হাতিরঝিল
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হাতিরঝিল একটি আধুনিক শহর বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। চোখজুড়ানো এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি জলাধার নয়, বরং এটি নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৩.০২ বিলিয়ন লিটার পানি ধারণক্ষমতা সহ এই প্রকল্পটি মানুষের জন্য একটি অবসর কাটানোর স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে।
হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পটি ১৯.৭১ বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে করা হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি। RAJUK, LGED এবং ঢাকা WASA সহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রকল্পে তৈরি হয়েছে ৪৪.৭৫ মিটার লম্বা ৪টি প্রধান সেতু, ৮০ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড এবং ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড। পরিবেশ সংরক্ষণে ১০.৪৫ বিলিয়ন টাকার ব্যাপক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। হাতিরঝিল বিনোদন, উন্নয়ন এবং ঢাকা পরিবেশ সংরক্ষণের একটি কার্যকরী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
হাতিরঝিলের ইতিহাস
হাতিরঝিল, যা বর্তমানে ঢাকা শহরের একটি প্রাণকেন্দ্র, এর ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন। হাতিরঝিলের নামকরণ ও এর জনপদের পেছনে রয়েছে বহু পুরনো কাহিনী।
নামকরণের ইতিহাস
প্রাচীনকালে, হাতিরঝিলের এই এলাকা ভাওয়াল রাজার এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে রাজপরিবারের হাতি পালনের জন্য বিশেষ স্থান নির্ধারিত ছিল। একারণেই জায়গাটির নামকরণ হয় হাতিরঝিল। এই হাতিরঝিল ইতিহাস ভাওয়াল রাজাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। দুটি মোটিভ নাম তৈরির পিছনে কাজ করে, যেখানে একটি হচ্ছে ‘হাতি’ এবং অপরটি ‘ঝিল’ বা ‘জলাধার’। ঠিক এই কারণেই ঢাকা ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে হাতিরঝিল একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
ভাওয়াল রাজার এস্টেট
ভাওয়াল রাজার এস্টেট ছিল একটি বিরাট এলাকা যা হাতিরঝিলের মূল পরিচয়ের অংশ। এখানকার জমিতে হাতি পালনের প্রচলনই ছিল এখানকার মূল বৈশিষ্ট্য। এই এলাকার জনপদের বাসিন্দারা রাজপুত্রদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ভাওয়াল রাজার এস্টেট রামপুরা, তেজগাঁও এবং রমনা থানার অধীনে ছিল, যা এখন হাতিরঝিলে অন্তর্ভুক্ত।
২০১৮ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০তম থানা হিসেবে হাতিরঝিল থানা গঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি ঢাকা ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
উন্নয়ন ও পরিকল্পনা
হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পটি ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প। এটি মূলত শহরের পরিবেশ উন্নতি, স্থাপত্য এবং বসবাসের যোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রকল্পে পরিকল্পনামাফিক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা মুক্তি এবং শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয়ের বিশ্লেষণ
হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৮ কোটি টাকার প্রয়োজন হয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, যা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সংগঠিত করেছে। উন্নয়নের প্রথম ধাপটি রাজউকের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন, এবং তখন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
অবকাঠামোর উন্নতি
হাতিরঝিল অঞ্চলটি ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। এখানে ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেস রোড, ৪৭৭.২৫ মিটার লম্বা চারটি ব্রিজ, ৪০০ মিটার দীর্ঘ চারটি ওভারপাস, এবং ৮০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে। এই উন্নয়নগুলি শহরের যানজট কমাতে এবং নাগরিকদের আরামদায়ক যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ
ঢাকা শহরের পরিবেশ উন্নতির লক্ষ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পে নানা ধরনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জলজ পরিবেশ রক্ষার্থে ৩০০ টার বেশি হাঁস ছাড়া হয়েছে, যা এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়াও, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং গাছের সংরক্ষণের জন্য ১৭১ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে যা নিয়মিত পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ করছে। এটিকে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে যা ঢাকার স্থাপত্য তথা পরিবেশের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করছে।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল ঢাকার পরিবেশ উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে শহরের বজ্রপাতে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করতে পারে এবং বন্যার প্রভাবকে কমিয়ে আনা যায়। এই ক্ষেত্রটি জনসাধারণের জন্য একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে যা ঢাকা শহরের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ
প্রকল্পটি হাতিরঝিলের উদ্দেশ্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে নিবদ্ধ। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানিকে সংগ্রহ করে শুষ্ক মৌসুমে পুনঃব্যবহার করার উপায় তৈরি করা হয়েছে। এটি নগরীর পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এবং পানি সংরক্ষণ করে পরিবেশ উন্নয়ন থেকেও নিঃসন্দেহে অবদান রাখছে।
জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ
হাতিরঝিল প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা ও বন্যার চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী জল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা খাল, দিঘি ও সংরক্ষণাগারগুলোর মাধ্যমে শহরের পানি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ঢাকার পরিবেশ উন্নয়ন ও ঢাকার সৌন্দর্যযে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ
হাতিরঝিল প্রকল্পটি যানজট নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চারটি বৈদ্যুতিক সেতু, এয়ারিয়াল রোড এবং পদচারী পথের নির্মাণ ঢাকার যানজট হ্রাসে সহায়তা করছে। এছাড়াও, সাইকেল লেন ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা পথগুলোর নির্মাণ ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি
প্রকল্পটি নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। চারপাশে বৃক্ষরাজির সমারোহ, দৃষ্টিনন্দন সেতু, এবং বাহারি ফোয়ারাগুলো ঢাকা শহরের সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এটি ঢাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
হাতিরঝিলের বিনোদন কেন্দ्र
হাতিরঝিল বিনোদন কেন্দ্রটি ঢাকার হৃদয়ে এক মনোরম স্থান হিসেবে পরিচিত। হাতিরঝিল পর্যটন এবং প্রাকৃতিক উদ্যান হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য একটি গন্তব্য। এখানে আগত লোকজনের জন্য নানা রকম বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে যা তাদের মনোরঞ্জন করে তোলে।
এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো নজরকাড়া বাহারি ফোয়ারা। সন্ধ্যা বেলায় ফোয়ারাগুলোর আলোকসজ্জা আর রঙিন পানি-ধারা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়াও হাতিরঝিলের বিভিন্ন সেতু এবং পথে পথে সাজানো উদ্যানগুলো পর্যটকদের আনন্দ দেয়।
যারা একটু ভিন্নধর্মী কিছু খুঁজছেন, তাদের জন্য হাতিরঝিলের পানি পথে পালতোলা নৌকায় নৌবিহার একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি হাতিরঝিল বিনোদনের অন্যতম সেরা আকর্ষণ।
পর্যটকদের আরও বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক উদ্যান এবং ওয়াকওয়ে। এসবের মাধ্যমে নগর জীবন থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে এখানে আগতদের প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার সুযোগ মেলে।
সব মিলিয়ে, হাতিরঝিল বিনোদন কেন্দ্র আমাদের নগর জীবনের এক অবিস্মরণীয় অংশ। হাতিরঝিল পর্যটন তাদের বিনোদন এবং বিশ্রামের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান।
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য্য ও আকর্ষণ
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য্য এবং নানা রকম আকর্ষণ পর্যটকদের মন কাড়ে। এখানে আসা পর্যটকরা হাতিরঝিল আকর্ষণ দেখেই মুগ্ধ হন। বিশেষ করে দৃষ্টিনন্দন সেতু, নজরকাড়া বাহারি ফোয়ারা, শ্বেতশুভ্র সিঁড়ি এবং পালতোলা নৌকায় নৌবিহার হাতিরঝিল পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটি সবার কাছে একটি স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।
দৃষ্টিনন্দন সেতু
হাতিরঝিলে দৃষ্টিনন্দন সেতুগুলি রাতের বেলায় আলোর ঝলকানিতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট সৃষ্টি করে। রঙিন আলোকসজ্জা এবং সেতুর আকর্ষণীয় নকশা পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে।
নজরকাড়া বাহারি ফোয়ারা
হাতিরঝিলে ফোয়ারার রঙিন আলোকধারা রাতের আকাশকে রঙিন করে তোলে। বিশেষ করে উৎসবের সময় এসব ফোয়ারা পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং হাতিরঝিল আকর্ষণ ব্যতিক্রমী করে তোলে।
শ্বেতশুভ্র সিঁড়ি
হাতিরঝিলের শ্বেতশুভ্র সিঁড়িগুলি পার্কের এন্ট্রি পয়েন্টগুলিতে বিশেষ বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলি দিয়ে হাঁটা গেলে হাতিরঝিলের সব সৌন্দর্য্য অবলোকন করা যায়।
পালতোলা নৌকায় নৌবিহার
হাতিরঝিলের পালতোলা নৌকায় নৌবিহার পর্যটকদের কাছে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা এনে দেয়। নৌবিহারের সময় পরিবেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সরাসরি উপভোগ করা যায়, যা হাতিরঝিল পর্যটন এর বড়ো আকর্ষণ।
হাতিরঝিলের উদ্ভিদ ও উদ্যান
হাতিরঝিল এলাকাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উদ্যানের বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছপালা দ্বারা স্থানীয় এবং প্রবাসী দর্শকদের মুগ্ধ করে। এই সবুজ পরিবেশ চোখকে প্রশান্তি দেয় এবং এটির বিশেষত্ব বাড়িয়ে তোলে।
রাস্তার পাশে বৃক্ষরাজি
হাতিরঝিলের রাস্তাগুলির পাশে সুবিন্যস্তভাবে লাগানো বৃক্ষরাজি দেখতে অপরূপ সুন্দর। বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি, ফলজ, এবং ছায়া প্রদানকারী গাছে হাতিরঝিলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করেছে। এই এলাকায় হাতিরঝিল উদ্ভিদ যেমন- তমাল, রেইনট্রি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ইত্যাদি পাওয়া যায় যা নগরীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই গাছপালাগুলো পরিবেশে অক্সিজেন যোগায় এবং বায়ু দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখে।
ফুলের সমারোহ
হাতিরঝিলের উদ্যান জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রঙিন ফুলের সমারোহ। এখানে গোলাপ, চাঁপা, গাঁদা, জবা, সূর্যমুখী প্রভৃতির বাহারি ফুলগুলি হাতে তৈরি ল্যান্ডস্কেপকে আরও মোহনীয় করে তোলে। এই ফুলগুলোর ঘ্রাণে এবং রঙের মায়াজালে হাতিরঝিলের প্রকৃতিকে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তোলে। উদ্যানের চারপাশে এই ফুলের উপস্থিতি দর্শকদের মনে এক ধরণের প্রশান্তি ও আনন্দ এনে দেয়।
হাতিরঝিল ভ্রমণের মাধ্যম
হাতিরঝিল ভ্রমণ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে। এ অঞ্চলে ভ্রমণ করা সহজতর করার জন্য বাস, সিএনজি ও বাইসাইকেল ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি ব্যবস্থার জন্য কিছু সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের জন্য জানা গুরুত্বপূর্ণ।
বাসে আসা
বেশ কিছু বাস রুট দিয়ে আপনি হাতিরঝিলে পৌঁছাতে পারেন। হাতিরঝিল পরিবহন ব্যবস্থা আপনাকে সুবিধাজনকভাবে যাতায়াতের সুযোগ প্রদান করে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। বাসে ভ্রমণ সাধারণত সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ।
সিএনজি ভাড়া
ঢাকা শহরে সিএনজি একটি দ্রুত এবং সুবিধাজনক যানবাহন। যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে একা বা কম লোক নিয়ে চলাচল করতে চান, তাহলে সিএনজি ব্যবহার করে হাতিরঝিল ভ্রমণ করা বেশ ভালো বিকল্প হতে পারে। সিএনজি ভাড়ার পরিমাণ নির্ভর করে গন্তব্যস্থলের দূরত্বের উপর।
বাইসাইকেল
পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর ভ্রমণের জন্য বাইসাইকেল একটি চমৎকার মাধ্যম। হাতিরঝিলে অনেকেই বাইসাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। এটি একদিকে যেমন শরীরচর্চার সুযোগ দেয়, তেমনই হাতিরঝিল পরিবহন ব্যবস্থাকেও সহজতর ও ত্বরান্বিত করে তোলে। এছাড়া, বাইসাইকেল ভ্রমণে কোন রকম যানজটের সমস্যাও থাকে না।
Hatirjheel
হাতিরঝিল ঢাকা শহরের একটি প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। হাতিরঝিলের মোট জনসংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৭৯,৯৭৪ জন। ২৩ মিটার (৭৫ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় জোনে রয়েছে, যা UTC+6 (BST) হিসেবে পরিচিত। এখানে পোস্টালের কোড ১২০৮ এবং এরিয়া কোড ০২।
হাতিরঝিলের প্রকল্পটির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭ কোটি টাকা পানির পরিশোধনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি বাণিজ্যিক স্থান এবং অন্যান্য সেবার মাধ্যমে মাত্র ১০ কোটি টাকা আয় করে, যার ফলে অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়। করওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাথালবাগান এবং বাংলামটর সংলগ্ন এলাকা থেকে আসা বর্জ্যে হাতিরঝিল দূষিত হচ্ছে। এই আলোকসজ্জা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সম্পূর্ণ কভার করা সম্ভব হয় না।
গুলশান সাউথ পার্ক এবং গুলশান লেকওয়েকে হাতিরঝিলের সাথে সংযোগের প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র গতানুগতিক জমি-ব্রিজ উন্নীত করে জলপথ সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা রাজধানীর জলপথ ঐতিহ্যকে উন্নত করতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, একটি হাইকোর্টের ধার্য্যাদেশের উপর আপিল বিভাগ থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, যা হাতিরঝিলকে পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
আমরা গর্বিত যে, আর্কিটেকচার মাস্টার প্রাইজ হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ির সমন্বিত উন্নয়নকে ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার/শহুরে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্রোঞ্জ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। হাতিরঝিল তথ্য প্রাসঙ্গিক এখানে উল্লেখযোগ্য অন্য দিক হলো, প্রকল্পটির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এটি ঢাকা শহরের পরিবেশ এবং নান্দনিকতাকে উন্নত করতে অবদান রেখেছে, যদিও মাঝে মাঝে অর্থনৈতিক বিশাল চাপের সম্মুখীন হতে হয়।