কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

কিডনি ফাংশন ঠিক থাকলে, তা শরীর থেকে বর্জ্য ও তরল সঠিকভাবে নির্গমন করে। যখন কিডনি সমস্যা সৃষ্টি করে এবং কিডনি কার্যকারিতা প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে, শরীর থেকে তরল ও বর্জ্য পদার্থ বের করা অসম্ভব হয়ে পড়ে; সেক্ষেত্রে রেনাল ফেইলিওর মোকাবেলা করতে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে। এই চিকিৎসায়, একটি মেশিন ও বিশেষ ফ্লুইডের সাহায্যে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরলের অপসারণ করা হয়।

যুক্তরাজ্যে প্রায় ২৩,০০০ রোগী প্রতিবছর ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করেন। গবেষণা অনুযায়ী, বাড়িতে ডায়ালাইসিস করা হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের চেয়ে কম খরচসাপেক্ষ। বাড়িতে ডায়ালাইসিসের ফলে যুক্তরাজ্যে রোগীদের সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, কিডনি সমস্যার মাত্রা বা গুরুতরতা অনুযায়ী ডায়ালাইসিসের ধরন ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারিত হয়। তাই নির্দিষ্ট কিডনি কার্যকারিতা স্তরের উপর ভিত্তি করে কখন এবং কি ধরনের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হবে তা জানা জরুরী।

Contents show

কিডনি কি এবং এর কার্যকারিতা কী?

কিডনি মূলত আমাদের শরীরের ছাঁকনির মতো কাজ করে, যা রক্ত থেকে বর্জ্য বিপাক এবং অতিরিক্ত পানি পরিশোধন করে মূত্রের মাধ্যমে বাইরে নিকাশি করে। এই প্রক্রিয়াটি কিডনি ফিল্টারিং নামে পরিচিত যা কিডনি ফাংশনের একটি অপরিহার্য অংশ।

কিডনির সঠিক কাজকর্ম

স্বাস্থ্যকর কিডনি দেহের মেটাবোলিক ওয়েস্ট ও বিভিন্ন টক্সিন ফিল্টার করে ছাঁটাই করে এবং এই বর্জ্য পদার্থগুলি মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়া দেহের ভিতরের পরিবেশকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে এবং অত্যাবশ্যকীয় ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স এবং অ্যাসিড-বেজ ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কিডনির ভূমিকা শরীরে

কিডনির মূল ভূমিকা হল দেহের তরল ও ইলেকট্রোলাইট স্তরগুলি নিয়ন্ত্রণ করা, যা রক্তচাপ, অস্থির ঘনত্ব, এবং হৃদয় ও মাংসপেশী ফাংশনের জন্য জরুরি। এছাড়াও কিডনি বিভিন্ন হরমোন উৎপাদন করে যা রক্তের হিমোগ্লোবিন স্তর এবং অস্থির গঠনে সহায়ক।

কিডনির সমস্যা থেকে কি হয়

কিডনির সমস্যা হলে এর ফ িল্টারিং ক্ষমতা ক্ষুন্ন হয়, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য বিপাক এবং মেটাবোলিক ওয়েস্টের জমা হওয়ার কারণ হতে পারে। এই অবস্থা দেহের বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে, যেমন হৃদয়, ফুসফুস, এবং স্নায়ুব্যবস্থা।

কিডনি সংকট: ব্যাখ্যা

কিডনির কাজ হল রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করা এবং শরীরের তরল সমতা বজায় রাখা। যখন কিডনি এই কাজগুলো করতে ব্যর্থ হয়, তখন কিডনি সংকট বা কিডনির ব্রেকডাউন ঘটে। এই পরিস্থিতি বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা লক্ষণ ধরা দেয় যেগুলো কখনও কখনও কিডনি গোলযোগের চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

প্রধান কারণসমূহ

  • উচ্চ রক্তচাপ: দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
  • ডায়াবেটিস: উচ্চ ব্লাড গ্লুকোজ মাত্রা কিডনির নালিকাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিডনি গোলযোগের সৃষ্টি করতে পারে।
  • অপুষ্টি এবং এ্যালকোহলের অত্যধিক ব্যবহার: এগুলো কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
  • জেনেটিক কারণ: কিছু বংশগত সমস্যা কিডনির কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আরও পড়ুনঃ  প্রস্রাবের সাথে সাদা তরল বের হয় কেন?

লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ

  • দ্রুত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে শরীর সঠিকভাবে বিষাক্ত পদার্থগুলি বার করতে পারে না, যা ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
  • পা এবং পায়ের পাতায় ফোলা: কিডনি যখন লবণ এবং পানি সংরক্ষণ করে, তখন শরীরের নিম্নাংশে ফোলা দেখা দেয়।
  • রক্তমূত্র: কিডনির ফিল্টারে সমস্যা হলে মূত্রে রক্ত মিশ্রিত হতে পারে।
  • অস্বস্তিকর নিঃশ্বাস: কিডনি যখন রক্ত থেকে এসিড সরাতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি অস্বস্তিকর নিঃশ্বাসের সৃষ্টি করতে পারে।

কিডনি কার্যকারিতার স্তর কিভাবে মাপা হয়?

কিডনি ফাংশন টেস্টের মধ্যে গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশান রেট (GFR) একটি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ পরিমাপ। এটি কিডনির মাধ্যমে রক্তের ফিল্টার করার হার নির্দেশ করে, যা কিডনি কার্যকারিতার একটি মৌলিক সূচক। GFR পরিমাপ করে যে এক মিনিটে কত মিলিলিটার ফিল্টার হয়েছে, সেটি বয়স, লিঙ্গ ও শরীরের ওজন অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ।

GFR কি?

GFR, অর্থাৎ গ্লোম

েরুলার ফিল্টারেশান রেট, হল সেই হার যাতে কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি বের করে। এই হার কিডনির স্বাস্থ্য ও কার্যকারিতা নির্ধারণে মূলত গুরুত্বপূর্ণ যা কিডনি স্তর বুঝতে সহায়ক।

স্টেজগুলির বর্ণনা

কিডনির কার্যকারিতার ভিন্ন স্তরগুলো হল স্টেজ ১ থেকে ৫। প্রতিটি স্টেজ কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার হার অনুযায়ী বিভক্ত। স্টেজ ১-এ কিডনির কার্যকারিতা সবচেয়ে ভালো থাকে এবং স্টেজ ৫-এ এসে কিডনির কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পায়, যা অবশ্যই ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন দেখা দেয়।

ই GFR পরিমাপের মাধ্যমে ডাক্তাররা কিডনি স্তর পর্যায়ক্রমে মূল্যায়ন করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এরফলে কিডনির সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হওয়া যায়।

ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা

অপর্যাপ্ত কিডনি ফাংশন কারণে যখন শরীর নিজে থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করতে পারে না, তখন ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া জরুরি হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়াটি কিডনির কার্যক্ষমতা কিছু অংশ বদল দিয়ে করা হয়, যা কিডনি বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে পরিচিত।

ডায়ালাইসিস কেমনভাবে কাজ করে?

ডায়ালাইসিস মেশিন বা প্রক্রিয়া রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল সরিয়ে নেয়। এটি একটি সেমিপারমিয়াবল মেমব্রেনের মাধ্যমে রক্ত পাস করিয়ে, বিপরীত সলিউশন ব্যবহার করে অণুগুলিকে আলাদা করে। এর ফলে রক্ত পরিষ্কার হয়ে শরীরে ফিরে যায়।

কেন ডায়ালাইসিস প্রয়োজন?

যখন কিডনির কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণভাবে হ্রাস পায় তখন শরীরে বর্জ্য ও তরল জমা হতে থাকে, যা বিষাক্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এই সময়ে, ডায়ালাইসিস একটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এটি না করা হলে, রোগীর জীবনায়নের গুরুত্বপূর্ণ হ্রাস দেখা দেয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

কিডনি কার্যকারিতা কোথায় সংকট ঘটে?

কিডনির গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা যখন সংকটাপন্ন হয়, তখন এর প্রভাব সমগ্র শরীরের উপর পড়ে। GFR মান কমে গিয়ে কিডনি সমস্যা ঘনীভূত হয়, যা কিডনির ফিল্টারেশন ক্ষমতার হ্রাস প্রদর্শন করে।

GFR এর মান

গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশান রেট (GFR) হল একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিডনি যত রক্ত পরিশোধন করতে পারে, তার পরিমাণের একটি মাপকাঠি। এই মান কমে গেলে, রক্তে অপরিষ্কার উপাদান জমা হতে থাকে, যা ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন বাড়িয়ে তোলে।

আরও পড়ুনঃ  কিডনি ফাংশন উন্নতির উপায় - স্বাস্থ্য টিপস

রোগীর লক্ষণ

যখন কিডনি ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন রোগীর বিভিন্ন রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হতে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, অতিরিক্ত পানি ধারণ, এবং স্বাস্থ্যের ভারসাম্য হ্রাস।

কিডনি কার্যকারিতা ১৫% এবং তার নীচে

যখন কিডনির কার্যকারিতা ১৫% বা তার নিচে নেমে আসে, তখন রোগীর জন্য ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থাটি সাধারণত ক্রিটিক্যাল কিডনি স্টেটাস হিসেবে পরিচিত, যেখানে কিডনিগুলি রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করতে পারে না।

পরিস্থিতির বিশ্লেষণ

এই অবস্থায়, রোগীরা প্রায়ই অগ্রসর কিডনি সমস্যা থেকে ভুগতে থাকে, যা রেনাল ফেইলিওর হিসেবে পরিচিত। এমনকি সামান্য শারীরিক পরিশ্রম বা ডায়েটের পরিবর্তনেও রোগীর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

  • নির্দিষ্ট প্রয়োজন যখন পূরণ করা হয়, তখন হেমোডায়ালিসিস প্রয়োগ করা হয়, যা কিডনি প্রতিস্থাপনের পূর্বে একটি অপরিহার্য চিকিৎসা।
  • বাড়িতে প্রযোজ্য পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বিকল্প হিসেবে কার্যকর, কিন্তু এটি সঠিক পরিচর্যা এবং সংগঠিত পরিকল্পনা মেনে চলতে হবে।
  • অতিরিক্ত প্রয়োজনে কিডনি প্রতিস্থাপন ক্রিয়াকলাপ চলমান থাকে, যা রেনাল ফেইলিওর রোগীদের জন্য স্থায়ী সমাধান প্রদান করতে পারে।

চিকিৎসাগত প্রস্তুতি এবং নির্ধারিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান মেনে চললে, ক্রিটিক্যাল কিডনি স্টেটাস থেকে রোগীর জীবনমান অনেকাংশে উন্নত হতে পারে।

কিডনি রোগের বিভিন্ন পর্যায়

চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিডনি ফাংশন ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী, কিডনি রোগ পাঁচটি মূল স্টেজে বিভক্ত হয়, যা কিডনি রোগ স্টেজ নামে পরিচিত। প্রতিটি স্টেজ কিডনির কার্যকারিতা ও ক্ষয়ক্ষতির গভীরতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

স্টেজ ১ থেকে ৫

ক্রনিক কিডনি রোগের প্রাথমিক স্টেজ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত স্টেজ পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরের বৈশিষ্ট্য ও উপসর্গ ক্রমেই পরিবর্তিত হতে থাকে।

  • স্টেজ ১: কিডনির ক্ষতি হলেও GFR স্বাভাবিক থাকে, সাধারণত 90 মিলি/মিনিটের বেশি।
  • স্টেজ ২: GFR হ্রাস পেয়ে 60-89 মিলি/মিনিটে এসে দাঁড়ায়, কিডনির ক্ষতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
  • স্টেজ ৩: মাঝারি পর্যায়ের কিডনি ক্ষতি, GFR 30-59 মিলি/মিনিটে নেমে আসে।
  • স্টেজ ৪: গুরুতর কিডনি ক্ষতি দেখা দেয়, GFR 15-29 মিলি/মিনিটের মাঝে হয়।
  • স্টেজ ৫: চূড়ান্ত কিডনি ব্যর্থতা, GFR 15-এর নীচে নেমে আসে, যেখানে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

প্রতিটি স্তরের বৈশিষ্ট্য

প্রতি স্টেজের সাথে সাথে কিডনির কার্যকারিতার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। নীচে প্রতিটি স্টেজের বৈশিষ্ট্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হলঃ

  1. স্টেজ ১ ও ২-এ সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পায় না, তবে রক্ত ও মূত্র পরীক্ষায় ক্ষতির চিহ্ন ধরা পড়ে।
  2. স্টেজ ৩-এ রোগী ক্লান্তি, পা ও হাতে ফোলা এবং মেটাবলিক অসুখ অনুভব করতে পারে।
  3. স্টেজ ৪-এ রোগের লক্ষণ গুরুতর হয়ে ওঠে, রক্তের ক্রিয়েটিনিন স্তর বৃদ্ধি পায়।
  4. স্টেজ ৫-এ রোগীর জীবনযাত্রায় গুরুতর বাধা দেখা দেয়, যেমন অত্যধিক দুর্বলতা, অস্থিরতা এবং পরিপাকতন্ত্রে অসুবিধা।

ক্রনিক কিডনি রোগের প্রত্যেক স্টেজে উপযুক্ত চিকিৎসা ও সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে রোগের প্রগতি ধীর করা সম্ভব।

ডায়ালাইসিসের প্রকারভেদ

ডায়ালাইসিস ধরন বিভিন্ন রোগীর চাহিদা ও উপসর্গ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, যাতে কিডনির কার্যকারিতাকে সহায়তা দেওয়া যায়। হেমোডায়ালিসিসপেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস হলো দুই প্রধান ধরনের ডায়ালাইসিস যা বিশেষত রেনাল ডায়ালিসিসের অন্তর্গত।

হেমোডায়ালিসিস

এই প্রকারে, রোগীর রক্ত একটি মেশিনের মাধ্যমে পরিশোধিত হয় যাতে টক্সিন, অতিরিক্ত খনিজ এবং তরল বের করা হয়। হেমোডায়ালিসিস সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচদিন করা হোক বা ঘরে দৈনিক পরিচালনা করা হোক, প্রয়োজন অনুযায়ী এর সময়কাল ও হার নির্ধারিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  মাসিকের ব্যাথা কমানোর উপায়

পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস

পেটের ভেতর একটি ডিভাইস বা ক্যাথেটার বসানো হয়, যেখানে ডায়ালাইসিস সলিউশন পেটের ভেতর রেখে রক্ত থেকে টক্সিন ও অতিরিক্ত তরল আহরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াতে, পেটের মেমব্রেন একটি প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসাবে কাজ করে। পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস ঘরেই পরিচালনা করা সম্ভব এবং এটি সাধারণত দৈনিক করা হয়।

দুই প্রধান ধরনের ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে ক্রনিক বা গুরুতর কিডনি ঘাটতিতে ভোগা রোগীরা তাদের জীবনযাত্রায় উন্নতি লক্ষ্য করে থাকেন। এগুলি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া খুব কৌশলগত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হয়, যাতে রোগীরা ন্যূনতম জটিলতা অনুভব করেন।

ডায়ালাইসিসের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ডায়ালাইসিস, রেনাল থেরাপির একটি প্রক্রিয়া, কিডনির ফাংশন পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট সাহায্য করলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা রোগীদের অস্বস্তি এবং চাপ দিতে পারে। প্রধানত, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।

শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব: ডায়ালাইসিস মানসিক দুর্বলতা ও অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেশনে অংশ নিতে হয়।
  • রেনাল থেরাপির অভিঘাত: হেমোডায়ালিসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস উভয়ই হাইপোটেনশন এবং মাসল ক্র্যাম্পসের মতো শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ডায়ালাইসিস পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এই প্রক্রিয়া থেকে সাধারণ শারীরিক সমস্যাগুলি হলো মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, এবং স্থায়িত্বহীনতা।

মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব

  • চিকিৎসার পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদি ডায়ালাইসিস রোগীর জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে যা মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
  • সংজ্ঞানাত্মক সমস্যা: মস্তিষ্কের ফাংশনের হ্রাস ঘটতে পারে, যা কখনও কখনও মনের ধারণা ও সিদ্ধান্ত নির্ণয়ের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য প্রক্রিয়া: সাধারণ মনোবিদ্যা চাপ এবং অবসাদ, যা সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিটি ডায়ালাইসিস সেশনের পর রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং সমর্থন প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের পরিচর্যার মাধ্যমে ডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হ্রাস পাওয়া সম্ভব।

ডায়ালাইসিসের পাশাপাশি জীবনযাত্রা

ডায়ালাইসিস প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর জীবন ও জীবনযাপনে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলি শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবেও প্রভাবিত করে। কিডনির ব্যর্থতা হলে প্রায় 90% হারে এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজে (ESRD) পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যার কারণে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। যদিও কিডনি প্রতিস্থাপনের ফলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়, তবে অনেক সময় ডায়ালাইসিসের পরেও প্রতিস্থাপনের অপেক্ষা করতে হয়।

পুষ্টি এবং ডায়েট

ডায়ালাইসিসের মাঝে সুস্থ থাকার জন্য সঠিক পুষ্টি ও ডায়েট অনুসরণ করা চরম গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শরীরে তরল, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়, যা ডায়ালাইসিসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে নির্ধারিত ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিনের তালিকা মেনে চলা জরুরি।

ভারতে ও অন্যান্য দেশের যেসব হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের উচ্চ মানের সেবা প্রদান করা হয়, সেই সকল প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের হারের তথ্য বোঝায় যে, প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতিতে রোগীরা আরো বেশি কাল স্বাস্থ্যবান জীবন যাপন করছেন। এমনকি মেয়ো ক্লিনিক বা বিভিন্ন ব্রিটিশ ও ভারতীয় হাসপাতালগুলির সাফল্যের হার দেখে আমরা এই আশাবাদ প্রকাশ করতে পারি যে, ডায়ালাইসিস থেকে উত্তরণের পর মানসম্মত জীবনযাত্রাও সম্ভব।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button