সাইবার অপরাধ কি?

বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ২০২৩ সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টের মতে, সাইবার অপরাধ আজকের বিশ্বের জন্য এবং আগামী দশ বছরের জন্য শীর্ষ ১০টি ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম। সাইবার অপরাধ সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি মূলত ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে ঘটে এমন যেকোনো অপরাধকে বোঝায় যা ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক স্তরে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে।

২০২৪ সালে সাইবার অপরাধ বিশ্বব্যাপী ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের বিভাগে হ্যাকিং, ফিশিং, ম্যালওয়ার আক্রমণ, এবং সাইবার বুলিং অন্তর্ভুক্ত, যা বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ কিশোরীরা এবং বিশ্বে প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন সাইবারসেক্স ট্র্যাফিকিং-এর শিকার হয়েছেন যার মধ্যে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন শিশু রয়েছে। এর মাধ্যমে, আমরা এমন একটি সমস্যার রূপরেখা পেতে পারি যা সুগভীরভাবে আমাদের ডিজিটাল জীবন এবং সমাজের ভিত্তিকে প্রভাবিত করে।

Contents show

সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা

সাইবার অপরাধ হচ্ছে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে চালানো বা সংগঠিত কোনো অপরাধাত্মক কার্যক্রম। এই ধরনের অপরাধের পরিমাণ ও প্রকারভেদ গত কয়েক দশকে অভূতপূর্বভাবে বেড়েছে, যা রীতিমতো মানুষের জীবনযাত্রা ও আর্থিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে।

সাইবার অপরাধের ধরন

সাইবার অপরাধ প্রকারভেদ বিস্তৃত এবং নানামুখী। অনলাইন হ্যারাসমেন্ট, সাইবারবুলিং, আইডেন্টিটি থেফট, ডাটা হ্যাকিং এবং ফিশিং এই সব অপরাধের সর্বাধিক পরিচিত রূপগুলো। সামাজিক মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ও মিথ্যা পরিচয়ে জ্বালাতন সম্পর্কিত ঘটনাবলি সাধারণ যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

সাইবার অপরাধের কারণ

সাইবার অপরাধ উৎস হিসেবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য, মানসিক স্থিতির পরিবর্তন এবং আইনি ও নৈতিক নিয়ন্ত্রণের অভাবকে চিহ্নিত করা যায়। অনলাইন পরিবেশে নাগরিকদের আচরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিও এই অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারণ এবং অপ্রতিহত অ্যাক্সেস এসব অপরাধের প্রকারভেদ ও উৎসগুলিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

সাইবার অপরাধের ইতিহাস

সাইবার অপরাধ হলো প্রযুক্তির অপব্যবহার যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করে এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। এর ভেতর নানান ধরনের ক্রিয়াকারক ঘটনাবলী পরিলক্ষিত হয়, যা সময়ের সাথে সাথে আরও জটিল ও সংশ্লিষ্ট হয়ে উঠে।

প্রথম সাইবার অপরাধ কবে ঘটেছিল?

সাইবার অপরাধের প্রথম ঘটনা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করা সহজ নয়। তবে ইতিহাসে প্রথম দিককার ডিজিটাল যুগে, যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি উন্নতির পথে ছিলো, তখনকার অনেক ঘটনাবলির মাঝে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্টের মাধ্যমে এই অপরাধের প্রর্দুর্ভাব শুরু হয়।

প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রভাব

প্রযুক্তির উন্নয়ন সাইবার অপরাধের কার্যকারিতাকে মারাত্মক রূপে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছে। যেমন, ইন্টারনেটের প্রসার হ্যাকিং, ডেটা চুরি এবং অনলাইন প্রতারণা যেমন ফিশিং, অনলাইন ঠকানো ইত্যাদি ঘটনাগুলোকে আরও সহজপ্রাপ্�িত করেছে। এই সব অপরাধের ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং তাদের ব্যবসায়িক সুনাম গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  পেটেন্ট কি? আবিষ্কারের আইনি সুরক্ষা

সাইবার অপরাধের সাধারণ উদাহরণ

সাইবার অপরাধ বিভিন্ন আকার ও প্রকারের হতে পারে, যার মধ্যে হ্যাকিং সমস্যা, ফিশিং আক্রমণ এবং ম্যালওয়ার প্রতিরোধ অন্যতম। এসকল সাইবার আক্রমণের দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী।

হ্যাকিং

হ্যাকিং হল সিস্টেমে অনুমোদনহীন প্রবেশ করা। হ্যাকাররা তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য অন্যের তথ্য হাতিয়ে নেয়। হ্যাকিং সমস্যা মোকাবেলায় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা হয়।

ফিশিং

ফিশিং হল প্রতারণাপূর্ণ ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা। ফিশিং আক্রমণ ঠেকাতে ইমেইল ও লিংক যাচাই-বাছাই এর প্রক্রিয়া জরুরি।

ভাইরাস ও ম্যালওয়ার

ভাইরাস ও ম্যালওয়ার হল ক্ষতিকর সফটওয়ার, যা সিস্টেমে ক্ষতি সাধন করে। এই ধরনের সফটওয়ার থেকে ম্যালওয়ার প্রতিরোধের জন্য রেগুলার সফটওয়ার আপডেট ও অ্যান্টি-ম্যালওয়ার সফটওয়ারের ব্যবহার জনপ্রিয় পদ্ধতি।

সাইবার অপরাধের ক্ষতিকর প্রভাব

সাইবার অপরাধ একটি জটিল ইস্যু যা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তিনটি পর্যায়ে গুরুতর প্রভাব ফেলে। এই অপরাধগুলির সাইবার অপরাধ প্রভাব গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা ক্ষণস্থায়ী হতে পারে না।

ব্যক্তিগত ক্ষতি

ব্যক্তিগণের উপর সাইবার অপরাধের ক্ষতিকর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হানি ঘটে যখন তাদের গোপন তথ্য হ্যাক বা চুরি হয়। এর ফলে তাদের ব্যাঙ্ক হিসেব, অনলাইন প্রোফাইল এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিতে পড়ে।

সামাজিক ক্ষতি

  • সাইবারবুলিং এবং গুজব ছড়ানোর মতো ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
  • মিথ্যা তথ্য প্রচার করে ব্যক্তি ও সংগঠনের সুনামে আঘাত হানা হয়।
  • এটি সমাজের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তা বোধের ক্ষতি সাধন করে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

সাইবার অপরাধ বাণিজ্যিক খাতে গুরুতর অর্থনৈতিক হানি ঘটাতে পারে। অনলাইন ব্যাংকিং, সফটওয়্যার পাইরেসি, এবং ডিজিটাল লেনদেনে অনুপ্রবেশ করে অপরাধীচক্র বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টি করে থাকে।

সামগ্রিকভাবে, সাইবার অপরাধের দ্বারা উল্লেখিত ক্ষতির প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, বরং সমাজ এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও তার গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রেখে যায়।

সাইবার ক্রাইমের আইনগত দিক

সাইবার অপরাধের বিরোধী আইনি ব্যবস্থা বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যেখানে বিভিন্ন আইন দ্বারা সাইবার ক্রাইমের বিভিন্ন ধরণের ঘটনাবলীর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয় সেসব নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই ধরনের অপরাধের শাস্তি এবং প্রতিকারের প্রক্রিয়া আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখার দিকে এক মুখ্য ভূমিকা অবলম্বন করে।

সাইবার অপরাধ বিরোধী আইন কি?

সাইবার নিরাপত্তার আইনগুলি ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত অপরাধগুলিকে লক্ষ্য করে। এই আইনসমূহ হ্যাকিং, ফিশিং, ডিজিটাল ডেটা চুরি, এবং সাইবার বুলিং বিচারের মতো ক্রিয়াকলাপগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাংলাদেশে এই সকল অপরাধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ধারা প্রদান করে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা

সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আইনি ব্যবস্থার প্রয়োগ এবং নজরদারির দায়িত্ব বিশেষত আইন প্রয়োগকারী বিভাগের। এই সংস্থাগুলি অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধ তদন্ত, এবং অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে। অপরাধজনিত ঘটনাগুলির শনাক্তকরণ এবং বিচার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করা এই সংস্থাগুলোর মুখ্য কাজ।

আরও পড়ুনঃ  বৈষম্য বলতে কি বুঝায়?

সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব

এখনকার ডিজিটাল যুগে, প্রতিদিন আমরা যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের সমস্ত তথ্য ও নিজস্ব ডেটা শেয়ার করি, তখন নিরাপত্তা প্রযুক্তি এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।

সাইবার নিরাপত্তা কি?

সাইবার নিরাপত্তা হল তথ্য ও প্রযুক্তির সুরক্ষা প্রক্রিয়া, যা কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং ডেটা কে বিভিন্ন ধরনের সাইবার হামলা, হ্যাকিং, এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এটি নিশ্চিত করে যে ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক তথ্য নিরাপদ ও অক্ষত থাকে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে?

সাইবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা বিভিন্ন পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগত সমাধানের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিসর এবং তথ্যকে সুরক্ষিত করে। এই প্রযুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যান্টি-ভাইরাস ও অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার
  • ফায়ারওয়াল সেটআপ
  • এনক্রিপশন প্রযুক্তি
  • ব্যাক্তিগত ও আর্থিক তথ্যের জন্য বহুল পর্যায়ের প্রমাণীকরণ

নিরাপত্তা প্রযুক্তি সরঞ্জামসমূহ নিয়মিত আপডেট হয় যাতে কোনও নতুন ধরনের হুমকি বা সাইবার আক্রমণ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ব্যক্তিগত ও সংস্থাগত উভয় পর্যায়েই সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি অল্প সময়ের মধ্যেই বিপজ্জনক হামলাগুলোকে চিহ্নিত করে এবং তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়

সাইবার অপরাধ বর্তমান যুগের এক চিন্তাজনক সমস্যা। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা ও সর্বশেষ অ্যান্টিভাইরাস প্রয়োগ অপরিহার্য।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার

পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা এমন এক অনুশীলন যা সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির জন্য ছোট এবং বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও প্রতীক মিলেমিশে থাকা উচিত। এছাড়া, দু’ধাপ নিরাপত্তা প্রক্রিয়া (Two-Factor Authentication) অভ্যাস করা উচিত।

সফটওয়্যার আপডেট রাখা

সব ধরনের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখা জরুরি। নতুন নতুন অ্যান্টিভাইরাস আপডেটের মাধ্যমে কোনো নতুন ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। নামকরা অ্যান্টিভাইরাস যেমন Norton, Kaspersky এবং McAfee নিয়মিত আপডেট রাখলে তথ্য রক্ষায় সহায়ক হয়।

বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধের পরিস্থিতি

বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধ একটি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখাচ্ছে। এটা শুধু আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রাইমের পরিসংখ্যান নয়, বরং যে কোনো ধরণের সাইবার অপরাধ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে বাড়ছে।

সাইবার অপরাধের বৃদ্ধির প্রবণতা

গত কয়েক বছরে সাইবার অপরাধের হার বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একটি অনুমান অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ৬৫% থেকে ৭০% স্কিলড কর্মী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন, যা সাইবার স্লেভারি নামে পরিচিত।

বিভিন্ন দেশের চিত্র

ভিন্ন ভিন্ন দেশে এই অপরাধের ধরণ ও প্রকৃতি বাড়তে থাকে এবং আন্তর্জাতিক ডেটা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৭০৬.১ বিলিয়ন টাকা অবৈধভাবে লন্ডারিং করা হচ্ছে। সাইবার দুর্বৃত্তরা প্রায় ৩.২৫ লক্ষ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করে, যার ফলে বিশাল পরিমাণে অর্থ আত্মসাত হয়েছে।

  • প্রতি বছর ৫ লক্ষ SIM কার্ড এবং ৮০,৮৪৮ IMEI নম্বর ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়েছে।
  • ৩০০০ বেশি URIs এবং ৫৯৫ অ্যাপ্লিকেশন সাইবার অপরাধ দমনের লক্ষ্যে ব্লক করা হয়েছে।

এর ফলে বিশ্বব্যাপী সরকারিক ও বেসরকারি পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তাকে আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

সাইবার অপরাধের কারণে সৃষ্ট সমস্যা

সাইবার অপরাধ আমাদের সমাজে নানা রূপে প্রকাশ পাচ্ছে, যার মধ্যে দুটি প্রধান ইস্যু হলো তথ্য চুরি এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি। এসব সমস্যা শুধু ব্যক্তিগত তথ্যের ক্ষেত্রে নয়, বৃহত্তর সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য হয়।

আরও পড়ুনঃ  ট্রেডমার্ক কি? ব্র্যান্ড সুরক্ষা গাইড

তথ্য চুরির সমস্যা

ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট পর্যায়ে তথ্য চুরি সাইবার অপরাধের এক বড় অংশ। এই চ্যালেঞ্জের কারণে ব্যক্তিগত ডেটা, যেমন নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং আর্থিক তথ্য অনৈতিকভাবে অন্যান্যের হাতে চলে যায়, যা নিজের অজান্তেও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংএ পরিণত হতে পারে।

নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি

সাইবার অপরাধের অপর একটি প্রভাব হলো নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি। যখন ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলি তাদের তথ্যের অসুরক্ষা সম্পর্কে জানতে পারে, তখন তাদের মধ্যে একটি বিশ্বাসের সংকট সৃষ্টি হয়। এর ফলে তারা ডিজিটাল জগতে ট্রানজাকশন করার সময় প্রচুর সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ মুখোমুখি হয়। অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং এর ভয় তাদের ব্যবহারের ধরণে পরিবর্তন আনে এবং অনেক সময় ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে সরে আসতে বাধ্য করে।

এই চ্যালেঞ্জগুলি না কেবল ব্যক্তির জন্য বরং সমগ্র সমাজের জন্য এক বড় সমস্যা। তথ্য নিরাপত্তা এবং বিশ্বাস পুনর্স্থাপনের জন্য সাইবার সিকিউরিটি পদক্ষেপ আরও উন্নত করা প্রয়োজন।

প্রযুক্তি ও সাইবার অপরাধ

আধুনিক যুগে প্রযুক্তির অভিন্নভাবে এগিয়ে চলা এবং সাইবার অপরাধের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল। প্রযুক্তিগত উন্নতি যেমন অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি নতুন নতুন অপরাধের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে অপরাধীরা আরও সূক্ষ্ম ও কার্যকরী হয়ে উঠছে যা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী প্রভাব ফেলছে। এআই সিকিউরিটি সিস্টেমগুলি যেমন অগ্রগতি ঘটাচ্ছে তেমনি অপরাধ প্রতিরোধেও নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। এআই ব্যবহার করে তৈরি অ্যালগোরিদম বিভিন্ন প্যাটার্ন চিনতে ও অস্বাভাবিক আচরণ শনাক্ত করতে সক্ষম, যা প্রায়ই সাইবার হামলার পূর্বাভাস দেয়।

প্রযুক্তির উদ্বোধন ও অপরাধ

এই ডিজিটাল যুগে, প্রযুক্তিগত উন্নতি নিত্যনতুন সাইবার অপরাধের পদ্ধতি তৈরি করেছে। ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার এবং মোবাইল ডিভাইসের বৃহত ব্যবহার, সাইবার অপরাধীদের কর্মকাণ্ডের পরিধি এবং পদ্ধতিগুলিকে বিস্তৃত করে তুলেছে। এর ফলে, প্রযুক্তির যেকোনো উন্নতি সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার তাগিদও অনুভূত হচ্ছে।

ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধের সম্ভাবনা

দ্রুত প্রসারিত হওয়া ডিজিটাল জগতে, সাইবার অপরাধের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে লড়াইও আরো জোরদার হচ্ছে। যেমনটি দেখা যায়, ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত, তারা প্রায়ই সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এই অপরাধসমূহ শুধু তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ভঙ্গ করে না, বরং তাদের মতোপ্রাণ সমাজের অংশ হিসেবে অবদান রাখার সামর্থ্যকেও ক্ষুণ্ন করে।

নতুন প্রযুক্তিগুলির প্রভাব

ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার বিপুল প্রসার, যেখানে প্রতি ১২ সেকেন্ডে নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, একদিকে যেমন যোগাযোগের সুবিধা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে, ফিউচার সাইবার সিকিউরিটিকে জটিল করে তুলেছে। উন্নত প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদের মাধ্যমে সরকার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে।

প্রতিরোধের নতুন উপায়

ফিউচার সাইবার সিকিউরিটির ধারণা ও প্রযুক্তি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অনেক বিপ্লব আনছে। নেটওয়ার্ক এবং গেটওয়ে সেকিউরিটি, অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি, ডাটা লস প্রিভেনশন ইত্যাদি বিভিন্ন লেয়ারের সুরক্ষা ব্যবহার করা হচ্ছে সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষার জন্য। এসবের মাধ্যমে না কেবল সেকিউরিটি প্রক্রিয়া উন্নত হচ্ছে, বরং ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ডাটা, ন্যাশনাল সিকিউরিটি, ডিফেন্স সিস্টেম ও সরকারি এবং বেসরকারি অর্গানাইজেশনের গোপনীয় তথ্য সুরক্ষিত রাখার দিকে নজর দিচ্ছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button