গলায় কিছু আটকে আছে মনে হয় কেন
গলায় অস্বস্তি বা গলায় আটকানো এমন এক সমস্যা যা প্রায়ই বিভিন্ন মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। ডা. মাহামুদুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, গলার নানান সমস্যা, যেমন খাদ্যগ্রহণের সময় মাছের কাঁটা বা মাংসের ছোট হাড় আটকে যাওয়া থেকে শুরু করে আরও গুরুতর অবস্থা যেমন খাদ্যনালী ডিসফ্যাজিয়া পর্যন্ত, গলায় অস্বস্তিকর অনুভূতির কারণ হতে পারে।
পুষ্টিবিদ এবং নিউট্রাসি লাইফস্টাইলের সিইও ডা. রোহিনী পাটিল সুপারিশ করেন, হলুদ যুক্ত উষ্ণ পানীয় গ্রহণ করা। এই ধরনের পানীয় প্রদাহ কমাতে এবং অনাক্রম্যতা বাড়াতে সহায্য করে, যা গলায় আটকানো সমস্যার প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, শিশুদের মধ্যে ডিসফ্যাগিয়া সমস্যা বিশেষভাবে সাধারণ, তাই অবশ্যই যথাযথ জলযত্ন এবং পুষ্টিকর উপাদান বিবেচনায় নিয়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিচালনা করা উচিত।
গলা আটকে থাকার অনুভূতি: পরিচিতি
গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি অনেক সময়েই অস্বাভাবিক এবং বিরক্তিকর। এই সমস্যা সাধারণত গলায় ব্যথা এবং গলার অস্বস্তির উপসর্গ থেকে শুরু হয় যা এসোফ্যাগাস পর্যন্ত ছড়াতে পারে। চাপ, পরিবেশগত উদ্বেগ, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও এর প্রভাব পড়ে।
সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ
গলায় অস্বস্তি অনুভূত হলে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
- গলায় ব্যথা এবং টান অনুভূত হওয়া।
- খাবার গিলতে অসুবিধা এবং বুকে চাপ অনুভূত হওয়া।
- উদ্বেগ বা চাপ থাকলে উপসর্গগুলো আরও প্রকট হতে পারে।
- স্থায়ী কাশি বা শ্লেষ্মা জমা, বিশেষত সকালে।
শারীরিক ও মানসিক প্রভাব
এই ধরনের গলার সমস্যা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক উপলব্ধিতেও প্রভাব ফেলে:
- অতিরিক্ত চিন্তা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পায় যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- সামাজিক অবস্থান এবং কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে, কারণ ব্যক্তি ধারাবাহিক কষ্ট অনুভব করে।
- রোগীদের সাধারণত এক ধরনের অনিশ্চয়তা বোধ হয়, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রভাব ফেলে।
এসব লক্ষণ যখন প্রকাশ পায়, অবিলম্বে চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়া উচিত। শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের চিকিএসা পদক্ষেপ গুলি একটি সংহত এবং সুনির্দিষ্ট উপশম প্রদান করতে পারে।
গলা আটকে থাকার কারণ
গলায় খাদ্যদ্রব্য আটকানো একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন শারীরিক এবং অ্যালার্জিক কারণে ঘটতে পারে। বিশেষ করে এসোফ্যাগাস রোগ এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার এর প্রভাব এই ধরনের সমস্যায় প্রধান। নিচের বিভাগগুলিতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল:
খাদ্যদ্রব্যের কারণে
খাদ্যদ্রব্যের অসাবধানতাবশত গ্রাস করার সময় গলায় আটকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। মাছের কাঁটা, মাংসের খণ্ড হাড় বা খাদ্যদ্রব্যের বড় টুকরো গলায় ফাঁস হলে শ্বাস প্রশ্বাসে গলায় শারীরিক বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে
এসোফ্যাগাস রোগ যেমন অস্বাভাবিক টান বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রেফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এবং গলার ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার খাদ্যনালির মাধ্যমে খাদ্য প্রবাহে বাধা দেয়। এসোফ্যাগাসের যেকোনো সমস্যা গ্রাসকালীন সময়ে জটিলতা সৃষ্টি করে।
অ্যালার্জি অথবা সাইনুসের কারণে
অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন এবং সাইনুসের প্রভাব নাক এবং গলার টিস্যু ফুলিয়ে দেয় যা খাদ্যগ্রহণের সময় গলায় শারীরিক বাধা সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে অ্যালার্জি বা সাইনাসাইটিসের কারণে মিউকাসের অতিরিক্ত সৃষ্টি হয়, যা খাবার গিলতে গিয়ে অস্বস্তি জাগাতে পারে।
গলার অস্বস্তিভাব কি?
গলায় অস্বস্তির কারণ হতে পারে বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এই অস্বস্তি প্রধানত গলার খিচুনি, গলায় পিওননেসা, বা গলার ম্যাসমাস থেকে উদ্ভূত হয়।
গলার টান বা খিচুনি
গলার খিচুনি সাধারণত গলার পেশীগুলির অস্বাভাবিক টান পড়ার ফলে ঘটে। এটি ক্রনিক অ্যাসিডিটি, অত্যধিক রিফ্লাক্স, এসোফ্যাগাল ডিসঅর্ডার বা গলায় পিওননেসা কারণে হতে পারে।
কফ বা শ্লেষ্মা জমে থাকা
সাধারণত, কফ বা শ্লেষ্মা একটি স্বাভাবিক রক্ষণশীল পদ্ধতি যা বিদেহী পদার্থ এবং রোগজীবাণু প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে, যখন এটি অতিরিক্ত পরিমাণে জমে, তখন এটি পিওননেসা বা গলার জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষ করে ব্যক্তিগত পৌচ অবস্থা যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা সাইনাসাইটিস থেকে উদ্ভূত হতে পারে।
সব মিলিয়ে, গলার অস্বস্তি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর সাথে ব্যথা, জ্বালা, অথবা অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে এটি গভীরতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
গলায় কিছু আটকে যাওয়া অনেক সময় মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে গণ্য হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি খাবার কিংবা অন্য কোনো বস্তুর কারণে হয়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা প্রাপ্তির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রাথমিক ব্যবস্থা
যদি কেউ গলায় কিছু আটকে থাকার সমস্যায় ভুগছেন এবং তা চাপা পরিস্থিতি তৈরি করছে, তা হলে প্রাথমিকভাবে Heimlich maneuver প্রয়োগের মাধ্যমে আটকে পড়া খাবার বা অন্যান্য বস্তু মুক্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে, এটি নিরাপদ অভ্যাসের মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত যাতে কোনো ধরণের অবাঞ্ছিত সমস্যা না হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি প্রাথমিক ব্যবস্থা কাজে আসে না, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। চিকিৎসক উচিত পরীক্ষা এবং নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও মেডিকেল উপদেশ মেনে চলাও অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করবে এবং পুনরায় এ ধরণের সমস্যা প্রতিরোধ করবে।
বাড়িতে করা কিছু হোম রেমেডি
গলায় অস্বস্তি অনুভূতি হলে, নিজ গৃহে কিছু সাধারণ কিন্তু কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা মাধ্যমে তা প্রশমন করা সম্ভব। এই চিকিৎসাগুলো শুধুমাত্র আরাম দেয় না, গলার যত্ন নেয়ার একটি উপায় হিসেবেও কার্যকরী। এই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো আপনি নিজের বাসায় সহজেই প্রস্তুত ও প্রয়োগ করতে পারেন।
গরম পানির দিয়ে কুলি
গলায় অস্বস্তি উপশমে গরম পানির কুলি একটি প্রচীন এবং সর্বজনীন পদ্ধতি। কুলি করার সময় হালকা গরম পানির সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি গলার মধ্যে দ্রুত অন্তঃস্রাবজনিত সংক্রমণ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া চিকিৎসার আরো কিছু পদ্ধতি
মধু ও আদা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া, বিশেষ করে আদা চা তৈরি করে পান করলে, গলার ব্যথা ও ফুলে যাওয়া উপশমিত হয়। পাশাপাশি, ভাপ নিলেও গলার যত্ন অনেক ভালো হয়। গলার বিভিন্ন অংশে ভাপ পৌঁছে গেলে শ্লেষ্মা নরম হয়ে গলে যায় এবং গলায় আরাম পাওয়া যায়। এই উপায়ে ঘরোয়া চিকিৎসা অতি সহজেই গলার যত্নে সাহায্য করে।