ক্রিয়া কাকে বলে?
বাংলা ভাষার অপরিহার্য উপাদান হলো ক্রিয়াপদ, যা বাক্যের কর্তা বা উদ্দেশ্যের ক্রিয়াকলাপ অথবা ঘটনার ঘটা বা হোনা প্রকাশ করে। ক্রিয়ার সংজ্ঞা বলতে সেই শব্দগুলি বোঝায় যা বাক্যে বিশেষ কোন কর্ম, অবস্থা বা পরিস্থিতির ক্রিয়াকলাপ উল্লেখ করে, অনুরূপ “রাজীব খেলছে” অথবা “বৃষ্টি হতে পারে” বাক্যদ্বয়ের মাধ্যমে।
বিভিন্ন বাংলা ক্রিয়ার অর্থ ও তার অবস্থান অনুযায়ী ক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হয়, যেমন মূল ক্রিয়া (Principal Verb), সাহায্যকারী ক্রিয়া (Auxiliary Verb), প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়া (Regular Verb) অথবা নিয়মবহির্ভূত ক্রিয়া (Irregular Verb) প্রভৃতি। প্রাথমিক ও গৌণ ক্রিয়ারও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা বাক্যগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এবং বাক্যের অর্থ সর্বাঙ্গীণভাবে ধারণ করে। এই আলোচনা বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ক্রিয়ার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
বাংলা ব্যাকরণে ক্রিয়া একটি মৌলিক উপাদান, যা না কেবল বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়ক, মূলত বাক্যের প্রাণ ভূমিকা নির্বাহ করে। ক্রিয়াপদের প্রয়োগ ও তার গঠনে বিশেষভাবে ধাতুর ভূমিকা অপরিসীম।
ক্রিয়ার মৌলিক সংজ্ঞা
ব্যাকরণে ক্রিয়া সংজ্ঞায়িত হয় এক বা একাধিক কাজ, ভাব বা অবস্থানের প্রকাশ হিসেবে। ধাতু থেকে গঠিত ক্রিয়াপদ বাক্যের অন্যান্য উপাদানগুলির সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ অর্থ ব্যক্ত করে।
দৈনন্দিন ভাষায় ক্রিয়া
দৈনন্দিন ক্রিয়া, যেমন খাওয়া, যাওয়া, ঘুমানো প্রভৃতি প্রতিদিনের কথোপকথনে ব্যবহৃত হয়। এ ক্রিয়াগুলি বাক্যের ভাব প্রকাশ এবং ক্রিয়াপদের প্রয়োগে জীবনের নানান ঘটনাকে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরে।
ভাষাবিদদের দৃষ্টিকোণ
ভাষাবিদেরা ক্রিয়ার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় গুরুত্বারোপ করেন যে, ক্রিয়া ভাষায় ক্রিয়াকারক বৈশিষ্ট্যের ফলে অন্যান্য ভাষাগত উপাদানগুলির সঙ্গে মিলেমিশে বাক্যের অখণ্ডতা স্থাপন করে। ক্রিয়াপদ ও ব্যাকরণের গভীর সংযোগ থেকে ভাষার প্রকৃত গঠন পর্যন্ত পৌঁছানো যায়।
- ক্রিয়া বাক্যের ক্রিয়ামূলক পার্টের মূল উপাদান।
- দৈনন্দিন ক্রিয়া এবং ক্রিয়াপদের প্রয়োগ সঞ্চালন করে যোগাযোগে সারবস্তুর প্রকাশ।
- ভাষাবিদের কাজ ক্রিয়াপদের ব্যবহারিক এবং তাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণ করা।
ক্রিয়ার প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় ক্রিয়ার প্রকারভেদ বিশ্লেষণ করতে গেলে আমাদের ক্রিয়াপদের গঠন, ক্রিয়ামূল, এবং ক্রিয়া ও অব্যয় বিচার করতে হয়। এই বিভাগে আমরা পদবাচক ক্রিয়া এবং অব্যয় ক্রিয়া দুটি প্রধান ক্রিয়ার প্রকার নিয়ে আলোচনা করব।
পদবাচক ক্রিয়া
পদবাচক ক্রিয়া মূলত কর্মসূচক বা কর্মনির্দেশক ক্রিয়া, যেখানে ক্রিয়াপদ নিজেই একটি কাজ বা কর্ম নির্দেশ করে। এই ধরনের ক্রিয়াগুলি য়াবতীয় ক্রিয়া বিবেচনায় মৌলিক ও যৌগিক ক্রিয়াপদের ভূমিকায় পরিগণিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “সে ভাত খায়” অথবা “সে পাস করে গেল” এই দুটি বাক্যেই ক্রিয়ামূলক ব্যবহার স্পষ্ট।
অব্যয় ক্রিয়া
অব্যয় ক্রিয়া বা অপ্রকাশিত ক্রিয়া হলো যেখানে ক্রিয়াপদ সরাসরি বাক্যে উচ্চারিত না হলেও এর অর্থ বোঝা যায়। এই ক্রিয়াগুলি ক্রিয়াপদ গঠন ও ব্যবহারের বৈচিত্র সৃষ্টি করে এবং ভাষাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। যেমন: “ইনি আমার ভাই”, যেখানে ‘হন’ শব্দটি ব্যবহৃত না হলেও এর অর্থ বোঝা যায়।
এই আলোচনা দ্বারা আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পদবাচক ক্রিয়া এবং অব্যয় ক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রিয়াপদের প্রকার ও ক্রিয়াপদ গঠন বৈচিত্র্যময় ও গভীরতর হয়ে উঠেছে এবং এটি ভাষা গবেষকদের জন্য নিত্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।
ক্রিয়ার গঠন
বাংলা ভাষায় ক্রিয়াপদ গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে মূল ধাতু, পুরুষ ও কাল অনুসারে বিভিন্ন প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ তৈরি করে।
ক্রিয়াপদের কাঠামো
ক্রিয়াপদ গঠনের প্রধান উপাদান হলো ধাতু। এই ধাতুর সাথে ক্রিয়ার ভাষাগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রত্যয় যুক্ত হয়, যা ক্রিয়ার রূপবিন্যাস নির্ধারণ করে। আমরা দেখতে পাই, একটি সাধারণ ধাতু “খেল” থেকে “খেলে”, “খেলি”, “খেলব” রূপ গঠন পুরুষ ও কাল ভেদে পরিবর্তিত হয়।
ক্রিয়ার রূপবিন্যাস
ক্রিয়ার রূপবিন্যাসের ক্ষেত্রে, ক্রিয়াপদ এর বিভিন্ন রূপ পুরুষ ও কাল অনুসারে পরিবর্তন পায়। এটি যত্নের সাথে লক্ষ্য করা জরুরি যে, “খেলছি”, “খেলছে”, “খেলেছেন” এর মতো ক্রিয়াপদের রূপান্তরগুলি পুরুষ ও কাল ভেদে প্রাযুক্তিক ও সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে কাজ করে।
সংক্ষেপে, ধাতু থেকে শুরু করে ক্রিয়াপদের পূর্ণাঙ্গ গঠন পর্যন্ত একটি ক্রিয়াপদের জীবনচক্র বিভিন্ন ঘাত ও প্রত্যয়ের যোগান দ্বারা পরিচালিত হয়, এবং সেইসব অনুষঙ্গ বাংলা ভাষার ক্রিয়াপদ গঠনকে এক অনন্য সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ধারণা প্রদান করে।
বাংলা ভাষায় ক্রিয়ার ব্যবহার
বাংলা ভাষার বাক্য রচনায় ক্রিয়া যেন প্রাণভোমরা, নানান অর্থ ও ভাবের মাঝে যে কোনো বাক্যে ক্রিয়ার গুরুত্ব উপেক্ষা করা অসম্ভব। ক্রিয়া শুধু কর্মের বিবরণই দেয় না, বরং বাক্যের মূল থিমকেও নির্দিষ্ট করে। সেটি বর্তমান, অতীত, অথবা ভবিষ্যত্ কালের কোনও ঘটনা হোক না কেন, প্রেক্ষাপটের সাথে হামেশাই পরিপূর্ণ সংযোজন রাখে।
বাক্যের কেন্দ্রে ক্রিয়া
বাংলা ভাষায় বাক্যে ক্রিয়ার প্রয়োগ এমন এক প্রধান বৈশিষ্ট্য যা আমাদের কথোপকথনে একটি স্পষ্ট অর্থ তুলে ধরে। এর মাধ্যমে বাক্যের বক্তব্য বা আবেগ ব্যক্ত হয়ে ওঠে পরিস্ফুট। “সোনালী দিন শেষে পাখি বাসায় ফিরে” এই বাক্যে ‘ফিরে’ ক্রিয়াটি দিনের শেষের একটি চিত্র এঁকে দেয় যা সহজেই মনোজগতে প্রতিবিম্বিত হয়।
ক্রিয়ার প্রয়োগ উদাহরণ
ক্রিয়ার প্রয়োগের বিভিন্ন রূপের মধ্যে, ঐতিহাসিক ঘটনা বা লৌকিক বর্ণনায় এটির ভূমিকা অপরিসীম। উদাহরন সহ ক্রিয়া ‘লিখেছেন’, ‘খেলেন’, ‘কাটান’ এই সব শব্দগুলো কেবল একটি কর্মই নয়, ঐতিহাসিক সময়ের মানচিত্রেরও পরিচায়ক। বাংলা ভাষায় ক্রিয়ার এই সব ব্যবহার বাক্যের অর্থ, ঋদ্ধতা, এবং তথ্যের পরিপূর্ণতার বাহন হয়ে উঠেছে।