্রকল্পের পরিকল্পনা শুরু হয় এবং ১৯৯৯ সালে এটি একনেকে পাশ হয়। ইতোমধ্যে ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং রেলওয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রামে এই সড়কগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পটি পুরোপুরি সম্পন্ন করতে বেশ কয়েক ধাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জমি অধিগ্রহণ এবং কাজের বিবরণ

প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু করা হয়। তদানীন্তন অবস্থায় পরিবেশ আইনের কিছু নিয়ম ভঙ্গ করে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার জন্য অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে বিনিময়ে অতিরিক্ত কোনো পাহাড় না কাটানোর কারণে এই কাজের উপর প্রায় ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল।

বর্তমানে প্রকল্পের ৯২% কাজ শেষ হয়েছে, তবে রেল ব্রিজ, রিটেইনিং দেয়াল এবং পাহাড়ের আশেপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। বায়েজিদ সড়ক প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে বহির্গামী ট্র্যাফিক এবং পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে।

উদ্বোধন ও সমাপ্তির তারিখ

বায়েজিদ লিংক রোডের উদ্বোধন ছিল একটি বহুল প্রত্যাশিত ঘটনা। যুক্ত থাকার কারণে, প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে এবং বহুবার বিলম্বিত হয়। এই সড়কের নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করতে হয়েছিল, যার ফলে খরচ বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন

২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বায়েজিদ সড়ক উদ্বোধন করেন। এই সড়কের উদ্বোধন অনেক চ্যালেঞ্জ সাধন করে, যেমন পাহাড় কাটা এবং জমি অধিগ্রহণ। তবে শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ প্রজেক্টটিকে সফলতা এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কুয়াকাটা - বাংলাদেশের অনন্য সমুদ্র সৈকত

প্রকল্পের মোট খরচ এবং সময়কাল

প্রকল্পটির মোট খরচ ছিল ৩৫৩ কোটি টাকা, যা শুরুতে নির্ধারিত ৩৩.৮১ কোটি টাকার তুলনায় বহুগুণ বেশি। নির্মাণ কাজের শুরুতে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, যা পরে বাড়ানো হয়। বায়েজিদ সড়ক উদ্বোধন ও কাজ সম্পূর্ণ করতে একাধিকবার সময়সীমা পুনঃনির্ধারিত হয়েছে, এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বায়েজিদ লিংক রোডের গুরুত্ব

চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোড দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়েজিদ লিংক রোডের সুবিধা বহুমুখী। এই পথটি চট্টগ্রামের শহরের যানজট কমিয়ে এনে একটি নিরবচ্ছিন্ন ট্রানজিট রুট সৃষ্টি করেছে, যা দেশের আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রমকে আরো সহজ করেছে।

চট্টগ্রাম দেশটির আমদানীর ৯০% এবং রপ্তানীর ৮৫% পরিচালনা করে, তার প্রধান বন্দর ব্যবহার করে। এই পথটি চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক। শহরের বাইপাস হিসেবে, বায়েজিদ লিংক রোড ঢাকা থেকে আসা যানবাহনগুলোকে সরাসরি রাঙ্গামাটি, রাউজান, কাপ্তাই এবং রাঙ্গুনিয়ায় যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এই লিংক রোডের মাধ্যমে চলাচলকারীরা দ্রুত ও নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার মূল প্রকল্প খরচে নির্মিত এই রোডটি শুরুতে নানা জটিলতার মধ্যে পড়লেও এখন এটি আর্থসামাজিক দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল)।

বায়েজিদ লিংক রোডের সুবিধা বলতে গেলে, এই রোডটি চট্টগ্রামের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি, এটি একটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

নতুন বে টার্মিনালের নির্মাণ চট্টগ্রাম বন্দরে বড় বড় জাহাজগুলোর সহজ নোঙ্গরায় সহায়ক হবে, যার খরচ ধরা হয়েছে ২১ বিলিয়ন টাকা এবং এটি ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। পাশাপাশি, এটি ১৪ মিটার ড্রাফট সহ বড় জাহাজের পরিচালনা সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।

আরও পড়ুনঃ  বেনাপোল - বাংলাদেশের প্রধান স্থলবন্দর

এই রোডের নির্মাণের ফলে আরও একটি বড় প্রকল্প হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মীরসরাই, ফেনির সোনাগাজি এবং সীতাকুণ্ডে বিস্তৃত এই শিল্পনগরের ৩০,০০০ একর জমিতে স্থাপিত হবে এবং এর খরচ প্রায় ১১০ বিলিয়ন টাকা। এটি সম্পন্ন হলে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, বায়েজিদ লিংক রোড দেশের বাণিজ্যিক, পরিবহন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বটবৃক্ষের মত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

পাহাড় কাটা এবং পরিবেশ সমস্যা

বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে পাহাড় কাটা হয়েছে, যার ফলে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, যার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা পাহাড় কাটাকে চিহ্নিত করেছেন। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশবিদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ

পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবী, পাহাড় কাটার ফলে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, জীববৈচিত্র্যেও ক্ষতি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় উচ্চ মাত্রার ভূমিক্ষয় এবং ভূ-কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনেও এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়ছে এবং নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল সংগ্রহ করেছে।

প্রকৃতি সংরক্ষণ ও ঝুঁকি

বায়েজিদ লিংক রোডের কাজ চলাকালীন বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব করেছেন, প্রকৃতিকে সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঝুঁকি মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন হতে হবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button