ব্রাজিল: দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ

ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ, তার বিশালতায় ও বৈচিত্রে অনন্য। ভৌগোলিক অবস্থান -14° অক্ষাংশ এবং -53° দ্রাঘিমাংশ বরাবর বিস্তৃত এই দেশটি নদ-নদী, পাহাড়, উচ্চভূমি এবং রেণু আবৃত নিম্নভূমি নিয়ে গঠিত। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়া এবং বৃহত্তম শহর সাও পাওলো, যা একইসাথে দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকারি ভাষা হিসাবে পর্তুগিজ প্রচলিত যা দেশের ঐক্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে।

জনসংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ দেশ ব্রাজিলে প্রায় ২১২.৭ মিলিয়ন মানুষের বাস। এই বিপুল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যে ভরা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: ৪৭.৭৩% শ্বেতকায়, ৪৩.১৩% পার্ডো, ৭.৬১% কৃষ্ণকায়, ১.০৯% এশিয়ান এবং ০.৪৩% আমেরিন্ডিয়ান। ব্রাজিলের জিডিপি প্রায় ৩.৩৮৯ ট্রিলিয়ন ডলার যা বিশ্বের ৮ম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃত। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি ছাড়াও ব্রাজিল তার প্রভূত কার্নিভাল উৎসব এবং ফুটবলের ঐতিহ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।

Contents show

ব্রাজিলের সাধারণ পরিচিতি

ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ হিসেবে, একটি অনন্য ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এ দেশের খাদ্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং অনন্য জীববৈচিত্র্য বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এর ভূগোল এবং জনসংখ্যা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন – সব কিছুই চিত্তাকর্ষক।

ভূগোল ও অবস্থান

ভৌগোলিকভাবে, ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর পূর্বে অ্যাটলান্টিক মহাসাগর There’s a significant presence of the Atlantic coast, stretching almost 4,500 miles along its length. The Amazon River’s expansive network, totaling approximately 4,250 miles, further enriches ব্রাজিল’s landscape. এর অবস্থান দেশের জলবায়ু এবং প্রাণিজগতের বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করে যা আমাজন রেইনফরেস্ট, প্যানটানাল, এবং অসংখ্য অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত।

জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি

ব্রাজিল জনসংখ্যায় পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। প্রায় 213 মিলিয়ন মানুষের বসবাস দেশটির শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলে বিস্তৃত। ব্রাজিলের সংস্কৃতিতে পর্তুগিজ, আফ্রিকান এবং ইন্ডিজেনাস প্রভাবের মেলবন্ধন দেখা যায়, যা ব্রাজিলিয়ান মিউজিক, নাচ এবং উত্সবের অনবদ্য মিশেল তৈরি করেছে। মিউজিকের বিভিন্ন ধারা যেমন সাম্বা এবং বসানোভা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রাজিলকে বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করেছে।

ব্রাজিলের ইতিহাসের পটভূমি

ব্রাজিলের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে উপনিবেশকালের কথা। সবকিছু শুরু হয়েছিল ১৫০০ সালে, যখন পর্তুগিজ নাবিক পেদ্রো আলভারেস কাব্রাল ব্রাজিল আবিষ্কার করেন। এই সময় থেকে শুরু হয় দীর্ঘ উপনিবেশকাল, যা প্রায় তিনশ বছর ধরে চলে।

উপনিবেশকালের ইতিহাস

পর্তুগিজ উপনিবেশকাল ব্রাজিলের জন্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এই সময়টাতে ব্রাজিল নতুন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গঠন পায়। উন্নত কলা-কৌশল এবং খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে সমাজের বিবর্তন ঘটে। যখন পর্তুগিজরা আগমন করে, তখন ব্রাজিলে প্রায় এক হাজার আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। দুঃখের বিষয়, ইউরোপিয়ানদের সাথে সংযোগের ফলে এসব আদিবাসীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা যায়।

আরও পড়ুনঃ  নূহাশ পল্লী - বাংলাদেশের অপরূপ পর্যটন স্পট

স্বাধীনতা সংগ্রাম

লম্বা উপনিবেশকালের পরে, ব্রাজিল ১৮২২ সালে পর্তুগালের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রাজিলের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা তাদের জাতিগত পরিচয় ও উন্নতির পথ সুগম করে। শুধু এটাই নয়, পরবর্তীতে সামরিক একনায়কত্ব ও প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টের নির্বাচন, এ সকল ঘটনাও ব্রাজিলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল সামরিক একনায়কত্বের অধীনে ছিল।

এরপর, ১৯৮৫ সালে গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর, তানক্রেদো নেভেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে ফার্নান্দো কোলোর দে মেলো প্রথম সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন, কিন্তু তার সময়কালে হাইপারইনফ্লেশন ছিল এক বৃহৎ সমস্যা, যা ২৫% পর্যন্ত মাসিক বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ব্রাজিলের ভাষা ও ধর্ম

ব্রাজিল, তার বিশাল অঞ্চল ও বৈচিত্রময় জনসংখ্যার জন্য বিখ্যাত। দেশের ভাষা ও ধর্মীয় পরিচয়গুলিও এখানকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ।

সরকারি ভাষা: পর্তুগিজ

ব্রাজিলের সরকারি ভাষা হল পর্তুগিজ, যা ১৬ শতাব্দীর শুরুতে ব্রাজিলে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিকদের আগমনের পর থেকেই প্রচলিত। আজ ব্রাজিল মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশ। এটি প্রায় ২১৫ মিলিয়ন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। পর্তুগিজ ভাষা ব্রাজিলের লেখনী, শিক্ষা, এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপরন্তু, বিভিন্ন বিদেশী ভাষাভাষীরা, যেমন ইতালিয়ান, জার্মান, জাপানি ও স্প্যানিশ ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় নতুন শব্দ ও অভিব্যক্তি যুক্ত করেছেন।

ধর্মীয় বৈচিত্র

ব্রাজিলের ধর্মীয় বৈচিত্র এটি একটি গর্বিত সংস্কৃতি ও সমাজের প্রতীক। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক জনসংখ্যার অধিকারী। ৭৩.৬% ব্রাজিলিয়ান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম অনুসারে চলে। এছাড়াও এখানে প্রোটেস্টান্ট, স্পিরিচুয়ালিস্ট, ইসলাম এবং আফ্রিকান ধর্মগুলিও প্রচলিত রয়েছে। ২০১০ সালের গণনায়, ব্রাজিলে প্রায় ২০৪,০০০ মুসলিম বসবাস করতেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.১%। মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, বর্তমানে ব্রাজিলে প্রায় ৪০০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ মুসলিম বাস করছেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫%। দেশে ১৫০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে এবং ইসলাম প্রথম ১৬ শতকের শুরুতে আফ্রিকান দাস, লেবানিজ ও সিরিয়ান অভিবাসীদের মাধ্যমে ব্রাজিলে প্রবেশ করে।

ব্রাজিলের মুসলিম জনগোষ্ঠী এক বিস্তৃত বৈচিত্রের প্রতিনিধি, যেখানে স্থানীয় ও বিদেশী মুসলিমরা ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন।

ব্রাজিলের বিভিন্ন প্রান্তের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট

ব্রাজিলের প্রতিটি প্রান্ত নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর। সাও পাওলো, রিও ডি জেনেইরো, বিহা, এবং স্যালভাডর সবকটি শহরই তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক ধারা ও উৎসবের জন্য পরিচিত। এই প্রশস্ত দেশের প্রতিটি শহরই নানা রঙে রঞ্জিত তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে।

সাও পাওলো

সাও পাওলো ব্রাজিলের অর্থনৈতিক ও শিল্পকলা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে আধুনিক স্থাপত্য, আর্ট গ্যালারি, এবং বাদ্যযন্ত্রের সমাবেশ সবকিছুই মিলে এক অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সাও পাওলোতে বসবাসরত বিভিন্ন জাতির মানুষের মিলনস্থল হওয়ায় এটি এক অদ্বিতীয় সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন।

রিও ডি জেনেইরো

রিও ডি জেনেইরো সবচেয়ে বেশি পরিচিত ক্রিস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি এবং বার্ষিক কার্নিভাল উৎসবের জন্য। এই শহরে আমরা দেখতে পাই ঐতিহ্যবাহী সাম্বা নৃত্য এবং কার্নিভাল ফেস্টিভালের জাঁকজমক। পর্যটকরা এখানে এসে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য ও জীবন্ত সংস্কৃতি উপভোগ করে থাকেন।

বিহা

বিহা শহরটি ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে আফ্রো-ব্রাজিলীয়ান সংস্কৃতির প্রবল উপস্থিতি রয়েছে। ঐতিহাসিক স্থাপনা, গান, এবং নৃত্য বিহার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও, বিহার খাবারগুলো তাদের আলাদা স্বাদ ও ঐতিহ্যবাহী রান্নার জন্য বিখ্যাত।

স্যালভাডর

স্যালভাডর শহরটি ব্রাজিলের অন্যতম প্রাচীন শহর। স্যালভাডরের ঐতিহাসিক নগরী, সংগীত এবং নৃত্য অপরিসীম। কংগা এবং ক্যাপোয়েরা নাচের জনপ্রিয়তা এখানেই সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে প্রাচীন স্থাপত্য ও সাফাই নৃত্যের মেলবন্ধন স্যালভাডরকে অসাধারণ করে তোলে।

ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। এই দেশটি তার অগণিত প্রাকৃতিক ভূমি এবং জলাভূমির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি স্থান হল আমাজন রেইনফরেস্ট এবং প্যানটানাল।

আরও পড়ুনঃ  লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা - ঐতিহ্যের পুরনো বাণিজ্যকেন্দ্র

আমাজন রেইনফরেস্ট

আমাজন রেইনফরেস্ট পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৃষ্টি বন, যা ৫.৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বনাঞ্চলটি অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল। আমাজন বনাঞ্চলে ৪০০০০ প্রজাতির গাছ, ৩০০০ প্রজাতির মাছ, ১৩০০ প্রজাতির পাখি এবং আরও অনেক ধরনের প্রাণীর বাস। এটি আইকনিক আমাদের পরিবেশের ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী আন্দোলনের জন্য অমূল্য।

প্যানটানাল

প্যানটানাল হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলাভূমি এলাকার মধ্যে একটি এবং এটিকে জীববৈচিত্র্যের এক অন্তহীন ভাণ্ডার হিসেবে ধরা হয়। এর আয়তন প্রায় ২১০,০০০ বর্গকিলোমিটার, যা টাইপোহো নদী ও এর শাখা নদীগুলির প্রভাবশালী জোনে বিস্তৃত। এখানে অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সরীসৃপদের বাস। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে পর্যটক প্যানটানালের অবিস্মরণীয় প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে আসে।

আমাজন রেইনফরেস্ট ও প্যানটানাল শুধু ব্রাজিলের নয়, বরং গোটা বিশ্বের প্রাকৃতিক আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম অনেক কিছু প্রদান করে। এ গুলো সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের উৎস হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রাজিলের অর্থনীতি

ব্রাজিলের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। ২০০৭ সালে, ব্রাজিলের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) ছিল $১.৮০৪ ট্রিলিয়ন। কৃষি, শিল্প এবং প্রযুক্তি খাতগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্রাজিলের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান গতিতে এগিয়ে চলেছে।

কৃষি খাত

ব্রাজিলের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান ভিত্তি। সোয়া বিন, কফি এবং অন্যান্য ফসলের উৎপাদনে ব্রাজিল শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে। ২০০৩ সালে, কৃষি খাত ব্রাজিলের GDP-এর প্রায় ২০% প্রদান করেছে। শস্য উৎপাদন এবং চাষাবাদে ব্রাজিলের নেতৃত্ব দানের কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিল্প ও প্রযুক্তি

শিল্প ও প্রযুক্তি খাতগুলোও ব্রাজিলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০০৩ সালে, শিল্প খাত ব্রাজিলের GDP-এর ১৪% এবং সেবাখাত ৬৬% অবদান রেখেছে। প্রধান শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আয়রন ওর, কয়লা, মেশিন বিল্ডিং, টেক্সটাইল, পেট্রোলিয়াম, সিমেন্ট, রাসায়নিক পদার্থ, সার, ভোক্তা পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন সরঞ্জাম, টেলিযোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট, ব্রুয়িং এবং পর্যটন।

এছাড়াও, সাও পাওলো এবং রিও ডি জেনেইরো শহরগুলিতে শিল্প ও প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এই শহরগুলোতে উচ্চমানের কারখানা এবং উন্নত প্রযুক্তির সংমিশ্রণে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং দক্ষ হচ্ছে।

ব্রাজিলের জনপ্রিয় খাদ্য

ব্রাজিলিয়ান রন্ধনশৈলীতে সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্যময় এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। চলুন দেখি ব্রাজিলের কিছু জনপ্রিয় খাদ্যের মধ্যে ফেইজোজাদা, পাও ডি কুইজো, এবং ব্রিগেডিরো কীভাবে ব্রাজিলের খাদ্য সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

ফেইজোজাদা

ফেইজোজাদা একটি ঐতিহ্যবাহী ব্রাজিলিয়ান ডিশ যা মূলত মাংস ও বিনস দিয়ে তৈরি করা হয়। এই খাবারটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ব্রাজিলের উপনিবেশ কালে, যখন আফ্রো-ব্রাজিলিয়ানরা সহজলভ্য উপাদান দিয়ে এই সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর মেইল প্রণয়ন করেছিল। সাধারণত, ফেইজোজাদা সপ্তাহশেষে শনিবারে পরিবারের সঙ্গে উদযাপনের এক প্রতীক হিসেবে পরিবেশন করা হয়, যা সম্প্রদায় এবং ঐতিহ্যের উদযাপনকে নির্দেশ করে।

পাও ডি কুইজো

পাও ডি কুইজো বা চীজ ব্রেড ব্রাজিলের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় স্ন্যাক। এটি সাধারণত ময়দা এবং চীজের সমন্বয়ে তৈরি হয়, যার ফলে এটি একটি নরম এবং মুচমুচে স্বাদ প্রদান করে। এই খাবারটি ব্রাজিলিয়ান ব্রেকফাস্ট টেবিলে একটি নির্ভরযোগ্য বন্ড হিসেবে চালু রয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে প্রশংসিত।

ব্রিগেডিরো

ব্রিগেডিরো হল একটি মিষ্টি চকোলেট ট্রাফল যা প্রায়ই ব্রাজিলিয়ান জন্মদিন ও উৎসবে পরিবেশন করা হয়। এটি তৈরিতে সাধারণত কনডেন্সড মিল্ক, কোয়ালিটি কোকো এবং মাখন ব্যবহার করা হয়। এর মিষ্টতা এবং চকোলেটির সমৃদ্ধ স্বাদ মিলিত হয়ে ব্রিগেডিরো অনেকের প্রিয় মিষ্টিতে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ব্রাজিলের ক্রীড়া সংস্কৃতি

ব্রাজিলের ক্রীড়া সংস্কৃতি অসাধারণ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। দেশের বেশির ভাগ মানুষের জন্য ক্রীড়া মানে শুধু বিনোদন নয়, সেটা তাদের জীবনের অংশ। আসুন আমরা ফুটবল সহ অন্যান্য জনপ্রিয় খেলাগুলোর দিকে নজর দেই।

ফুটবল: জাতীয় গর্ব

ফুটবল হল ব্রাজিলের জাতীয় খেলা এবং এটি সারা দেশে বিশাল জনপ্রিয়। ব্রাজিল পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, যা অন্য কোনও দেশের থেকে বেশী। দেশের ফুটবল ইতিহাসে পেলে, জিকো, রোনালদো মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা আছেন যারা অমর হয়ে আছেন। বর্তমানে, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগো ইত্যাদি খেলোয়াড়রাও ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ডোরিভাল জুনিয়র বর্তমান কোচ হিসেবে দলকে পরিচালনা করছেন, যদিও নেইমার জুনিয়রের অনুপস্থিতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ভলিবল ও বাস্কেটবল

ফুটবলের পর ভলিবল এবং বাস্কেটবল ব্রাজিলের আরও দুটি জনপ্রিয় খেলা। ব্রাজিলের ভলিবল দল আন্তর্জাতিক স্তরে সফলতা পেয়েছে। নির্বাচিত খেলোয়াড়রা মেডেল পেয়েছেন অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। ব্রাজিলীয় বাস্কেটবল খেলোয়াড়রাও তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করছেন এবং দলের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছেন।

ব্রাজিলের ক্রীড়া সংস্কৃতির এই বিশালতা কেবল খেলোয়াড়দের দিয়ে নয়, বরং এটা দেশের জনগণ এবং তাদের সততা, উদ্যম ও ঐক্যের প্রতীক।

দেশটির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব

ব্রাজিলের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎসব আছে যা একেবারেই অনন্য এবং এই দেশের বিশ্বখ্যাত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এদের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হলো কার্নিভাল এবং পেন্টেকস্ট। এই উৎসবগুলি শুধু আনন্দ এবং উল্লাসই নয়, দেশের সংস্কৃতিগত ভিত্তির প্রতীক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

কার্নিভাল

কার্নিভাল ব্রাজিলের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বৃহত্তম উৎসব। রিও ডি জেনেইরোর সাম্বাড্রোমে অনুষ্ঠিত প্রধান পর্বে বিভিন্ন সাম্বা স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, রঙবেরঙের পোশাক এবং নৃত্যের সাথে। এই সময় পর্যটকের আগমন প্রায় ৭০% বৃদ্ধি পায়। কার্নিভাল উৎসবের সময় শুধু পর্যটক নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও পরিপূর্ণ উন্মাদনায় মেতে ওঠে, ফলস্বরূপ বিয়ার বিক্রি ৮০% বৃদ্ধি পায়। সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়, যার মধ্যে স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান এবং কনডম বিতরণ অন্যতম।

পেন্টেকস্ট

পেন্টেকস্ট হলো খ্রিস্টীয় উৎসব, যা ধর্মীয় ধারা অনুসরণ করে পালিত হয়। এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খ্রিস্টান সম্প্রদায় একত্রিত হয় এবং বিভিন্ন প্রার্থনা ও পৌরাণিক অনুষ্ঠান পালন করে। এই সময় ব্রাজিলের চার্চগুলি বিশেষ করে অলঙ্কৃত হয় এবং বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। পেন্টেকস্ট উৎসব ব্রাজিলের ধর্মীয় বৈচিত্র এবং সোসাইটি গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

FAQ

ব্রাজিল কোন মহাদেশে অবস্থিত?

ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত, যা এর ভৌগোলিক বিশালতা ও বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত।

ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যা কত?

ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যা প্রায় 213 মিলিয়ন, যা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে পরিচিত।

ব্রাজিল কোন বছরের দিকে স্বাধীনতা লাভ করে?

ব্রাজিল ১৮২২ সালে পর্তুগালের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

ব্রাজিলের সরকারি ভাষা কি?

ব্রাজিলের সরকারি ভাষা হল পর্তুগিজ।

কোন খেলা ব্রাজিলের জাতীয় ক্রীড়া হিসাবে পরিচিত?

ফুটবল হল ব্রাজিলের জাতীয় ক্রীড়া এবং এটি সারা দেশে গভীর জনপ্রিয়তা ভোগ করে।

আমাজন রেইনফরেস্ট কোথায় অবস্থিত?

আমাজন রেইনফরেস্ট ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৃষ্টি বন।

ব্রাজিলের সবচেয়ে পরিচিত উত্সব কোনটি?

কার্নিভাল হল ব্রাজিলের সবচেয়ে পরিচিত উত্সব, যা সারা বিশ্বে আনন্দ এবং রঙিন উত্সব হিসেবে বিখ্যাত।

ব্রাজিলিয়ান ঐতিহ্যবাহী খাদ্যগুলোর মধ্যে কোনটি বিখ্যাত?

ফেইজোজাদা, একটি মাংস ও বিনসের সম্মিলনে প্রস্তুত করা খাবার, ব্রাজিলিয়ান ঐতিহ্যবাহী খাদ্যগুলোর মধ্যে বিখ্যাত।

ব্রাজিলের আর্থিক কেন্দ্র কোন শহরটি?

সাও পাওলো হল ব্রাজিলের আর্থিক কেন্দ্র এবং এটি দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনের মূল কেন্দ্রীভূত।

ব্রিজাতন্তর ক্রীড়ায় ব্রাজিল ক’বার বিশ্বকাপ জয় করেছে?

ব্রাজিল পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button