সর্দির সাথে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ?

আমরা মধ্যে প্রায় ৬০% মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে নাক থেকে রক্তপাত জনিত সমস্যায় পড়েছি। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় উচ্চ রক্তচাপ, অনীহা, যকৃত সংক্রান্ত রোগ, যেমন জন্ডিস বা লিভার সিরোসিস, রক্ততন্ত্রের জন্মগত সমস্যা, রক্তের বিকার যেমন এনিমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন এসপিরিন।

সর্দির সময় যখন নাক দিয়ে রক্ত পড়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়, অনেক সময়ে তা হয় শুষ্ক বাতাস, আর্দ্রতার কমতি, গরম আবহাওয়ার বায়ু, নাকে আঘাত, অ্যালার্জি বা এছাড়াও বিভিন্ন কারণের দ্বারা। আমরা যখন নাসিকা রক্তস্রাব এর সাথে মুখোমুখি হই, তা হোক হঠাৎ সংঘটিত বা ক্রমাগত, তখন আমাদের অবশ্যই ধৈর্য এবং সচেতন থাকা উচিত।

নাসিকা স্বাস্থ্যে সর্দি কেমন প্রভাব ফেলে

সর্দি যে কেবল সাময়িক অসুবিধা তা নয়, এটি নাসিকা স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। নাসিকা সংক্রমণ এবং নাসিকা রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা আবশ্যক। সর্দি সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষণ এবং এর ফলে নাকের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলি ঘটে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সর্দি সংক্রমণের লক্ষণ

  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত নাক ঝরা।
  • নাক ও গলা জ্বালাপোড়া।
  • সাধারণ অস্বস্তি এবং মাথা ভার হয়ে থাকা।
  • বারবার হাঁচি আসা যা নাসিকা সংক্রমণের এক প্রধান লক্ষণ।

নাসিকা ঝিল্লির ইনফ্লেমেশন

সর্দির কারণে নাসিকা ঝিল্লির উপর প্রদাহ হতে পারে, যা নাকের অভ্যন্তরের শ্লেষ্মা পেশির স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রভাবিত করে। নাকে প্রদাহ এবং স্বাভাবিক পেশির গঠনের বিঘ্ন ঘটায়, যা আবার নাসিকা রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুনঃ  ভিটামিন এ জাতীয় খাবার

সর্দির লক্ষণ গুলি এবং নাসিকা স্বাস্থ্যের মধ্যে এই সম্পর্ক বুঝতে গেলে, আমরা সর্দিকে আরও গুরুত্বের সাথে নিতে পারি এবং এর প্রতিকারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারি। সর্দি আমাদের নাসিকার শ্লেষ্মাকে সংক্রমিত করে এবং নাসিকা ঝিল্লির ইনফ্লেমেশন ঘটায়, যা কিনা অবহেলা করলে গুরুতর নাসিকা রোগে পরিণত হতে পারে।

পরিবেশের পরিবর্তন এবং নাকের রক্তপাত

পরিবেশের পরিবর্তন যেমন শুষ্ক আবহাওয়া এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন আমাদের নাসিকা স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে এবং নাক দিয়ে রক্তপাতের ঘটনাকে বাড়িয়ে তোলে। এই বিষয়ে সচেতনভাবে জানার মাধ্যমে আমরা এর প্রতিকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারি।

শুষ্ক আবহাওয়া

শুষ্ক বাতাসের প্রভাবে নাসিকা মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুকিয়ে যেতে পারে এবং ফাটল ধরতে পারে। এটি নাকের রক্তপাত ঘটানোর একটি প্রধান কারণ। শুষ্ক বাতাসে নাকের ঝিল্লিগুলির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং নাসিকা মুখের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে যথাযথ আর্দ্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।

তাপমাত্রার পরিবর্তন

তাপমাত্রার পরিবর্তন, যেমন খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবে নাকের ভিতরের শিরা সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যা রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। গরমে সরাসরি নাকের ঝিল্লির উপর চাপ পড়ে, যা ফাটল এবং রক্তপাত ঘটাতে পারে, অন্যদিকে ঠান্ডা শুষ্ক বাতাসও একই সমস্যা সৃষ্টি করে।

এই ধরনের পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাবের জানার মাধ্যমে এবং সঠিক প্রস্তুতি এবং প্রতিকারের মাধ্যমে নাসিকা স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।

অ্যালার্জির প্রভাব

অ্যালার্জি বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে যা প্রায়শই নাসিকা অ্যালার্জিঅ্যালার্জিক হিস্ট্যামিন প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচিত। এসব রিঅ্যাকশনের ফলে নাক থেকে রক্তপাত ঘটতে পারে, যা অনেক সময় অ্যালার্জি সংকেত হিসাবে ধরা হয়।

অ্যালার্জির লক্ষণ

নাসিকা অ্যালার্জি প্রায়ই খুশকি, চুলকানি, এবং নাসিকা পথে স্বাভাবিক ফাংশন ব্যাহত হওয়ার মতো লক্ষণের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত অ্যালার্জিক হিস্ট্যামিন প্রতিক্রিয়ার ফলে দেখা দেয়, যা শারীরিক পরিবেশের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে মূল্যায়িত হয়।

অ্যালার্জি থেকে রক্তপাতের সম্ভাবনা

নাক দিয়ে রক্তপাতের ব্যাপারে অ্যালার্জি একটি কমন কারণ হতে পারে। এটি নাসিকা মেমব্রেনের প্রদাহ ও ফুলে যাওয়ার ফলে ঘটে, যা অ্যালার্জি সংকেত হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। সেই সাথে, সাধারণ অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের অংশ হিসেবে অ্যালার্জিক হিস্ট্যামিন প্রতিক্রিয়া নাসিকা অঞ্চলের সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা প্রদাহ ও রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

আরও পড়ুনঃ  লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

অতিরিক্ত জলীয়তা হারানো

সর্দির সময় প্রায়শই আমাদের শরীর থেকে বেশি পরিমাণে জল নিঃসরণ হয়, যা ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে। এই জলীয়তা হারানো নাসিকা স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে থাকে।

সর্দির সময় পানির গুরুত্ব

সর্দির সময় শরীরের পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে নাসিকা পথ এবং আন্ত্রজালীয় নালী সঠিকভাবে আর্দ্র থাকে, যা সংক্রমণ এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ডিহাইড্রেশনের প্রভাব

ডিহাইড্রেশন ঘটলে নাসিকা স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নাকের মাধ্যমে বায়ু প্রবাহের সাথে আর্দ্রতা হ্রাস পেলে, নাকের মধ্যভাগের শ্লেষ্মা ঝিল্লি খুব শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় রক্তপাত ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে, সঠিক জলীয়তা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।

সার্বিকভাবে, সর্দির সময় প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা একটি ভালো অভ্যাস। এটি নাসিকা পথ আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং জলীয়তা হারানো এবং ডিহাইড্রেশন থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

রাসায়নিক বিষয়বস্তু এবং নাকের সংযোগ

নাকের রক্তপাতের উপসর্গ ও নাকের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমরা যদি রাসায়নিক দূষণ এবং তারপর নিবিড়ভাবে সিগারেট ধোঁয়ার প্রভাব অনুধাবন করি, তবে তা উপকারী হবে। এই বিষয়টি বিস্তারিত পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সাথে নাকের একটি সরাসরি সংযোগ রয়েছে।

সিগারেট ধোঁয়া ও নাকের স্বাস্থ্য

সিগারেট ধোঁয়া নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ ঘটায় এবং এই প্রদাহ নাকের রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সিগারেটে থাকা নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ নাকের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যা সিগারেট ধোঁয়ার ব্যাপারে 7 আলোচনা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য।

বায়ু দূষণ

বায়ু দূষণ নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লি ও নাকের রক্তপাতের উপসর্গগুলির ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বায়ুতে মিশ্রিত ধূলিকণা, শিল্প বর্জ্য পদার্থ, এবং যান্বাহনের গ্যাস নাসিকা পথের উপর প্রাথমিক হামলা চালায়, যা পরবর্তীতে নাকের ভেতরের প্রদাহ এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

  1. নাকের রক্তপাতের উপসর্গ নির্ণয় করা
  2. সিগারেট ধোঁয়ার প্রভাব এড়ানো
  3. বায়ু দূষণের প্রভাব হ্রাস
আরও পড়ুনঃ  ইনহেলার ব্যবহারের নির্দেশিকা

সচেতনতার মাধ্যমে এবং উপযুক্ত প্রতিরোধক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাসিকা স্বাস্থ্য রক্ষার্থে এগিয়ে গেলে, নাকের রক্তপাতের উপসর্গ এবং সার্বিক নাসিকা জটিলতা হ্রাস পাবে।

শ্বাসনালীতে চাপ

সর্দি আক্রান্ত হলে বেশ কয়েকটি উপসর্গ প্রত্যক্ষ করা যায়, যার মধ্যে হাঁচি ও কাশি প্রচুর। এই দুই প্রতিক্রিয়া শ্বাসনালীর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে, যা পরবর্তীতে নাক দিয়ে রক্তপাতের একটি কারণ হতে পারে। সর্দির সময় হাঁচি এবং কাশি সংবেদনশীল নাসিকা ঝিল্লির উপর আরো চাপ সৃষ্টি করে, যা এই সমস্যার সাথে সংযুক্ত।

হাঁচি ও কাশি

হাঁচি ও কাশি দুটি সংক্রামক সর্দির প্রাকৃতিক বিক্রিয়া। এই দুইটি প্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে, যার দ্বারা নাক এবং গলার শ্লেষ্মা কোষ বাইরের জীবানুকে বের করে দেয়। তবে, অতিরিক্ত হাঁচি ও কাশি সর্দির সময় নাক রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এই দুইটি চাপ প্রয়োজন অতিরিক্ত হলে, তাই নাসিকা ঝিল্লিতে সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তোলে এবং পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটাতে পারে।

উপস্থিত সাংখ্যিকীয় ডেটা বিবেচনা করে, আমরা আরও জানতে পারি যে কিছু শর্ত, যেমন মেনিয়ার রোগ (Meniere’s disease), অংশীকা জ্বালা (ear discharge), এবং মস্তিষ্কপ্রাপ্তি (mastoiditis) এর মতো উপস্থিতিও রক্তপাত হতে পারে। এছাড়াও, নানাবিধ প্রকার বেদনাদায়ক লক্ষণ, যেমন ব্যথা (aching pain), শার্প পেইন (sharp pain), এবং টুইচিং পেইন (twitching pain) উল্লেখ করা হয়েছে, যা নাক রক্তপাতের সাথে সম্পর্ক রেখে চলতে পারে। সজাগ থাকার এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যচর্চার মাধ্যমে এইসব গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলির প্রতি খেয়াল রাখা অপরিহার্য।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button