বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি, যা বিভিন্ন শিল্প খাতে কাজ করে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বসুন্ধরা গ্রুপ বিভিন্ন খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সর্বমোট ৭০০,০০০ জন কর্মচারী তাদের কার্যক্রমে নিয়োজিত। ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি প্রকল্প দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বসুন্ধরা গ্রুপের আমদানি-রপ্তানি লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১.১২ বিলিয়ন ডলার বা ১১১.৩৮ বিলিয়ন টাকা। বছরের পর বছর সে এই প্রতিষ্ঠানটি তার মূলধনের পরিমাণ বাড়িয়ে চলছে। বসুন্ধরা গ্রুপের খাত সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রিত রয়েছে আবাসন, উৎপাদন ও এনার্জি প্রজেক্টগুলোতে। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ আকবর সোবহানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপটি শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
বসুন্ধরা গ্রুপ এর ইতিহাস
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠার শুরু হয় ১৯৮৭ সালে, যখন তারা তাদের প্রথম সফল আবাসন প্রকল্প চালু করে। প্রথম সফল প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রুপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে থাকে।
বসুন্ধরা গ্রুপের ইতিহাসে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা উৎপাদন, শিল্প এবং বাণিজ্যিক খাতে তাদের পদচিহ্ন রেখেছে। আজকের দিনে বসুন্ধরা গ্রুপ সিমেন্ট, কাগজ, ইস্পাত, এলপি গ্যাস, মিডিয়া এবং বাণিজ্যিক খাতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে।
- বসুন্ধরা সিমেন্ট
- বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড
- বসুন্ধরা এনার্জি
- বসুন্ধরা স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেড
আহমেদ আকবর সোবহান প্রতিষ্ঠার শুরুতে বসুন্ধরা গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার হাত ধরেই বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০২০ সালে, বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমেন প্ল্যান্ট গঠনে ১৪৩.৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যা বাংলাদেশের বৃহত্তম। এছাড়াও, বসুন্ধরা গ্রুপ এর ইতিহাস তৈরি করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শপিং মল বসুন্ধরা সিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই মলটিতে প্রায় ২,৫০০টি দোকান রয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের কাজের পরিধি অতি সম্প্রসারিত হয়েছে এবং তারা খাদ্য ও পানীয়, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ এবং এমনকি খেলাধুলার দলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে একাধিক খাতে বিনিয়োগ ও সফলতার ধারাপাত নির্দেশ করে যে, তারা ব্যবসায়িক এবং শিল্প ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
আবাসন খাতে বসুন্ধরা
১৯৮৭ সালে বসুন্ধরা গ্রুপ আবাসন খাতে তাদের যাত্রা শুরু করে, ঢাকার আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। প্রথমে চারটি ব্লক দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তারা ষোলোটি ব্লকে সম্প্রসারিত হয়েছে। এই বিশাল পরিকল্পনায় মোট ১১ হাজার বিঘা জমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায়, বসুন্ধরা গ্রুপ আধুনিক ও দক্ষ কর্মীদের নিয়ে গঠিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা ১৫০০-২০০০ এবং আগুন নির্বাপণের কাজে প্রশিক্ষিত ১০০-১৫০ জন কর্মীর সমন্বয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
বসুন্ধরা আবাসন খাতে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রাখতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্কুল, হাসপাতাল, ব্যাংক প্রভৃতি। ২০০১ সাল থেকে গ্রাহকদের সুবিধার্থে প্লটের পাশাপাশি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি শুরু করে।
গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে সময়মতো সম্পত্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের সুনাম ধরে রেখেছে। প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ফ্ল্যাট বিক্রি এবং প্রধান এলাকায় প্রকল্প সম্প্রসারণ করে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট একটি সুদক্ষ ও সফল নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আবাসন খাতে বসুন্ধরা তাদের কিছু প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশে চারটি বৃহত্তম কনভেনশন সেন্টার অন্তর্ভুক্ত করেছে যা তাদের নির্দেশনা ও মানের উচ্চতর মাপকাঠি প্রমাণ করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদনী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সমূহ
বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের উৎপাদনী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেঘনা সিমেন্ট মিলস্, বসুন্ধরা টিস্যু ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বসুন্ধরা পেপার মিলস্।
- মেঘনা সিমেন্ট মিলস্: মেঘনা সিমেন্ট মিলস্ বসুন্ধরা গ্রুপের একটি প্রধান সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
- বসুন্ধরা টিস্যু ইন্ডাস্ট্রিজ: বসুন্ধরা গ্রুপের অধীনে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি টিস্যু উৎপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাদের উৎপাদিত টিস্যু ঘরোয়া এবং বাণিজ্যিক উভয় পরিবেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- বসুন্ধরা পেপার মিলস্: কাগজ উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চমানের কাগজ সরবরাহের মাধ্যমে বাজারে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত।
বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদনী সমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের মেঘনা সিমেন্ট মিলস্ কিংবা টিস্যু ও পেপার উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে উচ্চমান বজায় রাখা হয়। বসুন্ধরা পেপার মিলস্ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শিল্প খাতকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মল
বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শপিং মল হলো বসুন্ধরা সিটি। এটি ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত এবং এর স্বত্বাধিকারী হলো বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট, বৃহত্তম এই বসুন্ধরা সিটি শপিং মলটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০০৪ সালে শেষ হয়। ২১ তলা বিশিষ্ট এ ভবনটি আধুনিক এবং বিলাসবহুল ফ্যাসন ও গহনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকারের পণ্যের শো-রুম সমৃদ্ধ। এর মধ্যে ২,৩২৫টি দোকান ও ১০০টি ফুড আউটলেট রয়েছে, যেখানে দৈনন্দিন প্রায় ২৫,০০০ মানুষের সমাগম ঘটে।
এই শপিং মলে ৫০০টি গাড়ি পার্কিং করার সুবিধা রয়েছে। এটি বিশেষজ্ঞ আর্কিটেক্ট মুস্তাফা খালিদ পলাশ এবং মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ এর তত্ত্বাবধানে ডিজাইন করা হয়েছে এবং নির্মানে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি খরচ হয়েছে। এর কর্মঘণ্টা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
দুর্ভাগ্যবশত, ২০০৯ সালে একটি ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন। তবে শপিং মলটি এরপর পুনর্গঠিত ও চালু হয়েছে নতুন উদ্দীপনায়। বসুন্ধরা সিটি একাধারে বাণিজ্যিক স্পেস ও অফিস স্পেসের ক্ষেত্রেও প্রধান ভূমিকা পালন করে।
বসুন্ধরা গ্রুপ এর এনার্জি খাত
বসুন্ধরা গ্রুপ এর এনার্জি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস বাংলাদেশের মূল এলপি গ্যাস সরবরাহকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তেল ও গ্যাস খাতে বসুন্ধরা বিশেষ গুরুত্ব দেয়, যা দেশের উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে।
বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৬ সাল থেকে দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম বেসরকারি বিটুমিন উৎপাদন ইউনিট পরিচালনা করছে। এর বিটুমিন মিক্সিং প্ল্যান্ট ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের জন্য বিটুমিন মিশ্রণ তৈরি করা হয়, যা রোড নির্মাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ডিজেল ফুয়েল বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, যেমন অন-রোড ট্রান্সপোর্টেশন, অফ-রোড ব্যবহারের জন্য, যেমন: মাইনিং, কনস্ট্রাকশন ও ফার্মিং। বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড দক্ষ হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন প্রদান করে রাস্তা, বিমানবন্দর ট্যাক্সিওয়ে এবং শিল্প সুবিধাগুলি নির্মাণের জন্য।
কোম্পানির বিটুমিন উৎপাদন ইউনিটটি ৬৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ, ঢাকায়, যা বিভিন্ন প্রকল্প, জলবায়ু এবং অ্যাপ্লিকেশন অনুসারে বিভিন্ন গ্রেড বিটুমিন উৎপাদন করতে সক্ষম। বসুন্ধরা বিটুমিনের পলিমার মডিফাইড বিটুমিন, পেনেট্রেশন গ্রেড বিটুমিন, ইমাল্সিফাইড বিটুমিন এবং কাটব্যাক বিটুমিন সহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী রয়েছে।
বিটুমিন অ্যাসফাল্ট মিশ্রনে বাধাক ধরার পাশাপাশি ছাদমার অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হয়। বসুন্ধরা বিটুমিন ব্যবহারে বিটুমিন ইমালশন ব্যবহার করে ঝাঁকুনি দেবার প্রয়োজনীয়তা উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় যাতে optimal কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়।