উইন্ডোজ ১০ এ ইন্টারনেট স্পিড দেখার উপায়

বর্তমান যুগে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যতীত কল্পনাই করতে পারেন না। ইন্টারনেট ব্যবহারকালে গতি জানতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ইন্টারনেট স্পিড পরিমাপ করা মূলত স্পিডের স্বচ্ছতা ও স্থায়িত্ব পরীক্ষা এবং ইন্টারনেট গতি প্রদর্শন করার মূল উপায়। আমাদের এই পরামর্শনামূলক প্রবন্ধটি আপনাকে দেখাবে কিভাবে আপনি সহজেই উইন্ডোজ ১০ ইন্টারনেট স্পিড চেক করতে পারেন।

উইন্ডোজ ১০ এ ইন্টারনেট স্পিড চেক করার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যা আপনার কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে। ইন্টারনেট স্পিড পরিমাপ ও আপনার ইন্টারনেট অবস্থান নির্ণয়ে এই প্রক্রিয়া আপনাকে সাহায্য করবে।

ইন্টারনেট স্পিড চেক করার কেন প্রয়োজন

ইন্টারনেট স্পিড চেক করার প্রয়োজন কেন তা বোঝার জন্য, আমাদের প্রথমে ইন্টারনেটের গতির উপর প্রভাব ফেলে এমন বিভিন্ন ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানতে হবে। ইন্টারনেটের গতি পরিমাপ করে স্পিড অপ্টিমাইজেশন করা আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার আরও মসৃণ করে তোলে।

ইন্টারনেট স্পিড কীভাবে প্রভাবিত হয়

ইন্টারনেট স্পিড বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত হতে পারে:

  • নেটওয়ার্ক ব্যস্ততা: যখন অনেক ব্যবহারকারী একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তখন ইন্টারনেটের গতি কমে যায়।
  • হার্ডওয়্যার সীমাবদ্ধতা: আপনার রাউটার বা কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতাও ইন্টারনেট স্পিডে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • ISP সীমাবদ্ধতা: কিছু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) তাদের ইন্টারনেট প্ল্যান অনুযায়ী গতি সীমিত করে দেয়।

স্পিড চেক করার সুবিধা

নেট স্পিড টেস্ট করা বিভিন্ন সুবিধা দেয়:

  1. আপনার নেটওয়ার্কের সমস্যা শনাক্ত করতে সাহায্য করে; কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা দ্রুত বুঝতে পারবেন।
  2. ইন্টারনেট স্পিড অপ্টিমাইজেশন করতে সহজ হবে; কেবল ইন্টারনেট গতি পরিমাপ করে আপনি উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
  3. আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার অভিজ্ঞতা উন্নত হবে; স্থিতিশীল ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারে সবারই ভালো লাগে।
আরও পড়ুনঃ  উইন্ডোজ ১০-এ কপি করার দ্রুত উপায় | বাংলা গাইড

ইন্টারনেট স্পিড চেক করার মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের প্রকৃত ক্ষমতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং সেই অনুসারে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। তাই, নিয়মিত নেট স্পিড টেস্ট করা এবং ইন্টারনেট স্পিড অপ্টিমাইজেশন করা বুদ্ধিমানের কাজ।

Speedtest.net দিয়ে স্পিড চেক

ইন্টারনেট স্পিড মাপার জন্য Speedtest.net একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। এই সাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারনেট সংযোগের গতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন, যা নেটওয়ার্ক সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে সহায়ক।

Speedtest.net এর ব্যবহার বিধি

Speedtest.net ব্যবহার করতে হলে আপনাকে প্রথমে ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে ‘GO’ বা ‘START’ বোতাম দেখতে পাবেন। এই বোতামের উপর ক্লিক করলেই স্পিড টেস্ট প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই Ping পরিমাপ, ডাউনলোড স্পিড টেস্ট এবং আপলোড স্পিড টেস্টের ফলাফল প্রদর্শিত হবে।

  • Ping পরিমাপ: এটি নির্ধারণ করে কতটুকু সময় লাগে আপনার ডিভাইস থেকে তথ্য সার্ভারে পৌঁছাতে এবং আবার ফিরে আসতে।
  • ডাউনলোড স্পিড টেস্ট: এটি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের ডাউনলোড গতি পরিমাপ করে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিডিও স্ট্রিমিং এবং ফাইল ডাউনলোডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপলোড স্পিড টেস্ট: এটি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের আপলোড গতি পরিমাপ করে যা ভিডিও আপলোড ও ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।

Speedtest.net এর মাধ্যমে এই সমস্ত পরিমাপ দেখতে পাবেন এবং ফলাফলের ভিত্তিতে আপনার ইন্টারনেট স্পিড সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন।

Ping, Download ও Upload স্পিডের বিশ্লেষণ

Speedtest.net দ্বারা প্রাপ্ত Ping পরিমাপ হল আপনার ডিভাইস থেকে সার্ভারে তথ্য পৌঁছানোর এবং ফিরে আসার সময়। এটি সাধারণত মিলিসেকেন্ডে (ms) পরিমাপ করা হয়। সুসম্পর্কিত Ping স্পিড সরাসরি কনকশন গুণমান প্রদর্শন করে, বিশেষত অনলাইন গেমিং, লাইভ স্ট্রিমিং এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে।

ডাউনলোড স্পিড টেস্ট এবং আপলোড স্পিড টেস্ট হল আপনার ডেটা সার্ভার থেকে ডিভাইসে এবং ডিভাইস থেকে সার্ভারে ট্রান্সফার স্পিডের পরিমাপ। ডাউনলোড স্পিডইন সবচেয়ে জরুরি কারন আমরা বেশিরভাগ সময় ডেটা এনে ব্যবহার করি, কিন্ন আপলোড স্পিডও গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা তথ্য শেয়ার বা আপলোড করি। এসব চেক করে আপনি আপনার নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের বোঝাপড়া পেতে পারেন এবং প্রয়োজনে তা উন্নয়নের উপায় খুঁজে বের করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  উইন্ডোজ ১১ ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করার পদ্ধতি

Network অবস্থা পর্যালোচনা

আমাদের নেটওয়ার্কের সামগ্রিক কার্যক্ষমতা বুঝতে এবং ইন্টারনেটের স্পিড অপটিমাইজেশন করতে নেটওয়ার্ক পর্যালোচনা, ব্যান্ডউইথ মনিটরিং এবং নেটওয়ার্ক স্পিড টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Windows অপারেটিং সিস্টেমে Control Panel, CMD, Settings, এবং PowerShell এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারের স্পিড চেক করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এ ধরণের পর্যালোচনা এবং মনিটরিং পূর্বে প্রয়োজনীয়ভাবে করতে না পারলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা ব্যাহত হতে পারে।

Network সংক্রান্ত পরিসংখ্যান

নেটওয়ার্ক পর্যালোচনা করার সময় বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি গিগাবিট ইথারনেট LAN সাধারণত 600 Mbps পর্যন্ত ডেলিভার করতে পারে। আবার, Windows এ NetSpeedMonitor এর মতো টুল ব্যবহার করে রিয়েল-টাইমে ইন্টারনেট স্পিড মনিটর করা যায়।

  • NetSpeedMonitor: Windows Vista, XP, & 7 এর জন্য ডিজাইন করা, তবে Windows 8 এবং তার পরেও কাজ করতে পারে।
  • NetSpeedMonitor ডাউনলোড অপশন: x86 (32-bit) এবং x64 (64-bit) সিস্টেমের জন্য।
  • কমান্ড প্রম্পটে “ping google.com” ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক স্পিড চেক করা যায়।

স্পিড ও ব্যান্ডউইথ চেক করা

ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের নেটওয়ার্ক স্পিড টেস্ট এবং ব্যান্ডউইথ মনিটরিং করে তাদের ইন্টারনেট পরিষেবার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে, স্পিডস্ট এর বিভিন্ন পর্যায় বিশ্লেষণ করা যায়, যেমন:

  1. Ping স্পিড: latency অথবা লেটেন্সি সময় পরিমাপ করে।
  2. ডাউনলোড স্পিড: ডাউনলোডের সামর্থ্য পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে রাত-দিনের ইন্টারনেট ব্রাউজিং ক্ষমতা বিশ্লেষণ।
  3. আপলোড স্পিড: আপলোডের জন্য কত দ্রুত ফাইল ট্রান্সফার করা যায় তা নির্ধারণ করা যায়।

এছাড়াও, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারের স্পিডের পুরো সুবিধা নেওয়া সম্ভব যার মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী (ISP) থেকে পাওয়া সামগ্রিক গতির পুরো ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ নিষ্ক্রিয় করা

উইন্ডোজ ১০ পিসিতে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর উপায় হল ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকলে ব্যান্ডউইথ এবং সিস্টেম সম্পদের অপচয় হয়, যা ইন্টারনেট স্পিড কমানোর অন্যতম কারণ। সেজন্য, আমরা উইন্ডোজের Task Manager ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতি নিয়ে এখানে আলোচনা করব।

আরও পড়ুনঃ  উইন্ডোজে লুকানো ব্লুটুথ ডিভাইস মুছে ফেলার পদ্ধতি

Task Manager এর ব্যবহার

Task Manager দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলি দেখতে এবং ম্যানেজ করতে খুবই সহজ। উইন্ডোজ ১০-এ Task Manager চালু করতে, Ctrl + Shift + Esc কী কম্বিনেশন ব্যবহার করতে পারেন অথবা স্টার্ট মেনুতে Task Manager লিখে সার্চ করেও খুঁজে পেতে পারেন।

  • Task Manager চালু করে ‘Processes’ ট্যাবটি সিলেক্ট করুন।
  • এখানে চলতে থাকা সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন এবং তাদের ব্যবহৃত রিসোর্সের তালিকা দেখতে পাবেন।
  • আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলি নির্বাচন করে ‘End Task’ বোতামে ক্লিক করে অ্যাপ নিষ্ক্রিয় করতে পারেন।

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করার পদ্ধতি

Task Manager ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করার বিস্তারিত পদ্ধতি নিচে দেওয়া হল:

  1. প্রথমে Task Manager চালু করুন এবং ‘Startup’ ট্যাবটি সিলেক্ট করুন।
  2. এখানে আপনি কোন অ্যাপ্লিকেশনের স্টার্টআপে চালু হচ্ছে তা দেখতে পাবেন।
  3. কোন অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিষ্ক্রিয় করতে চান, তা নির্বাচন করুন এবং ‘Disable’ বোতামে ক্লিক করুন।

এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই Task Manager এর সাহায্যে উইন্ডোজ ১০ পিসির ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন, যা ইন্টারনেট স্পিড বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

Windows Update বন্ধ করা

উইন্ডোজ ১০-এ Windows Update বন্ধ করা অপরিহার্য হতে পারে আপনার ইন্টারনেট স্পিড অপ্টিমাইজ করতে। সাধারণত, Windows Update চলমান অবস্থায় ব্যান্ডউইথের একটি বিশাল অংশ ব্যবহার করে, যার ফলে আপনাকে ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

Windows Update বন্ধ করার মাধ্যমে, আপনি ব্যান্ডউইথ সাশ্রয় করতে পারেন এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ইন্টারনেট স্পিড বজায় রাখতে পারেন। এমনকি, ব্যাকগ্রাউন্ডে এই আপডেটগুলি চলতে থাকলে আপনি নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সে উল্লেখযোগ্য পতন দেখতে পারেন।

আপনি যদি আপনার উইন্ডোজ ১০ আপডেটগুলি নিয়মিতভাবে করতে না চান অথবা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে না করতে চান, তাহলে আপডেট ফিচারটি বন্ধ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে, মনে রাখতে হবে Security Updates বন্ধ না করা সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি আপনার PC কে নিরাপদ রাখে।

সুতরাং, Windows Update বন্ধ করে আপনি কেবল ব্যান্ডউইথ সাশ্রয়ই করবেন না, বরং আপনার দৈনন্দিন কাজের জন্য অপ্টিমাইজ ইন্টারনেট স্পিডও নিশ্চিত করতে পারবেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button