গলার পাশে গুটি: কারণ ও প্রতিকার
গলার পাশে বা ঘাড়ে গুটি অনুভূত হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা নানা কারণে উৎপন্ন হয়। শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা গেলেও, বয়স্কদেরও এটি স্পর্শ করে। এর কারণ হতে পারে ফ্যারিঞ্জাইটিস, থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন সমস্যা বা গলগণ্ডের প্রদাহ। গলার ব্যথা এবং গলায় গুটির অনুভূতি সামান্য শারীরিক অসুবিধা থেকে শুরু করে গম্ভীর রোগের লক্ষণ হতে পারে।
আবার, এমনও হতে পারে যে, গলার পাশের গুটি নিছক অপুষ্টি বা হালকা ইনফেকশনের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। কিন্তু একই উপসর্গ যদি দীর্ঘস্থায়ী থাকে এবং এর সাথে বেদনার সঙ্গে সঙ্গে গলার প্রদাহও থাকে, তাহলে এটি গলার গাটির আলামত হিসেবে গুরুতর কারণ হতে পারে। এই কারণে অবহেলা না করে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের দিক-নির্দেশনা প্রয়োজন হতে পারে।
গলার পাশে গাটির পরিচিতি
গলায় গাটির লক্ষণ বা গলার পাশে দৃশ্যমান গুটি, যা প্রায়শই গলায় বেদনা এবং অস্বস্তির সাথে জড়িত। গলার পাশের গুটি সাধারণত নিস্তেজ ও ক্ষুদ্র হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি গলার ইনফেকশন বা গলার পুঁজ হতে পারে, যা মারাত্মকও হতে পারে। এই ধরনের গাটি বিশেষ করে শিশুদের গলায় গুটির আকারে প্রকাশ পায়।
গলার পাশে গুটি কি?
গলার পাশে গুটি মূলত গলা এবং ঘাড়ের পাশের টিস্যুতে এক ধরনের স্ফীতি বা প্রসারণ যা সাধারণত ব্যথাহীন ও ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। তবে, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারনে এই গুটিগুলি বর্ধিত এবং স্থির হয়ে যেতে পারে।
এটি কেন ঘটে?
এই ধরনের গুটি প্রধানত নাক, কান, গলা এবং দাঁতের ইনফেকশন থেকে হতে পারে। এছাড়াও, গলায় ইনফেকশন বা গলার পুঁজ সংক্রমণের ফলেও গলায় গুটি বা গাটি দেখা দিতে পারে।
গলার গাটির সাথে সম্পর্কিত উপসর্গ
- খাদ্য গ্রহণে কষ্ট হওয়া।
- শ্বাস নেওয়া ও গিলতে হলে সমস্যা।
- গলায় বেদনা ও সাধারণ অস্বস্তি।
গলায় দৃশ্যমান গুটি এবং এর সাথে জড়িত উপসর্গগুলি যেকোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চিকিৎসার পূর্বে জানা জরুরী। সময়মতো নির্ণয় এবং চিকিৎসা গলার পাশের গুটি সংক্রান্ত জটিলতাগুলি এড়াতে পারে।
গলার পাশে গুটির প্রধান কারণসমূহ
গলার পাশে গুটির উপস্থিতি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, যার মধ্যে মানসিক চাপ, শারীরিক অসুস্থতা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রধান।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ ও উদ্বেগজনিত গলার গুটি অনেক সময় গলার পাশে ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। উদ্বেগ শারীরিক লক্ষণ হিসেবে গলার পাশে একটা চাপ অনুভব করার মতো অবস্থা তৈরি করে, যা কখনো কখনো গলার ইনফেকশন এবং গলার ঘাড়ে গুটি ফোলার মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে।
শারীরিক অসুস্থতা
থাইরয়েড হরমোন, যেমন থাইরক্সিন এবং ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন এর বিভিন্ন ভারসাম্যহীনতা ও থাইরয়েড বৃদ্ধি যেমন গলগণ্ড (গয়টার), অত্যধিক থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন বা অপ্রতুল উৎপাদন গলার গুটির সাথে যুক্ত হতে পারে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাসমূহ
- ফ্যারিঞ্জাইটিস, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণ যা প্রদাহ ও গলায় পুঁজ সৃষ্টি করে।
- ধূমপান, শুষ্ক বাতাস, তামাক এবং প্রচণ্ড দূষণ যা গলার পাশে ব্যথা ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
- আয়োডিনের অভাবজনিত অসুস্থতা, যা পূর্বে বিশেষ করে বাংলাদেশে গলগণ্ডের একটি বড় কারণ ছিল, তবে বর্তমানে আয়োডিন যুক্ত লবণের ব্যবহারে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত।
এই কারণগুলো গলার পাশে গুটি সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। প্রত্যেক কারণ ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আসে, এবং সম্যক চিকিৎসার মাধ্যমে তার সমাধান সম্ভব।
গলার কাছে গুটি অনুভূতির লক্ষণসমূহ
গলায় গুটি অনুভূতির সাধারণ কিছু লক্ষণ যেমন খাবার গিলতে অসুবিধা, গলায় চাপ অনুভূতি এবং গলায় গাটির সমস্যা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়, যা মারাত্মক হতে পারে।
শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা
গলায় পিণ্ড থাকলে বা টিউমারের কারণে অস্থিতি সৃষ্টি হলে, শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা ঘটতে পারে। এই শ্বাসকষ্ট অনেক সময় শরীর চর্চার সময় বা বিশ্রামের সময় বেশি প্রকট হয়ে উঠতে পারে।
খাবার খাওয়ার সময় সমস্যা
গলার পাশে গাটি বা টিউমার থাকলে খাবার গিলতে অসুবিধা হতে পারে। এর ফলে খাবার খাওয়ার সময় চোঁকা বা গলায় চাপ অনুভূতি হতে পারে, যা খাদ্যগ্রহণে বাধা দেয়।
অন্য লক্ষণসমূহ
- গলার ব্যথা ও কর্কশতা: গলায় গাটির সমস্যা থাকলে গলার ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হতে পারে।
- কাশি ও কণ্ঠনালীর ফোলা: গলার পিণ্ড থাকলে বা গলা মধ্যে কিছু আটকে থাকার অনুভূতির ফলে খুসখুসে কাশি হতে পারে।
- রাতের সময় শ্বাসকষ্ট: শোয়ার সময় শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় যদি গলায় চাপযুক্ত অস্বাভাবিক টিস্যু থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যমান থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে এসকল লক্ষণ উপেক্ষা করা বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
গলার পাশে গুটির চিকিৎসা পদ্ধতি
গলার গুটি অনুভূত হলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হয় যাতে এটি আরও গুরুতর কোনো অসুস্থতা তৈরি না করে। মূলত, চিকিৎসা পদ্ধতি লক্ষণ এবং কারণের উপর নির্ভর করে, যা সাধারণ হতে পারে যেমন ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, বা গুরুতর, যেমন ক্যান্সার বা অটোইমিউন রোগের সংকেত।
প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসায় হোম রেমেডিজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাপ প্রয়োগ করা বা গরম জলে গার্গল করা প্রদাহ ও ব্যথা কমানোতে সাহায্য করে। তবে, লিম্ফ নোড ফুলে গেলে বা গলায় খুব ব্যথা থাকলে, ওষুধের ব্যবহারের পাশাপাশি পেশাদার মেডিকেল পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ডাক্তারের পরামর্শ
অবশ্যই যদি গলার পাশে গুটি চিকিৎসা সাধারণ পদ্ধতিতে কাজ না করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ব্যথা, ফোলার গুরুত্ব এবং অন্যান্য উপসর্গ বিচার করে প্রাথমিক নির্ণয় করবেন এবং প্রয়োজনে বায়োপসি, ইমেজিং টেস্ট এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি সুপারিশ করতে পারেন। গলায় গুটি প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসায় ভিন্নতা থাকে যেমন, ইনফেকশনের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি পর্যন্ত।
স্বাভাবিক উপদানের ব্যবহার
সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি, স্বাভাবিক উপাদানগুলো যেমন আদা, মধু, ও হলুদ ইত্যাদির ব্যবহার গলার পাশে গুটির প্রদাহ ও ব্যথা প্রশমিত করতে পারে। এগুলি অনেক ক্ষেত্রেই হোম রেমেডিজ হিসাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়। তবে, এগুলি কেবল সাময়িক সাহায্যের জন্য এবং যে কোনো নিরাময় পদ্ধতির সাথে সেই সকল উপাদানগুলির সমন্বয় সাধনের আগে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করা উচিত।