সমবায় সমিতি কাকে বলে?

বাংলাদেশে “সমবায় সমিতি” হল এমন এক আইনি প্রতিষ্ঠান যেখানে সদস্যরা তাদের বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালায়। ২০০১ সালে প্রণীত “কোঅপারেটিভ সোসাইটিজ অ্যাক্ট” অনুসারে, এই ধরনের সংগঠনগুলোকে স্বাধীন আইনি ভিত্তি এবং বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে পৃথক আইনি সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। একটি “প্রাথমিক সমবায় সমিতি” গঠনের জন্য ন্যূনতম ২০ জন সদস্য আবশ্যক, এরকম তথ্য আমাদের ধারণাকে পরিষ্কার করে তোলে যে সমবায়গুলি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বি-স্তর বিশিষ্ট “সমবায় সমিতি” সারা বাংলাদেশে জেলা বা থানা স্তরে কমপক্ষে ১০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতির সম্মিলিত প্রচেষ্টা দ্বারা গঠিত হয়। এছাড়াও, সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক কিংবা “কেন্দ্রীয় কোঅপারেটিভ ইউনিয়ন” এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের সদস্যদের পারস্পরিক সহায়তামূলক উন্নয়নে অবদান রাখছে। বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সমবায় জোট সমবায়ের সাতটি মৌলিক নীতি নির্ধারণ করেছে যেগুলি এই প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা ও সংগঠনের মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। এগুলির মধ্যে রয়েছে স্বেচ্ছায় সদস্যত্ব, গণতান্ত্রিক সদস্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা, শিক্ষা, অন্যান্য সমবায়ের সঙ্গে সহযোগিতা, এবং সম্প্রদায়ের প্রতি উদ্বেগ।

সমবায় সমিতির সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য

বাংলাদেশে ‘সমবায় সমিতি’ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের এক অপরিহার্য মাধ্যম বলে গণ্য হয়। সমবায় সমিতির ধারণা মানে হলো সমষ্টিগত ভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন। এটি সমবায় আইন অনুসারে পরিচালিত হয়, যেটি পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক কল্যাণের চেতনাকে গুরুত্ব দেয়।

মূল ধারণা

সমবায় সমিতি একটি স্বশাসিত, স্বাধীন গোষ্ঠী যা তার সদস্যদের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে। সদস্যদের মধ্যে জ্ঞান ও সম্পদ বিনিময়ের মাধ্যমে এটি পারস্পরিক সহযোগিতা এর এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে। সমবায়ের কাঠামো ও কর্মপন্থা তার সদস্যদের অর্থনৈতিক উপকারিতা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।

সমবায়ের উদ্দেশ্য

সমবায় সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো একটি সুন্দর ও সহযোগী সামাজিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যেখানে প্রতিটি সদস্য অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি অর্জনে সক্ষম হয়। মুনাফার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যমে এবং অর্থনৈতিক কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে এই সমিতিগুলি তাদের সদস্যদের মধ্যে সাম্য ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করে।

সমবায় সমিতির ইতিহাস

সমবায় সমিতির বিশ্ব ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৮৪৪ সালে রচডেল পায়োনিয়ার্সের মাধ্যমে আধুনিক সমবায় আন্দোলন শুরু হওয়া, যা শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে প্রসারিত হয়েছিল। এরা ছিলেন মূলত কারখানায় কর্মরত সহকর্মী, যারা অত্যধিক মূল্য এবং নিম্ন গুণগত মানের পণ্য ক্রয়ের সমস্যা থেকে নিজেদেরকে মুক্তি দিতে এই সমিতি গঠন করে।

আরও পড়ুনঃ  উৎপাদন কাকে বলে?

বিশ্বব্যাপী ইতিহাস

বিশ্বজুড়ে সমবায় সমিতির বিস্তার ঘটেছে বহু ধাপে। ১৭৬১ সালে ফেনউইক উইভারস সোসাইটি এই ধারণাকে প্রথম আকৃতি দেয়। এই আদর্শ বাস্তবে রূপ নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী কালে আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। সমবায় সমিতির এই গতিশীল বিকাশ বিভিন্ন দেশে নানাবিধ সামাজিক উন্নয়নের কারণ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের সমবায় ইতিহাস

বাংলাদেশে সমবায় সমিতির উদ্ভব বৃটিশ ভারতের সময়কালে ঘটে, যেখানে ১৯০৪ সালে সমবায় ক্রেডিট সোসাইটিজ আইন এবং পরবর্তীতে ১৯১২ সালের সমবায় সোসাইটিজ আইনের মাধ্যমে ঋণ ও অ-ঋণ সমবায়গুলির গঠন সম্ভব হয়। পাকিস্তান আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে ‘ইউনিয়ন স্তরের’ সমবায় সমিতিগুলি গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর সমবায় সমিতির কাঠামো এবং নীতিমালা আরও উন্নতি লাভ করে, যাতে করে সমবায় সমিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে।

সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য

সমবায় সমিতি একটি অনন্য স্বশাসিত সংগঠন হিসাবে পরিচিত, যা তার সদস্যদের অধিকারগণতন্ত্রিক পরিচালনা কৌশলের মাধ্যমে কাজ করে। একটি সমবায় সমিতির মূল লক্ষ্য হল সদস্যদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থসমূহ রক্ষা করা অবস্থায় একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা।

স্বশাসিত সংগঠন

সমবায় সমিতি স্বশাসিত সংগঠন হিসাবে তার কার্যকলাপ নিজস্ব পরিচালনা ও নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এতে করে সমিতি নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা সর্বজনীন সদস্যদের ভোটাধিকার ও মতামতের ভিত্তিতে এগিয়ে চলে।

সদস্যদের সমান অধিকার

প্রত্যেক সদস্য, সমবায় সমিতির একজন সমান অধিকারপ্রাপ্ত অংশীদার হিসেবে কাজ করে। এর ফলে, সমবায় সমিতি গণতন্ত্রিক পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সদস্যদের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

সমবায় সমিতির এই বৈশিষ্ট্যগুলি সদস্যদেরকে তাদের নিজস্ব পেশা ও সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে, যা একটি সুস্থ ও উন্নত সমাজ গঠনে অবদান রাখে।

সমবায় সমিতির প্রকারভেদ

বাংলাদেশে সমবায় সমিতির বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপরিসীম অবদান রাখছে। এই সমিতিগুলি মূলত: উৎপাদন সমবায়, ভোক্তা সমবায়, এবং কৃষি সমবায় এই তিন প্রকারে বিভক্ত। প্রতিটি সমবায়ের কার্যকলাপের মাধ্যমে সদস্যদের জীবনমান উন্নত হয় এবং একটি সহযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।

উৎপাদন সমবায়

উৎপাদন সমবায় প্রধানত ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করে থাকে। এখানে শ্রমিক ও মালিক মিলে নিজেরা পণ্য তৈরি এবং বিক্রি করে থাকেন, যা উদ্যোক্তার আয়ের উৎস হিসেবে কার্যকর।

ভোক্তা সমবায়

ভোক্তা সমবায় প্রধানত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে। এই সমিতি সদস্যদের চাহিদামতো পণ্য ক্রয়ে সহায়তা করে থাকে।

কৃষি সমবায়

কৃষি সমবায় কৃষকদের একত্রিত করে, যা তাদেরকে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং ও পণ্য বিক্রির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এটি কৃষকদের উৎপাদন খরচ হ্রাস পেতে এবং বাজারজাত করার সময়ে উচ্চ মূল্য নিশ্চিত করে।

  1. মালিক ও শ্রমিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান
  2. সদস্যদের মধ্যে বাজারের জ্ঞান বিনিময় ও সহযোগিতা
  3. ন্যায়সঙ্গত পণ্য বিপণন ও ক্রয়ের মাধ্যমে সদস্যদের অর্থ সাশ্রয়
আরও পড়ুনঃ  একচেটিয়া বাজার কাকে বলে?

প্রতিটি সমবায় প্রকারের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সদস্যদের জীবনমান বৃদ্ধি করাই মূল লক্ষ্য। এসব গড়ে তোলা হয় একটি সমন্বিত ও সামাজিক উন্নতির মাধ্যমে।

সমবায় সমিতির কার্যকারিতা

সমবায় সমিতির মূল উদ্দেশ্য হলো একটি সংহত ও সাম্যবাদী কাঠামোর মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা। এই সংগঠনগুলো তাদের কার্যকলাপ দ্বারা সমতা বজায় রাখতে ও সদস্যদের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বজনীন অগ্রগতি সাধনে মনোনিবেশ করে থাকে।

সাম্য ও সমতা

সমবায় সমিতি তাদের সাম্যবাদী কাঠামোর মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক সমতা নিশ্চিত করে। এর ফলে সকল সদস্য সমান অধিকার ও সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

সামাজিক উন্নয়ন

সামাজিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায়, সমবায় সমিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এই সংগঠনগুলি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতে নিযুক্ত থাকে, যা সামগ্রিকভাবে সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এভাবে, সমবায় সমিতির কাঠামো ও কার্যক্রম তাদের সমাজে একটি সুদৃঢ় ও সাম্যবাদী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে, এবং এটি তাদের সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে।

সমবায় সমিতির সদস্যপদ

সমবায় সমিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সদস্য নিবন্ধন ও সদস্যতার শর্তাবলী। এই শর্তাবলী মেনে চলে সদস্যগণ সমিতির নানান কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং তাদের যৌথ উদ্দেশ্য সাধনে অবদান রাখেন।

সদস্য হওয়ার শর্ত

সমিতির সদস্য হতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়, যা সদস্যতার শর্তাবলী অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। প্রাথমিক সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম ৭টি নথি প্রয়োজন এবং নিবন্ধন শুল্ক বিনামূল্যে। নিবন্ধনের সময়কাল প্রায় দুই মাস ধরে চলে।

  • ৭ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বেসিক কোঅপারেটিভ সোসাইটি নিবন্ধন করা হয়।
  • সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ সোসাইটির নিবন্ধন ফি ৩০০ টাকা এবং অতিরিক্ত ভ্যাট ৪৫ টাকা।

সদস্যদের অধিকার ও দায়িত্ব

সমবায় সমিতির সদস্যগণের একাধিক অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে যা তাদের সদস্য নিবন্ধন পর মেনে চলতে হয়। সদস্যরা সমিতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। তারা সমিতির লাভ ক্ষতির ভাগীদার হিসেবে কাজ করে থাকেন।

  • সদস্যদের সঠিক তথ্য এবং সহায়তা প্রদানের জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টরের যোগাযোগ নম্বর ০১৭১১২৮২৩৭৬।
  • নিবন্ধন প্রক্রিয়াকালীন সময়ে কোনোরকম সমস্যা বা প্রশ্নের জন্য uco-kahaloo@yahoo.com-এ ইমেল করা যেতে পারে।

এভাবে, সদস্য নিবন্ধনসদস্যতার শর্তাবলী মেনে চলে একজন সদস্য সমিতির সাথে গভীরভাবে জড়িত হয়ে পড়েন এবং তার মাধ্যমে সমবায়ের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখেন।

সমবায় সমিতির লাভ-ক্ষতি

বাংলাদেশে সমবায় সমিতির কার্যকলাপ বিভিন্ন ধরনের লাভজনক সমবায় ও ঝুঁকি ও ক্ষতির বিবেচনায় পরিচালিত হয়। বিগত বছরগুলোতে, এই সমিতিগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। সদস্যদের পারস্পরিক অধিকার অনুসারে লাভ বন্টন ও সম্ভাব্য ক্ষতি সামলানো হয়।

লাভের দিক

  • সদস্যদের মধ্যে প্রধানভাবে লাভ বণ্টন করা হয়, যাতে সকলের উন্নয়ন সুনিশ্চিত হয়।
  • নীলকন্ঠ সমবায় সমিতি যেমন ৮৩৩ জন গ্রাহকের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে।
  • প্রযুক্তি ব্যবহার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, ৮০% সমিতি কাজ মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ  শাসন বিভাগের প্রধান কে?

সম্ভাব্য ক্ষতি

  • আমিনুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন যে দৈনিক হিসাব নিয়ে সমস্যা হওয়ার বৃহত্তর সম্ভাবনা রয়েছে।
  • সমিতির অভ্যন্তরীণ ফান্ডে বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঙ্কটের সময় জরুরি খরচের জন্য ক্ষতি পূরণে ব্যবহার হতে পারে।
  • অডিট ও তদারকির ফি ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত খরচ অনেক সময় বেশি পরিমাণে হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, সমবায় সমিতি তাদের সদস্যদের জন্য লাভজনক ও ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা করে থাকে। একটি সমন্বিত ও সংগঠিত পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের প্রধান সমবায় সমিতি

বাংলাদেশে সমবায় সমিতির ভূমিকা গ্রামীণ ও শহুরে উন্নয়নে অপরিহার্য। এসব সমিতি কৃষি এবং ব্যবসায়িক সেক্টরে ব্যাপক অবদান রাখে এবং বাংলাদেশ সমবায় সমিতির প্রচার ও প্রসারে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম্নে কৃষি এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখা কৃষক ও ব্যবসায়িক সমবায় সমিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

কৃষক সমবায়

  1. আল আমিন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ: উল্লেখযোগ্য কৃষি প্রকল্পের জন্য পরিচিত, যেমন ক্ষুদ্র ঋন এবং গাভী পালন। সদস্য সংখ্যা ৩৭৬৮, এবং এর শেয়ার মূলধন ২১৮৩৬০০.০০ টাকা।
  2. উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ: এই সমিতি কৃষি উৎপাদন এবং ঋন সেবা নিয়ে কাজ করে। সদস্য সংখ্যা ২৬৭ জন। শেয়ার মূলধন ৪০২৫০.০০ টাকা।

ব্যবসায়িক সমবায়

  • মেঘনা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ: ছোট বিপণন প্রকল্প এবং শীতল পার্টি তৈরির জন্য কার্যকর। সদস্য সংখ্যা ৩৫ জন। কার্যকরী মূলধন ২৩৩০০০.০০ টাকা।
  • দাদপুর তাত বস্ত্র উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিঃ: স্থানীয় তাত বস্ত্র উৎপাদন এবং বিপণনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সদস্য সংখ্যা ১২৬ জন, এবং কার্যকরী মূলধন ৫৫০৯৪৭৪৪ টাকা।

সমবায় সমিতির আইন ও বিধিমালা

সমবায়ের আন্দোলন বৃটিশ ভারতের সময় থেকেই অব্যাহত রয়েছে, যেখানে ১৯০৪ সালে গভর্নর-জেনারেল লর্ড কার্জনের অধীনে কোপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটিজ অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রারম্ভিক সমবায় সমিতি তৈরির জন্য নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। ইংল্যান্ডে রবার্ট ওয়েনের ১৮২১ সালে নিউ লানার্ক কো-অপারেটিভ এর মাধ্যমে যে সফলতা প্রদর্শিত হয়েছিল, তার পরবর্তী দশকগুলিতে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে সমবায়ের বিকাশ ঘটেছে।

সমবায় সমিতির নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি অন্তর্ভুক্ত করে ন্যূনতম শেয়ার এবং সঞ্চয়ের অবদান, সদস্যদের নাম, স্বাক্ষর, ও আর্থিক বিবরণ রেকর্ড। নিবন্ধন ফি সাধারণত ৩০০ বিডিটি এবং সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট হয়। সমিতির নামাঙ্কিত অ্যাকাউন্ট জাতীয় সমবায় ব্যাংক অথবা নির্দিষ্ট কোন ব্যাংকে নিবন্ধনের দুই মাসের মধ্যে চালু করা আবশ্যক।

সমবায় সমিতির বিধি-নিষেধ ও নিয়মনীতিতে যে কোনো পরিবর্তনের জন্য সাধারণ কমিটির সভায় অনুমোদন প্রস্তাব এবং যোগ্য সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে যৌক্তিক সমর্থন প্রয়োজন। অডিট রিপোর্টের জমা দেওয়া, সাধারণ সভার প্রস্তাবনাসমূহ, নিবন্ধন ফির প্রদান, এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন জমা দেওয়া হয়। সদস্যরা শেয়ার এবং সঞ্চয়ের অর্থ প্রদানের প্রমাণ সরবরাহ করতে হবে, যা মজুদ তহবিল সংরক্ষণের নিয়মের মানদণ্ড অনুসরণ করে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button