পরিসংখ্যান কাকে বলে?

রাশিবিজ্ঞান ও গাণিতিক বিজ্ঞানের এক শাখা হিসেবে পরিসংখ্যান সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গেলে বলা যায়, এটি উপাত্ত বিশ্লেষণ, সংগ্রহ, ব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করার একটি পদ্ধতিবিদ্যা। এই বিজ্ঞানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো তথ্য থেকে যথার্থ ও বিচক্ষণতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, এবং মানবিক শাখার উন্নতিতে সাহায্য করা। বাংলাদেশে ‘পরিসংখ্যান’ শব্দের ব্যবহার কাজি মোতাহার হোসেনের অবদান ও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২০১০ সালে স্বীকৃতি পাওয়া ধারণা।

পরিসংখ্যানবিদগণের মাধ্যমে তথ্যের বর্ণনামূলক ও কার্যকরী পরিমাপ যেমন মাধ্য, মধ্যাঞ্চল, প্রকৃতি, বিচ্যুতি, হিস্টোগ্রাম, এবং বাহুচিত্র সহ উপাত্ত বিশ্লেষণের বিভিন্ন শাখা প্রয়োগ হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংখ্যামূলক সূচক, বিশেষ অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট গবেষণা, বিভিন্ন প্রভাব সাপেক্ষে ডাটা অবস্থান, পদ্ধতিবিদ্যায় উপাত্ত সংগ্রহ, তুলনীয়তা এবং সঠিক পূর্বাভাসের গুরুত্ব। এই মুহূর্তে মানব উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণ, জাতীয় পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন, প্রশাসন, সামাজিক গবেষণা, ব্যবসা, অর্থনীতি, আইন প্রয়োগ, এবং অন্য বিজ্ঞানের শাখাগুলিতেও পরিসংখ্যান অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা পালন করছে।

পরিসংখ্যানের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

পরিসংখ্যান হল একটি গণিতভিত্তিক বিজ্ঞান যা উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা এবং উপাত্ত পরিবেশনের সাথে সম্পর্কিত। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল তথ্য পরিসংখ্যানগতভাবে মাপজোক করা এবং ব্যাখ্যা করা। এটি গণণা ও অনুমান নির্ধারণের বিজ্ঞান হিসেবেও পরিচিত।

পরিসংখ্যানের মৌলিক ধারণা

পরিসংখ্যান মূলত তথ্যের একটি গণিতিক পর্যালোচনা যেখানে বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে তা সহজ, বোঝার উপযোগী আকারে পরিবেশন করা হয়। পরিসংখ্যান তার বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে জটিল তথ্যকে সাধারণ ভাষায় উপস্থাপন করে থাকে, যা ব্যবহারিক পরিসংখ্যানের একটি বড় অংশ।

পরিসংখ্যানের ব্যবহার

  • ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: বাজার গবেষণা, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং ক্রেতা আচরণ বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়।
  • শিক্ষা ও গবেষণা: শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ, নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই এবং শিক্ষাগত প্রবণতা নির্ণয়ে পরিসংখ্যানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
  • সামাজিক বিজ্ঞান: সামাজিক ট্রেন্ড, সামাজিক পরিবর্তনের গতিবিধি ও মানব আচরণ পর্যালোচনায় পরিসংখ্যান ব্যবহার হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ  ১ লিটার সমান কত মিলিলিটার?

পরিশেষে, তথ্য বিশ্লেষণপরিসংখ্যান ব্যবহার একসাথে মিলে নানাবিধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ এবং ভবিষ‌্যৎ পূর্বাভাস নির্মাণে অপরিহার্য। এগুলি ব্যাখ্যা এবং দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে।

পরিসংখ্যানের প্রকারভেদ

পরিসংখ্যানের জগতে, নানান ধরনের পদ্ধতি ও তত্ত্বের মাধ্যমে তথ্যের সঙ্গে কাজ করা হয়, যা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত: বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান এবং কার্যকরী পরিসংখ্যান। এই দুই শাখা বিভিন্ন ব্যবহারিক ও গবেষণামূলক ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান

বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান প্রধানত ডেটা সংগ্রহ, বিন্যাস, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনে মনোনিবেশ করে। এর মাধ্যমে তথ্যগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে করে তথ্যসমূহ সহজলভ্য এবং বোধগম্য হয়। বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান ডেটাগুলোর মৌলিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এবং সাংখ্যিক বিশ্লেষণ দ্বারা তথ্যের একটি সারসংক্ষেপ প্রদান করে।

  • গোণনা ও চিত্রণ: ডেটাগুলোকে চার্ট, গ্রাফ এবং টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা।
  • পরিমাণ নির্ধারণ: মানদণ্ড যেমন গড়, মড, মিডিয়ানের মাধ্যমে ডেটার বিচরণ মূল্যায়ন করা।

কার্যকরী পরিসংখ্যান

অন্যদিকে, কার্যকরী পরিসংখ্যান ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমিকস্তরের তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত ঘটনাবলীর সম্ভাবনা নিরূপণ করে এবং তা অনুসারে সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে। সম্ভাব্যতা তত্ত্ব এর প্রাথমিক ভিত্তি হিসাবে এটি জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পূর্বানুমান নির্ধারণে অপরিহার্য।

  1. হাইপোথিসিস পরীক্ষণ: বিশেষ ধারণাগুলোর সঠিকতা যাচাই করা।
  2. নমুনা পরীক্ষা: বৃহত্তর পপুলেশন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত টানার জন্য নমুনা ডেটার ব্যবহার।

এভাবে, পরিসংখ্যানশাস্ত্রের এই দুই শাখা তথ্যকে বোঝা এবং ব্যবহার করার আমাদের ক্ষমতাকে অনেক বৃদ্ধি করে।

পরিসংখ্যানের প্রধান উপাদান

পরিসংখ্যানের জগতে, তথ্যের সঠিক ব্যবহার ও বিশ্লেষণ অপরিহার্য। সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি এবং ডেটা অ্যানালাইসিস কৌশল ব্যবহার করে আমরা যে কোন গবেষণার মান বৃদ্ধি করতে পারি।

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উপাত্ত সংগ্রহ পরিসংখ্যানের ভিত্তি গড়ে তোলে। সরাসরি সাক্ষাৎকার, সামাজিক সমীক্ষা, এবং পর্যবেক্ষণ হলো প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের কিছু পদ্ধতি। অন্যদিকে, প্রকাশিত গবেষণাপত্র, সরকারি রেকর্ড, এবং অনলাইন ডাটাবেস হতে মাধ্যমিক উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ট্রান্সক্রিপ্ট মানে কি?

তথ্য বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া

সংগ্রহিত উপাত্ত বিশ্লেষণ করা অবধারিত। ডেটা অ্যানালাইসিস মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সমীক্ষা ও গবেষণা সম্পন্ন হয় যা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নির্ধারণে সাহায্য করে। ভুল তথ্য প্রকাশ প্রতিরোধ করতে সঠিক উপাত্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতি অপরিহার্য।

  1. তথ্য সংগ্রহের মৌলিক দিক: সঠিক উপাত্ত পদ্ধতিতে উপাত্তের গুণগত মান নিশ্চিত হয়।
  2. তথ্যের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ: উপাত্ত বিশ্লেষণ করার সময় তথ্যের মধ্যে থাকা পারস্পরিক সম্পর্ক চিহ্নিত করা যায়।
  3. ভবিষ্যৎ পূর্বানুমান: অতীতের ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ ঘটনার পূর্বানুমনি করা সম্ভব হয়।

সার্বিক ভাবে, উপাত্ত সংগ্রহ ও উপাত্ত বিশ্লেষণ পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের প্রধান উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং এগুলো প্রায় সক্

পরিসংখ্যানের ইতিহাস

পরিসংখ্যান গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাচীন পরিসংখ্যান এবং আধুনিক পরিসংখ্যানের উন্নয়নকে উল্লেখ করা যায়। লোকসংখ্যা হিসাব এবং রাজ্যব্যবস্থা পরিচালনার কাজে পরিসংখ্যানের প্রয়োগ প্রাচীন যুগ থেকেই জনপ্রিয় ছিল। নিম্নে প্রাচীন ও আধুনিক পরিসংখ্যানের উন্নয়নকে বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখগুলি তুলে ধরা হলো।

প্রাচীনকালের পরিসংখ্যান

প্রাচীন পরিসংখ্যান এর উদাহরণ হিসাবে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে বাংলায় প্রথম পরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহের উল্লেখ মিলে। বাংলা এবং আসাম প্রদেশের উপর William Wilson Hunter কর্তৃক ১৮৬৩ সালে পরিসংখ্যানগত ডেটা উপস্থাপনা পরিকল্পনা পরিবেশন করা হয়।

আধুনিক পরিসংখ্যানের উন্নয়ন

আধুনিক পরিসংখ্যানের উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখে ডেটা অ্যানালিসিস উন্নয়ন। ১৯৫৬ সালে প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ কর্তৃক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৭৪ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশে চারটি পরিসংখ্যান অফিসের স্থাপন পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ২০২২ সালে সফলভাবে ডিজিটাল জনগণনা চালু করে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার লাভ করে। স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডাটা সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং সঞ্চয়ের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে অবদান রাখছে।

পরিসংখ্যানের যন্ত্রপাতি

আধুনিক পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণে বিভিন্ন পরিসংখ্যান সফটওয়্যার ও বিশ্লেষণ টুলসের ভূমিকা অপরিসীম। এই সরঞ্জামগুলি ডাটা নিরীক্ষণ ও তথ্য পর্যালোচনায় নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে, যা গবেষণা এবং নীতি নির্ধারনে অনন্য সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ  ইংরেজি paragraph (অনুচ্ছেদ) শেখার উপায় – সহজ টিপস

সফটওয়্যার ও টুলস

পরিসংখ্যান সফটওয়্যারবিশ্লেষণ টুলস বিজ্ঞান, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর সহায়তায়, সমীক্ষক ও গবেষকরা বিশাল ডাটাসেট থেকে জটিল পদ্ধতি ও পরিসংখ্যানগত হিসাবনীতির মাধ্যমে যথার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

পরিসংখ্যানগত হিসাব

হিসাব পদ্ধতির মাধ্যমে চালিত, পরিসংখ্যানগত হিসাবনীতি বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক সমস্যা সমাধানে অপরিহার্য। এটি প্রধানত পরিদৃশ্য পরীক্ষা, ট্রেন্ড বিশ্লেষণ, এবং যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নির্ধারনের জন্য অপরিহার্য।

সব মিলিয়ে, এই আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং হিসাব পদ্ধতি দৈনন্দিন গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজে এবং কঠিন ডাটা বিশ্লেষণে সহায়ক হতে থাকে।

পরিসংখ্যানের আইন

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের সূক্ষ্ম প্রয়োগ এবং তার আইনসিদ্ধ ব্যাখ্যাগুলি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক খাতে, বাজার বিশ্লেষণ, গ্রাহক বোঝা, এবং নতুন পণ্য চালু করার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনন্য। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে, রোগের ঝুঁকি নির্ধারণ, ঔষধের কার্যকারিতা মূল্যায়ন, এবং স্বাস্থ্যতথ্যের বিশ্লেষণেও পরিসংখ্যান অপরিহার্য। সরকার ও নীতি নির্ধারণ ক্ষেত্রে জনসংখ্যা, শিক্ষা, এবং অর্থনীতিতে সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণের জন্য পরিসংখ্যানের ব্যবহার সপ্রতিভ।

সেন্ট্রাল লিমিট থিওরেম

পরিসংখ্যানের আইনসমূহের মধ্যে সেন্ট্রাল লিমিট থিওরেম একটি অত্যন্ত মৌলিক ও কার্যকরী নীতি। এই নীতিটি আমাদের বোঝায় যে, যখন স্বাধীন ও অভিজাত র‍্যান্ডম ভেরিয়েবলগুলির যোগফল নির্ধারণ করা হয়, তখন সেই সমষ্টির বিতরণ নরমাল বিতরণে পরিণত হয়, অভিযোজিত নম্বরের সেট যত বড় হবে, তত নিখুঁত নরমাল বিতরণের চিত্র পাওয়া যাবে। এই থিওরেমটি পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত অনেক কৌশলের সাথে সম্পর্কিত, যেমন আনুমানিক পরিসংখ্যান এবং প্রত্যাশা নির্ধারণ।

যে কোন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানকে প্রযুক্তিগতভাবে স্বীকৃতি দেয়া এবং তার ভিত্তিগুলি শিক্ষা দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। আল বোওলে থেকে শুরু করে ওয়েবস্টারের অভিধান পর্যন্ত — পরিসংখ্যানকে নানা ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এটি ডেটা বিশ্লেষণ, সমস্যা সমাধান এবং নির্ভুল প্রেডিক্টস অর্জনে দক্ষতা উন্নতির জন্য ডেটা এনালিস্ট, ডেটা সায়েন্টিস্ট, গবেষক, বা বিজনেস এনালিস্টের মতো পেশাদারিদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button