ইমরান হাশমী
বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান এবং জনপ্রিয় অভিনেতা, ইমরান হাশমী, যিনি ১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ মহারাষ্ট্র, ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং হিট সিনেমার জন্য তিনি সরল দর্শকদের মন জয় করেছেন। ইমরান হাশমী জীবনী কিছুটা উত্থান-পতনের গল্প হলেও, এটি উপলব্ধি করার মতো একটি সংগ্রাম, যা তিনি নিজেই অতিক্রম করেছেন।
ইমরান হাশমী তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত $”ফুটপাথ” ছবির মাধ্যমে। এরপর তিনি একের পর এক সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইমরান হাশমী সিনেমা হলো “মার্ডার” (২০০৪), “গ্যাংস্টার” (২০০৬) এবং “জান্নাত” (২০০৮)। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের মতো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যা তার পেশাগত জীবনের এক অন্যতম মাইলফলক।
ইমরান হাশমীর প্রাথমিক জীবন
ইমরান হাশমী, বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা, ১৯৭৯ সালের ২৪ মার্চ মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং ক্যারিশম্যাটিক চেহারার জন্য পরিচিত।
জন্ম ও পরিবার
ইমরান হাশমীর পরিবার সম্পর্কে বলতে গেলে, তাঁর বাবা সৈয়দ আনোয়ার হাশমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, আর মা মাহেররা হাশমি গৃহিণী হিসেবে সংসার সামলাতেন। ইমরান হাশমী তাঁর শৈশব এবং কৈশোরের বেশিরভাগ সময় মুম্বাইতে কাটিয়েছেন।
শিক্ষা ও পড়াশোনা
ইমরান হাশমী শিক্ষা জীবন শুরু করেন জমনাবাঈ নরসি স্কুল থেকে। পরে তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যডেনহাম কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইমরান হাশমীর শিক্ষা তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা তাঁকে একজন সফল অভিনেতা হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
অভিনয় জীবনের শুরু
ইমরান হাশমীর অভিনয় জীবনের শুরু হয় বিক্রম ভাটের থ্রিলার সিনেমা ‘ফুটপাথ’ দিয়ে যা ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। এই সিনেমা তাকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমবার পরিচিত করে তুললেও তার আসল ব্রেকথ্রু আসে ২০০৪ সালে।
ফুটপাথ (২০০৩)
‘ফুটপাথ’ সিনেমাটির মাধ্যমে ইমরান হাশমী প্রথম সিনেমা হিসেবে বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। তবে এটি তার ক্যারিয়ারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। দর্শকের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য সিনেমাটিতে থ্রিলারের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল, যার গল্প ছিল অপরাধ ও প্রতিশোধ নিয়ে।
মার্ডার (২০০৪)
তবে ইমরান হাশমীর আসল সাফল্য আসে ‘মার্ডার’ সিনেমার মাধ্যমে। এই সিনেমা বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য অর্জন করে এবং ইমরান হাশমী মার্ডার সিনেমার মাধ্যমে এক নতুন তারকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। প্রযোজক মহেশ ভাটের সাথে কাজ করে ইমরান খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ‘মার্ডার’ তার ক্যারিয়ারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায় এবং তাকে মূল ধারার বলিউড অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
মহেশ ভাট এবং ভাট পরিবার
ইমরান হাশমী ভাট পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার মামা মহেশ ভাট এবং মুকেশ ভাট বলিউডের প্রসিদ্ধ নির্মাতা। মহেশ ভাটের জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ সালে এবং তিনি বর্তমানে ৭৬ বছর বয়সী। তাঁর সিনেমা এবং প্রযোজনা গুণাবলীর কারণে ভাট পরিবার পরিচিতি পেয়েছে।
ভাট পরিবারের সদস্য
ভাট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন পূজা ভাট এবং আলিয়া ভাট। মহেশ ভাট ও মুকেশ ভাটের প্রযোজনায় ইমরান হাশমী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
- মহেশ ভাট, প্রসিদ্ধ পরিচালক এবং প্রযোজক
- মুকেশ ভাট, বিখ্যাত প্রযোজক
- পূজা ভাট, অভিনেত্রী এবং পরিচালক
- আলিয়া ভাট, বলিউড অভিনেত্রী
মহেশ ভাটের সাথে সম্পর্ক
মহেশ ভাট ইমরান হাশমীর ক্যারিয়ারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মহেশ ভাটের পরিচালনা এবং প্রযোজনায় বেশ কয়েকটি সফল ছবি ইমরান হাশমীর ক্যারিয়ারের মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে মহেশ ভাটের পরিচালিত “জখম” চলচ্চিত্রে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। ইমরান হাশমী ভাট পরিবার এবং মহেশ ভাটের সাথে এই দীর্ঘ সম্পর্ক তাদের পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করেছে।
মহেশ ভাট ইমরান হাশমীএবং ভাট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রচেষ্টায় বলিউডে তাদের অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।
Emraan Hashmi এর সাফল্যের গল্প
ইমরান হাশমী সাফল্য বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এক নজির স্থাপন করেছে। তাঁর বাণিজ্যিক সফল ছবিগুলি তাঁকে বলিউডের এক জনপ্রিয় তারকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাণিজ্যিক সফল ছবি
‘মার্ডার’ (২০০৪) ইমরান হাশমীর প্রথম বড় হিট সিনেমা, যা তাঁকে বলিউডে এক চিন্তিত তারকা হিসাবে তুলে ধরে। একের পর এক হিট সিনেমা যেমন ‘জান্নাত’ (২০০৮), ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’ (২০১০), ‘দা ডার্টি পিকচার’ (২০১১), ‘রাজ ৩ডি’ (২০১২), এবং ‘এক থি দায়ান’ (২০১৩) ইমরান হাশমীর সাফল্যের নজির। এছাড়া, ‘রাজ’ ফ্র্যাঞ্চাইজি ১৫০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব সংগ্রহ করে, যা ইমরান হাশমী হিট সিনেমার মধ্যে অন্যতম।
ক্যারিয়ারের মাইলফলক
ইমরান হাশমীর সাফল্য শুধু বাণিজ্যিক সিনেমাতে আটকে নেই, তাঁর ক্যারিয়ারের মাইলফলকগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। ‘রাজ ৩’ সিনেমাটি হরর জেনারে বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। সেন্সরশিপ নিয়ে তাঁর বক্তব্য এবং সুপারন্যাচারাল বিষয়ক নিয়ে তাঁর সংবেদনশীলতা দেখায় যে ইমরান হাশমী শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধরণের চরিত্রে বাঁধা পড়ে থাকতে চান না। এছাড়া, কলকাতার স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তিনি অনেকটাই মুগ্ধ, যেখানে ভবিষ্যতে তাঁর সিনেমার শুটিং করার ইচ্ছা রয়েছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
ইমরান হাশমীর ক্যারিয়ার সবসময়ই বিতর্ক ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। তাঁর অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে তিনি ‘চুম্বন রাজা’ হিসেবে পরিচিতি পান। এই উপাধি তাকে অনেকের নজরে আনে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি অনেক ইমরান হাশমী সমালোচনার শিকারও হন।
মার্ডার এবং আশিক বানায়া আপনে ছবির মাধ্যমে তিনি বোল্ড সেটিং এবং দৃশ্যে অভিনয় করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। ইমরান হাশমী বিতর্ক যেন সবসময় তাঁর সঙ্গে লেগে থাকে। তথাপি, তিনি নিজেকে বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর অভিনয় দক্ষতা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ঘরানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
বিভিন্ন সময়ে ইমরান হাশমীকে বিভিন্ন মন্তব্য এবং দৃশ্যে জন্য কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে তাঁর সাহসিকতা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাকে ইমরান হাশমী বিতর্ক এবং ইমরান হাশমী সমালোচনার মুখোমুখি থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি বলিউডে নিজের একটি স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
ইমরান হাশমীর পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবন
ইমরান হাশমীর জীবন শুধু সিনেমার সাফল্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইমরান হাশমী ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বিবাহ এবং সন্তান
২০০৬ সালে ইমরান হাশমী পারভীন শাহানির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্রসন্তান রয়েছে, নাম আয়ান। ইমরান হাশমী পরিবার সবসময়ই প্রচারের আলোয় থেকেছে, বিশেষত তাঁদের ছেলে আয়ানের ক্যান্সারের লড়াই যখন প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনাটি ইমরান এবং তাঁর পরিবারের জন্য এক গভীর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যক্তিগত সংগ্রাম
ছেলে আয়ানের ক্যান্সারের সাথে অনবরত সংগ্রাম করা সত্ত্বেও, ইমরান নিজের পেশাদার জীবনেও সফলতা ধরে রেখেছেন। এই সংগ্রাম ইমরান হাশমী ব্যক্তিগত জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করে, যা প্রেরণার একটি অমূল্য উৎসে পরিণত হয়েছে। কঠিন সময়গুলোতেই তিনি অধিক শক্তি সঞ্চয় করেছেন এবং পরিবারকে অটুট রেখেছেন। ইমরান হাশমী পরিবার তাঁর জীবনে সবসময়ই অতুল্য এক শক্তি হিসেবে থেকেছে।
চলচ্চিত্রের তালিকা
ইমরান হাশমী, যিনি বলিউডে তাঁর অনন্য অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন, তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর একটি বিস্তৃত তালিকা রয়েছে। ইমরান হাশমী সিনেমা তালিকা এতটাই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে এতে বিভিন্ন ঘরানার হিট ছবিগুলি অন্তর্ভুক্ত আছে।
- ফুটপাথ (২০০৩): ইমরান হাশমীর ডেবিউ সিনেমা যা ভক্তদের মাঝে তাঁকে পরিচিত করে তুলেছিলো।
- মার্ডার (২০০৪): এই ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিল এবং ইমরান হাশমীর ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে গণ্য হয়।
- জান্নাত (২০০৮): এই ছবিটি ইমরান হাশমিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছিল এবং তাঁর অভিনয় প্রতিভার প্রশংসা করেছিল।
- রাজ ৩ডি (২০১২): এই চলচ্চিত্রটি ভৌতিক এবং রোমাঞ্চকর থিমকে কেন্দ্র করে, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
- দা ডার্টি পিকচার (২০১১): বায়োগ্রাফিক্যাল ড্রামা, যেখানে ইমরান হাশমীর চরিত্র দর্শকদের মন জয় করেছিল।
- এক থি দায়ান (২০১৩): এই মুভিতে ইমরান হাশমীর অভিনয় দর্শকদের ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিল।
- হারামি (২০২০): এই ছবির জন্য ইমরান হাশমী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো।
এই ইমরান হাশমী সিনেমা তালিকা বলিউড তারকার নানা ধরণের ভূমিকা এবং অভিনয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শন তুলে ধরে। ভক্তদের কাছে ইমরান হাশমী নামটাই যথেষ্ট, যা তাঁর সিনেমাকে মারাত্মক হিট করার জন্য। তারা তাঁকে বিভিন্ন চরিত্রে দেখতে ভালোবাসে, যা তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে পালন করেন।
বই লেখার যাত্রা
ইমরান হাশমীর জীবনের একটি বড় অধ্যায় হল তার বই লেখার যাত্রা। তার ছেলে আয়ান হাশমীর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে উন্মোচিত হয়েছে নানা না বলা গল্প। এই সংগ্রামী জীবনের সাথে তার আত্মার সংযোগ তৈরি করে দিয়েছে এক অভিজ্ঞান।
ছেলের সাথে ক্যান্সারের মোকাবিলা
ইমরান হাশমীর ছেলে আয়ান হাশমী যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তখন শুরু হয় ইমরানের জীবনের একটি কঠিন অধ্যায়। বাবা হিসেবে সন্তানের এই যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট দেখতে দাঁড়ানো খুব কঠিন ছিল। কিন্তু ইমরান হাশমী কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি তার ছেলের সাথে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন প্রত্যেকটি মুহূর্ত, এবং সেইসব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে লিখেছেন একটি মহাকাব্যিক বই।
“The Kiss of Life” বইয়ের প্রসঙ্গ
ইমরান হাশমী তার ছেলের ক্যান্সারের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন “The Kiss of Life”। এই ইমরান হাশমী বই পড়ে যে কেউই উদ্বুদ্ধ হবেন। বইটির মূল মূল্য ছিল TK. 718, যেখানে ডিসকাউন্টের পরে আপনি এটি পাবেন TK. 553-তে, আর আপনার সঞ্চয় হবে TK. 165 কিংবা ২৩%। বইটি পেল অত্যন্ত উচ্চমানের রেটিং, গড়ে ৪.৭৯ (৫-এর মধ্যে)। এছাড়াও, এর স্তুতিমূলক রিভিউ সংখ্যা হল ৪ এবং স্টক বর্তমানে সীমিত, মাত্র ৫টি কপি বাকি আছে।
ইমরান হাশমী যে ভাবে তার ছেলের জীবনের ক্যান্সার যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন “The Kiss of Life”, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই গুরুত্বপূর্ণ জীবন কাহিনী আপনাকে নতুন ভাবে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।