প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর মাসিক বন্ধ হয়?
মাসিক সাইকেলের প্রত্যেক ধাপ একেক নারীর জন্য একেক রকম হয়। তবে সাধারণত, ২৮ দিনের একটি চক্রের মধ্যে ১৫তম দিনে ওভিউলেশন দেখা যায় এবং এই সময়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর গর্ভধারণের পর মাসিক পরিবর্তন মনে হতে শুরু করে। একই সাথে শরীরে এইচসিজি (hCG) হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা গর্ভাবস্থা নির্ধারণের জন্য প্রথম ধাপ হিসেবে গণনা করা হয়।
গর্ভাবস্থা নির্ধারিত হওয়ার প্রাথমিক দিনগুলোতে অনেক নারী ক্লান্তিভাব অনুভব করেন, যা প্রোজেস্টেরন হর্মোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঘটে এবং এটি গর্ভধারণের লক্ষণ হিসেবেও পরিগণিত হয়। মাসিক বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াটি গর্ভধারণের পরে ঘনিষ্ঠ ভাবে অনুসরণ করা জরুরি, কেননা এটি গর্ভাবস্থার দীর্ঘতর সময়সীমা ও অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনগুলোর পরিচায়ক।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়
গর্ভাবস্থার প্রারম্ভিক পর্যায়ে নারীর শরীরে অনেক ধরণের পরিবর্তন দেখা দেয়, যা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা যায় মাসিক বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে। এই পর্যায়ে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায় যা গর্ভাবস্থার শুরুর লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গর্ভধারণের পর পরিবর্তন
গর্ভধারণের পরে শরীরিক পরিবর্তন অনেক বিস্তৃত ও জটিল। প্রথম কয়েক সপ্তাহে, অনেক নারী অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন, এমনকি মাসিক বন্ধ না হলেও। স্তনে BOLD, ফুলে যাওয়া বা ভারী অনুভূতি প্রায় 50% নারী অনুভব করেন প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে।
- গর্ভধারণের 20 দিন পর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে।
- হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মেজাজ পরিবর্তন এবং মাথা ঘোরা সাধারণ হয়ে ওঠে।
- অনেক নারী অভ্যাসগত খাবারের রুচি পরিবর্তন করে, কিছু খাবারের প্রতি অনিচ্ছা দেখায় বা বিশেষ খাবারের প্রতি ঝোঁক দেখায়।
মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ
মাসিক বন্ধের লক্ষণ হল গর্ভাবস্থা চিহ্নিতকরণের সবচেয়ে চিহ্নিত লক্ষণ। যদিও মাসিক বন্ধ হওয়া একটি স্পষ্ট সংকেত, তবুও অনেক সময় হালকা স্পটিং হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক সময়ের সাধারণ ঘটনা। গর্ভাবস্থা চিহ্নিতকরণ আরও নিশ্চিত করতে যে কোন সন্দেহ থাকলে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা উচিত।
- পরিবর্তিত খাদ্য অভ্যাস ও যে কোনও সময়ে ভিন্নরকম খাবারের প্রতি চাহিদা.
- ওভুলেশন প্রক্রিয়ার পর রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে বেশি পরিমাণে প্রস্রাব হতে পারে।
গর্ভধারণের সময়সীমা
গর্ভধারণের সময়কাল অত্যন্ত জটিল ও চমৎকার এক প্রক্রিয়া, যা মাসিক চক্র ও নিষেক সময়ের উপর নির্ভর করে। নিষেকের পরে, গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ হিসেবে মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত মাসিকের প্রথম দিন থেকে গণনা করে প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
চক্রের পরিবর্তন
নিষেকের পরে মাসিক চক্রর পালাবদল ঘটে, যা গর্ভাবস্থার পর্যায়ের সময়কালের প্রারম্ভের একটি ইঙ্গিত। সাধারণ মাসিক চক্রের প্রবাহিত টাইমলাইনে পরিবর্তন ঘটে। এই পর্যায়ে, যমজ সন্তান বা সাধারণ গর্ভধারণর সন্ধান নেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়
গর্ভাবস্থা মূলত তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত হয়, যাকে গর্ভাবস্থার ত্রিমাসিক বলা হয়। প্রথম ত্রিমাসিকে শারীরিক পরিবর্তনের পরিমাণ সর্বাধিক হয় এবং এটি নিষেকের পরে অত্যন্ত নজরে আসে। দ্বিতীয় ত্রিমাসিকে ভ্রূণের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং তৃতীয় ত্রিমাসিকের সময় প্রসবের প্রস্তুতি চলে।
গর্ভাবস্থার রূপরেখা
গর্ভাবস্থা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন একটি মহিলার শরীর ও জীবনে বিবিধ পরিবর্তন ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থা তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত – প্রথম ত্রিমাসিক, মধ্যম পর্যায় এবং শেষ পর্যায় – প্রতিটি পর্যায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আসে।
প্রথম ত্রিমাস্তিক
এই পর্যায়টি সাধারণত গর্ভাবস্থা শুরুর লক্ষ্ণ হিসেবে পরিচিত। মহিলাদের প্রথম ত্রিমাস্তিকে ভ্রূণ বিকাশের জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ভ্রূণের হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং হাড়ের বিকাশ ঘটে। এ সময়ে ত্রিমাসিক পরিবর্তন হিসেবে ঘন ঘন প্রস্রাব, মর্নিং সিকনেস এবং স্তনের পরিবর্তনগুলি দেখা দেয়।
দ্বিতীয় ত্রিমাস্তিক
গর্ভাবস্থা মধ্যম পর্যায়ে প্রবেশ করলে, ভ্রূণের বেড়ে ওঠা আরও স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। ভ্রূণের উপরের অঙ্গ যেমন চোখ, কান, নাক এবং মুখ পরিষ্কারভাবে গঠিত হওয়ায় সন্তানের ভ্রূণের ক্রিয়াকলাপ অনুভূত হয়। এ সময়ের মধ্যে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও তার সূক্ষ্ম গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
তৃতীয় ত্রিমাস্তিক
গর্ভাবস্থা শেষ পর্যায়ে, ভ্রূণের বৃদ্ধি তীব্রতম হয়। এই সময়ে মাতার শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং প্রসের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যায়ে সাধারনত মাতৃদের মধ্যে প্রসবজনিত লক্ষণগুলি যেমন সহজে ক্লান্তি অনুভূত হওয়া, ব্যথা এবং অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়।
গর্ভনিরোধক পদ্ধতি
একটি সুস্থ পরিবার গঠন ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ভনিরোধক পদ্ধতির প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এই পদ্ধতির মধ্যে ওষুধ ব্যবহার ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। এই দুই পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন দিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির উল্লেখ করা হবে।
গর্ভনিরোধক ওষুধ
গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহার জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচলিত ও কার্যকরী উপায়। এর মধ্যে কম্বিনেশন বার্থ কন্ট্রোল পিলস অন্যতম। এই পিলগুলো গ্রহণের পর, অনেক নারীরা ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়। তবে এই পিলগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, স্তনে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক পদ্ধতি
প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধের পদ্ধতি হলো শারীরিক পদ্ধতির ব্যবহার যেমন ঋতুকাল পর্যবেক্ষণ এবং মাসিকের অবস্থা নির্ধারণ। এই প্রকার পদ্ধতি হরমোন ব্যবহার করে না এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কম থাকে। প্রাকৃতিক পদ্ধতি শরীরকে একটি স্বাভাবিক চক্রে ফিরে আসতে সাহায্য করে, যেখানে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয় শারীরিক লক্ষণ ও চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে।
মাসিকের পূর্ববর্তী লক্ষণ
আমাদের শারীরিক ক্রিয়াকান্ডের গতিবিধিতে বহু সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসে, যা প্রায়ই অনুভবের বাইরে থাকে। বিশেষ করে নারীদের মাসিক চক্রের প্রাক্কালে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ নিয়ে আসে প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম (PMS), যা তাদের চলাফেরা ও মানসিক স্থিতির উপর প্রভাব ফেলে। জানা যায়, PMS’র উপসর্গ সাধারণত মাসিকের প্রায় ৫ দিন আগে শুরু হয়ে চক্রের এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রার বৃদ্ধি পেলে, অর্থাৎ চক্রের প্রায় ৪ দিন পরে উপসর্গগুলো কমে যায়।
PMS এবং গর্ভাবস্থা
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম এবং গর্ভাবস্থা উভয়ের লক্ষণগুলি একটু একই রকম দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থার লক্ষণ হিসাবে ঘন ঘন ঘনঘনা, ব্রেস্ট পরিবর্তন, অস্বস্তি, এবং মেজাজের ওঠানামা সহ নানা প্রকারের PMS উপসর্গ হতে পারে। প্রায় ১৫-২৫% গর্ভধারণকারী ব্যাক্তি প্রথম ত্রৈমাসিকে হালকা রক্তক্ষরণ বা স্পটিং লক্ষ্য করে থাকেন, যা নিষেচনের ১-২ সপ্তাহ পরে ঘটতে পারে। হরমোনের কারণে ব্রেস্ট পরিবর্তন এবং স্তনে ব্যথা PMS এবং গর্ভাবস্থাতেও হতে পারে।
অনির্ণায়ক লক্ষণাবলী
যখন শরীরে এই ধরণের লক্ষণগুলি দেখা দেয়, তখন অনেকে হয়তো গর্ভাবস্থার উপসর্গ ভাবতে পারেন, তবে এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসর্ডার (PMDD) হল প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোমের এক গুরুতর রূপ, যার লক্ষণগুলি PMS এর মতো হলেও অনেক তীব্র। এর মধ্যে রয়েছে ইরিটেবিলিটি, উদ্বেগ এবং মেজাজের পরিবর্তন। যদি আপনার প্রতি মাসের চক্রের পরিপ্রেক্ষিতে মারাত্মক PMS এর লক্ষণাবলী দেখা দেয়, অথবা নির্দিষ্ট কোন উপসর্গ বিনা মেনষ্ট্র্যুয়েশনে পরিবর্তন ঘটে, তাহলে স্বাস্থ্য পেশাদার সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করা উচিত।