মাম্পস কেন হয়?

মাম্পস, ভাইরাসজনিত রোগ হিসেবে পরিচিত, মূলত সংক্রামক হলেও এর প্রাদুর্ভাব অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য। ভারতের একাধিক রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মাম্পসের কারণে বিপর্যস্ত অবস্থা চোখে পড়ছে, যেখানে 2024 সালের মার্চ পর্যন্ত 15,637 টি কেস রিপোর্ট হয়েছে। এই ঘটনা অবগত করেছে যে মাম্পসের কারণে জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড উদ্বেগ এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে।

মাম্পস রোগের লক্ষণসমূহের মধ্যে প্রধান হল কানের নিকটবর্তী প্যারোটিড গ্রন্থির ফুলে যাওয়া, যা ৬০%-৭০% ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ ছাড়াও, বিশেষত বড়সন্ধি পার হওয়া পুরুষদের ৩০% মাম্পস হলে অর্কাইটিস হবার সম্ভাবনা থাকে। সম্যক ভ্যাকসিনেশন মাম্পসের প্রাদুর্ভাব রোধে জরুরী এক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয় এবং তা বিশ্বব্যাপী আস্থায় লব্ধ, যার তথ্য উইকিমিডিয়া কমন্স, NHS.uk, WHO.int, এবং CDC.gov এ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

মাম্পসের সংজ্ঞা এবং প্রভাব

মাম্পস একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা মূলত প্যারোটিড গ্রন্থিগুলিকে প্রভাবিত করে এবং কানের নীচে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই রোগটি সংক্রামক এবং মূলত কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায়।

মাম্পস কি?

মাম্পস হলো এক ধরনের ভাইরাস, যা বেশিরভাগ সময় মাম্পসের উপসর্গ হিসেবে চোয়ালের ফুলে যাওয়া, মুখের ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, মাংসপেশীর এবং গাঁটের ব্যথা, শুকনো মুখ, কম খিদে এবং জ্বরের সাথে প্রকাশ পায়।

মাম্পসের লক্ষণগুলি

  • প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহ এবং ফুলে ওঠা।
  • টেস্টিকুলারে ব্যথা, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে।
  • উচ্চ তাপমাত্রা এবং খিদে কমে যাওয়া।
  • সাধারণ বিরক্তিভাব এবং ক্লান্তি।

মাম্পসের কারণে শরীরের পরিবর্তন

মাম্পস সংক্রমণ শরীরে নানা দিক থেকে প্রভাব ফেলে। মেনিনজাইটিস এবং প্যারোটিটাইটিস এর মতো গুরুতর জটিলতাগুলি ছাড়াও, এটি শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ এবং দেহের অন্যান্য গ্রন্থিগুলির প্রদাহের কারণ হতে পারে। একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ফলাফল হলো শ্রবণশক্তি হ্রাস, যা কানে প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে।

  1. প্রদাহ হ্রাস পেতে ওষুধ ও বিশ্রামের গুরুত্ব।
  2. ব্যথা নিরাময়ের জন্য সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ।
  3. ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা।
আরও পড়ুনঃ  ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি?

উপরোক্ত তথ্যাবলী থেকে বোঝা যায়, মাম্পসের উপসর্গ এবং প্রভাব ব্যাপক এবং এর গুরুতর প্রকোপ এড়াতে সময়মত নির্ণয় এবং চিকিৎসা জরুরি।

মাম্পসের মূল কারণ

মাম্পস একটি সংক্রামক ভাইরাস ইনফেকশন যা প্যারামাইক্সোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত। এই ভাইরাসের অন্যতম চিহ্নিত কারণ হল এর বায়ুবাহিত বিস্তার, যা মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি অথবা কথা বলার সময় এর ভাইরাসযুক্ত শ্বাসগ্রহণের ফোঁটা মাধ্যমে ছড়ায়।

ভাইরাসের প্রকারভেদ

মাম্পস ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হল মাম্পস অর্থোরুবুলাভাইরাস, যা অর্থোরুবুলাভাইরাস গণের একটি প্রজাতি। এর জিনোম একক-সুতার রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) নিয়ে গঠিত, যার দৈর্ঘ্য ১৫,৩৮৪ নিউক্লিওটাইড পর্যন্ত হতে পারে। এই ভাইরাসের স্থায়িত্ব ও সংক্রামকতা একে অন্যান্য সাধারণ ভাইরাস থেকে আলাদা করে।

সংক্রামকতা এবং সংক্রমণ

মাম্পস ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক, যা মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়ে। বায়ুবাহিত এই ভাইরাস মানুষের খোলা মুখের মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়া পদার্থের সাহায্যে একজন থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হয়। এই ছাড়াও, সংকুচিত পরিবেশে ভিড় এবং খারাপ বায়ু প্রবাহের স্থানগুলো এই ভাইরাসের বিস্তারে একটি বড় ভূমিকা রাখে। তাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করা সম্ভব।

কীভাবে মাম্পস ছড়ায়?

মাম্পসের সংক্রমণ বিশ্লেষণে জড়িত দুই প্রধান পদ্ধতি হলো শারীরিক যোগাযোগ এবং বায়ুবাহিত ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণ। এই ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে অন্য কাউকে সহজে ছড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন সংক্রমণের উপসর্গ যেমন হাঁচি বা কাশি দেখা দেয়।

শারীরিক যোগাযোগ

মাম্পস সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক স্পর্শ ঘটলে সহজেই ভাইরাল সংক্রমণ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে যখন সংক্রামিত ব্যক্তির লালারস অন্য কারো সাথে সংস্পর্শ হয়, তখন এই সংক্রমণ আরো দ্রুত ছড়ায়।

বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণ

বায়ুবাহিত ভাইরাস হিসাবে পরিচিত, মাম্পস বিশেষ করে সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির ফোঁটা মাধ্যমে আশেপাশের লোকদের মধ্যে দ্রুত ছড়াতে পারে। এমনকি এই ভাইরাস বাতাসে কিছুক্ষণ ভাসমান থাকতে সক্ষম, যা সংক্রামিত এলাকায় অন্যদের মধ্যে সহজে সংক্রমণ ঘটায়।

সচেতনতা এবং যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিলে এই ধরণের ভাইরাল সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব। মাম্পস থেকে বাঁচতে এবং সংক্রমণ হ্রাস করতে উচিত প্রতিষেধক গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর আচরণ অবলম্বন করা।

আরও পড়ুনঃ  বাইপোলার ডিসঅর্ডার কেন হয়? - কারণ ও তথ্য

মাম্পসের ঝুঁকির উপাদানগুলি

মাম্পস এক প্রকারের ভাইরাসজনিত রোগ যার প্রাদুর্ভাব এবং তীব্রতা বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। একটি ব্যক্তির বয়স, যথাযথ মাম্পস টিকা প্রাপ্তি এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই রোগের প্রকোপের মাত্রা নির্ধারণ করে।

বয়সের প্রভাব

মাম্পস সাধারণত ২ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের টিকা না পাওয়ার কারণে দেখা দেয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা এই রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্ক মাম্পস প্রায় কম দেখা যায়, তবে যদি টিকা না নেওয়া হয় তাহলে তাতে ঝুঁকি বাড়ে।

ভ্যাকসিনের গুরুত্ব

মাম্পস প্রতিরোধের প্রধান এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মাম্পস টিকা প্রাপ্তি। মাম্পস এমন একটি রোগ যা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে অবদান রাখতে পারে, সেহেতু সময়মতো টিকাকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। MMR (মাম্পস, মরবিলি এবং রুবেলা) টিকা কিছু কঠোর অান্তঃসুষ্ঠু পরিস্থিতির মধ্যেও রোগীর জন্য সুরক্ষামুলক পরিবেশ সৃষ্টি করে।

  • প্রথম ডোজ সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে দেওয়া হয়।
  • দ্বিতীয় ডোজ ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে দেওয়া উচিত।

এর ফলে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের উভয়কে এই ভাইরাস থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা প্রদান করা হয়, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মাম্পস আক্রান্ত হলে কি করবেন?

মাম্পস একটি সংক্রামক ভাইরাল রোগ যা মূলত শিশুদের মধ্যে দেখা দেয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে চোয়াল, গলা ও কানের আশেপাশে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া দেখা দেয়। এই উপসর্গগুলি দেখা দিলে অবিলম্বে মেডিকাল পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসার প্রাথমিক পদক্ষেপ

মাম্পসের নির্ণয় হয়ে গেলে, ডাক্তাররা সাধারণত রক্তপরীক্ষা, মুখের লালা পরীক্ষা এবং কখনো কখনো প্রস্রাব পরীক্ষা দ্বারা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করেন। ভাইরাল রোগ হওয়ায় এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা কার্যকর নয়, বরং আরাম এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দিয়ে উপসর্গ নিরাময়ের দিকে মনোনিবেশ করা হয়।

ডাক্তারের পরামর্শ

মাম্পসের সন্ধান পেলে যত্নসহকারে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। ডাক্তার সাধারণত যে সব উপদেশ দেন, তার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইবুপ্রোফেনের ব্যবহার, এবং ফুলে যাওয়া কমানোর জন্য উষ্ণ বা ঠান্ডা কমপ্রেসের পরামর্শ। পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শও দেন তিনি। সবরকম পরামর্শ ঠিকমতো মেনে চললে, মাম্পস আক্রান্ত রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ  ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ - জানুন সতর্কতার উপায়

মাম্পস প্রতিরোধের উপায়

মাম্পস, একটি সংক্রামক ভাইরাল রোগ, যা বিশেষ করে শিশু ও যুবকদের মধ্যে দেখা দেয়। এই রোগের প্রকোপ রোধ করা সম্ভব কিছু প্রতিষেধক ও স্বাস্থ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে। ভ্যাকসিনেশন ও গণ স্বাস্থ্য পদ্ধতি অনুসরণ করে এই রোগ থেকে নিজেকে ও অন্যান্যদের সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

ভ্যাকসিন প্রাপ্তি

ভ্যাকসিনেশন মাম্পস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। এটি নির্দিষ্ট সময়ে দুই ডোজে প্রয়োগের মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গঠন করে। এই প্রতিষেধক প্রাপ্তির মাধ্যমে মাম্পসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

স্বাস্থ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও মাম্পস প্রতিরোধের জন্য কিছু বিশেষ উপায় রয়েছে:

  • নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশন অবলম্বন করা।
  • সংক্রামিত ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়ানো।
  • প্রচুর পরিমাণে জল পান করা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
  • ভিড়ের মধ্যে থাকার সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখা।

এই পদ্ধতিগুলি মেনে চলা নিশ্চিত করে যে মাম্পস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে এবং স্বাস্থ্য রক্ষা পায়।

মাম্পসের চিকিৎসা পদ্ধতি

মাম্পস একটি প্রায়শই উপেক্ষিত কিন্তু মারাত্মক হতে পারে এমন একটি ভাইরাল রোগ। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাম্পস কেস উপসর্গহীন হয়, তবে উপসর্গ বের হয়ে গেলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ধরা পড়ে। আর যদিও মাম্পস থেকে জটিলতা যেমন ক্ষণস্থায়ী বধিরতা ঘটে খুবই দুর্লভ, তারপরও কিশোর এবং পুরুষদের ২০% পর্যন্ত মাম্পসের কারণে অন্ডকোষে প্রদাহ ঘটতে পারে।

অ্যান্টিভাইরাস থেরাপি

মাম্পসের জন্য স্থির অ্যান্টিভাইরাস থেরাপির কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বর্তমানে নেই। তবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় প্রাদুর্ভাব ব্যবস্থাপনা এবং উপসর্গগুলির লাঘবে বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে। ফসফরাস, বেলাডোনা, কালি ফস, পালসাটিলা এই সব ঔষধ বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ও রোগের জন্য সাহায্য করে। তাপ সম্পর্কিত এই সব ঔষধগুলো শরীরের ডান অথবা বাম পাশ অনুযায়ী আরও কার্যকর হতে পারে।

মাম্পস প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিনের গুরুত্ব অনিন্দ্য। ১২-১৫ মাস এবং ৪-৬ বছর বয়সে সাধারণত এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। যারা ১৯৫৬ সালের পরে জন্মেছেন এবং প্রথম জন্মদিনের পর টিকাদান অথবা ইমিউনাইজড হননি তাদের জন্য মাম্পসের ঝুঁকি বেশি। সুস্থতামূলক পদক্ষেপ এবং ভাল অভ্যাস সহ সঠিক ভ্যাকসিনের প্রয়োগ মাম্পসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button