অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে কতক্ষণ লাগে?

অধ্যাপক আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৭ সালে লন্ডনের সেন্ট মেরির হাসপাতালে প্রথম পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন এবং এর কার্যকারিতা প্রথম মানবদেহে পরীক্ষিত হয়েছিল ১৯৪১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান উন্নত প্রযুক্তির ফলে পেনিসিলিনের উৎপাদন বর্তমানে প্রায় ৫০,০০০ ইউনিট/মিলিলিটার, যদিও প্রথম দিকে এটি মাত্র ২ ইউনিট/মিলিলিটার ছিল।

সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে শুরু করে সংক্রমণের ধরন এবং গুরুত্বর উপর ভিত্তি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকাল তখনই নির্ধারিত হয় যখন এটি ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যেমন সেল ওয়াল সিনথেসিস (যেমন বেটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক) এবং সেল মেমব্রেন নষ্ট করে দেওয়া (যেমন পলিমাইক্সিন অ্যান্টিবায়োটিক)। সাধারণ ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব সময় প্রায় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে, স্নায়বিক সংক্রমণ বা অন্যান্য জটিল সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।

প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে বাস করে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রায়শই দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করে মূল লক্ষণ সহজিকরণের জন্য, কিন্তু সময়কাল পরিস্থিতি এবং সংক্রমণ ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

Contents show

অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে?

অ্যান্টিবায়োটিক কার্যপ্রণালী বোঝার জন্য জানা দরকার যে এগুলি ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে হস্তক্ষেপ করে অথবা তাদেরকে ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়াটি আসলে কিভাবে কাজ করে তা আমরা এখানে আলোচনা করবো।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব বিভিন্ন রকমের হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীরকে ধ্বংস করে, যা ব্যাক্টেরিয়াকে সরাসরি মেরে ফেলে। অন্যদিকে, ব্যাক্টেরিয়া-বৃদ্ধিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির হার কমিয়ে দেয়, ফলে ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি পায় না এবং শরীরের ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অ্যান্টিবায়োটিক কার্যপ্রণালী কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এটি না করলে, ব্যাক্টেরিয়া ওষুধটির বিরুদ্ধে রেসিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। অ্যান্টিবায়োটিক কার্যপ্রণালীর সঠিকভাবে প্রয়োগ রোগ নিরাময়ে সহায়তা করলেও, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে রেসিস্ট্যান্সের সমস্যা বেড়েই চলেছে। তাই, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং সঠিক পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাবের নিচ্ছিদ্র কার্যকারিতার জন্য, রোগীকে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রস্রাব, কফ এবং অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট প্রদর্শন করতে প্রায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে, যাতে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং তার মাত্রা নির্ধারণ করতে চিকিৎসক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের বিভিন্ন প্রকারভেদ

অ্যান্টিবায়োটিকের ধরণ একাধিক এবং এদের কার্যকরণ পদ্ধতি ভিন্ন। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি প্রধানত দু-প্রকারে বিভক্ত।

ব্যাকটেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিক

ব্যাকটেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নিরাময় করতে সক্ষম। এরা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর বিরূপণ করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটায়। পেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিকের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড (যেমন, জেন্টামাইসিন) এবং কার্বাপেনেম এক্ষেত্রে কার্যকরী।

ব্যাকটেরিয়া-বৃদ্ধিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক

ব্যাকটেরিয়া-বৃদ্ধিরোধী অ্যান্টিবায়োটিকের প্রধান কাজ হল ব্যাকটেরিয়া নিরাময়। এরা ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এভাবে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে ঠেকায়। টেট্রাসাইক্লিন, ম্যাক্রোলাইড (যেমন, আজিথ্রোমাইসিন), এবং ক্লিন্ডামাইসিন এই ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের উদাহরণ।

আরও পড়ুনঃ  সাদা স্রাবের সাথে হালকা রক্ত যায় কেন?

আজিথ্রোমাইসিন, যা বেশ কিছু রোগে কার্যকর, এটি প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধাগ্রস্ত করে কাজ করে। এই অ্যান্টিবায়োটিকের ধরণ বিভিন্ন সংক্রমণ যেমন ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, এবং গলা ও ত্বকের সংক্রমণের জন্য কার্যকর।

How Long for Antibiotics to Work

অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব সময় কখন অনুভূত হবে তা সংক্রমণের ধরণ এবং সংক্রমণ কীভাবে আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ইনফেকশন চিকিৎসা সময় শুরু করে এবং লক্ষণগুলি হ্রাস করতে শুরু করে তার মধ্যে কিছু সময় লাগে।

মাঝারি অবস্থায় লাগার সময়কাল

মাঝারি অবস্থার সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হয়। সাধারণ ইনফেকশনের জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত কাজ শুরু করে, তবে সম্পূর্ণ রোগ নিরাময়ে বেশ কিছু দিন সময় লাগে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামক্সিসিলিনকে প্রায় পাঁচ থেকে দশ দিনের জন্য নির্ধারণ করা হয়, এবং তিন থেকে চার দিনের মধ্যে লক্ষণগুলি ভালো হতে শুরু করে।

গুরুতর অবস্থায় লাগার সময়কাল

গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে, যেমন মেনিনজাইটিস বা গভীর স্নায়বিক সংক্রমণ, অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব সময় অনেক বেশি হতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণের জন্য বেশিরভাগ সময় অ্যান্টিবায়োটিক এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় নিতে পারে ইনফেকশন চিকিৎসা সময় পূর্ণ করার জন্য। তাই গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার জন্য এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণ ব্যাকটেরিয়াঘटিত সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক

সাধারণত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, গলা ব্যথা, এবং নিউমোনিয়া চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়।

আমেরিকাতে অ্যান্টিবায়োটিক আসার আগে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হার ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। বর্তমানে, বছরে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে থাকে, যার ফলে অন্তত ৩৫,০০০ জনের মৃত্যু ঘটে।

সাধারণত, অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত চলতে পারে, তবে কখনও কখনও স্বল্প সময়ের চিকিৎসাও কার্যকর হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা শুরু করে সাথে সাথেই, কিন্তু ফলাফল দেখা দিতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগতে পারে।

তবে, উল্লেখযোগ্য যে, প্রায় ২৮ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। এটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি প্রধান কারণ। সংক্রমণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করা জরুরি।

ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে, Clostridioides difficile (C. diff) অন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায় এবং এটি অনেক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে। Methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA) এবং Vancomycin-resistant enterococcus (VRE) সহ অনেক ধরনের রোগ যা বিশেষ করে হাসপাতালে বেশি দেখা যায়।

তদুপরি, ২০২১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আউটপেশেন্টদের জন্য ২১১ মিলিয়নেরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেছেন, যা প্রায় প্রতি ১,০০০ জনে ৬৩৬ টি প্রেসক্রিপশনের সমান।

ভাইরাস বনাম ব্যাকটেরিয়া: সংক্রমণের পার্থক্য

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া উভয়েই মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু মূল্যবান পার্থক্য রয়েছে। ভাইরাসগুলো সাধারণত আরও ক্ষুদ্র এবং প্রকৃত কোষ নয়, বরঞ্চ জেনেটিক উপাদান বেষ্টিত প্রোটিন কোট। অন্যদিকে, ব্যাকটেরিয়া হলো প্রকৃত এককোষী জীব যা নিজে থেকে বেঁচে থাকতে এবং পুনরুত্পাদন করতে সক্ষম।

সংক্রমণ পার্থক্য হিসেবে ধরা যাক, ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বিশেষ কোষ বা টিস্যুর উপর আক্রমণ করে এবং একবার কোষের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। এর ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত শরীরে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাময় হয় এবং এতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। যেমন, জ্বর, সর্দি এবং ফ্লু প্রায়ই ভাইরাসের কারণে হয়।

আরও পড়ুনঃ  মেয়েদের বুকে তিল থাকলে কি হয়?

অন্যদিকে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শরীরে বিভিন্ন অবস্থায় ঘটতে পারে এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে প্রতিরোধ করা যায়। ডক্সিসাইক্লিন একটি প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক যা চর্মব্রণ, অন্ত্রের সংক্রমণ, এবং শ্বাসনালীর সংক্রমণের মতো ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণের পার্থক্য বোঝা জরুরি, কারণ এর উপর ভিত্তি করে সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। ভাইরাস বনাম ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত জ্ঞান রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোন কোন কারণে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতे বেশি সময় লাগে

অনেকসময় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিক্রিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মতো কিছু কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে চিকিৎসায় বেশি সময় লাগে। সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন না করা এবং শরীরকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করাতে পারা এই সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম।

ভুল অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন

ভুল অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন সংক্রমণের উপর কোনো প্রভাব না ফেলতে পারে, যা চিকিৎসার ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রদত্ত ব্যাকটেরিয়ার উপর কার্যকরী না হয়, তবে চিকিৎসায় কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না এবং সংক্রমণ স্থায়ী হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে, সংক্রামক এজেন্টের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বহু সময় ধরে গঠিত হয় এবং এটি চিকিৎসার সময় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ গঠনের কারণও হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান পেতে রোগ নির্ধারণকারী পরীক্ষাগুলি সঠিকভাবে করতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পূর্ণ করা কেন জরুরি?

অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ না করলে সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে পারে না এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পূর্ণতা অব্যাহত রাখলে চিকিৎসা সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয়। স্টাডি অনুসারে, যারা মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করেন, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ পুনরায় দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

যদি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া তখনই বন্ধ করা হয় যখন রোগী সুস্থ বোধ করছেন, তখন এই সিদ্ধান্তচিকিৎসা নিরাপত্তা বিনষ্ট করতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। ব্রাইটন এবং সাসেক্স মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণা দেখিয়েছে যে দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ব্যাকটেরিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

গবেষণা প্রমাণ করে যে, ছোট কোর্সের ৩ থেকে ৫ দিনেও অনেক সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হতে পারে। তবে, টিউবারকুলোসিসের মতো সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পূর্ণ না করলে এর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে।

  • প্রতি বছরে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রন্ত হয়
  • প্রতি বছরে প্রায় ১০% নারীর মূত্রনালির সংক্রমণ হয়

রয়্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি এও উল্লেখ করেছে যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সাম্প্রতিক গবেষণা নতুন বিতর্কের উত্থান করেছে, যা প্রথাগত ধ্যানধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। অতএব, চিকিৎসা নিরাপত্তা জন্য ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রয়োজন।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এর প্রভাব

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা সমস্ত বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও অসম্পূর্ণ ব্যবহার এই বিরাট সমস্যার মূল কারণ।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণ

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ও বেপরোয়াভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। একটি সাধারণ সর্দি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রেও ক্ষেত্রেও মানুষ অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এই ধরনের সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয় এবং এর ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠতে শিখে। এছাড়া, অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পূর্ণ না করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মানা না হওয়ার ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিরোধের ফলে ঝুঁকি

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ফলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। সবচেয়ে গুরুতর ঝুঁকি হলো সাধারণ সংক্রমণের জন্যও কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায় না। এছাড়াও, প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত রোগীদের চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবী ব্যাপী ১৫ মিলিয়ন লোক বাতজ্বরে জনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নতুন করে বছরে প্রায় ২ লাখ ৮২ হাজার লোক সংক্রামিত হয় ও ২ লক্ষ ৩৩ হাজার মারা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সমস্যার সমাধানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  তিল থেকে ক্যান্সার হবার আশংকা চিহ্নিতকরণের উপায়

সমাপ্তি

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকলাপ এবং প্রভাব সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার পর আমরা একটি মূল্যায়ন করতে পারি যে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নির্ভর করে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ এবং পূর্ণ কোর্স সম্পূর্ণ করার উপর। উপযুক্ত ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব সময়মত অর্জন করতে হলে সঠিকভাবে ও সঠিক মাত্রায় ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। যেমন, Norfloxacin সাধারণত ৪০০ মিলিগ্রামের একটি মাত্রা নেওয়ার ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে ফলাফল দেখাতে শুরু করে। মনে রাখা জরুরি, Norfloxacin গ্রহণের সময় অন্যান্য ঔষধ সঠিকভাবে ব্যবহারের সুপারিশ নেওয়া দরকার, যেমন Pimozide, Ziprasidone এবং Droperidol, কারণ এগুলির সাথে মিশে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ যে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পূর্ণ করা এবং ভুললে অতিরিক্ত মাত্রা না নেওয়া। Norfloxacin এর মতো ক্ষেত্রে ভুলে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রহণ করা উচিৎ, তবে পরবর্তী মাত্রার সময়ের কাছাকাছি থাকলে অপেক্ষা করা উত্তম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ফাংশন বজায় রাখতে পারি। সমাপ্তি, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং উপযুক্ত মাত্রাই কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক।

FAQ

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে কতক্ষণ লাগে?

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকাল নির্ভর করে সংক্রমণের ধরন ও গুরুত্বের উপর। সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা মধ্যে কাজ শুরু করে। তবে, জটিল সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে?

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে হস্তক্ষেপ করে অথবা তাদেরকে ধ্বংস করে। ব্যাকটেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীরকে ধ্বংস করে, অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া-বৃদ্ধিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক তাদের বৃদ্ধির হার কমিয়ে দেয়।

অ্যান্টিবায়োটিকের বিভিন্ন প্রকারভেদ কি?

ব্যাকটেরিয়া-নাশক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীর ধ্বংস করে এবং তাদের মৃত্যু ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, পেনিসিলিন। ব্যাকটেরিয়া-বৃদ্ধিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধাগ্রস্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, টেট্রাসাইক্লিন।

মাঝারি অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক কতক্ষণ লাগে?

মাঝারি অবস্থায় সাধারণ সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে কাজ করতে পারে।

গুরুতর অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক কতক্ষণ লাগে?

গুরুতর অবস্থায়, যেমন মেনিনজাইটিস বা অন্যান্য গভীর স্নায়বিক সংক্রমণের জন্য, এটি এক সপ্তাহের বা তার অধিক সময় নিতে পারে।

সাধারণ ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কাজ করে?

সাধারণ ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ, যেমন: ত্বকের সংক্রমণ, গলা ব্যথা, এবং নিউমোনিয়া চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক একটি নিরাপদ ও কার্যকরী সমাধান।

ভাইরাস বনাম ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের পার্থক্য কী?

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া উভয়েই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ সাধারণত দ্রুত সারে এবং এতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না।

কোন কারণে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে বেশি সময় লাগে?

ভুল অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন সংক্রমণের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না এবং চিকিৎসার ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়া, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণ কঠিন হয়ে পড়ে।

অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পূর্ণ করা কেন জরুরি?

পুরো অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ না করলে সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে পারে না, যা পুনরায় সংক্রমণ এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এর প্রভাব কী?

প্রতিরোধ ক্ষমতার মূল কারণ অপ্রয়োজনীয় এবং অসম্পূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। এর ফলে ব্যাক্টেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা ভবিষ্যতে সংক্রমণ চিকিৎসা কঠিন করে তোলে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button