কিডনি পাথরের ব্যথা কীভাবে দ্রুত কমাবেন

কিডনি পাথরের ব্যথা দ্রুত উপশম করা বেশ জরুরি এবং করণীয় বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ও ঔষধি উপায়। প্রচুর পানি পান, উপযুক্ত ঔষধ সেবন, এবং ব্যথার স্থানে তাপ প্রয়োগ করার মতো পদ্ধতিগুলি অন্যতম। কিডনি পাথরের ব্যথা নিরাময় এড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য। কিডনি পাথরের প্রাথমিক চিকিৎসা শনাক্ত করা এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে ওষুধ এবং প্রাকৃতিক প্রতিকারের মাধ্যমে আরাম পাওয়া যায়।

Contents show

কিডনি পাথরের ব্যথার কারণ ও লক্ষণ

কিডনি পাথরের কারণ অনেক ধরনের হতে পারে। ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভাবে কিডনি পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ, অত্যধিক লবণ বা চিনি, ভিটামিন ডি সম্পূরক দীর্ঘক্ষণ গ্রহণ, এবং পালং শাকের মতো অক্সালেটযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে কিডনি পাথরের কারণ হতে পারে। পুরুষদের, গর্ভবতী মহিলাদের এবং ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে দেখা যায়।

কিডনি পাথরের লক্ষণ সাধারণত পিঠে, পাশে এবং নিচের পেটে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে।নেফ্রোলিথিয়াসিস অর্থাৎ নিম্নে রেনাল ক্যালকুলি রোগের উপস্থাপনা লক্ষণ দেখা গেলে ৯০% মামলার মধ্যে কিডনিতে পাথরের ব্যথার কারণ নির্ধারিত হয়। প্রস্রাবে রক্ত মেশা এবং মূত্র ক্ষরণের সময় তীব্র ব্যথা প্রতিনিয়ত অনুভূত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  ঘুম না আসলে করণীয় কি?

অতিরিক্ত অম্লযুক্ত মূত্র, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কিংবা শরীরে ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড এবং অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি গ্রহণ করার ফলে কিডনি পাথরের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অধিক পানি পান করলে মূত্রের মাধ্যমে ছোট পাথর গুলো সহজেই বেরিয়ে যায়, যা কিডনি পাথরের লক্ষণ লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে দেয়।

হাইড্রেশন: প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন

কিডনি পাথরের নিরোধে হাইড্রেশন কিডনি পাথর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি পাথর প্রতিরোধে এবং পাথর দ্রুত স্পর্শলঘু করতে সঠিক পরিমাণে পানি পান করার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

প্রচুর পানি পান

প্রচুর পানি পান করা কিডনির ছোট থেকে বড় সব আকারের পাথর গঠনের ঝুঁকি কমায়। দৈনিক প্রায় ৮ থেকে ১২ কাপ পানি পান করা উচিত কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি কমাতে। পানি শুধু কিডনি থেকেই পাথর সরাতে সাহায্য করে না, বরং প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্ষতিকর খনিজ ও লবণের ঘনত্ব কমিয়েও পাথরের গঠন বাধাগ্রস্ত করে। পানির গুরুত্ব এই জন্যই অপরিসীম।

ভেষজ চা এবং সাইট্রাস ফলের পানীয়

বিভিন্ন প্রকার ভেষজ চা যেমন ডান্ডেলিয়ন রুট চা কিডনির স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে কার্যকরী। এই সব ভেষজ চা কিডনি পাথর ভেঙে সরানোর প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ভেষজ চা কিডনি পাথর ছাড়াও লেবুর রস এবং সাইট্রাস ফলের পানীয় প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ও পাথর দ্রুত সরাতে সহায়ক।

  1. প্রতিদিন প্রায় চার আউন্স লেবুর রস পান করলে কিডনি পাথর গঠন রোধ করা যায়।
  2. যাই হোক, জেনে রাখা ভালো যে গ্রেইপফ্রুটের রস কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এই রস পরিহার করা উচিত।

বিশুদ্ধ পানি এবং ভেষজ চা কিডনি পাথর প্রতিরোধ ও নিরাময়ে প্রয়োজনীয় ইউরিনারি ফ্লো বাড়াতে ও বস্তুগত ক্ষতিকর দিকগুলি প্রমোচনে সাহায্যকারী উপাদান হয়ে দাঁড়ায়।

দ্রুত ব্যথা উপশমের জন্য ঔষধ

কিডনি পাথরের ব্যথা উপশমে ঔষধ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের ঔষধ রয়েছে যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ব্যথাকে কমাতে সাহায্য করে, তবে সঠিক ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  কিডনি ইনফেকশন চিকিৎসার উপায়

NSAIDs এর ব্যবহার

NSAIDs যেমন ইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রক্সেন সাধারণত কিডনি পাথরের ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধগুলি প্রাথমিক ও সাময়িক ব্যথা উপশমে কার্যকর হিসেবে পরিচিত। যদিও এই NSAIDs ব্যবহার কিছুটা সার্বিক ত্রাণ দেয়, তবুও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এবং সঠিক ডোজেজ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনুসরণ করা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ

কিডনি পাথরের ব্যথা উপশমে সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য। রোগীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা, পাথরের আকার ও অবস্থা এবং অন্যান্য প্রভাবক বিবেচনা করে চিকিৎসক উপযুক্ত ঔষধ নির্ধারণ করবেন। তাই, NSAIDs ব্যবহার বা অন্য কোন ঔষধ গ্রহনের আগে অবশ্যই একটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

ব্যথার জায়গায় তাপ প্রয়োগ

কিডনি পাথরের জন্য সৃষ্ট ব্যথা কমাতে তাপ প্রয়োগ একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উপায়টি মাংসপেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক যা ব্যথা উপশম করে।

হিট থেরাপি

হিট থেরাপি কিডনি পাথরের ব্যথা কমানোর জন্য একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। তাপ প্রয়োগ কিডনি পাথরের মাধ্যমে মাংসপেশী শিথিল হয় এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ে। এটি অনায়াসে করা যায় এবং বাড়িতে সহজেই প্রয়োগ করা সম্ভব।

উষ্ণ কম্প্রেস

উষ্ণ কম্প্রেস ব্যবহারের মাধ্যমে কিডনি পাথরের কারণে সৃষ্ট ব্যথা কমানো যায়। উষ্ণ কম্প্রেস ব্যথানাশক উপাদানগুলির সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে যা অবিলম্বে ব্যথা উপশমে সহায়ক হতে পারে। এটি একাধিকবার প্রয়োগ করা যায় এবং প্রাকৃতিক তাপ প্রয়োগের সহজ প্রবণতায় কার্যকর।

মননশীल খাদ্যতালিকা অনুসরণ

কিডনি পাথরের ঝুঁকি কমাতে আপনাকে আপনার খাদ্যতালিকার প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিতে হবে। কিডনি পাথরের ডায়েট অনুযায়ী আপনার খাদ্যতালিকায় জলের পরিমাণ বাড়ানো এবং কিছু সুনির্দিষ্ট ধরণের খাবার সীমিত করা বাঞ্ছনীয়।

পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়

প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা কিডনি পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, আপেলের সাইডার ভিনেগারের সামান্য পরিমাণ মিশিয়ে পান করলে পাথরের ঝুঁকি আরও কমতে পারে। কিডনি পাথরের ডায়েটে সবুজ চা ও ফাইবারের পরিমাণ বেশি এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করা ভাল, যেমন- পালং শাক, বিনস ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ  কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে?

অক্সালেট এবং ক্যালসিয়াম খাবার সীমিত করা

অক্সালেট এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালং শাক, বিট, বাদাম, চকোলেট এবং চা পাথরের সম্ভাবনা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনি পাথরের সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। একে কমানোর উপায় হিসেবে এই খাবারগুলি সীমিত করতে হবে। প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম সীমিত করা এবং ৬ আউন্সের বেশি পশু প্রোটিন না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, কিডনি পাথরের ঝুঁকি কমাতে খাদ্যতালিকায় ভেষজ চা এবং লেবু, সাইট্রাস ফলের রস অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

FAQ

কিডনি পাথরের ব্যথা দ্রুত কমাতে কী কী পদ্ধতি রয়েছে?

কিডনি পাথরের ব্যথা দ্রুত উপশমের জন্য প্রচুর পানি পান, NSAIDs এর মতো ব্যথানাশক ঔষধ গ্রহণ, তাপ প্রয়োগ এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনি পাথর কী কারণে হয়?

কিডনি পাথর ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত অক্সালেট গ্রহণ, জেনেটিক কারণ, বিশেষ ঔষধের ফলাফল এবং কিছু শারীরিক অবস্থার কারণে হতে পারে।

কিডনি পাথরের লক্ষণগুলো কী কী?

কিডনি পাথরের ব্যথা পিঠে, পাশে এবং নিচের পেটে অনুভূত হতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবে রক্ত, মূত্র ক্ষরণের সময় ব্যথা হওয়াটাও লক্ষণ।

কিডনি পাথর প্রতিরোধে হাইড্রেশনের ভূমিকা কী?

প্রচুর পানি পান করা কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভেষজ চা এবং সাইট্রাস ফলের পানীয় প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা পাথরগুলিকে ভেঙে দিতে এবং সরাতে সহায়ক।

কিডনি পাথরের ব্যথা উপশমে কোন ঔষধগুলি কার্যকর?

NSAIDs যেমন ইবুপ্রোফেন কিডনি পাথরের ব্যথা উপশমে কার্যকর। তবে, ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি পাথরের ব্যথা কমাতে তাপ প্রয়োগ করা কি উপকারী?

হিট থেরাপি বা উষ্ণ কম্প্রেস ব্যথা কমাতে কার্যকর। এটি মাংসপেশী শিথিল করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দ্রুত ব্যথা উপশমে সহায়ক।

কিডনি পাথর প্রতিরোধে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ উপযোগী?

পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং অক্সালেট এবং উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার সীমিত করা কিডনি পাথর প্রতিরোধে সহায়ক।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button