পরীমনি: বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী

পরীমনি, যার আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি, বাংলাদেশের একজন প্রসিদ্ধ অভিনেত্রী এবং মডেল। ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তার অনন্য উপস্থিতি ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০১৫ সালে ভালোবাসা সীমাহীন দ্বারা বড় পর্দায় অভিষেক ঘটিয়ে, পরীমনি ইতিমধ্যে অসংখ্য সুপারহিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

বাংলাদেশী অভিনেত্রী পরীমনি বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় প্রদর্শন করেছেন যা তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করেছে। তার জীবনীতে সমৃদ্ধ ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনের নানা গল্প রয়েছে যা তাকে আরও সাহসী এবং অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পরীমনি চলচ্চিত্র জগতে দীর্ঘ ও সফল পথচলার প্রমাণ স্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

পরীমনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় ২৪ অক্টোবর ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থানের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাতক্ষীরা, যা পরীমনি জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। তার পরিবারের আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি, যা ধারাবাহিক জীবনে পরীমনি নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

পরিবারিক জীবন

পরীমনি পরিবার একটি মুসলিম পরিবার। পরীমনি প্রাথমিক জীবন অত্যন্ত চমৎকারভাবে কেটেছে তার নানা-নানির সাথে। চার বছর বয়সে তার মায়ের মৃত্যুর পর তার নানা-নানির কর্তৃত্বে বড় হয়ে উঠেন। পরীমনি পরিবার তাকে সবসময়ই সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের ভালোবাসায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

শিক্ষাজীবন

পরীমনি শিক্ষা জীবনের শুরু হয়েছিল গ্রামের পিরোজপুরের একটি স্কুলে। শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ ছিল অত্যন্ত প্রবল, আর তাই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক

পরীমনি মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন পিরোজপুরের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে। এখানেই তার পড়াশোনার ভিত্তি মজবুত হয়। এরপর, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্যে একই স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং সফলতার সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময়কালে তিনি তার বন্ধুমহলের প্রিয় ছিলেন এবং বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।

আরও পড়ুনঃ  জিয়াউল ফারুক অপূর্ব: বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় তারকা

স্নাতক শিক্ষা

পরীমনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তিনি বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। পরীমনি শিক্ষা জীবন এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; ঢাকায় বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচের কোর্সও সম্পূর্ণ করেন। তার পরিশ্রম এবং প্রতিশ্রুতি তার অভিনয় দক্ষতা এবং সাংস্কৃতিকজ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল।

মডেলিং ও কর্মজীবনের শুরু

পরীমনি মডেলিং এবং কর্মজীবনের শুরুটা ছিল বেশ চমকপ্রদ। তিনি মূলত তার বাবার পথ অনুসরণ করেননি, বরং নিজস্ব প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে মডেলিং এবং দর্শনীয় নৃত্যানুষ্ঠানে তার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে পরীমনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটকে কাজ করেছেন, যা তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে এবং তার কর্মজীবনের মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

পরীমনি ২০১৫ সালে মডেলিং শুরু করেন এবং দ্রুতই পরীমনি মডেলিং জগতে নিজের প্রতিভা তুলে ধরেন। তার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয় বিভিন্ন টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। এর পরের ধাপে, তিনি বড় পর্দায় নিজের অবস্থান প্রমাণ করেন এবং ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান।

পরীমনি অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হতে সময় না লাগলেও, তার প্রকৃত খ্যাতি বৃদ্ধি পায় “ভালোবাসা এখন সশ্নো” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে সবচেয়ে বড় পরিচিতি মেলে “রানা প্লাজা” চলচ্চিত্রে অভিনয় চুক্তির পর। এই চুক্তির পর থেকে তিনি একের পর এক সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন, যার মধ্যে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং বাবিসাস অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।

পরীমনি মডেলিং এবং তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম এবং নিবেদন করেন, যা তাকে আজকের এই উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। পরীমনির ক্যারিয়ার এবং তার মাস্টারস্ট্রোক পারফরম্যান্সগুলি তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম শীর্ষ তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

Parimoni অভিনয় জীবন

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন টিভি নাটকের মাধ্যমে। তার অসাধারণ প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের একজন করে তুলেছে।

টিভি নাটকে অভিষেক

পরীমনির অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল টিভি নাটকের মধ্য দিয়ে। প্রথম থেকেই বিভিন্ন জনপ্রিয় নাটকে তার অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন পরীমনি। তার অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য পরীমনি নাটক হলো “স্বপ্নের আকাশ”, “প্রেমের জাল”, এবং “হারানো দিনের কথা”।

আরও পড়ুনঃ  চঞ্চল চৌধুরী

প্রথম চলচ্চিত্র

টিভি নাটকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনের পর, পরীমনি চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন। তার প্রথম চলচ্চিত্র “ভালোবাসা সীমাহীন” ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয় জয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীমনি চলচ্চিত্র যেমন “দেবদাস”, “রাত”, এবং “সপনেদের পৃথিবী” তাকে সুপারস্টার এর মর্যাদায় আসীন করে।

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র

পরীমনির অভিনয় জীবনে অনেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র রয়েছে, যা তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম প্রধান তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি অনন্য অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।

রানা প্লাজা

একটি বিশেষ চলচ্চিত্র যা পরীমনির ক্যারিয়ারে বিশাল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়, তা হলো রানা প্লাজা চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন যা সামাজিক অবকাঠামো ও মানবতা সম্পর্কিত গুরুতর বার্তা প্রদান করে। পরীমনির অনবদ্য অভিনয় তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে দেয়।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র

রানা প্লাজার পাশাপাশি, পরীমনির অন্যান্য অনেক পরীমনি হিট মুভি রয়েছে যা দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো

  • রক্ত: যেখানে তিনি একজন নির্ভীক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
  • স্বপ্নজাল: যা তার ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য প্রান্তিক বিন্দু ছিল।
  • আমার প্রেম আমার প্রিয়া: একটি রোমান্টিক চলচ্চিত্র যা পরীমনির দক্ষতা প্রদর্শনে সহায়ক হয়।
  • বিশ্বসুন্দরী: ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটি চয়নিকা চৌধুরী দ্বারা পরিচালিত এবং এটি সুপারহিট হয়।
  • স্ফুলিঙ্গ: যেখানে তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রশংসিত হয়।
  • গুণিন: আরেকটি প্রধান চলচ্চিত্র যা তার অভিনয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন: একটি রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র যা পরীমনির ভিন্নধর্মী চরিত্র উপস্থাপন করে।
  • মা: যেখানে তিনি মা চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার অভিনয় ক্ষমতার একটি সুন্দর প্রদর্শনী।

এই সকল চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় পরীমনি হিট মুভিগুলোর তালিকায় স্থান করে নেয় এবং দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে।

ব্যক্তিগত জীবন

পরীমনি, যিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম, তার ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন।

পরীমনি ব্যক্তিগত জীবন বেশ কয়েকবার রূপান্তরিত হয়েছে, এবং প্রতিটি অধ্যায়েই নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা রকম আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে যখন তিনি পদ্মা নদীতে ডুব দিয়ে একটি আলোচিত ফটোশ্যুট করেছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  উর্ফি জাবেদ

সন্তান

পরীমনির সন্তানের নাম শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য। তার সন্তানের জন্মের পর তিনি বেশ কয়েকদিন কোলকাতা থাকতে বাধ্য হন বিভিন্ন পারিবারিক কারণে। তার সন্তানকে নিয়ে তিনি একাধিকবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, যা পরীমনি সামাজিক জীবন এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

পরীমনি ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিবাহ এবং বিচ্ছেদের সম্মুখীন হন। তিনি প্রথমে ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল, দশম শ্রেণি থাকা অবস্থায়, ফর্দৌস কবির সোরভকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তিনি পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করেন, কিন্তু সেই বছরেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তার প্রথম বিয়ে ২০১৬ সালে তাদের সম্পর্কের দূরত্বের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়।

পরীমনির ব্যক্তিগত জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, যেগুলো তার সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি, তার বাড়িতে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয় যেখানে কিছু দুষ্প্রাপ্য মাদকদ্রব্য এবং মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তার বন্ধু রাজও অভিযুক্ত ছিলেন অবৈধ ভিডিও তৈরীর সাথে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

পরীমনি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অতি পরিচিত একটি নাম, বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননার মাধ্যমে তার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। তার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে, তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যা তার তারকা খ্যাতিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

জাতীয় পুরস্কার

পরীমনি বহুমাত্রিক অভিনয় প্রতিভার জন্য বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি বাবিসাস পুরস্কারে সম্মানিত হন, যা তার অভিনয় জীবনের প্রথম উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি। এরপর ২০১৯ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করে আরও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এই সমস্ত পুরস্কার তার অভিনয় দক্ষতা ও প্রতিভার উদাহরণ হয়ে রয়েছে। পরীমনি পুরস্কার অর্জন তার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার নিদর্শন।

আন্তর্জাতিক সম্মাননা

পরীমনি কেবলমাত্র দেশের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি; আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তার কাজের প্রশংসা পেয়েছেন। ভারত-বাংলা চলচ্চিত্র সম্মেলনে তার অভিনয়ের জন্য তিনি বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। এর ফলে পরীমনি সম্মাননা কিভাবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তা বোঝা যায়। এই সমস্ত আন্তর্জাতিক সম্মাননা তার অভিনয় জীবনের একটি উজ্জ্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button