আইফোন থেকে ভাইরাস কীভাবে মুছবেন – সহজ সমাধান
আপনার আইফোন থেকে ভাইরাস মুছে ফেলার প্রয়োজন হলে, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে, ভাইরাস এবং ম্যালওয়ারের আক্রমণের সম্ভাবনা যে কোন ডিভাইসে রয়েছে, এমন কি আইফোনেও। তাই আইফোনের নিরাপত্তা টিপস এবং iPhone virus removal প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা কিছু সহজ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ আলোচনা করবো যা অনুসরণ করে আপনি আপনার আইফোন থেকে ভাইরাস মুছতে পারবেন।
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যাদের ডিভাইস জেলব্রেক করা হয়েছে, কারণ এই ডিভাইসগুলি ম্যালওয়ারের জন্য অধিক সংবেদনশীল। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার আইফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন এবং ডিভাইসটি সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক আইফোনে ভাইরাস মুছে ফেলার সহজ সমাধান!
আইফোনে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার কি?
আইফোনের সাথে ভাইরাস ও ম্যালওয়ারের সম্পর্ক সম্পর্কে জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাস বনাম ম্যালওয়্যার নিয়ে কথাবার্তার সময় প্রধান পার্থক্যগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। ভাইরাস সাধারণত অন্য প্রোগ্রামের সাথে লুকানো থাকে এবং নিজেই বিস্তার লাভ করে, যেখানে ম্যালওয়্যার হল ক্ষতিকারক সফটওয়্যার যার উদ্দেশ্য বিশেষভাবে তথ্য চুরি এবং অন্যান্য ক্ষতি সাধন করা।
ভাইরাস এবং ম্যালওয়ারের পার্থক্য
ভাইরাস বনাম ম্যালওয়্যার নিয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে, ভাইরাস শুধু এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা এই নামের কারণে বেশি পরিচিত। উভয়েই ক্ষতিকারক সফটওয়্যার, কিন্তু এদের কার্যকলাপ ভিন্ন। ভাইরাস মূলত সংক্রামণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি শনাক্ত করা ও মুছে ফেলা একটু কষ্টকর হতে পারে। দিকোটেক্ট করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা সমাধানগুলো বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ম্যালওয়্যার অনেক বড় ধরনের ক্যাটাগরি যার মধ্যে ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়ার্মস এবং র্যানসমওয়্যার সবই অন্তর্ভুক্ত
আইফোনে ম্যালওয়ারের সচরাচর লক্ষণ
আইফোনে ম্যালওয়ার চিহ্নিত করা কিছু সময়ের জন্য জটিল হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে সহজেই বোঝা যায় যে আইফোনে ম্যালওয়ার প্রবেশ করেছে কিনা। এখানে কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- বিবিধ অ্যাপ্লিকেশনের নামের পাশে অদ্ভুত প্রতীক বা আইকন দেখা যায়।
- ডিভাইসের পারফর্মেন্স হঠাৎ কমে যায় এবং ডিভাইস গরম হয়ে ওঠে।
- অনাকাঙ্ক্ষিত পপ-আপ বিজ্ঞাপনসমূহ ক্রমশ প্রদর্শিত হয়।
- ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয় এবং নতুন নতুন ডেটা চার্জিং হয়।
আইফোনে ম্যালওয়ার চিহ্নিত করা সময়মত হলে এটি আপনাকে অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। ভবিষ্যতে এসব সমস্যার সম্মুখীন না হতে চাইলে, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আপনার সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি।
কেন আইফোনে ভাইরাস হতে পারে
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আইফোন ভাইরাস মুক্ত থাকে, তবে আসলে এমন নয়। কয়েকটি কারণেই আইফোনে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইফোন জেলব্রেক।
জেলব্রেক করা আইফোন
জেলব্রেক করা আইফোন অনিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করতে সক্ষম হয় যা সাধারণত অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায় না। এই প্রক্রিয়া ব্যবহারকারীদেরকে যে কোনও ধরনের অ্যাপ ইনস্টল করতে দেয়, যার ফলে বিপদ বেড়ে যায়।
- একটি রিসার্চে দেখা গেছে যে জেলব্রেক করতে গিয়ে ম্যালওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সক্ষম হয়ে ওঠে এবং অপ্রত্যাশিত তথ্য সংগ্রহ করে।
- আইফোন জেলব্রেকের ফলে অনিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন এবং ফিশিং প্রতারণা বেশি হতে পারে, বিশেষ করে যখন ব্যবহারকারী বৈধ উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড না করে।
ম্যালিশাস অ্যাপ এবং লিঙ্ক
অন্য একটি বড় ঝুঁকি হলো ম্যালিশাস অ্যাপ এবং লিঙ্ক। ফিশিং প্রতারণা বেড়ে গেছে কারণ ব্যবহারকারীরা অনিরাপদ অ্যাপ্লিকেশন এবং অসুরক্ষিত ওয়েবসাইট লিঙ্কে ক্লিক করেন। ম্যালিশাস অ্যাপ কারণ হতে পারে ব্রাউজারে তথ্য হ্যাকের এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরির।
- অনুসন্ধানে জানা গেছে যে সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, অ্যাপ ডাউনলোডের সময় সাবধান না হলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
- ইমেল বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাপ্ত অনিরাপদ লিঙ্কে ক্লিক করার ফলে ফিশিং প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভাইরাস দূর করার পূর্বপ্রস্তুতি
অ্যাপল ডিভাইসগুলো থেকে ভাইরাস রিমুভ করতে আগে যে প্রস্তুতি নিতে হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সব ডেটা ব্যাকআপ নেওয়ার মাধ্যমে ভাইরাস রিমুভ প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এই ব্যাকআপের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত থাকবেন যে, ভাইরাস ক্লিনাপ চলাকালীন সময় কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যাবে না।
ব্যাকআপ নেওয়ার পরে, আইফোনের সফটওয়্যার লেটেস্ট ভার্সন আপডেট করা অত্যন্ত জরুরি। লেটেস্ট সফটওয়্যার আপডেট করলে আইফোন ভাইরাস পরিষ্কার করতে সুবিধা হয় কেননা অনেক নিরাপত্তা বাগ ফিক্স এবং নতুন ফিচার সংযোজন করা হয় আপডেটের মাধ্যমে।
একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার সাহায্যে ভাইরাস রিমুভ প্রস্তুতি করলে, আপনি আপনার ডিভাইসকে অধিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবেন। আপনি নোটবুকে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখতে পারেন, যা পরবর্তীতে কাজে লাগবে।
- প্রথম ধাপ: সমস্ত ডেটা ব্যাকআপ করুন
- দ্বিতীয় ধাপ: সর্বশেষ সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করুন
সেফ মোড এ প্রবেশ করুন
আইফোনের জন্য সেফ মোড এক অসাধারণ উপায়, যা আপনার ডিভাইসকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি কৃত্রিম সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। আইফোন সেফ মোড চালু করার মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন কোন কোন অ্যাপ ও সেবা সমস্য সৃষ্টি করছে এবং খুঁজে বের করে তা সমাধান করতে পারবেন।
সেফ মোড সেটআপ কিভাবে করবেন
আইফোনে সেফ মোড প্রবেশ করতে নীচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- আপনার ডিভাইসে পাওয়ার বাটনটি ধরে থাকুন এবং ‘Power off’ স্লাইড করুন।
- ডিভাইস বন্ধ হয়ে গেলে, পাওয়ার বাটন এবং ওয়ালিউম ডাউন বাটন (অথবা শুধুমাত্র পাওয়ার বাটন আইফোন মডেলের উপর নির্ভর করে) একসাথে ধরে থাকুন যতক্ষন না Apple লোগো প্রদর্শিত হয়।
- লোগো প্রদর্শিত হলে পাওয়ার বাটন ছেড়ে দিন কিন্তু ওয়ালিউম ডাউন বাটন ধরে রাখুন।
- আপনার ডিভাইস সেফ মোডে প্রবেশ করলে স্ক্রিনের উপরে ‘Safe Mode’ ট্যাগ দেখতে পাবেন।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে আপনি আইফোন সেফ মোড এ থাকার সময় দেখে নিতে পারবেন কোন কোন অ্যাপ বা ফাংশন সমস্যায়ে সময় ব্যাহত করছে। তারপর শিল্পে করে নিয়ে আবশ্যকীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
সেফ মোড প্রবেশ করার মাধ্যমে আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষিত এবং সমস্যামুক্ত রাখতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা।
ভাইরাসের সাথে সম্পর्कিত অ্যাপ চিহ্নিত করুন
ম্যালিশাস অ্যাপ চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে আপনি যদি আইফোন ভাইরাস পরীক্ষা করতে চান। প্রথমেই আপনার আইফোনের সেটিংস এ যান এবং ম্যনেজ অ্যাপস বা অ্যাপ নোটিফিকেশন ট্যাবটি নির্বাচন করুন।
- অচেনা বা অবাঞ্ছিত অ্যাপগুলি প্রায়ই ভাইরাস আক্রমণের মূল কারণ হতে পারে।
- আইফোনের সাধারণত কিছু লক্ষণ যেমন ব্যাটারির হঠাৎ খরচ বেড়ে যাওয়া বা ডিভাইস গরম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করলে সতর্ক থাকুন।
- আইফোনে ম্যালওয়্যার এর উপস্থিতি বোঝার জন্য অ্যাপ পারমিশন চেক করুন এবং নিশ্চিত হোন যে কোনও অ্যাপ অকারণে সেনসিটিভ ডাটা অ্যাক্সেস করছে না।
- যদি কোন অ্যাপ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে দ্রুত সেটি আনইন্সটল করুন।
আমাদের পরামর্শ হলো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য AVG Mobile Security বা Avast One এর মতো নির্ভরযোগ্য সিকিউরিটি অ্যাপ ইনস্টল করুন। এটি আপনার আইফোনকে বিভিন্ন স্পাইওয়্যার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বিপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
অ্যাপ আনইন্সটল করুন
আইফোনে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস উপস্থিতি চিহ্নিত করার পরপরই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। আইফোন অ্যাপ আনইনস্টাল করা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সহজ তবে কার্যকর উপায় যার মাধ্যমে আপনি আপনার আইফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
- প্রথমে সেই ম্যালিশাস অ্যাপগুলোকে খুঁজে বের করুন, যা আপনার আইফোনের ক্ষতি করছে।
- এই ম্যালওয়্যার অ্যাপ রিমুভ করার জন্য আপনার ফোনের সেটিংস মেন্যুতে যান।
- “General” অপশন থেকে “iPhone Storage” নির্বাচন করুন।
- এখন চিহ্নিত ম্যালওয়্যার বা সন্দেহজনক অ্যাপ দেখে নিন এবং অ্যাপটিকে আনইন্সটল করুন।
- আপনার প্রয়োজন হলে, সেটিংসে “Offload Unused Apps” অপশন সক্রিয় রাখতে পারেন, যা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো সরিয়ে দেবে।
বিশেষ করে কোনো অপ্রচলিত সোর্স থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপই ম্যালওয়্যার সংক্রমণের একটি প্রধান কারণ হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে ম্যালওয়্যার আক্রমণ এড়াতে অফিসিয়াল সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন। অনির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ ওই সাইটগুলো থেকে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমিত হতে পারে।
বৰ্তমান সময়ে অন্ততপক্ষে ২০৩টি বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার অ্যাপ শনাক্ত করা হয়েছে, যা ব্যক্তিগত ও ব্যাঙ্কিং তথ্য চুরি করছে। কোনো সন্দেহজনক অ্যাপ দেখে তা তৎক্ষণাৎ আনইন্সটল করুন এবং আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখুন।
আপনার আইফোনকে ম্যালওয়্যার মুক্ত রাখতে অ্যাপ আনইন্সটাল করুন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলুন।
ডিভাইস রিস্টার্ট করুন
আপনার আইফোনে ভাইরাস দূর করার প্রক্রিয়ায় ডিভাইস রিস্টার্ট করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি প্রায়ই ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার পরবর্তী পর্যায়গুলি সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। রিস্টার্ট করার সময় ডিভাইসটির সিস্টেম ফাইলগুলি পুনর্বিন্যাসিত হয়, যা আপডেট কার্যকরী এবং ভাইরাস-মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
রিস্টার্ট করার সময় নিন
আনুষ্ঠানিকভাবে রিস্টার্ট করার জন্য, আইফোনের পাওয়ার বোতামটি কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখুন যতক্ষণ না “Slide to power off” বার্তা প্রদর্শিত হয়। তারপর স্ক্রিনের নির্দেশ অনুসারে ডিভাইসটি বন্ধ করুন এবং কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। পুনরায় ডিভাইসটি চালু করতে আবার পাওয়ার বোতামটি চাপুন যতক্ষণ না Apple লোগোটি প্রদর্শিত হয়।
রিস্টার্ট করার উপকারিতা
রিস্টার্ট করার ফলে ডিভাইসটি তার সিস্টেম ফাইলগুলি পুনর্বিন্যাস করে এবং ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার যদি কোনো কার্যকরীতা সীমাবদ্ধ করতে চেষ্টা করে থাকে, তা মুছে ফেলে। এটি ডিভাইসের পারফরম্যান্স উন্নত করে এবং আপডেট কার্যকর করতে সাহায্য করে।প্রতিদিনের ব্যবহারে এটি একটি সাধারণ কিন্তু কার্যকর সমাধান।
যদি আপনার আইফোন এখনও সমস্যাযুক্ত থাকে বা ভাইরাসটি সঠিকভাবে নির্ণয় না হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন অথবা আপনার আইফোনটি রিসেট করে পরিষ্কার ইনস্টলেশন করতে পারেন।