যৌগিক শব্দ কাকে বলে?

বাংলা ভাষার ব্যাকরণে শব্দ বিন্যাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো যৌগিক শব্দের সংজ্ঞা ও প্রয়োগ। যৌগিক শব্দ বলতে বোঝায় সেই সব শব্দকে যা একাধিক মৌলিক শব্দ বা শব্দাংশের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং যার মাধ্যমে ভাষা পায় তার পূর্ণতা। উদাহরণস্বরূপ, শব্দ ‘গায়ক’ হলো ‘গাই’ (গান করা) এবং ‘ক’ (করে এমন) শব্দাংশ দুটির যৌথ রূপ, যা দেয় নতুন অর্থ এবং মাত্রা। আর ‘কর্তব্য’ শব্দটি উদ্ঘাটন করে আমাদের দায়িত্বের মূল ধারণা।

২০২০ সালে এনসিটিবির প্রকাশিত বইয়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় যৌগিক শব্দ সংজ্ঞা এবং এর বিভিন্ন উদাহরণের প্রতি আমরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছি। এগুলি মাত্রায় এবং ব্যাপ্তিতে বাংলা ভাষায় শব্দ বিন্যাসের প্রভাব রেখাপ্রদান করে। তাই, যৌগিক শব্দের সংজ্ঞা বুঝতে এবং অধ্যয়নে বাংলা ভাষা ব্যাকরণের আলোকিত দিক গুলি আমাদের কাছে অনুধাবন করা সুগম হয়।

ভূমিকা যে কারণে যৌগিক শব্দ গুরুত্বপূর্ণ

বাংলা ভাষায় যৌগিক শব্দের প্রভাব অসামান্য এবং এর ব্যাপকতা এবং গভীরতা বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে ভাষার গঠন ও তার শিক্ষা পদ্ধতির উপর দৃষ্টিপাত করতে হবে। ভাষা শিক্ষা এবং বাংলা গঠন একে অন্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত, এবং যৌগিক শব্দগুলি এই শিক্ষা প্রক্রিয়ার অন্যতম মূল উপাদান।

ভাষার শিক্ষা ও বিকাশে ভূমিকা

ভাষার শিক্ষায় যৌগিক শব্দগুলির প্রভাব অনস্বীকার্য। এই শব্দগুলি শিক্ষার্থীদের অনুমতি দেয় বিভিন্ন ধরনের অর্থ বিস্তারিত ও গভীরভাবে বোঝার জন্য, যা তাদেরকে বাংলা ভাষায় যথার্থ দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে।

  • যৌগিক শব্দগুলির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা শিখে থাকে শব্দগুলির মধ্যে অন্তর্নিহিত গঠন ও তার সাংস্কৃতিক মাত্রা।
  • এই ধরনের শব্দ তৈরি করতে গেলে যে ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন, তা ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল ও বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সাধন করে।
আরও পড়ুনঃ  অংক কাকে বলে?

যোগাযোগের উন্নতি

যৌগিক শব্দের প্রয়োগ কেবল বাংলা গঠনকে শক্তিশালী করে তোলে না, বরং এটি যোগাযোগের মান উন্নত করে। এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে, বক্তা বা লেখক যেমন নির্দিষ্ট ও সূক্ষ্ম অর্থ প্রকাশ করতে পারে তেমনি শ্রোতা বা পাঠকের বোঝার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

  1. গঠনমূলক যোগাযোগ নির্মাণে যৌগিক শব্দগুলির প্রয়োগ, পরিস্থিতি ভেদে অধিক প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর।
  2. গভীর ও সমৃদ্ধ অর্থের মাধ্যমে, এই শব্দগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় শৈক্ষিক, সাহিত্যিক, এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগে।

যৌগিক শব্দের সংজ্ঞা

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ মাত্রায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ, এর মধ্যে যৌগিক শব্দ গুলোর অবদান অনন্য। যৌগিক শব্দ প্রকৃতিগতভাবে দুই বা ততোধিক মৌল শব্দ বা পদাংশের সম্মিলনে গঠিত হয়, যা একটি নির্দিষ্ট এবং স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে। এই শব্দগুলো ভাষার ব্যবহারিক পরিসরে বহুমাত্রিকতা ও নমনীয়তা যোগ করে।

কিভাবে গঠিত হয়

যৌগিক শব্দ বিবেচনা করার জন্য এর গঠনপ্রণালী বুঝা অপরিহার্য। যথা, ‘ঘরদোর’ শব্দটি ‘ঘর’ এবং ‘দোর’ – এই দুই পদ থেকে তৈরি, যার অর্থ ঘর এবং তার আশপাশের এলাকা। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, প্রত্যেক মৌল পদের মানে যৌগিক পদের অর্থ নির্ধারণে সহায়ক হয়।

উদাহরণ এবং প্রয়োগ

  • রাধুনি – যিনি রান্না করেন, এখানে ‘রান্না’ ও ‘করা’ পদ দুটির যোগ হয়ে ‘রাধুনি’।
  • দৌহিত্র – কন্যার পুত্র, ‘দুহিতা’ (কন্যা) এবং ‘পুত্র’ (সন্তান) থেকে তৈরি।
  • চিকামারা – দেওয়ালের লিখন, ‘চিকা’ (লেখা) এবং ‘মারা’ (মারা) থেকে গঠিত।

এই উদাহরণগুলি দেখিয়ে দেয় যে কীভাবে যৌগিক শব্দগুলো বাংলা ভাষার অভিধানে বৈচিত্র্য যোগ করে এবং ভাষাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। এগুলি মানুষের দৈনন্দিন পরিমালে গভীরভাবে আশ্রিত, যা ভাষাকে আরো সামগ্রিক এবং ব্যবহারিক করে।

যৌগিক শব্দের উদাহরণ

দৈনন্দিন জীবনে ও বৈজ্ঞানিক পরিসরে যৌগিক শব্দগুলোর বিচিত্র ব্যবহার আমাদের ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ ও কার্যকরী করে তোলে। এই বিভাগে আমরা কিছু নির্বাচিত যৌগিক শব্দের উদাহরণ তুলে ধরছি যা প্রতিদিনের জীবন এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিসরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ  ১ মিটার সমান কত সেন্টিমিটার?

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত যৌগিক শব্দ

  • চালক – যে কোনো যানবাহন চালানোর জন্য ব্যবহৃত, রাস্তার মাস্টার।
  • মিতালী – গভীর ও আন্তরিক বন্ধুত্ব যা মনের মিলন ঘটায়।

বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত যৌগিক শব্দ

  • মাইক্রোস্কোপ – অতি সূক্ষ্ম কণা বা বস্তু দেখার আধুনিক যন্ত্র, যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অপরিহার্য।
  • টেলিভিশন – দূরবর্তী স্থানের ভিজ্যুয়াল সামগ্রীকে চাক্ষুষ করার মাধ্যম, যা মানবজীবনে বিনোদন ও তথ্য প্রদানের এক অনন্য সাধনা।

প্রতিদিনের যৌগিক শব্দবিজ্ঞান সংক্রান্ত যৌগিক শব্দ ব্যবহার করে আমরা সহজেই জটিল ও বিস্তৃত ধারণাগুলি ব্যক্ত করতে পারি এবং এই যৌগিক শব্দগুলি আমাদের ভাষাকে আরো বিশদ ও সুগঠিত করে তোলে।

যৌগিক শ�

বাংলা ভাষার তিন প্রকার বাক্য গঠনের মধ্যে, যৌগিক বাক্য অন্যতম জটিল এবং বহুমাত্রিক। যৌগিক বাক্যে যেহেতু দুটি বা ততোধিক স্বাধীন উপবাক্য থাকে, এর ফলে একাধিক ধারণা বা ঘটনা একই সংজ্ঞায় সহজে প্রকাশ করা সম্ভব হয়। যেমন, “রাম ও শ্যাম কলকাতা গেল,” “সে বা আমি সেখানে যাব,” “সে দরিদ্র, তবে সৎ”। যৌগিক বাক্যের প্রধান/মুখ্য উপবাক্য, সংযোজক লিঙ্কার/সংযোগী এবং গৌণ উপবাক্য এর মূল্যবান অংশ।

গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে, যদি একটি যৌগিক বিষয়বস্তু “এবং” দ্বারা যুক্ত হয়, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বহুবচন ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, যখন চালিত শব্দ একবচন বা বহুবচন যাই হোক না কেন। অন্যদিকে, “বা” বা “না” দ্বারা যুক্ত দুটি একবচন উপাদানের সাথে একবচন ক্রিয়া যুক্ত করা হয়। এই প্রেক্ষিতে যৌগিক বাক্যের বিবিধ ধরনের সংযোজন এবং ক্রিয়াপদের নিয়মকানুন ভাষার গঠন এবং প্রকাশে প্রভাব ফেলে এবং এর সঠিক ব্যবহার ভাষাকে আরও ধারালো এবং সুন্দর করে তোলে।

যৌগিক বাক্যের গঠন শৈলীর মাধ্যমে ভাষায় বৈচিত্র্য এবং গভীরতা আনা সম্ভব হয়। এঘাটি অনুচ্ছেদে আমরা বাক্য গঠনের যেসব পদ্ধতি এবং নিয়ম আলোচনা করেছি, সেগুলো ভাষা শিক্ষার এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টতা এবং পারদর্শিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমরা যখন সঠিক গঠন এবং যৌগিক বাক্যের নিয়ম মেনে চলি, তখন আমাদের বক্তব্য আরও শক্তিশালী ও বুদ্ধিমানের মতো প্রতিভাত হয়।

আরও পড়ুনঃ  ১ স্কয়ার ফিট কত ইঞ্চি?

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button