বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়?
বিড়ালের নখের আচর অনেক সময় আমাদের কাছে মামূলি ব্যাপার মনে হলেও, এর পরিণাম অনেক সময় গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ (CSD) এক প্রাণান্তক উদাহরণ, যার মাধ্যমে বিড়ালের নখের সংক্রমণের হার মাত্র ৩-১৪ দিনের মধ্যে ঘটতে পারে, এটি উদ্বেগজনক। এই ধরনের আঁচড়ের পরিণাম একান্তই অনুসন্ধান এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয়।
বিড়ালের নখে বিরাজমান ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং সেলুলাইটিসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত, যা আমাদের শরীরে শক্তিশালী রিঅ্যাকশনের জন্ম দিতে পারে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও একই রকম ঝুঁকি বিরাজমান। এই সমস্যাগুলি আমাদের বিড়ালের নখের আচর সঙ্গে যুক্ত করতে শেখার প্রয়োজন আছে, যাতে করে প্রতিকার এবং প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিতে পারি। ৭০% মানুষ এই ধরনের আঁচড়ের সঙ্গে দেখা দিলে যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানেন না, যা ঘটনাচক্রে আরও বড় সমস্যাগুলোর জন্ম দিতে পারে।
বিড়ালের আক্রমণ: পরিচিতি
বিড়ালের আচরণ বুঝতে হলে অবশ্যই তাদের নখের ব্যবহার এবং আক্রমণের কারণ গুলি সম্পর্কে জানা দরকার। আক্রমণ সাধারণত তাদের প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি এবং পরিবেশগত উদ্দীপনা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বিড়ালের আচরণ এবং নখের ব্যবহার
বিড়ালের নখ তাদের শিকার ধরা, নিজেদের রক্ষা করা এবং তাদের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য এক অন্যতম উপায়। খেলার সময় বা ভয় পাওয়া অবস্থায় বিড়াল তার নখ ব্যবহার করে থাকে যা নখের ব্যবহার হিসেবে পরিচিত।
- বিড়াল যখন খুশি থাকে তখন তার নখের সহায়তায় ধরাধরি করে, যা ভালোবাসার বিড়ালের আচরণ হিসেবে দেখা যায়।
- অন্যান্য সময়ে, বিড়াল হয়তো তার নখ ব্যবহার করে ঘরের আসবাবপত্র ঘষে, নিজের অঞ্চল চিহ্নিত করার জন্য।
বিড়ালের আক্রমণের কারণ
বিড়ালের আক্রমণের কারণ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক উদ্দীপনা থেকে আসতে পারে।
- পরিবেশগত পরিবর্তন: নতুন পরিবেশে বিড়াল ভীত বা উদ্বিগ্ন হতে পারে যা সহজেই আক্রমণাত্মক আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
- তাদের নিরাপত্তার উপরে হুমকি: যদি বিড়াল মনে করে যে তার নিরাপত্তা হুমকিতে আছে, তবে সে তার নখের ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
এই তথ্য জানলে বিড়ালের মালিকরা আরও সচেতন হয়ে উঠতে পারেন এবং তাদের পোষা প্রাণীর আচরণ বোঝার মাধ্যমে তাদেরকে আরও ভালভাবে পরিচর্যা করতে পারেন।
বিড়ালের নখের কারণে শারীরিক সমস্যা
বিড়ালের নখের আঁচড়ের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই সমস্যাগুলি প্রায়শই অবহেলিত হয়, যদিও এর ফলাফল গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ত্বকের আঘাত
বিড়ালের নখের প্রথম স্বাভাবিক পরিণাম হল ত্বকের আঘাত। এই আঘাত গুলি ত্বকের উপরিভাগে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি করে, যা খুব সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।
সংক্রমণ
-
ত্বকের আঘাত পরের ধাপ হলো বিড়ালের নখের সংক্রমণ। বিড়ালের নখ অনেক সময় বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান হয়ে থাকে, যেগুলি খুব সহজেই ক্ষতস্থানে প্রবেশ করতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তপাত
গভীর রক্তপাত হতে পারে যখন বিড়ালের নখ শিরা বা ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
সংক্ষেপে, বিড়ালের নখের প্রভাব উপেক্ষা করা উচিত নয়। ত্বকের আঘাত, সংক্রমণ, ও অতিরিক্ত রক্তপাত সমস্যাগুলি থেকে বাঁচতে গেলে সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সচেতনতা অপরিহার্য।
এলার্জির সমস্যা: বিড়াল ও মানুষ
বিরালের সঙ্গে মানব সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়, যার মধ্যে বিরাল থেকে এলার্জি একটি প্রধান ইস্যু। বিরালের লোম, খুশকি এবং লালার মাধ্যমে এলার্জেন ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা অ্যালার্জির লক্ষণ ডেকে আনে।
বিরাল থেকে সংক্রমণ
বিরাল থেকে এলার্জি অনেককে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। বিরালের সাথে জড়িত সংক্রমণ বায়ুবাহিত কণা অথবা ত্বকের সংস্পর্শে এসে উদ্ভূত হতে পারে। এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিরালের পরিচর্যা এবং পরিবেশ পরিষ্কার রাখা অত্যাবশ্যক।
এলার্জির লক্ষণ
- চোখ লাল হওয়া এবং পানি পড়া
- হাঁচি এবং নাক বন্ধ হওয়া
- শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা
- ত্বকে চুলকানি ও লালচে দাগ পড়া
বিরাল থেকে উঠে আসা এলার্জি এবং তার লক্ষণগুলি প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেলে, একটি নিরাপদ এবং সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখা সহজতর হয়। অতএব, পরিবেশ পরিষ্কার, নিয়মিত পরীক্ষা এবং সচেতনতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
ইনফেকশনের ঝুঁকি
বিড়ালের নখের আচরণের ফলে মানব শরীরে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বিদ্যমান। এই সংক্রমণগুলো অবহেলা করা গেলে গুরুতর ইনফেকশনের কারণ হতে পারে, যা চিকিৎসাগত প্রয়োজনীয়তাকে অনিবার্য করে তোলে।
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস
সাধারণত, বিড়ালের নখ থেকে সংক্রমিত হতে পারে বার্টোনেলা হেন্সেলি নামক ব্যাকটেরিয়া, যা ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, বিড়ালের নখ দ্বারা সৃষ্টি ক্ষুদ্র কাটা থেকে ভাইরাসযুক্ত ইনফেকশন ঘটতে পারে যা শরীরের প্রদাহিক প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে।
- ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মানব দেহে ত্বকের প্রদাহ, লালচে ফুসকুড়ি, এবং অস্থায়ী ফোলা ঘটায়।
- ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
চিকিৎসাগত প্রয়োজনীয়তা
ইনফেকশনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে প্রথমিক চিকিৎসাসহ নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
- আক্রান্ত স্থানে পরিচ্ছন্ন বিশেষ ধ্যান দেওয়া।
- প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য প্রদাহ প্রতিরোধক ওষুধের ব্যবহার।
- নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এবং উপযুক্ত ল্যাবরেটরি টেস্ট।
এর ফলে ইনফেকশনের ঝুঁকির সম্ভাবনা হ্রাস পেয়ে শরীরের স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখা সম্ভব হয়।
বিড়ালের নখের আচরণ থেকে মানসিক চাপ
বিড়ালের নখের আচরণ অনেক সময় মালিকদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। এটি মালিক এবং বিড়ালের মধ্যেকার সম্পর্কের উপর একটি বড় চাপ তৈরি করে। এ কারণে, মালিকের স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হতে পারে। নিম্নে এই দিক সম্পর্কে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:
বিড়াল ও মালিকের সম্পর্ক
মালিকের সাথে বিড়ালের স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা খুবই জরুরি। বিড়ালের আচরণ যদি আক্রমণাত্মক বা অস্থির হয়, তবে এটি বাড়ির পরিবেশে অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিড়ালের মানসিক স্বাস্থ্য
বিড়ালের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও তার আচরণের প্রভাব পড়ে। যদি বিড়াল অত্যধিক চাপের মধ্যে থাকে, তবে তার আচরণের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ পায়। এটি তার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম এবং সাধারণ মেজাজে প্রভাব ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে, বিড়ালের নখের আচরণ এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মানুষের যত্নশীল দৃষ্টি রাখা উচিত। এর মাধ্যমে মালিকের স্বাস্থ্য সমস্যাও এড়ানো সম্ভব হতে পারে, যা একটি সুখী ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করে।
বিড়ালের নখের পরিষ্কার ও যত্ন
আমাদের প্রিয় পোষা প্রাণী বিড়ালের যত্নে নখের পরিষ্কার ও নিয়মিত ট্রিমিং অত্যন্ত জরুরি। এটি না শুধু তাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন, বরং পরিচর্যা প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিড়ালের নখ যখন পরিষ্কার এবং সুস্থ থাকে, তখন তারা নিজেদের আরো আরামদায়ক অনুভব করে এবং তাদের সার্বিক ব্যবহার পজিটিভলি প্রভাবিত হয়।
বিড়ালের নখ কিভাবে পরিষ্কার করবেন
সাধারণত, বিড়ালের নখের পরিষ্কার একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত যা তাদের নখে জমে থাকা ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে। যত্নসহকারে একটি বিশেষ নখর কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে নিয়মিত নখ কাটা উচিত।
- নখ কাটার আগে বিড়ালকে শান্ত ও স্থির করুন।
- নখের স্বচ্ছ অংশটি কাটুন, সাবধানে করুন যাতে তাদের কিউটিকল বা প্রাণবন্ত অংশে চোট না লাগে।
- প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে নখ পরীক্ষা করুন।
নিয়মিত ট্রিমিং কেন জরুরি
নিয়মিত ট্রিমিং আপনার বিড়ালের নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন। এটি তাদের পরিবেশে নিরাপদ ও সুখী রাখতে সহায়তা করে, যেমন নখ দ্বারা তাদের নিজের দেহে কিংবা তাদের মালিকের দেহে আঁচড়ে ফেলা হ্রাস পায়। নখের যত্ন না নিলে আঁচড়ের ফলে গাম্ভীর্য চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- নিয়মিত ট্রিমিং নখের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
- এটি বিড়ালের নখ ক্ষতির সম্ভাবনা কমায়।
- ট্রিমিং পদ্ধতি বিড়ালের মানসিক প্রশান্তিও বাড়ায়।
সর্বোপরি, নিয়মিত ট্রিমিং এবং নখের পরিষ্কার আপনার বিড়ালের সুস্থ থাকা ও সম্ভাব্য চোট থেকে বিরত থাকার একটি অপরিহার্য উপায়। এই পদ্ধতি মেনে চললে, আপনার প্রিয় পোষা প্রাণী আরো বেশি সক্রিয় ও খুশি থাকবে যা তাদের পরিচর্যায় আনন্দ যোগাবে।
কীভাবে বিড়ালের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবেন
বিড়ালের আচরণ নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা প্রতিটি বিড়ালের মালিকের জানা উচিত। বিড়ালদের বোঝা ও তাদের সঙ্গে সঠিক ভাবে মেলামেশা করার জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ কৌশল ও আচরণ পরিবর্তনের পদ্ধতি অত্যন্ত জরুরি।
প্রশিক্ষণের কৌশল
প্রশিক্ষণের কৌশলের মধ্যে রয়েছে ধৈর্য ধরা, শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সঠিক আচরণ প্রশংসা করা। এছাড়াও, বিড়ালের মৌলিক আচরণের বুঝতে ও তাদের স্বাস্থ্য ও ভালোবাসা মজুদ রাখতে পরিবেশের উপর লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
আচরণ পরিবর্তনের উপায়
আচরণ পরিবর্তনের উপায় হিসেবে ওষুধ প্রয়োগ, পরামর্শ নেয়া এবং স্ট্রেস কমানোর কৌশল অত্যন্ত কার্যকর। বিড়ালের পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসের উপরও মনোযোগ দিলে তাদের আচরণ উন্নত হতে পারে।
- ধৈর্য ধরে প্রশিক্ষণ দিন।
- ভালো আচরণে পুরস্কার দিয়ে উত্সাহিত করুন।
- বিড়ালের স্বাস্থ্য ও ব্যায়ামের উপর গুরুত্ব দিন।
বিড়ালের আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ কৌশল শিখে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার প্রিয় পোষা প্রাণী সুখে ও সুস্থতায় বাস করবে। পাশাপাশি, আচরণ পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে আপনি তার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন।
বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হলে করণীয়
বিড়ালের নখের আঁচড়ে যদি ব্যথা বা আঘাত হয়, তাহলে নিরাপত্তা ও শুরুতেই যথাযথ প্রথম চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে, বিড়ালের চিকিত্সা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিৎ।
প্রথম চিকিৎসা
- ক্ষতস্থান প্রথমে পরিষ্কার করার জন্য সাবান ও পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিন।
- জীবাণুনাশক মলম প্রয়োগ করুন।
- ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার করার পর পরিষ্কার ও শুষ্ক ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিন।
- যদি রক্তপাত অব্যাহত থাকে, চাপ প্রয়োগ করে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করুন।
চিকিত্সকের সহায়তা
- বিড়ালের আঁচড় থেকে রক্তপাত হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
- আঘাতের মাত্রা ও সম্ভাব্য জীবাণু সংক্রমণের হার নির্ণয়ে প্রফেশনাল পরামর্শ নিন।
- বিড়ালের দাঁত অথবা নখের আঁচড়ে সংক্রামিত হলে উপযুক্ত বিড়ালের চিকিত্সা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি।
বিড়ালের নখের আঁচড়ের ফলে সংক্রমণ রোধে প্রথম সাহায্য ও পেশাদার চিকিত্সকের সাহায্য গ্রহণ করা শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি।
রোগ প্রতিরোধের উপায়
বিড়ালের পোষা প্রাণী হিসেবে রাখাটা কতটা আনন্দদায়ক তা বেশিরভাগ বিড়াল প্রেমীরাই জানেন। তবে, তাদের সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান রাখতে গেলে রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়মিত জোর দিতে হয়। এই সেকশনে আমরা দেখবো যে, বিড়ালের জন্য বিড়ালের টিকা কেন জরুরি এবং কিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা তাদের দীর্ঘায়ু ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে পারে।
বিড়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিড়ালের স্বাস্থ্যের ভালো কর্মক্ষমতা বজায় রাখার অন্যতম উপায়। ভেটেরিনারি চিকিত্�াক বিড়ালের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন দাঁত, চোখ, কান, ও ত্বক পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনীয় টিকাদান করেন। রোগ প্রতিরোধের এই অনুশীলন বিড়ালকে সংক্রমণ, পরজীবী ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করে।
টিকার গুরুত্ব
- বিড়ালের টিকা জীবাণু এবং ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করে তাদের ইমিউন সিস্টেমকে বলিষ্ঠ করে তোলে।
- র্যাবিস, ফভিভি, ক্যালিসি ভাইরাস, এবং হারপি ভাইরাস এর মতো ভয়ানক রোগগুলো থেকে রো� প্রতিরোধে টিকা অত্যন্ত জরুরী।
- টিকা নি�н্যমিত সময়ান্তরে দিয়ে যাওয়া উচিৎ, যা ভেটেরিনারি চিকি�াকের পরামর্শ অনুসারে হয়।
সব মিলিয়ে, আপনার বিড়ালের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিড়ালের টিকা অপরিহার্য। এগুলি আপনার বিড়ালকে দীর্ঘজী�ির জন্য একটি সুখী, স্বাস্থ্যবান জীবন উপহার দিতে সহায়তা করবে।
বিড়াল ও শিশুর সম্পর্ক: সাবধানতা
বিড়াল এবং শিশুদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে গেলে বিভিন্ন ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। শিশু ও বিড়ালের মধ্যেকার সম্পর্কের পরিচিতি বাড়ানোর পাশাপাশি শিশুর নিরাপত্তা এবং বিড়ালের আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শিশুর নিরাপত্তা
শিশুরা প্রায়ই বিড়ালের সাথে খেলতে চায়, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা অপরিহার্য। অভিভাবকদের উচিত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মেনে চলা:
- শিশু ও বিড়াল একসাথে থাকাকালীন তাদের উপর নজর রাখা।
- বিড়ালকে সঠিক ভাবে ট্রিমিং এবং পরিচ্ছন্ন রাখা।
- শিশুর হাতে আঁচড়ানো বা কামড়ানো এড়াতে বিড়ালের নখগুলি নিরাপদ রাখা।
- শিশুকে বিড়ালের মুখ বা লেজের দিকে হাত বাড়ানোর ব্যাপারে সচেতন করা।
বিড়ালদের সাথে শিশুর পরিচিতি
বিড়াল ও শিশুর মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে গেলে পরিচিতি বাড়ানো জরুরি। এর জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে:
- শিশুকে শেখানো যে বিড়ালকে কীভাবে সঠিকভাবে আদর করতে হয় এবং তাদের স্পেস দেওয়া।
- বিড়ালের সাথে প্রথম পরিচিতির সময় শিশুকে নির্দেশ দেওয়া, যেমন ধীরে ধীরে হাত বাড়ানো।
- বিড়ালকে যখন তারা খাবার খাচ্ছে বা ঘুমাচ্ছে তখন না বিরক্ত করার শেখানো।
- শিশুদের শেখানো যে বিড়াল হয়তো সব সময় খেলতে চায় না এবং তাদের সঙ্গে বাধ্য করে খেলা উচিত নয়।
এই ধাপগুলো মেনে চললে শিশু ও বিড়ালের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হতে পারে, যা উভয়ের জন্যই নিরাপদ ও সুখকর হবে।
বিড়ালের নখের আчরার জনপ্রিয় ধারণা
বিড়ালের নখের আচরা অনেক সময় জনপ্রিয় বিশ্বাস এবং দান্ত গল্পের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক মিথ থেকে শুরু করে পৌরাণিক ধারণা পর্যন্ত, বিড়ালের আচরা নিয়ে অনেক রকমের কথা চালু আছে। আজকের এই অধ্যায়ে আমরা এসব ধারণা এবং তাদের পেছনের বাস্তব বিজ্ঞানের সত্যতা নিয়ে আলোচনা করবো।
পৌরাণিক ধারণা
অনেক পৌরাণিক কাহিনীতে বিড়ালের নখের আচরাকে অমঙ্গলজনক বা অশুভ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে, বাস্তবে বিড়ালের নখের আচরা থেকে যে কোনো জনপ্রিয় বিশ্বাসের চেয়ে বেশি হুমকি হল সংক্রামক রোগের। শিশুদের মধ্যে বার্টনেলা হেন্সিলি ব্যাক্টেরিয়ার বহনকারী বিড়ালের নখের আচরার ফলে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই ব্যাক্টেরিয়া প্রায় ৪০% বিড়ালের মধ্যে পাওয়া যায়, যা বিশেষ করে কনিষ্ঠ বিড়ালের মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে।
সামাজিক মিথ
অন্যদিকে, সামাজিক মিথ জনপ্রিয় বিশ্বাস প্রচারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এমন ধারণা রয়েছে যে, বিড়ালের আচরা অপরাধ বা বিপদের পূর্বাভাস দেয়, অথচ এটা কেবল একটা দৈনন্দিন প্রাণীগত আচরণ। বিড়ালের সঙ্গে খেলার সময়ে সম্ভাব্য আচরার ফলে সংক্রামক রোগ বা এলার্জির যে ঝুঁকি আছে তা প্রতিরোধের উপায় হিসেবে, মাঠে মাঠে খেলা এড়িয়ে চলা, সময় মতো টিকাদান, এবং বিড়ালের নখ যত্ন ও পরিষ্কার রাখা অন্তর্ভুক্ত।