আর্থ্রাইটিস কি? লক্ষণ ও প্রতিকার

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে আর্থ্রাইটিস হলো অস্থিসন্ধির এমন এক সমস্যা যা মানুষের জীবনমানে গভীর প্রভাব ফেলে। এর মূল লক্ষণ হিসেবে জয়েন্টে প্রদাহ, ব্যথা, স্থূলতা এবং চলাফেরায় অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়া যেমন মূল্যবান, তেমনি সুষম ডায়েট এবং নিয়মিত মাছ খাওয়া অন্য সুস্থ্য জীবনধারার অংশ।

এই রোগের নির্ণয়ে ও চিকিৎসায় অর্থোস্কপি, সিটি স্ক্যান, এবং এমআরআই রয়েছে যা জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। প্রথম পর্যায়ের প্রতিকার হিসাবে মেডিকেশন, শারীরিক থেরাপি এবং সার্জারি পরিকল্পনা করা হয় যা ব্যথা প্রশমিত করতে এবং জীর্ণতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আর্থ্রাইটিস কি? এর সংজ্ঞা ও প্রকার

আর্থ্রাইটিস মূলত জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথার একটি অবস্থা, যা বিভিন্ন রোগের অন্তর্গত হয়ে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায়। এর প্রধান কিছু প্রকার হলো:

অস্টিওআর্থ্রাইটিস

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বাংলাদেশে খুবই প্রচলিত একটি ধরনের আর্থ্রাইটিস, যা সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে বৃদ্ধি পায়। এটি হাড়ের ক্ষয়প্রাপ্তির কারণে ঘটে, যা জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথাকে ট্রিগার করে। এই রোগের ফলে হাড়ের প্রান্তের বুনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম দ্বারা নিজস্ব টিস্যুগুলির উপর আক্রমণ করে তাদের ক্ষতি করে। এই প্রক্রিয়া জয়েন্টে প্রদাহ এবং ব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ উত্পাদন করে যা শক্ত এবং ফোলাভাব নিয়ে আসে।

গাউট

গাউট একটি কঠিন প্রদাহজনক রোগ, যা শরীরে উরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হয়ে থাকে। উরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জয়েন্টে জমা হয়ে গাউটের প্রদাহ এবং তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। এই ধরনের আর্থ্রাইটিস প্রায়ই হাঁটু, পায়ের পাতা, এবং আঙ্গুলের জয়েন্টগুলিতে দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ  স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়

এই প্রকারগুলি ছাড়াও, আরও অনেক ধরনের আর্থ্রাইটিস রয়েছে যা বিভিন্ন কারণে ও লক্ষণে প্রকাশিত হয়। তবে, উপরোক্ত তিনটি প্রকার বাংলাদেশে বেশি প্রচলিত এবং এর সম্যক জ্ঞান আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে সহায়তা করবে।

আর্থ্রাইটিসের সাধারণ লক্ষণ

আর্থ্রাইটিসের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা রোগীর জীবনযাত্রায় বিশেষ চলাচলে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয়। নিচে আর্থ্রাইটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

ব্যথা ও অস্বস্তি

জয়েন্টে ব্যথা একটি প্রধান আর্থ্ রাইটিস লক্ষণ যা আঘাত পাওয়া জয়েন্টগুলিতে অনুভুত হয়। এই ব্যথা সাধারণত ধীর গতিতে শুরু হয় এবং ক্রমে তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

জয়েন্ট ছিলে জনিত সমস্যা

আর্থ্রাইটিস জয়েন্টের স্থায়িত্ব ও কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, যা চলাচলে প্রবল সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। জয়েন্টে স্থিতিশীলতা কমে যায় এবং সহজেই স্থানান্তর সমস্যা দেখা দেয়।

ইনফ্ল্যামেশন

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জয়েন্টের আশপাশে লালচিটে ভাব এবং স্ফীতি। এই প্রদাহ জয়েন্টকে তাপপ্রবাহিত করে তোলে এবং চাপ প্রয়োগ করা সময়ে ব্যথা বাড়াতে পারে।

সব মিলিয়ে, আর্থ্রাইটিসের এই লক্ষণগুলি নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে, যাতে রোগী একটি ভালো এবং সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারেন। চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত পরামর্শ এবং সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ রোগীকে এই অবস্থার সাথে সমন্বয় করতে সাহায্য করতে পারে।

আর্থ্রাইটিসের কারণ

আর্থ্রাইটিসের উৎপত্তি বহুমুখী এবং জটিল। এটি শারীরিক, পরিবেশগত, জেনেটিক ফ্যাক্টর সহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিম্নে এর প্রধান কারণগুলি আলোচনা করা হল:

জীনগত কারণ

জেনেটিক ফ্যাক্টর আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং জুভেনাইল আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে। পারিবারিক ইতিহাস এই রোগের উন্নতির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

পরিবেশগত সমস্যা

শারীরিক আঘাত এবং ইনফেকশনও আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে। এসব পরিবেশগত ফ্যাক্টর জয়েন্টগুলিতে অস্থায়ী অথবা স্থায়ী ক্ষতি সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে আর্থ্রাইটিসে পরিণত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  চিয়া সিড খেলে কি ওজন বাড়ে?

বয়সের সাথে সম্পর্কিত

বয়স সম্পর্কিত সমস্যা, যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস, বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রায়শই দেখা দেয়। এটি মূলত হাড়ের শেষের তরুণাস্থির ক্ষয় এবং জয়েন্টের মধ্যে ঘর্ষণ বৃদ্ধির ফলে ঘটে। এই প্রকারের আর্থ্রাইটিস বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

চিিকি পদ্ধতি

বাংলাদেশে আর্থ্রাইটিস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ায়, বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এর লক্ষণগুলি মোকাবেলা করা হয়।

ঔষধি চিকিৎসা

আর্থ্রাইটি চিকিৎসার প্রাথমিক লাইন হলো মেডিকেশন, যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োগ করা হয়। এগুলোর মধ্যে নন-স্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs), কর্টিকোস্টেরয়েড, এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে অন্যান্য ঔষধি পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।

শারীরিক থেরাপি

ফিজিকাল থেরাপি আর্থ্রাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জয়েন্ট ও মাংসপেশীগুলিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং সাধারণ চলাচলের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা কমায়। ফিজিকাল থেরাপিস্টরা ব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং শক্তি বৃদ্ধিকারী রুটিন নির্ধারণ করে থাকেন, যা আর্থ্রাইটিসের পেশী ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যকে উন্নতি করে।

জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সার্জারি

যখন আগের উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো আর ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে না, তখন জয়েন্ট রিপল surgery একটি বিকল্প হিসেবে প্রয়োগ করা হয়৤ এই পদ্ধতিটি সাধারণত হাঁটু, নিতম্ব বা হাতের জয়েন্টগুলির ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলি প্রতিস্থাপন করে থাকে। এতে ফলে ব্যথা হ্রাস পাওয়া যায় এবং গতিশীলতা উন্নীত হলেও, এর রেকভারি পিরিয়োড এবং কল্যাণ নিরীক্ষণের প্রয়োজন পড়ে।

এই সব চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক আর্থ্রাইটিস রোগী তাদের দৈনন্দিন কাজ এবং আচরণে উন্নতি লাভ করতে পারেন।

জীবনযাত্র�্�্�্�্ পরি�্�্�্

আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। এই পরিবর্তনগুলো ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এবং জয়েন্ট ফাংশনে উন্নতি আনতে সাহায্য করে। জীবনযাত্রায় সুস্থ্য অভ্যাস রোগীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় অবদান রাখে। সুতরাং, আর্থ্রাইটিসের প্রভাব সামলে উঠতে হলে ব্যক্তিগত কেয়ার এবং পরিচালনার উপায়গুলি জানা এবং মান্য করা অপরিহার্য।

আরও পড়ুনঃ  Pus Cell এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?

খাদ্য ও পুষ্টির বিবেচনা

সুষম খাদ্য এবং সঠিক পুষ্টি সাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলিকে অনেকটাই হ্রাস করতে পারে। আর্থ্রাইটিস জীবনযাত্রায় খাদ্য ও পুষ্টির বিচার সুস্থ্য ওজন ধরে রাখার ডানদিকে এবং ইনফ্লামেশন কমিয়ে সাহায্য করে। যেমন মাছ, বাদাম এবং ফলমূলে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে যা ইনফ্লেমেশন কমাতে উপকারী।

শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস

নিয়মিত ব্যায়াম আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য নিতান্তই আবশ্যক। এটি না কেবল জয়েন্টের আন্দোলন বৃদ্ধি করে, বরং মাংসপেশীর শক্তি বৃদ্ধি এবং স্থিরতা অর্জনে সাহায্য করে। অনেক সময়, যোগ বা জলের ভেতর করা নরম ব্যায়ামগুলি আর্থ্রাইটিস ব্যথা হ্রাস এবং সমস্থিতি উন্নত করায় ফলপ্রসূ হয়।

মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্ক

আর্থ্রাইটিসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সামাজিক জীবন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিঘ্নিত করতে পারে। তাই, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কগুলো আন্তরিক এবং সক্রিয় রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, মেডিটেশন এবং কাউন্সেলিং মানসিক শান্তি এবং স্বাস্থ্যকর প্রতিক্রিয়া তৈরিতে ফলপ্রসূ হতে পারে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button